সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

আজ বিশে আগষ্ট। ঘুম ভাঙ্গলো বেশ ভোরে। ঘরের বাইরে এসে কালকের দুর্যোগের কথা ভুলে গেলাম। ঝকঝকে রোদ উঠেছে। বাঁহাতে সম্ভবত ত্রিশুল, নন্দাদেবীর শিরদেশ, শুভ্র পাগড়ীতে ঢাকা। চারদিকে সবুজ ঘাসে, স্নিগ্ধ হাওয়ায়, ছোট ছোট ফুলগুলো দোল খাচ্ছে। সমস্ত বাঁধাছাদা করে, আমরা তৈরী হয়ে নিলাম। গঙ্গা কফি তৈরী করলো। কালকের ডেকচিওয়ালা এসে হাজির হ'ল। এসেই এপথের রীতি অনুযায়ী, এর অসুখ, তার মাথার ব্যথা, তার গলার ব্যথা, ইত্যাদি বলে ওষুধ চাইতে শুরু করে দিল। আমাদের সবকিছু প্যাক্ করা হয়ে গেছে। গঙ্গা অবস্থা বুঝে ওকে বললো, বাবুরা নওজোয়ান আদমী, তাই ওষুধের প্রয়োজন নেই বলে কোন ওষুধ সঙ্গে নিয়ে আসে নি। ডেকচিওয়ালা কফি, রুটি খেয়ে, বিড়ি টেনে চলে গেল। আমরা চারিধারের ছবি তুলে, মালপত্র নিয়ে, আলি বুগিয়ালকে নমস্কার করে বিদায় জানিয়ে, পথে নামলাম। জায়গাটা যে এত সুন্দর, গতকাল কুয়াশায় ও মেঘের উৎপাতে, বুঝতে পারি নি। চারিদিকে যত দুর চোখ যায়, শুধু মাঠ আর মাঠ। আস্তে আস্তে উপরে উঠে, আবার আস্তে আস্তে নীচে নামায়, কোন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে, জায়গাটার বিশালত্ব বোঝা যায় না, দেখাও যায় না। পায়ে হাঁটার সরু পথ ধরে এঁকেবেঁকে প্রথমে আমি, আমার পিছনে সিতাংশু, কিছুটা দুরে হরিশ ও গঙ্গা। কুমারকে দেখা যাচ্ছে না। ও অনেক পিছিয়ে পড়েছে। গঙ্গা ঠিকই বলেছিল, ওর মাল বওয়ার অভ্যাস নেই। আজ এখন পর্যন্ত চড়াই ভাঙ্গতে হয়নি। গঙ্গা অবশ্য আগেই বলেছিল আলি বুগিয়াল থেকে প্রথমে চড়াই ভাঙ্গতে হবে না। অনেকক্ষণ হাঁটলাম, চারিদিকের দৃশ্যপট কিন্তু এতটুকু বদলায় নি। সেই এক মাঠ, এক ফুল, একই পায়ে হাঁটার পথ। শুধু এক ধরণের চিল জাতীয় পাখি, এখানে প্রচুর দেখতে পাচ্ছি। অসম্ভব ভীতু প্রকৃতির পাখিগুলোর কাছে যাওয়া যায় না। কিছুটা দুর থেকে মানুষ দেখেই উড়ে চলে যায়। একসাথে বেশীক্ষণ উড়তেও পারে না, বা বেশী উচুতেও উড়ে যেতে পারে না। উড়বার সময় ডানায় একটা বেশ জোরে আওয়াজ তুলে যায়, সঙ্গে একটা অদ্ভুত ডাক। এগুলো বেশীরভাগই পাথরের আড়ালে বসে আছে। ফলে আমরাও আগে থেকে এদের দেখতে পাচ্ছি না। পাখিগুলোও বোধহয় আমাদের আগে থেকে দেখতে পাচ্ছে না। হঠাৎ কাছে গিয়ে ঊপস্থিত হলে, আমাদের ভীষণ ভাবে চমকে দিয়ে, ডানায় বিশ্রী আওয়াজ তুলে, ডাকতে ডাকতে উড়ে গিয়ে একটু দুরেই বসে পড়ছে। গঙ্গা জানালো তার পিতাজীর সঙ্গে আসলে এসব পাখী শিকার করে খাওয়ার সুবিধা হয়, কারণ তার পিতাজীর সঙ্গে বন্দুক থাকে। হরিশ জানাল, সে একবার গঙ্গার পিতাজী, বীর সিং এর সাথে কিছু টুরিষ্ট নিয়ে এসেছিল। বীর সিং একটা কস্তুরী হরিণ মেরেছিল। সবাই মিলে কিছু মাংস খেয়ে, বাকী মাংস বিরাট দামে বিক্রী করা হয়েছিল। কাদের বিক্রী করা হয়েছিল, সেইসব খদ্দেররা সেখানে কী করতে এসেছিল, হরিশই বলতে পারবে। যদিও আজ রাতে কস্তুরী মৃগ কেন, অন্য কোন কিছুর মাংস রান্না করলেও, আমার কিছুমাত্র আপত্তি নেই। তবু আমি বললাম, বীর সিং বাবার বয়সী, আর গঙ্গা বন্ধুর মতো। কাজেই বীর সিং এর সাথে গিয়ে শিকার করা পাখি বা হরিণ খাওয়ার থেকে, গঙ্গার সাথে গিয়ে, গঙ্গার হাতের খিচুড়ি খাওয়াতেই বেশী আনন্দ। গঙ্গা আমার কথা শুনে খুব খুশী হ'ল। আমরা এগিয়ে যেতে যেতে গঙ্গাকে বললাম, পাথর ছুড়ে একটা পাখিকে মারা যায় না? আমি নিজেও অনেকবার চেষ্টা করলাম। হরিশ ও গঙ্গাও চেষ্টা করে দেখলো। কিন্তু পাখিগুলোর পাখার জোর না থাকলেও, সৃষ্টিকর্তা বুদ্ধির জোর ভালই দিয়েছেন।

এখানে চিরাচরিত একদিকে খাদ, একদিকে পাহাড়ের সারি দেখা যাচ্ছে না। ঠিক যেন একটা বিরাট মাঠের ঠিক মাঝখান দিয়ে আমরা হাঁটছি। গতকাল রাতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা গঙ্গা বোধহয় এখনও ভুলতে পারে নি। তাই মধ্যে মধ্যেই আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছে— "আজ আমাদের ১৪৫০০ ফুট উচ্চতায় পাথুরে গুহায় রাত কাটাতে হবে। খুব ঠান্ডা, তাই যত দেরীতে সম্ভব পৌঁছনোই ভাল। ওখানে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করেই গুহায় ঢুকে পড়বো"। গঙ্গা শেষ পর্যন্ত আজকের রাতের প্রয়োজনীয় কাঠ নিজের পিঠেই বেঁধে নিয়েছে। হাতে অঢেল সময়। "যত দেরীতে পৌঁছনো যায়, ততই মঙ্গল", এই বেদবাক্য মাথায় রেখে গঙ্গার কথা মতো, মাঝে মাঝেই রাস্তায় বসছি, বাদাম, লজেন্স চিবচ্ছি, আবার নতুন করে হাঁটা শুরু করছি। কমলা লেবু স্বাদের গোল গোল লজেন্স আর বাদাম, একসাথে চিবলে যে কী অমৃতের স্বাদ পাওয়া যায়, কী বলবো।

এক সময় গঙ্গা জানালো, এই জায়গাটার নাম "বৈদিনী বুগিয়াল"। জিজ্ঞাসা করলাম থাকার জায়গাটা কোথায়? গঙ্গা জানালো, নীচে নেমে খানিকটা যেতে হবে। ভয় হ'ল গঙ্গা গতকাল রাতে বৈদিনী বুগিয়ালে না থেকে আলি বুগিয়ালে থাকতে বলেছিল, কারণ বৈদিনী থেকে চড়াই এর রাস্তা শুরু। ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠেই চড়াই ভাঙ্গতে কষ্ট হবে। আমরা এখন সেই বৈদিনীতে হাজির। অর্থাৎ এবার শুরু হবে উতরাই হীন চড়াই এর রাস্তা। আরও খানিকটা পথ গিয়ে গঙ্গাকে একটু খাবার জল যোগাড় করতে বললাম। হরিশ জানালো একটু এগিয়েই জল পাওয়া যাবে। রাস্তার রূপ আস্তে আস্তে বদলাতে শুরু করেছে। বাঁদিকে সামান্য উচু পাহাড়, ডান দিকে মাঠ যেন অনেকটা নীচে ঢালু হয়ে নেমে গেছে। ফুল এখনও আছে, তবে রঙের সংখ্যা সীমিত হয়ে গেছে।

আমরা এবার বসলাম। হরিশ গেল ওয়াটার বটল্ নিয়ে জল আনতে। সে ফিরে এল প্রায় মিনিট পনের বাদে। প্রাণ ভরে ঠান্ডাজল খেয়ে উঠে পড়লাম। রাস্তা আস্তে আস্তে ওপরে উঠছে। আরও অনেকটা পথ নীরবে হাঁটলাম। মনে শুধু একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে- আগামীকাল সকাল কখন আসবে। বহু আকাঙ্খিত সুন্দরী রূপকুন্ডকে কাল সকালে দেখতে পাবো তো? দুরে বড় বড় পাথরের টুকরো চোখে পড়লো। গঙ্গা জানালো জায়গাটার নাম "পাথরনাচুনি"। নির্জন পাথরনাচুনিতে এসে, গঙ্গা, কুমার ও হরিশ, পিঠের মালপত্র নামিয়ে ফেললো। খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। পাথরের আড়ালে কাঠ জ্বালানো হ'ল। গঙ্গাকে বললাম কম করে কাঠ খরচ করতে। রাতে যেন কাঠের অভাব না হয়। গঙ্গা জানালো, সঙ্গে যা কাঠ আছে, তাতে আজ রাতের খাবার ও কাল সকালের কফি তৈরী করতে কোন অসুবিধা হবে না। ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, বগুয়াবাসায় জল পাওয়া যাবে তো? সে জানালো জল পাওয়া যাবে, তাছাড়া বরফও প্রচুর আছে। গঙ্গা কফি তৈরীর আয়োজন করতে বসলো। আমি এদিক ওদিক একটু ঘুরে নিলাম। কিছু ছবিও তুললাম। কী রকম একটা আনন্দ ও উত্তেজনা বোধ করছি। মনে হচ্ছে এই বিশাল পৃথিবীতে আমরাই মাত্র পাঁচজন প্রাণী। রুটি, আলুসিদ্ধ ও কফি দিয়ে লাঞ্চ শেষ করে, গঙ্গাকে জিজ্ঞাসা করলাম, নাচুনিদের যেখানে কবর দেওয়া হয়েছিল, সেই গর্তগুলো দেখা যায় শুনেছি, সেগুলো কোথায়? গঙ্গা জানালো যাবার পথে পড়বে। জায়গাটার নাম "হুনিয়াথর" অর্থাৎ ভূতেদের স্থান।

খাওয়া দাওয়া সেরে, মালপত্র বেঁধে, নতুন উদ্যমে যাত্রা শুরু করলাম। একটু এগিয়েই ডানদিকে একটা ছোট গর্ত দেখিয়ে গঙ্গা বললো, ওপর দিকে আরও আছে। এই গর্তগুলোই সেই নর্তকীদের কবর। সে আরও বললো "বাবুজী গর্তে কান পেতে শুনুন, আজও নর্তকীদের নুপুরের আওয়াজ শোনা যায়"। যাহোক্, তখন হয়তো নর্তকীদের ঘুমবার বা বিশ্রাম নেবার সময়, আমি কোন নুপুরের শব্দ শুনতে না পেয়েও, এমন একটা ভাব দেখালাম, যেন আমি নুপুরের আওয়াজ শুনতে পেয়েছি। কোথায় যেন পড়েছিলাম, অনেকদিন আগে কোন এক রাজার রূপকুন্ডের পথে যাবার সময় এই জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সঙ্গে মন্ত্রী-সান্ত্রী, লোক-লশকর ও কিছু নর্তকী নিয়ে সেখানে যাওয়ায়, হিমালয়ের দেবী, নন্দাদেবী রুষ্ট হন। রাজা স্বপ্নে আদেশ পান যে, এই পথে নর্তকীদের নিয়ে গেলে তার বংশ লোপ পাবে, কাজেই তিনি যেন অবিলম্বে ফিরে যান। রাজা স্বপ্নাদেশ পেয়ে সমস্ত নর্তকীদের ওখানে পাথর খুঁড়ে গর্ত করে জীবন্ত কবর দেন। তাই জায়গাটর নাম "পাথরনাচুনি"। কথিত আছে আজও ঐ গর্তে কান পাতলে নর্তকীদের পায়ের নুপুরের আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। এই জায়গাটা "হুনিয়াথর" নামেও পরিচিত। হুনিয়া মানে ভুত আর থর মানে স্থান, অর্থাৎ ভুতেদের স্থান। পরে অবশ্য প্রায় এর মতোই অন্য গল্পও শুনেছিলাম।

যাহোক্, গল্পের সেই নর্তকীদের জীবন্ত কবরস্থান দেখার সখ মিটিয়ে, উপরে ওঠার পর্ব শুরু হ'ল। গঙ্গা জানালো, এরপর "কৈলুবিনায়ক"। আমরা খুব আস্তে আস্তে হাঁটছি। এখনও ভরা বিকেল, কাজেই গঙ্গার কথামতো সন্ধ্যাবেলায় বগুয়াবাসা বোধহয় আর যাওয়া হ'ল না। ভালই হ'ল বগুয়াবাসার শোভা দেখার জন্য হাতে অনেক সময় ও সূর্যালোক পাওয়া যাবে। গঙ্গা, হরিশ ও কুমার অনেক পিছিয়ে পড়েছে। এখন অবশ্য পথ না চেনার কোন ভয় নেই। রাস্তা খাড়া ওপর দিকে উঠেছে। তবে পাথরের মধ্যে দিয়ে এঁকেবেঁকে ওঠা পথটাকে চিনে নিতে কোন কষ্ট হয়না। প্রথমে সিতাংশু, ওর ঠিক পিছনে আমি। এক সময়, একটু বসে আমরা ঠিক করলাম, এবার একবারে কৈলুবিনায়কের সেই গনেশ মুর্তির কাছে গিয়ে, তবে বিশ্রাম নেব। বইতে পড়া গনেশের কথা নিয়ে আলোচনা, ঠাট্টা, তামাশা করলাম। এই কৈলুবিনায়ক থেকেই কোয়েলগঙ্গা নদীর জন্ম। এখানে একটা পাথরের গনেশ মুর্তি আছে। এই মুর্তিটিকে নিয়ে বেদীর চারপাশে ঘুরতে না পারলে, রূপকুন্ড যাওয়া নাকি সার্থক হয় না। বাংলার একজন বিখ্যাত, সর্বজন বিদিত, সর্বজন প্রিয় পর্বতারোহী, ও সুলেখকের রূপকুন্ড ভ্রমণ কাহিনীতে পড়েছিলাম, ওনার সঙ্গীসাথীরা ঐখানে আনন্দে গনেশ মুর্তি নিয়ে লোফালুফি খেলেছিলেন। গনেশে আমার বিশ্বাস বা আস্থা, কোনটাই নেই। সিতাংশুর আছে কিনা জানি না। তবে কৌতুহল, গনেশমুর্তি তুলে ঘোরাতে না পারলে যখন রূপকুন্ড যাওয়াই সার্থক হয় না, পৌঁছনো যায়না, তখন মুর্তি না তুলতে পারার সম্ভাবনাও, একবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে ঐসব শ্রদ্ধেয় অভিযাত্রীরা পাহাড়ী পথে যথেষ্ট অভিজ্ঞ সন্দেহ নেই, কিন্তু তাঁরা সকলেই নিশ্চয় ব্যায়ামবীর নন। কাজেই তাঁরা যাকে নিয়ে "খেলার ছলে ষষ্ঠীচরণ হাতী লোফেন যখন তখন" এর মতো লোফালুফি খেলতে পারেন, আমরা, ঊনত্রিশ- ত্রিশ বছরের যুবকেরা, তাকে তুলতে পারবো না? ক্ষমতা পরীক্ষার লোভেই বোধহয় হাঁটার গতি বেড়ে গেল।


গণেশ মূর্তিটা অনেকটা এইরকম দেখতে ছিল

ঝির ঝির করে বৃষ্টি শুরু হ'ল। আরও অনেকটা পথ এঁকেবেঁকে উপরে উঠে, শেষে শ্রীমান গনেশের সাক্ষাৎ মিললো। একটা বেদীর ওপরে প্রায় ফুট দু'এক উচু একটা কালো পাথরের তৈরী গনেশ মূর্তি হেলান দিয়ে দাঁড় করানো আছে মূর্তিটির শিল্পসৌকর্য সত্যিই প্রশংসা করার মতো। মসৃন এবং নিখুঁত মুর্তিটার মাথার উপর অর্ধ বৃত্তাকার একটা পাথর রাখা আছে। দেখে মনে হ'ল কোন কালে ওটা চাকার মতো বৃত্তাকার ছিল, এবং মুর্তির মাথার পিছনে শোভা পেত। মুর্তিটা ভালই চওড়া, কিন্তু পাথরটা খুব বেশী মোটা নয়। সিতাংশু প্রথমে গতকালের হাতের অবস্থার কথা ভুলে, মুর্তিটাকে তুলবার চেষ্টা করলো। কিন্তু ও হয় মুর্তিটার ডানদিকটা একটু উচু করতে পারে, বাঁদিকটা বেদীর ওপরেই থেকে যায়। না হয় বাঁদিকটা একটু উচু করতে পারলেও, ডানদিকটা বেদীর ওপর থেকে তুলতে পারে না। মোটকথা শত চেষ্টাতেও মুর্তিটাকে নিয়ে পাক খাওয়া দুরে থাক, বেদী থেকে তুলতেই পারলো না। আমি ওকে আর চেষ্টা করতে বারণ করলাম। কারণ গনেশ অসন্তুষ্ট হলে, যায় আসে না, কিন্তু ওর ফিকব্যথা লাগলে, আমাদের উভয়েরই যথেষ্ট যায় আসবে। ও সরে এলে আমি নিজে একবার শক্তি পরীক্ষায় নামলাম। আমাকেও সেই একই অবস্থা থেকে রণে ভঙ্গ দিতে হ'ল। সুতরাং দু'জনেই বিফল মনরথে চুপ করে বসে রইলাম।গনেশ মুর্তির সামনে একটা ব্রহ্মকমল, বোধহয় আগের যাত্রীরা পূজো দিয়ে গেছে। সিতাংশু আগে এই ফুল দেখে নি। ওকে তাই ফুলটা দেখিয়ে, ফুলটার পরিচয় দিলাম। ফুলটার গন্ধ কিন্তু খুব একটা তীব্র নয়। হেমকুন্ড সাহেবে দেখেছি এই ফুলের গন্ধ অতি তীব্র। ফুল দুরে থাক, এর ছোট্ট মুলো গাছের মতো গাছে বা পাতায় হাত দিলেও, হাতে অনেকক্ষণ একটা তীব্র শেয়াল কাঁটা ফুলের মতো গন্ধ থেকে যায়। কাছাকাছি কোথাও ব্রহ্মকমল ফুলের গাছ কিন্তু দেখা গেল না। অথচ বই-এ পড়েছি, এখানে প্রচুর ব্রহ্মকমল, হেমকমল, ও ফেনকমল ফুল হয়। ব্রহ্মকমল আগে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। কিন্তু হেমকমল ও ফেনকমল এর সাথে পরিচয় পর্বটা এবারেই সারবার কথা।

ছোটবেলা থেকে মাঠে, ঘাটে, জলাজঙ্গলে ঘুরে ঘুরে ফড়িং, প্রজাপতি, মাছ, পশুপাখি, গাছের সাথে সখ্যতা। একটু বড় হয়ে স্কুল, এবং তারপরে কলেজ পালানোর নেশায় এর ব্যাপ্তি আরও বৃদ্ধি পাওয়ায়, অনেক নতুন ও অদ্ভুত সব মানুষের সান্নিধ্য লাভের সুযোগ ঘটে। পরবর্তীকালে ছত্রিশ বছরের কর্মজীবনে ও ভ্রমণের নেশায় আরও বিচিত্র চরিত্রের মানুষ, বিচিত্র সংস্কার, বিচিত্র জায়গা দেখার ও বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ ঘটে। সুবীর কুমার রায় কর্ম সুত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক অফিসার ছিলেন। নেশা ভ্রমণ ও লেখা।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা