সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

একে একে গঙ্গা, কুমার ও হরিশ এসে হাজির হ'ল। গঙ্গাকে আমাদের গনেশ মুর্তিটা তোলার ঘটনাটা বললাম। গঙ্গার এসব কুসংস্কারে, খুব একটা বিশ্বাস বা আস্থা আছে বলে মনে হ'ল না। তবু আমাদের খুশী করতে সে হরিশকে, গনেশ মুর্তিটা তুলে একবার পাক খেতে বললো। হরিশ মাল বওয়ার ব্যাপারে কুমারের থেকে অনেক পোক্ত। আমাদের ঐ বিশাল মালপত্রের বেশীর ভাগটাই সে, দেবল থেকে পাহাড়ী রাস্তায়, ভয়ঙ্কর চড়াই উতরাই ভেঙ্গে বয়ে এনেছে। হরিশ বার কতক আমাদের মতো চেষ্টা করেও, গনেশ মুর্তি তুলতে সক্ষম হ'ল না। শেষে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে কোনমতে ওটাকে তুলে, নিজেকে নিজে একপাক ঘুরে, দড়াম করে মুর্তিটাকে বেদীর ওপর নামিয়ে রাখলো। এখন বুঝতে পারছি, এই কুসংস্কারের জন্যই গনেশ মুর্তিটার নীচের দিকের অনেক জায়গায় চটা উঠে গেছে, একটু আধটু ভেঙ্গেও গেছে। মাথার পিছনের পূর্ণ বৃত্তাকার পাথরটাও, এই ভাবেই দু'টুকরো হয়ে থাকতে পারে। সকলে জোর করে কোনমতে এটাকে তুলে আর রাখতে না পেরে, তাড়াতাড়ি কোনমতে বেদীতে নামিয়ে রাখতে গিয়ে, আঘাত লাগিয়ে নীচের অংশটায় চটা উঠিয়ে, ভেঙ্গে ফেলে, নষ্ট করে। অবশ্য মেসার্স পুস্তক লেখক অ্যান্ড পার্টির কথা আলাদা। হরিশের অবস্থা দেখে, আর ঐ বিখ্যাত পর্বতারোহীর চ্যালাদের বীরত্বের কাহিনী পড়ে, সুকুমার রায়ের "পালোয়ান" কবিতার প্রথম লাইনটা আবার একবার মনে হ'ল।

বৃষ্টি এখনও পড়ছে, সঙ্গে আবার রোদও উঠেছে। গঙ্গা এবার আমাদের এগিয়ে যেতে বললো। মালপত্র তুলে বগুয়াবাসার গুহার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। গঙ্গা জানালো, আর খুব বেশীক্ষণের পথ নয়, রাস্তাও সোজা, বিশেষ চড়াই উতরাই নেই। রাস্তার বাঁপাশে একটু ঢালু নীচু জমি। সেখানে অনেক পাথর পড়ে আছে। রাস্তার দু'পাশে, বিশেষ করে বাঁপাশে অজস্র ব্রহ্মকমল ফুটে আছে। অর্থাৎ এখান থেকেই ফুল তুলে গনেশকে দেওয়া হয়েছিল। এখানকার ব্রহ্মকমল গাছের একটা বৈশিষ্ট্য আছে। পাতাগুলো দেবদারু পাতার মতো পাশগুলো একটু কোঁচকানো, আর একটা গাছে একসাথে অনেকগুলো ফুল ফুটে আছে। অবশ্য গাছগুলো অনেকটা জায়গা নিয়ে ঝোপের মতো হয়ে আছে। কাজেই একটা গাছে একটার বেশী ফুল, নাও হতে পারে। কোন কোন ফুলের রঙ আবার একটু লালচে। গঙ্গাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কোনটা ব্রহ্মকমল, কোনটা ফেনকমল, আর কোনটাই বা হেমকমল? ওর বলার ভঙ্গি দেখে বুঝলাম, ও নিজেও জানে না, বা এইসব ফুল নিয়ে ও কোনদিন মাথাও ঘামায় নি। আর সামান্য পথ হেঁটে এসে, আমরা সেই বগুয়াবাসার গুহার সামনে উপস্থিত হলাম। আগেই জেনেছি এটা শ্রী প্রনবানন্দ স্বামীজীর তৈরী। এটা আছে বলেই রূপকুন্ড দেখা সম্ভব। অন্তত আমাদের মতো অতি সাধারণ হতভাগ্য টেন্টহীনদের পক্ষে। এটাকে কিন্তু গুহা বললে ভুল হবে। একটা বড় পাথর একটু ঝুঁকে আছে। তার পাশগুলো পাথর সাজিয়ে একটা গুহা, বা ঘর মতো তৈরী করা হয়েছে। ওপরেও ফাঁক ফাঁক পাথর সাজানো। বৃষ্টি দূরে থাক্, বড় মাপের কুকুরও অনায়াসে ঢুকে যেতে পারে। গুহার ভিতরে একরাশ পাতা ফেলা। আগের যাত্রীদের কাজ। এখানে যারা যখন আসে, তারা তাদের নিজেদের সুবিধা ও পছন্দ মতো ব্যবস্থা করে নেয়। আমাদের কপাল ভাল যে, পাতা ফেলে সম্ভবত বিছানা করার পর, সেরকম বৃষ্টি হয় নি। তা নাহলে পাতা পচে গোবর হয়ে থাকতো। হামাগুড়ি দিয়ে ঘরটায় ঢুকতে হবে। ঘরের ভিতরেও দাঁড়ানো যাবে না। বসে বা শুয়ে থাকতে হবে। ঘরটা একে একবারে ছোট, তা আবার একদিকে পাথরের একটা ঢাল থাকায়, আরও ছোট হয়ে গেছে। আমাদের পাঁচ জনের, তার মধ্যে আবার দু'জনের স্লীপিংব্যাগ থাকায়, রাতে থাকতে বেশ কষ্ট হবে।


বগুয়াবাসার গুহাদুটি দেখতে এই ধরণের ছিল

বোধহয় রাতে না শুয়ে, বসেই কাটাতে হবে। তবে এটা যে পেয়েছি, তাতে আমরা ধন্য। এখানে ১৪৫০০ ফুট উচ্চতায় এই গুহা তো কলকাতার গ্র্যান্ড হোটেলকে হার মানায়। প্রণাম স্বামী প্রনবানন্দজী, আপনাকে শতকোটি প্রণাম। গুহাটার একটু নীচে বাঁদিকে পাথর সাজিয়ে, আর একটা ছোট ঘর তৈরী করা হয়েছে। এটা বোধহয় রান্নাঘর হিসাবেই ব্যবহৃত হয়। দু'দিকে দুটো দরজা। আমি আর সিতাংশু সময় নষ্ট না করে, বড় পলিথিন সিট্ পেতে বেডরুমের ছাদ মেরামত করতে শুরু করলাম। মোটামুটি যাহোক্ একটা থাকার মতো ব্যবস্থা হ'ল। আসবার আগে কিটব্যাগে কিছু বোতল ছিল। হাঁটার তালে তালে ওগুলোর ছলাৎ ছলাৎ তরল আওয়াজ, গঙ্গা অবশ্যই শুনেছে। কিন্তু ব্যাগে তালা লাগানো থাকায়, ও ব্যাগ খুলে দেখার সুযোগ পায় নি। ওরা কিন্তু বুঝতে পেরেছে ব্যাগের মধ্যে কী থাকতে পারে। আমার খুব সামান্য পাহাড়ী অভিজ্ঞতায় দেখেছি, এদের টাকা পয়সা বা ভাল খাবার দাবারের থেকে, দারু ও দাওয়াই এর প্রতি লোভ বা আকর্ষণ অনেক বেশী হয়। হরিশ বারকতক আমাকে জিজ্ঞাসাও করেছে, ব্যাগের ভিতর থেকে জলের আওয়াজ হচ্ছে কেন? আমি চটজলদি জবাব দিয়েছি-- খাশীর ওষুধ আছে। কিন্তু এ প্রসঙ্গ আর এগতে না দেওয়ায়, ও বারবার চুপ করে গেছে। আমার ভয় হচ্ছিল, ওরা না আবার খাশী হয়েছে বলে কাশির ওষুধ চেয়ে বসে। কিন্তু এতটা পথে, সেসব ঝামেলা হয় নি।

এখানে বেশ ঠান্ডা। ঠান্ডা হওয়াই স্বাভাবিক। হরিশ ও কুমার গেল জল আনতে। আমরা চারিদিক ঘুরে দেখলাম, ছবি তুললাম, বাদাম খেলাম। গঙ্গা রান্নাঘরে কাঠ সাজিয়ে, রাতের রান্নার ব্যবস্থা করতে শুরু করলো। এখনও যথেষ্ট আলো আছে। এখন সবে বিকেল, কিন্তু ওর ব্যস্ততা দেখে রাতে ঠান্ডার প্রকোপ সম্বন্ধে একটা ধারণা করতে পারছি। ভয় হ'ল বৃষ্টি না আসে, ভালোয় ভালোয় রাতটা কাটলে হয়। আমাদের মালপত্র সব রান্নাঘরেই রাখা হয়েছে। বেডরুমের মাটিতে একটা বড় পলিথিন সিট পেতে, কাঁধের ঝোলা ব্যাগ ও মালপত্র ওখানে গুছিয়ে রেখে এলাম।

সঙ্গে নিয়ে আসা সব মোমবাতি নষ্ট হয়ে গেছে। গঙ্গা বললো কাঠ জ্বালালে মোমবাতির প্রয়োজন হবে না। রান্নাঘরে একটা সামান্য ব্যবহৃত সরু মোমবাতি আবিস্কার করা হ'ল। বোধহয় আগের কোন যাত্রী ভুল করে ফেলে গেছে, বা পরের যাত্রীদের প্রয়োজনে রেখে গেছে। আমরা সোনার খোঁজ পেয়ে হৈচৈ করে উঠলাম। গঙ্গা বললো ভগবানের দান। তথাস্তু, ভগবান হোক, আর মানুষই হোক, ইচ্ছা করে হোক বা অনিচ্ছায়, ভুলে হোক, আমাদের কাছে এটা যে দান, এটা যে ত্রাণ, এ বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। আমরা এই দান, মাথাপেতে গ্রহণ করে ধন্য হলাম। অনেকক্ষণ পরে কুমার ও হরিশ এক ডেকচি জল নিয়ে আসলো। গঙ্গা বলেছিল এখানে জলের কোন অভাব নেই, অথচ হরিশ ও কুমার জানালো, এখানে কাছে পিঠে কোথাও জল নেই। গঙ্গা বললো কাছে পিঠে কোথাও জল না থাকলেও, বরফের অভাব হয় না। এবার এখানে সেরকম বরফ জমেনি বা জমে থাকলেও, এখন নেই। এরা এক একবার এক একরকম কথা বলে। আমরা এ বিষয়ে কোন কথা বললাম না। ঐ এক ডেকচি জলে হাত ধোয়া, খিচুড়ি রান্না ও জল খাওয়ার কাজ সারতে হবে। কাল সকালের কফি তৈরীর জলও রাখতে হবে। আমার আবার রাতে শোবার আগে অনেকটা জল খেতে হয়। বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত গঙ্গাকে বলতে বাধ্য হলাম "একে আমি জল একটু বেশী খাই, তার ওপর খিচুড়ি খেলে, জলের আরও বেশী প্রয়োজন হবে। তাই আমার জন্য একটু জল রেখ"। গঙ্গা কোন কথা না বলে আলু কেটে, ডেকচিতে ধরবে, এরকম মাপের চাল বসিয়ে দিল। ডেকচিটা আমাদের পাঁচজনের পক্ষে সত্যিই খুব ছোট। তবে আমি প্রায় না খেয়েই থাকি। সিতাংশুর খাওয়ার পরিমানও প্রায় একই রকম। ফলে, যাহোক্ করে কুলিয়ে যায়। গঙ্গাকে বললাম পাঁচজন অতটুকু গুহাতে শোয়া যাবে না, তার চেয়ে আজকের রাতটা গান গেয়ে, গল্প করে কাটানো যাক। গঙ্গা, হরিশ ও কুমার এক কথায় রাজী হয়ে গেল। অন্ধকার নেমে এসেছে। মনে হচ্ছে এই বিরাট পৃথিবীতে আমরাই বোধহয় পাঁচজন প্রাণী। ডেকচিতে খিচুড়ি ফুটছে। আমরা গঙ্গাকে ঘিরে বসে আছি।

গান শুরু করলাম। গান গেয়ে এত বড় রাত কাটানোর মধ্যে একটা বিরাট অসুবিধা দেখা দিল। রবীন্দ্র নাথ, হাজার কবিতা ও গান লিখে, মন মাতানো সুর দিয়ে, পৃথিবীর সেরা সম্মান "নোবেল" আনতে পারেন, নজরুল, তাঁর গানের কথায় ও সুরে শহুরে বাবুদের পাগল করতে পারেন, স্বাধীনতা সংগ্রামী যুবকের রক্তে বিদ্রোহের ঝড় তুলতে পারেন, কিন্তু এঁরা এই নিস্তব্ধ পাহাড়পুরীতে মাত্র তিনজন লোককে খুশী করতে, আনন্দ দিতে, তাঁদের গান শুনে রাত জাগাতে অপারগ। অপরদিকে এই পাহাড়ী তিন যুবকের গান, আমাদের কিছুটা সময় হয়তো চুরি করতে পারে, কিন্তু সারা রাত জাগিয়ে রাখতে অক্ষম। ফলে এই মুহুর্তে প্রয়োজন এমন কিছু গানের, যা ওরা এবং আমরা, উভয়পক্ষই জানি বা শুনি। ফলে শুরু হ'ল "জয় জগদীশ হরে", "গোবিন্দ বল হরি" গোছের কিছু ভক্তিমুলক গান, আর অতি প্রচারিত, সারা দেশে প্রচলিত, কিছু হিন্দী ফিলমি গান। কিন্তু তার স্টক্ আর আমাদের কতো? ফলে একই গান একাধিকবার গোটা, অর্ধেক, সিকি, যতটা জানি, গেয়েও একসময় থেমে গেল। রাত এখনও অনেক বাকী। সিতাংশু জানালো এখন রাত আটটাও বাজে নি। খিচুড়ি রান্না শেষ। খাওয়া দাওয়া সেরে, ভাগের অতি সামান্য পাওনা জলটুকু খেয়ে, আরাম করে বসলাম। গঙ্গা বাঁচিয়ে রাখা জলটা দিয়ে কফি তৈরী করতে বসলো। ওকে কিছু বলতে হয় না, ও আমাদের প্রয়োজন, আমাদের থেকেও বেশী বোঝে, তাই আর একবার হাত মিলিয়ে নিলাম। এক সময় সে পর্বও শেষ হ'ল। আর যে সময় কাটে না।

গতকাল রাতে আমার ভাল ঘুম হয় নি, তার ওপর আজকের সারা দিনের পরিশ্রম, ফলে শরীরটাকে একটু কাত করতে ইচ্ছা করছে। ঘুমও পাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে গান গেয়ে রাত জাগার পরিকল্পনা ত্যাগ করে, আমরা মালপত্র নিয়ে বেডরুমে ঢুকে, পলিথিন সিট দিয়ে দরজার মুখটা ঢেকে দিলাম। সবাই গুছিয়ে বসার পর সঙ্গে আনা অফিসের আর্মড গার্ড, কল্যানদার দেওয়া মিলিটারি "খাশীর ওষুধ" এর বড় বোতলটা বার করে গঙ্গার হাতে দিয়ে দিলাম। আমাদের সঙ্গে স্লিপীংব্যাগ আছে, ওদের সেরকম গরম জামাও নেই, ঠান্ডাও ক্রমশঃ জাঁকিয়ে পড়ছে। ওরা খুব খুশী হ'ল। ওরা ভাবতেই পারছে না যে বাবুরা না চাইতেই, নিজেরা এক ফোঁটা না খেয়ে, গোটা একটা বড় বোতল দিয়ে দিতে পারে। গঙ্গাই বেশী পরিমান খেয়ে ফেললো, হরিশও কিছু খেল। কুমার খায় না, তাই সামান্যই গলায় ঢাললো। গঙ্গা এবার আমাদের শুয়ে পড়তে বললো। সে তার কম্বলটা পেতে আমাদের শুতে বললো। আমরা জানালাম যে আমাদের স্লীপিংব্যাগ আছে, কাজেই ওর একমাত্র কম্বলটা নেওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। সে আবার আমাদের শুয়ে পড়তে বললো। শুতে পারলে তো ভালই হ'ত, কিন্তু শোব কী করে? শুতে গেলে ওদের গায়ের ওপর পা দিয়ে শুতে হবে। গঙ্গা বোধহয় সেটা বুঝতে পেরেই বললো, আমাদের গায়ের ওপর পা তুলে দিন, আমাদের কোন অসুবিধা হবে না। আমরা কিন্তু এ প্রস্তাবে রাজী হ'লাম না। ফলে আবার সংগীত চর্চা শুরু হ'ল। আমি চুপ করে কাত হয়ে হাঁটু থেকে পা মুড়ে, আধ শোয়া হয়ে ছিলাম। গঙ্গা বললো, বাবু আপনার ঘুম পেয়েছে, শুয়ে পড়ুন। তা নাহলে শরীর খারাপ হবে। আমি আর কথা না বাড়িয়ে, স্লীপিংব্যাগটা গায়ে চাপা দিলাম। সিতাংশু একটা শাল গায়ে দিয়ে পাথরে হেলান দিয়ে বসে আছে। তরল পদার্থ বোধহয় এতক্ষণে গঙ্গার শরীরে কাজ করতে শুরু করেছে। হঠাৎ গঙ্গা বললো, "হরিশ, ওরা বাবু, আমরা নোকর। আমাদের কাজ মনিবের সেবা করা"। বলেই আমার হান্টার সু সমেত পা দু'টো ওর পেটের ওপর তুলে দিল। আমি তাড়াতাড়ি উঠে বসে, জুতো খুলে, স্লীপিংব্যাগে ভাল করে ঢুকে, স্লীপিংব্যাগের চেন টেনে শুয়ে পড়লাম। একসময় আমাদের কথা বলাও বন্ধ হ'ল। সিতাংশু বললো তার খুব ঠান্ডা লাগছে। আমি তাকে স্লীপিংব্যাগে ঢুকতে বললে, সে এতক্ষণে জানালো যে, সে ওটা রান্নাঘরে ফেলে এসেছে। সে ওটা নিয়ে আসার কথা বললে, আমি তাকে বারণ করলাম। কারণ এখন বদ্ধ গুহার থেকে বাইরে বেরলে, অবধারিত ঠান্ডা লাগবে। গঙ্গা, হরিশ ও কুমার ঘুমিয়ে পড়েছে, তাই ওদের আর ডাকা হ'ল না। ঐটুকু জায়গাতে ওদের ডিঙ্গিয়ে ঘুটঘুটে অন্ধকারে, বাইরে যাওয়াও খুব অসুবিধাজনক। ফলে সিতাংশু ভালভাবে শাল গায়ে দিয়ে আধশোয়া অবস্থায় রইলো। আমারও যে ঘুম হ'ল তা নয়। তবে কখনও কিছুটা তন্দ্রা, কখনও জেগে উসখুস করে রাত কাটতে লাগলো। আমার অনেকক্ষণ খাওয়া হয়ে গেছে, এবার পিসুরা খাওয়া শুরু করলো।

ছবিঃ ত্রিপর্ণা মাইতি ও লেখক
ছোটবেলা থেকে মাঠে, ঘাটে, জলাজঙ্গলে ঘুরে ঘুরে ফড়িং, প্রজাপতি, মাছ, পশুপাখি, গাছের সাথে সখ্যতা। একটু বড় হয়ে স্কুল, এবং তারপরে কলেজ পালানোর নেশায় এর ব্যাপ্তি আরও বৃদ্ধি পাওয়ায়, অনেক নতুন ও অদ্ভুত সব মানুষের সান্নিধ্য লাভের সুযোগ ঘটে। পরবর্তীকালে ছত্রিশ বছরের কর্মজীবনে ও ভ্রমণের নেশায় আরও বিচিত্র চরিত্রের মানুষ, বিচিত্র সংস্কার, বিচিত্র জায়গা দেখার ও বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ ঘটে। সুবীর কুমার রায় কর্ম সুত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক অফিসার ছিলেন। নেশা ভ্রমণ ও লেখা।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা