সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
 ডিরোজিও
ডিরোজিও

কি খবর তোমার? অনেকদিন হল তোমার সঙ্গে কথাবার্তা নেই। তোমার আমার জীবনে কত ছোটবড় ঘটনা ঘটে গেল।তুমি পরীক্ষার ভারে জর্জরিত আর আমি কাজের। কলম পিষে পিষে নাজেহাল আমরা দুজনেই। তাই না! খুব বিরক্তিকর বল। নিজের ইচ্ছেমত তবু যদি একটু লিখতে পেতাম। তবে হ্যাঁ! চারিদিকে দেশের দশের যা অবস্থা, পরিস্থিতি নিয়ে যত চ্যানেল,খবরের কাগজ আর ম্যাগাজিন,সেখানে তোমার আমার লেখা, ছবি, সব আজগুবি লাগবে।তাই বরং আমরা ইচ্ছামতীর পাতাগুলোই সবাই মিলে ইচ্ছেমত আঁকিবুকি আর লেখা দিয়ে ভরিয়ে তুলি।

শীত শেষ হতে চলল। শীতের পিকনিক, রোদ্দুরে খেলা, হই-হুল্লোড়্‌ বেড়ানো শেষ। 'হযবরল'-র হাতে-রইল-পেনসিল-এর মত পড়ে আছে শুধু পড়া আর পরীক্ষা।মাঝে মাঝে মনে হয় না, যে, পড়াশোনা ব্যাপারটা কে বা কারা আবিষ্কার করেছিল, তারা মোটেও ভাল লোকজন নয়, তাদের ধরে এনে আবার পরীক্ষা দিতে বসানো উচিত! তোমার মত বয়সে কিন্তু আমার এরকম মনে হত! তুমি হয়ত খুব ভাল, তোমার এসব মনে হয় না। কিন্তু আমি জানি ইচ্ছামতীর বেশিরভাগ বন্ধুর মনের কথা এটাই।

কথায় কথায় একটা প্রশ্ন করি তোমায়—তোমার বয়স কত হবে? আট, দশ, নাকি বারো বা তেরো? খুব বেশি হলে চোদ্দ-পনের বছর, ধরে নিলাম! হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজ়িও-র কথা মনে পড়ছে খুব। তোমার থেকে একটু বড় বয়সে, মাত্র সতেরো বছর বয়সে, এই ভারতীয় পর্তুগিজ মানুষটি তখনকার হিন্দু কলেজে, যা আজ প্রেসিডেন্সি কলেজ, বা এখন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় নামে পৃথিবী-বিখ্যাত, শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। অবাক হচ্ছ? হওয়ারই কথা। তিনি সেই কলেজে শিক্ষকতায় ঢুকে কলেজের ভোল বদলে দেন। ছাত্র-রা অন্য ক্লাস থেকে পালিয়ে আসত তাঁর কথা শুনতে। আর আরো অবাক করা ব্যাপার হল, বেশিরভাগ ছাত্রের বয়স তাঁর থেকে বেশি।সেটা অবশ্য শুধু বয়েসে, বিদ্যায় নয়।

আমরা স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এতটা পথ পেরিয়ে দেখেছি যে রাজা রামমোহনের আগে আন্দোলন সীমাবদ্ধ থেকেছে দেশের কৃ্ষক, শ্রমিক, সৈনিক ইত্যাদি, শিক্ষার দিক থেকে অনগ্রসর শ্রেণী-র মানুষদের মধ্যে। কিন্তু শিক্ষিত শ্রেণীর মধ্যেও জাতীয় চেতনার জাগরণের লড়াই শুরু হয়েছিল।১৮১৭ সালে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা এক ঐতিহাসিক ঘটনা। এই কলেজ প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে পাশ্চাত্য শিক্ষার জানলা গেল খুলে। আর তার হাল ধরলেন ডিরোজ়িও-র মত মানুষরা।

নতুন চিন্তা, যুক্তিবাদ আর স্বাদেশিকতায় ছাত্রদের উদবুদ্ধ করে তুললেন ডিরোজ়িও।গোষ্ঠী তৈরী হল 'ইয়াং বেঙ্গল'।ডিরোজ়িও-র ছায়ায় হিন্দু কলেজের ভোল বদলে গেল।একটি কবিতা লিখলেন তিনি। পর্তুগিজ পরিবারে ভারতে জন্ম হয়েছিল তাঁর। সেই বিশ্বাসে নিজের কবিতাতে ভারতকে মাতৃভূমি বলে সম্বোধন করে ছাত্রদের মধ্যে নতুন করে অঙ্কুরিত করলেন দেশাত্মবোধের বীজ। ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে রাজা রামমোহনের সংস্কার আন্দোলনের যে সূত্রপাত ডিরোজ়িও-র 'ইয়ং বেঙ্গল' তা কাঁধে করে বয়ে নিয়ে চলল। ছাত্ররা পত্র-পত্রিকা প্রকাশ করেন; 'আকাদেমিক' (গ্রীক দার্শনিক প্লেটো-র অনুসরণে) আলোচনায় সম্মিলিত হয়ে, পরাধীনতার গ্লানি সম্পর্কে দেশবাসীদের সচেতন করে তোলেন তাঁরা।আবার ঠিক তেমনি বৃটিশ শাসনে বাংলার কৃষকদের দূরবস্থা, দেশীয় শিল্পের সংকট এবং দেশীয় মানুষদের প্রতি ইংরেজ শাসকদের বৈষম্যমূলক আচরণ, অত্যাচার ও শোষণের চিত্রও তুলে ধরেন তাঁরা। মহাজনী ও সামন্ত শ্রেণী প্রতিভূরা স্বাভাবিকভাবেই এতে রুষ্ট ও শঙ্কিত হন। ডিরোজ়িও-র শিক্ষার ফলে তরুণ মনের জিজ্ঞাসা, বিজ্ঞানমনস্কতা ও ইহমুখিনতা সারা বাংলার সমাজে এক নবজাগরণের সৃষ্টি করে। এর ফলে যে সামাজিক ঘাত-প্রত্যাঘাত শুরু হয় তার ফল স্বরূপ ডিরোজ়িও-কে শিক্ষকের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়।

এই জাগরণ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাংলার নবজাগরণের সঙ্গে তুলনায় নয়।এর সীমাবদ্ধতা নিয়েও কোনো সংশয় নেই।কিন্তু এ জাগরণ না ঘটলে ভারতের জাতীয় আন্দোলনের সংগ্রাম শুরু হতে আরও অনেক দেরী হয়ে যেত। শিক্ষা কেন গুরুত্বপুর্ণ সেই প্রশ্ন তোমার মনে থেকে থাকলে আরও ভাল করে জান রাজা রামমোহন, ডিরোজ়িও, বিদ্যাসাগর আর বেথুন সাহেব-দের। ভেবো না আবার পড়াশোনা করতে বলছি। শুধু একটু জানতে বলছি।


ছবিঃ উইকিপিডিয়া

আর্য চ্যাটার্জি ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। বেশ কয়েকবছর বিভিন্ন ইংরেজি পত্র-পত্রিকায় নানা বিষয়ে লেখালিখি করেন। বর্তমানে পারিবারিক ঐতিহ্যের টানে একটি সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। হাওড়া সালকিয়ার বাসিন্দা আর্য নিয়মিত গান বাজনার চর্চা করেন; নিজের ইচ্ছায় একাধিক তাল যন্ত্র বাজানো রপ্ত করেছেন তিনি। নিজের শখের কিছু লেখা আর ইচ্ছামতী-তে লেখা ছাড়া এখন আর কোনো পত্র-পত্রিকার সঙ্গে আপাততঃ যুক্ত নন। শখের লেখা ব্লগে লেখেন। বেশিরভাগই বড়দের জন্য কবিতা।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা