সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

এখন বেলা একটা বেজে পাঁচ মিনিট। আমাদের রূপকুন্ড নামক "মরণ হ্রদ" এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হ’ল। বীর সিং বললেন সোজা রাস্তা নেমে গেছে, আমরা "প্রেমসে" এগিয়ে যেতে পারি। আমরা এগিয়ে গেলাম। রাস্তা ক্রমশঃ নীচের দিকে নামছে। আমরা খুব দ্রুত গতিতে নীচে নামতে শুরু করলাম। সুন্দর পাথুরে রাস্তা ভেঙ্গে আমরা চলেছি, কোন কষ্ট নেই, কোন পরিশ্রম নেই। অনেকটা পথ নেমে এসে দেখলাম একটা ছোট ঘর। ঘরটা ঠিক একটা ঝরণার জলের ওপর। এই ঘরগুলো আমার চেনা। এই ঘরগুলোর মধ্যে দিয়ে প্রচন্ড স্রোতের জলে পাথরের চাকা ঘুরিয়ে গম ভাঙ্গানো হয়। সামনে একটা ছোট নদী পার হতে হবে। জলের স্রোত খুব, তবে জলের গভীরতা নেই। একটা ছেলে প্যান্টটা অনেকটা গুটিয়ে, চটি হাতে করে নদী পার হয়ে গেল। আমাদের হান্টার সু খোলার ইচ্ছা ছিল না। বাঁ পাশে প্রায় দেড়তলা বা দোতলা বাড়ির মতো উচু দিয়ে একটা বড় কাঠের স্লীপার পেতে ব্রীজ তৈরী করা হয়েছে। হয়তো পনের-ষোল ইঞ্চি চওড়া কাঠের ব্রীজ। কোন কিছু ধরার ব্যবস্থা নেই। স্রেফ্ ব্যালেন্স রেখে স্লীপারটার ওপর দিয়ে হেঁটে কুড়ি-পঁচিশ ফুট মতো পার হয়ে যেতে হবে। নীচ দিয়ে বেশ স্রোতে নদী বয়ে যাচ্ছে। পাথরে পাথরে ধাক্কা খেয়ে জলের রঙ দুধের মতো সাদা। আসলে ব্রীজ পার হতে আমাদের মতো লোকেদের ব্যালেন্স, সাহস, ও মনের জোরের খুব প্রয়োজন। স্থানীয় লোকেদের কাছে ওটা, আর পাঁচটা রাস্তার মতোই ব্যাপার। আমরা প্রথমে ছেলেটার মতো নদীটা পার হবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু দেখলাম জুতো না ভিজিয়ে পার হওয়া অসম্ভব। বাধ্য হয়ে প্রথমে সিতাংশু, তারপরে আমি খুব সাবধানে স্লীপারটার ওপর দিয়ে নদী পার হয়ে এলাম। আবার নীচে রাস্তায় নেমে এসে স্লীপারটার নীচের অংশটা দেখতে পেয়ে ভয় পেয়ে গেলাম। ওটার প্রায় মাঝ বরাবর, কাঠ মুচকে ভাঙ্গবার চেষ্টা করলে যেমন ভাবে ফেটে যায়, অনেকটা সেইরকম ফাটা। হয়তো ঘুণ ধরে থাকতে পারে। হয়তো এই ব্রীজটা এখন কেউ ব্যবহার করে না। প্রথমে ভেবেছিলাম এটাই বোধহয় কোয়েলগঙ্গা নদী। পরে মনে হ'ল এটা কোয়েলগঙ্গা নদী নয়, কারণ কোয়েলগঙ্গা আরও দূর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। রাস্তা সেই একই রকম, কোন বৈচিত্র্য নেই, নেই কোন আলাদা বৈশিষ্ট্য। সৌন্দর্যও সেরকম কিছু উল্লেখ করার মতো নয়। আরও বেশ কিছুটা পথ এগিয়ে আসার পরে একটা ঝুলন্ত ব্রীজ পার হতে হ’ল। এটার নীচ দিয়ে কিন্তু কোয়েলগঙ্গা বয়ে যাচ্ছে। নদীর দু'পাশে পাথর ও সিমেন্টের, ঘরের মতো দেওয়াল। দুই দেওয়ালের মাঝখানে, নদীর ওপর এই তারের ঝুলন্ত ব্রীজ। অবশ্য ব্রীজে হাঁটতে হবে কাঠের তক্তার ওপর দিয়ে। নদীর ওপারের দেওয়ালে খোদাই করে লেখা আছে- নদীর ব্রীজের জন্ম বৎসর। আঠারো'শ কত সালে যেন ইংরেজরা এটা তৈরী করে। এর পরেই রাস্তা বেশ ভাঙ্গাচোরা, যেন কিছুক্ষণ আগেই ধ্বস নেমেছিল। আমরা ভয় পেলাম, এই রাস্তার ওপর দিয়ে অত মাল নিয়ে খচ্চরগুলো যাবে কী ভাবে? আরও বেশ কিছুটা পথ হেঁটে একটা চায়ের দোকান পাওয়া গেল।

আমরা দোকানে ঢুকে চায়ের অর্ডার দিলাম। চা খেতে খেতে দোকানের লোকজনের সাথে কথা বলছিলাম। একজন লোক জিজ্ঞাসা করলো আমাদের গাইড কে? আমরা জানালাম আমাদের গাইড বীর সিং, অবশ্য আমাদের সাথে যাবে তার ছেলে গঙ্গা সিং। আমি একটা কাঠের বেঞ্চে শুয়ে ছিলাম। ওদের মধ্যে একজন জিজ্ঞাসা করলো, আমার শরীর খারাপ কিনা। আমি জানালাম আমি সম্পূর্ণ সুস্থ। সে এবার জিজ্ঞাসা করলো কলকাতা থেকে এখানে আসতে কত খরচ পরে। আমি প্রশ্নটা এড়িয়ে গেলাম। সে আবার জিজ্ঞাসা করলো আমাদের সাথে কুলি কে যাবে। বললাম বীর সিং দু’জন কুলির কথা আমাদের বলেছেন, তবে তাদের নাম জানিনা। এতক্ষণে লোকটা জানালো যে, সে বীর সিং এর ছেলে। আমি তার নাম জিজ্ঞাসা করলে, সে জানালো সে গঙ্গা সিং।

বেশী বয়স নয়। স্বাস্থ্যও বেশ ভাল। তবে তার চোখ মুখ দেখে মনে হয় না, সে এখানকার লোকজনের মতো সহজ সরল। গঙ্গা আমাদের সাথে রাস্তায় নেমে এল। সে জানালো এই জায়গাটার নাম "নন্দীকেশী। আর খানিকটা এগিয়েই "দেবল"। আমরা বললাম দেবল যদি এত কাছেই হয়, তাহলে আজই তো আমরা "বগরীগড়" চলে যেতে পারি। এখন সবে বিকাল তিনটে পনের বাজে। গঙ্গা জানালো দেবলের পরে আর খচ্চর যাবে না। কাজেই এখন দেবল গিয়ে কুলির ব্যবস্থা করে তবে বগরীগড় যেতে হবে। আজ আর যাওয়া ঠিক হবে না। আমরা কথা বলতে বলতে আরও অনেকটা পথ পার হয়ে এলাম। গঙ্গা রাস্তার বাঁ পাশে একটু উচুতে, বীর সিং এর বাড়ি দেখালো। বীর সিং এর নাম লেখা আছে। বাড়ির সামনে বিভিন্ন রঙের বড় বড় ডালিয়া ফুটে আছে। এ জায়গাটার নাম "পূর্ণা"। আর সামান্য পথ পার হয়ে আমরা "দেবল" শহরে এলাম। রাস্তা থেকেই গঙ্গা বহু নীচে, কোয়েলগঙ্গা ও পিন্ডার নদীর সঙ্গম স্থল দেখালো। আমরা একটা চায়ের দোকানে বসলাম, চা খেলাম। গঙ্গা জানালো এখানে টুরিষ্ট বাংলোর থেকে সামনের একটা হোটেলে থাকা সুবিধা। ঘর ভাড়াও বেশী নয়, তাছাড়া ওখানেই ভাল খাবার পাওয়া যাবে। আমরা হোটেলটায় গেলাম। নাম "পর্যটক হোটেল"। মালিকের নাম লেখা আছে- ত্রিলোক সিং বিস্ত। রাস্তা থেকে একটু নেমে বাঁ দিকে বেশ বড় হোটেল কাম চায়ের দোকান। মাঝখানে একটা ঘরে চাল, গম, খোলা বস্তায় রাখা আছে। বোধহয় এটা মুদিখানা দোকান। ডানপাশে একটা ঘরের মধ্যে ঢুকে, বাঁ পাশে আবার একটা ঘর। প্রথম ঘরটায় তিনটে খাটিয়া পাতা, ভাড়া দেওয়া হয়। খাটিয়া গুলোর পাশে, দ্বিতীয় ঘরের দরজার কাছে, সম্ভবত চালের বা গমের অনেকগুলো বস্তা পর পর সাজানো। শুনলাম দেবলের রেশনের মাল এখানে রাখা হয়। বাড়িটা দোতলা করা হচ্ছে, তাই এই ঘরটায় কাঠের কাজ হচ্ছে। ছোট ছোট কাঠের টুকরো, কাঠের গুঁড়ো আর জঞ্জালে, ঘরের একটা দিক ভর্তি। আমরা দ্বিতীয় ঘরটার তালা খুলে ভিতরে ঢুকলাম। এঘরে আবার পাঁচটা খাটিয়া পাতা। একটা ছোট জানালা। খাটিয়া গুলোয় একটা করে পাতলা তোষক পাতা আছে। এক একটা খাটিয়ার ভাড়া তিন টাকা। অবশ্য বিছানা বা কম্বল নিলে আলাদা টাকা লাগবে। আমাদের সঙ্গে স্লীপিং ব্যাগ আছে। ঠান্ডাও এখানে খুব কম। কাজেই কম্বলের প্রয়োজন আমাদের হবে না। ঘরটা পুরো দখল করতে হলে, পনের টাকা ভাড়া লাগবে। আমরা দেখলাম বিকেল হয়ে গেছে, কাজেই নতুন কোন খদ্দের আসার কোন সম্ভাবনা নেই। কাজেই আমরা দুটো খাটিয়া ভাড়া নিলাম। কাঁধের ঝোলা ব্যাগ ঘরে রেখে, ক্যামেরা দুটো সঙ্গে নিয়ে, নদীর সঙ্গমস্থলে যাব বলে বাইরে এলাম। এই হোটেলের খাবার জায়গা থেকে নীচে সঙ্গমস্থলটা পরিস্কার দেখা যায়। হোটেল মালিককে বললাম ঘরটায় তালা দিয়ে দিতে। তিনি বললেন আমাদের সঙ্গে তালা থাকলে, আমরা নিজেদের তালা লাগিয়ে দিতে পারি। তাই করলাম, এবং এটাও বুঝে গেলাম যে, মাত্র ছ'টাকায় পুরো ঘরটাই আমাদের দখলে এল। এখন জানলাম এই ভদ্রলোকের নাম ত্রিলোক সিং বিস্ত নয়। ত্রিলোক এর ছেলের নাম। এঁর নাম ওমরাহো সিং বিস্ত। এই ভদ্রলোক মিলিটারিতে কাজ করতেন। এখন রিটায়ার করে ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন।


পিন্ডার নদী

গঙ্গাকে বললাম আমাদের নদী দুটোর সঙ্গমস্থলে নিয়ে যেতে। ও রাজী হ’ল। ওর সাথে হোটেলের পিছন দিয়ে ঢালু রাস্তায় অনেকটা নেমে, একটা ছোট মন্দিরের কাছে এসে দাঁড়ালাম। মন্দির থেকে একটু নীচে নামলেই, নদীর সঙ্গমস্থল। গঙ্গা চলে গেল। আমরা সঙ্গম স্থলের একটা ছবি নিয়ে, নীচে নামলাম। সঙ্গম স্থলের পারটা ছোট একটা মাঠের মতো। সবুজ ঘাসে ঢাকা পরিস্কার জায়গা। ওখানে কিছুক্ষণ বসে ওর সৌন্দর্য উপভোগ করে, একটু এদিক ওদিক ঘুরে দেখলাম। বাঁদিক থেকে যে নদীটা আসছে, সেটা "কোয়েলগঙ্গ"। ওটা আসছে কৈলুবিনায়ক থেকে। আসার আগে বই এ পড়েছি কৈলুবিনায়কে একটা গনেশ মূর্তি আছে, সেটাকে তুলে তিনবার প্রদক্ষিণ করতে না পারলে, রূপকুন্ড যাত্রা শুভ হয় না, রূপকুন্ড সফর সফল হয় না। সামনের দিক থেকে যে নদীটা আসছে, তার নাম "পিন্ডার"। পিন্ডারী গ্লেসিয়ারে ওর জন্ম। জায়গাটায় এসে মনে বেশ পুলক জেগে উঠলো। সবুজ মাঠে শুয়ে শুয়ে অনেকগুলো রবীন্দ্র সংগীতের, আধখানা, সিকিখানা করে গলা ছেড়ে গান গাইলাম। মনটা খুব খুশী খুশী। সব ব্যবস্থা পাকা, এখন শুধু আগামী কালের অপেক্ষা। তারপরই শুরু হবে বহু আকাঙ্খিত সেই রূপকুন্ড যাত্রা। সিতাংশু কিছুটা দুরে বসে আছে। ও বললো মালপত্র এসে গেলে ঘরে তুলতে হবে। আমরা আর শুয়ে বসে না থেকে, ঘরে ফেরার পথ ধরলাম। ওপরের মন্দিরটার পর থেকেই রাস্তার দু’পাশে অনেক দোকানপাট। এমন কী মাংসের দোকান পর্যন্ত দেখলাম। হোটেলে ফিরে এসে দেখি মালপত্র এসে গেছে। আমরা ঘরের তালা খুলে, মালপত্র ঘরে তুলে রাখলাম। বেলা অনেক হয়েছে তবু সূর্যের আলো এতটুকু কমেনি। বীর সিং এসে উপস্থিত হলেন। তাঁকে নিয়ে ঘরে বসলাম। তিনি জানালেন দু’জন জোয়ান কুলি তিনি ঠিক করেছেন। সঙ্গে তাঁর ছেলে গঙ্গা তো গাইড হিসাবে যাবেই।

আমি কুলি ও গাইডের ভাড়ার কথা জিজ্ঞাসা করাতে, তিনি বললেন দেবল থেকে দেবল, অর্থাৎ দেবল থেকে রূপকুন্ড হয়ে দেবলে ফিরে আসা পর্যন্ত পথকে, দশটা স্টেজে ভাগ করা হয়। অবশ্য আমরা ইচ্ছা করলে তাড়াতাড়ি ফিরে আসার জন্য এক একদিনে দু’টো করে স্টেজ হাঁটতে পারি। তবে সেক্ষেত্রেও ঐ দশটা স্টেজের ভাড়াই দিতে হবে। প্রতি কুলির এক একটা স্টেজের ভাড়া পনের টাকা। অর্থাৎ এক একজন কুলিকে একশো পঞ্চাশ টাকা করে দিতে হবে। তবে ওরা নিজেদের রেশন নিয়ে যাবে, কাজেই ওদের খাবার দিতে হবে না। শুধু চা, পান, বিড়ি, সিগারেট, দেশলাই দিতে হবে। গাইডকেও দশটা স্টেজের ভাড়া দিতে হবে। তিনি জানালেন, তিনি নিজে প্রতি স্টেজের জন্য পঁচিশ টাকা করে নেন। আমি বললাম বীর সিংকে তামাম্ হিন্দুস্থান চেনে। বীর সিং আর গঙ্গা সিং এর পারিশ্রমিক নিশ্চই এক নয়? উত্তরে তিনি বললেন, আমরা যেন গঙ্গার সাথে কথা বলে ওটা ঠিক করে নি। বীর সিং আবার বললেন গঙ্গাকে চা, পান ইত্যাদির সাথে খাবারও দিতে হবে। এ তো মহা বিপদ। কেউ খাবে, কেউ খাবেনা, হিসাব রাখবোই বা কিভাবে, রান্নাই বা কিভাবে হবে? এবার তিনি বললেন ওদের কিছু টাকা অগ্রিম দিয়ে দিতে। আমরা কত টাকা করে দেব জিজ্ঞাসা করায়, তিনি একশো টাকা চাইলেন। এর মধ্যে পঁচিশ টাকা তিনি খচ্চর ভাড়া বাবদ দেবেন। বাকী টাকা ওদের তিনজনকে ভাগ করে দেবেন। আমি বললাম কাকে কত টাকা অগ্রিম দেওয়া হ'ল, আমাদের জানা প্রয়োজন। কারণ পরে টাকা দিতে অসুবিধা হতে পারে। বীর সিং কী ভাবলেন কে জানে। কিছুক্ষণ পরে তিনি দুজন কুলিকে সঙ্গে করে নিয়ে এলেন।

একজন বেশ ভাল স্বাস্থ্যের অধিকারী, নাম রাম কুমার। অপর জনের বয়স কিছু কম। বেশ রোগা চেহারা, নাম হরিশ সিং। বীর সিং জানালেন, টাকা ভাঙ্গানো না থাকায়, খচ্চর ভাড়া বাবদ তিনি কুড়ি টাকা দিয়েছেন। দুজন কুলিকে কুড়ি টাকা করে চল্লিশ টাকা অগ্রিম দিয়ে, বাকী চল্লিশ টাকা তিনি গঙ্গাকে দিয়েছেন। ঠিক হল আগামী কাল সকাল সাতটায় যাত্রা শুরু হবে। আরও কিছুক্ষণ কথাবার্তার পর তিনি জানালেন, কাল আর দেখা হবে না। কারণ আগামীকাল তাঁর আলমোড়ায় কোর্টে একটা কেস্ আছে। সেখানে তাঁকে যেতেই হবে। কেসটা না থাকলে তিনি নিজেই আমাদের সাথে গাইড হয়ে যেতেন। রূপকুন্ড থেকে ফিরবার সময় তাঁর সাথে নিশ্চই দেখা হবে। তিনি আমাদের যাত্রার শুভ কামনা করে, নমস্কার করে চলে গেলেন। এখানে বাথরুম, পায়খানার কোন ব্যবস্থা নেই। ওমরাহো সিং এর কথা মতো রাস্তা ধরে খানিকটা গিয়ে, ডান পাশের সরু পায়ে হাঁটা পথ ধরে, অনেকটা নীচে নেমে কোয়েলগঙ্গার ধারে এলাম। কাজ মিটলে হোটেলে ফিরে এসে চা খেলাম। একটু রাত হলে গঙ্গা, কুমার ও হরিশকে নিয়ে দেখা করে গেল। আজই আমাদের এ পথের শেষ ভাল খাওয়া। ফিরে না আসা পর্যন্ত কী খাবার জুটবে কে জানে। তাই মাংস, রুটি খেয়ে, আমরা দুজনেে ঘরে ফিরে এলাম। এখানে ইলেকট্রিক লাইট নেই। ছোট একটা কুপি না কী যেন বলে, তার আলোয় দেখলাম আমাদের কিট্ ব্যাগের ঝুলিয়ে নিয়ে যাবার ফিতেটার এক দিকের ক্লিপ, যেটা হাতলটাকে ব্যাগের সঙ্গে আটকে রাখে, বেঁকে গিয়ে প্রায় খুলে গেছে। ভাগ্য ভাল যে রাস্তায় ওটা একবারে খুলে পড়ে যায় নি। পড়লে খুব ঝামেলার ব্যাপার হ'ত। যাহোক্, তালা দিয়ে পিটিয়ে ওটাকে মোটামুটি ঠিক করা হ’ল। এরপর আরও কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি।


ছবিঃ ত্রিপর্ণা মাইতি
ফটোগ্রাফঃ উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য ওয়েবসাইট

ছোটবেলা থেকে মাঠে, ঘাটে, জলাজঙ্গলে ঘুরে ঘুরে ফড়িং, প্রজাপতি, মাছ, পশুপাখি, গাছের সাথে সখ্যতা। একটু বড় হয়ে স্কুল, এবং তারপরে কলেজ পালানোর নেশায় এর ব্যাপ্তি আরও বৃদ্ধি পাওয়ায়, অনেক নতুন ও অদ্ভুত সব মানুষের সান্নিধ্য লাভের সুযোগ ঘটে। পরবর্তীকালে ছত্রিশ বছরের কর্মজীবনে ও ভ্রমণের নেশায় আরও বিচিত্র চরিত্রের মানুষ, বিচিত্র সংস্কার, বিচিত্র জায়গা দেখার ও বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ ঘটে। সুবীর কুমার রায় কর্ম সুত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক অফিসার ছিলেন। নেশা ভ্রমণ ও লেখা।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা