সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

দাঁড়াও, এই শ্রীরঙ্গপত্তনম বা শ্রীরঙ্গপত্তনা (বা স্থানীয় উচ্চারণে শ্রীরাঙ্গাপাটনা) তে প্রবেশ করার আগে, ক’টা কথা বলে নেওয়া দরকার। এই অঞ্চল কিন্তু মাইসোরের কাছে হলেও মাইসোর রাজধানীর থেকে স্বতন্ত্র ছিল। এখনও মাইসোর নয়, এই ঐতিহাসিক শহর মানডেয়া জেলার অন্তর্ভুক্ত। চারিদিকে কাবেরী নদী দিয়ে ঘেরা, কাবেরী নদী ঠিক মাথার কাছে এসে দু’ভাগ হয়ে গেছে... তারপর আবার সেই দুই নদী-শাখা এক হয়ে গেছে কিছু দূর একা একা বয়ে গিয়ে। এই দু’ভাগ হয়ে যাওয়ায় মাঝে যে চোখের মত দেখতে ভূ-খণ্ড দ্বীপের মত রইল... সেই হ’ল বর্তমান শ্রীরঙ্গপত্তনম। এখানে সেই বিজয়নগরের দেবরায়া রাজাদের সময়ের একটি বহু প্রাচীন মন্দির এখনও আছে। ভগবান বিষ্ণুর মন্দির, অন্ততশয্যায় নারায়ণ... নাম রঙ্গনাথ স্বামী। সেই নামের শ্রীরঙ্গপত্তনম। বিজয়নগর রাজ্যের ভাষা ছিল তেলুগু, তাই শেষে ‘পত্তনম’... আর পরবর্তীকালে কন্নড়ভাষী মাইসোরের জনগণ তাকে করেছে ‘পটনা’।

ঊদেয়ার রাজাদের দেশ - মহিশূর-পর্ব ২
রঙ্গনাথস্বামীর মন্দির

শুরুতে বলেছিলাম – হায়দার আলি-টিপু সুলতান-এর শ্রীরঙ্গপত্তনম, কিন্তু ইতিহাসের তো ওই ভাবে হঠাৎ শুরু হয় না... গুরুত্বপূর্ণ সময় এবং কিছু ঐতিহাসিক গুরুত্বের ঘটনার জন্যই এখন এ টিপু সুলতানের গড়। না’হলে এই প্রাচীন জনপদের বয়স ছ’শ বছরের কিছু কম নয় বাপু। এককালে দাক্ষিণাত্যের প্রতাপশালী রাজ্য ছিল বিজয়নগর, কৃষ্ণদেব রায় তাদের অন্যতম বিখ্যাত রাজা। এবং তারপরেও অনেকে এসেছেন সিংহাসন সামলাতে এক এক করে। একের পর এক দিল্লির সুলতান, নির্মম আলাউদ্দিন খিলিজী, এমন কি সম্রাট আকবরের দক্ষ সেনাপতীরাও বিজয়নগরের কিচ্ছুটি করতে পারেনি। এই মাইসোরের ঊদেয়ার রাজবংশও সেই বিজয়নগরের অধীনে ছিল, রায়া রাজারা দুর্বল হয়ে পড়ল আর এই সব অমাত্যরাও এক এক করে সব নিজেদের স্বাধীন বলে ঘোষণা করতে শুরু করল। অবশেষে ১৬১০ খ্রীষ্টাব্দে শ্রীরঙ্গপত্তনমের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ঊদেয়ার রাজা ছিনিয়ে নিলেন বিজয়নগরের রঙ্গরায়ার হাত থেকে। এই বিজয় হ’ল ঊদেয়ারদের উত্থান আর শ্রীরঙ্গপত্তনমের মাইসোর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সূচনা। তবে ঊদেয়ারদের দখলে থাকলেও বর্তমানে এখানে এমন কিছুই নেই যা ঊদেয়ারদের স্থাপত্য বলে চিহ্নিত করা যায়। রয়ে গেছে সেই প্রাচীন সুবিশাল রঙ্গনাথ স্বামীর মন্দির... আর তার অনেক অনেক পর অষ্টাদশ শতকে (১৭৫০ থেকে ১৭৯৯) নির্মিত ঐতিহাসিক নিদর্শন, যার সবটাই হায়দার আলি এবং টিপু সুলতানের সময়কালীন।

ঊদেয়ার রাজাদের দেশ - মহিশূর-পর্ব ২
হায়দার আলি

যদি এই হায়দার আলির গল্প বলতে হয়... তো এক কথায় বলা যায় তিনি এক কিংবদন্তী। কর্ণাটকের কোলার জেলায় জন্মগ্রহণ করা এক সাধারণ সেনা নায়ক থেকে কেবলমাত্র নিজের ক্ষমতায় এক ধাপ এক ধাপ করে উঠে... হায়দেরাবাদের নিজাম, মাইসোরের রাজা এবং মারাঠা পেশোয়াদের টপকে সেই সময়ের সব থেকে শক্তিশালী এবং বিচক্ষণ প্রশাসক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। যদিও তিনি নিজের পরিচয় দিতেন মাইসোর রাজার বিশ্বস্ত কর্মচারী। কিন্তু ক্ষমতা কৃষ্ণরাজার (কৃষ্ণরাজ ঊদেয়ার) হাত থেকে যে বেরিয়ে গেছে, তা বুঝতে মুঘোল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমেরও আর বাকি ছিল না। মালাবার থেকে হায়দেরাবাদ, গুলবর্গা থেকে ব্যাঙ্গালোর, হায়দার আলি-ই শেষ কথা! আর তিনি নিজের মত করেই নিজের গড় প্রতিষ্ঠা করলেন শ্রীরঙ্গপত্তনমে। মাইসোর রাজা এবং তার অন্য বিশ্বস্ত চক্রান্তকারীদের থেকে কিছুটা দূরেও থাকা হ’ল, আবার তাদের সব গতিবিধির ওপর নজরও রাখা গেল। এরপর তার অবর্তমানে তার পুত্র ফতেহ্‌ আলি খান ওরফে টিপু হ’ল পরবর্তী বকলমে সুলতান। তাকে সবাই চিনল ‘টাইগার অফ মাইসোর’ বলে। শ্রীরঙ্গপত্তনম হ’ল টিপু’র রাজধানী... তারপর সেই উত্থান আর পতনের ইতিহাস।

ঊদেয়ার রাজাদের দেশ - মহিশূর-পর্ব ২
যুদ্ধে টিপু সুলতানের ব্যবহার করা কামান
১৭৯৯ এ চতুর্থ অ্যাংলো-কার্নাটিক যুদ্ধতে টিপু সুলতানের পরাজয় এবং মৃত্যুর পর, ইংরেজ সৈন্য এখানে রীতিমত তাণ্ডব চালায়, লুট-ভাংচুর চলে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় টিপুর আসল প্রাসাদ (সেই প্রাচুর্যের কিছুই অবশিষ্ট নেই)। ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর দলিলে তার নতুন সাহেবী না হ’ল ‘Seringapatam’। তারপর কেবল এই রঙ্গনাথ স্বামীর মন্দির ছাড়া এখানে আর সবকিছুই বিস্মরণে তলিয়ে যায়। অনেক পড়ে ভারতের পূরাতাত্ত্বিক বিভাগ ‘আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’ আবার সব কিছু সংরক্ষণ করা শুরু করেছে। এখন এই প্রাচীন নগরীর সীমিত পরিধি মাত্র তেরো বর্গকিলোমিটার। যা কিছু আছে, তার রক্ষণাবেক্ষণ হয়, পর্যটকরা গিয়ে থাকে। স্কুল থেকে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা গিয়ে নিজের ভাঙা-গড়ার অতীত কে চিনতে যায়। আনন্দ করে। সেই বিজয়নগরের কাল থেকে কিংবদন্তী মাইসোরের বাঘ - এইভাবেই ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে প্রাচীন নগরী শ্রীরঙ্গপত্তনম।

(ক্রমশ)


ছবিঃউইকিপিডিয়া

পুরোপুরি কলকাতার মানুষ হলেও, জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়ের নিবাস এখন ব্যাঙ্গালোর বা ব্যাঙ্গালুরু। কলকাতারই কলেজ থেকে বি টেক পাশ করে এখন একটি বহুজাতিক সংস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কর্মী। বাংলা সাহিত্যের প্রতি ভালবাসা থেকেই মাঝে মধ্যে একটু লেখা আর সময় সুযোগ হ'লে ব্যাগ গুছিয়ে কাছে-দূরে কোথাও বেরিয়ে পড়া, এই নিয়েই জয়দীপ। সেই সব বেড়াতে যাওয়ার নানা রকম অভিজ্ঞতা ছোটদের কাছে বলার ইচ্ছে বহুদিন। সেই ইচ্ছাপূরণ করতেই ইচ্ছামতীর ছোট্ট বন্ধুদের জন্য কলম ধরা।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা