সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
রূপকুন্ডের হাতছানি

সিতাংশু জানালো, তিন তাল যাবার তার আদৌ কোন ইচ্ছা নেই। রূপকুন্ডের যদি এই রূপ হয়, তবে খপলু তাল, বিগুন তাল (বিখল তাল), বা ব্রহ্মতালের কী রূপ হতে পারে, ও এখান থেকেই বুঝতে পারছে। আমি ওকে বোঝালাম, জীবনে আর কখনও এদিকে আসা হবে না, কাজেই কষ্ট হলেও দেখে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কিন্ত ও, ওর গোঁ ধরে বসে রইলো। কিছুতেই রাজী করাতে না পেরে বললাম, একজন কুলি সঙ্গে নিয়ে ও যেন গোয়ালদাম চলে যায়। আমি তিন তাল দেখে ওখানে চলে যাব। ও জানালো, ও বাড়ি ফিরে যেতে চায়। আমি কোন কথা না বলে, আগুনের কাছে চলে গেলাম। গঙ্গাকে তিন তালের কথা বলতে, ও খুব উৎসাহ দেখিয়ে বললো ওগুলো খুব সুন্দর তাল, আমরা না দেখে ফিরে গেলে, আমরাই ঠকবো। কী করা উচিৎ ভেবে পাচ্ছি না। বেশ কিছু প্রায় শুকনো জামা কাপড়, গঙ্গা ঘরে নিয়ে গিয়ে, দড়িতে মেলে দিয়ে আসলো। একটু পরে আমি ঘরে গেলে সিতাংশু জানালো, পরশু জন্মাষ্টমী। গঙ্গা তাকে বলেছে ঐ সব জায়গাগুলোয় কিছুই দেখার নেই, তাছাড়া জন্মাষ্টমীতে বৃষ্টি হবেই। ওপথে বৃষ্টি হলে খুব কষ্ট হবে। কাজেই ওখানে যাবার কোন প্রশ্নই ওঠে না।

গঙ্গা আমাকে একরকম কথা, সিতাংশুকে আর একরকম কথা কেন বলছে কে জানে। তবে কী সিতাংশুর মতো ওরাও ঐ তিন তাল যেতে চায় না? উঠে গিয়ে গঙ্গাকে জিজ্ঞাসা করাতে, সে বললো তার ওখানে যেতে কোন আপত্তি নেই, আমরা চাইলেই ওরা আমাদের ওখানে নিয়ে যাবে। ওকে বললাম সিতাংশুকে একটু বুঝিয়ে বলে রাজী করাতে। আমার কথায় গঙ্গা সিতাংশুকে কী বললো ওই জানে, সিতাংশু কিছুতেই রাজী হ'ল না। শেষে গঙ্গাকে সঙ্গে নিয়ে সিতাংশুর সাথে কথা বলে অনেক বুঝিয়ে, ওকে রাজী করালাম। গঙ্গা হঠাৎ এরকম ব্যবহার শুরু করলো কেন কে জানে। সিতাংশুর কথাবার্তায় মনে হ'ল গঙ্গাই ওকে না যাবার জন্য বুদ্ধি দিয়েছে। যদিও সে সারাক্ষণ আমাকে ওখানে যাবার জন্য উৎসাহ দিয়ে গেছে। যাহোক্, আবার নতুন করে মোটামুটি শুকিয়ে যাওয়া পোষাক এবং অন্যান্য সব কিছু গুছিয়ে নেওয়া শুরু হ'ল। অধিকাংশ জামা কাপড়ই দড়িতে ঝোলানো রইলো। রান্না হয়ে গেলে আমরা সবাই বসে গল্পগুজব শুরু করলাম। গঙ্গা জানালো, বৈদিনীতে আলাপ হওয়া ঐ দলটার গাইড রাম সিং, তার মামাতো ভাই হয়। আরও বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা মারার পর, আমরা রাতের খাবার খেয়ে, শুয়ে পড়লাম। এখানকার বাংলোটা বেশ ভাল। বোধহয় এই গ্রামটা বেশ বড়, এবং এই পথের প্রায় সব যাত্রীই রাতে এখানে থাকে বলেই, এটাকে একটু যত্ন করে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয়।

ঘুম ভাঙ্গলো বেশ ভোরে। বৃষ্টি এখন আর পড়ছে না। পরিস্কার আকাশ। রাতে ভালভাবে শুতে পেরে এবং চিন্তামুক্ত হতে পেরে, শরীর ও মন বেশ তরতাজা ঝরঝরে। কফি ও জলখাবার খেয়ে আমরা মালপত্র নিয়ে রাস্তায় নামলাম। গঙ্গা কাল রাতে আমাদের লেখা চিঠিগুলো পোষ্ট করার ব্যবস্থা করতে গেল। ও ফিরে এলে আমরা তিন তালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। আমাদের কথায় সিতাংশু যাচ্ছে বটে, কিন্তু মুখ গোমড়া করে। আসলে ও যাচ্ছে না, যেতে বাধ্য হচ্ছে।

পাহাড়ী পথে এঁকেবেঁকে অনেকটা পথ পার হয়ে এলাম। বেশ জঙ্গলের পথ, চারিদিকে শুধু গাছ। চড়াই, উতরাইও বেশ ভালই। ফলে রাস্তাও বেশ কষ্টকর। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের ও ভয়ের ব্যাপার হ'ল, গঙ্গা সম্ভবত এই পথ চেনে না। এখানে রাস্তা বলে কিছু নেই। এমন কী পায়ে চলা পথের যে দাগ থাকে, যা দেখে বোঝা যায় এটাই রাস্তা, তাও প্রায় নেই। গঙ্গা ভুল পথে যাচ্ছে কিনা চিন্তা হ'ল। মাঝেমাঝেই ও দাঁড়িয়ে পড়ে ভ্রুর কাছে হাত রেখে দুরে কিছুক্ষণ লক্ষ্য করে, আমাদের ওর সাথে এগতে বলছে। ওকে জিজ্ঞাসা করলে বলছে, সামনের ঐ চূড়াটার পরেই তাল পাওয়া যাবে। চড়াই পথে অনেক ঘুরে দুরের চূড়া পার হওয়ার পর, আবার সেই ভ্রুর কাছে হাত নিয়ে এসে দুরে এদিক ওদিক কিছুক্ষণ দেখে, আবার জানাচ্ছে সামনের চূড়ার পরে তাল পাওয়া যাবে। এক সময় আমি গঙ্গাকে জিজ্ঞাসা করলাম, সে এই পথ চেনে কিনা, বা আগে এই পথে কখনও এসেছে কিনা? ও আমাদের ভয় পেতে বারণ করে জানালো, এই পথে কোন রাস্তা নেই। আগেও সে এসেছে, তবে অনুমান করে দিক নির্নয় করে। এবারও ও আমাদের ঠিক ঐ তিন তালে পৌঁছে দেবে। এসব ব্যাপার দেখে, সিতাংশুর গোমড়া মুখ আরও গম্ভীর হয়ে গেছে। আমার সাথে একটাও কথা বলছে না। এদিকে আস্তে আস্তে বেলাও বেশ বেড়ে গেছে। এক জায়গায় বসে আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। কুমার জল নিয়ে এল। এতক্ষণে সিতাংশু গঙ্গাকে জিজ্ঞাসা করলো রাস্তা আর কতটা বাকী? গঙ্গা জানালো বিকেলের মধ্যে আমরা পৌঁছে যাব। একটু বসে বিশ্রাম নিয়ে, আমরা আবার একই পদ্ধতিতে এগিয়ে চললাম। আবার সেই একই রকম ভাবে আন্দাজে পথ চলা। তবে এবার মাঝেমাঝেই গঙ্গা সান্ত্বনা বাণী শোনাচ্ছ—"কোন ভয় নেই"। আমার ভয়টা অন্য কারণে। ইতিমধ্যে আমরা বেশ কয়েক কিলোমিটার পথ আন্দাজের ওপর ভর করে এগিয়ে এসেছি। এতক্ষণের পথে একটা গ্রাম তো দুরের কথা, একটা মানুষও চোখে পড়ে নি। এখন যদি পথ ভুল হয়ে থাকে, তবে রাতে না পারবো ওয়ান ফিরে যেতে, না পারবো কোন একটা তালের কাছে পৌঁছতে। কারণ সামনে বা পিছনে, যে দিকেই যাই না কেন, আবার যেতে হবে সেই আন্দাজের ওপর ভর করেই। মুখ্য রূপকুন্ড তালের যদি ঐ রূপ হয়ে থাকে, গৌণ এই তিন তালের সৌন্দর্য নিয়ে আমার মনেও যথেষ্ট সংশয় প্রথম থেকেই ছিল। একমাত্র আমার জেদেই, সকলে এ পথে আসতে বাধ্য হয়েছে। এখন সিতাংশুর আরো ভয়ানক রেগে যাওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল।

রূপকুন্ডের হাতছানি

ইলশেগুড়ি বৃষ্টি শুরু হ'ল। মাঝে মাঝে সামান্য জোরে হয়ে, আবার সেই একই ভাবে এক নাগাড়ে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। গঙ্গার কথায় একটার পর একটা চূড়া পার হয়ে, আমরা একটা চূড়ার ওপর এসে দাঁড়ালাম। আমি আর সিতাংশু পাশাপাশি, গঙ্গা আমাদের সামনে, অনেকটা নীচে। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেখান থেকে হঠাৎ যেন ঢালু পাথর বিছানো মাঠ অনেক নীচে নেমে গেছে। গঙ্গা হঠাৎ অনেক ওপরে আমাদের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে তর্জনী ঠেকিয়ে হি-স্-স্-স্ করে একটা শব্দ করে আমাদের চুপ করে থাকতে, কথা না বলতে ইশারা করলো। আমরা কিছু না বুঝেই চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। মিনিট কয়েক পরে গঙ্গা চিৎকার করে বললো—"শালা বকরী"। আমরা নীচে নেমে এলাম। এতক্ষণে ব্যাপারটা জানা গেল। ঘটনাটা আর কিছুই নয়, অনেক নীচ থেকে একটা কালো রঙের ছাগল আসছিল, ওটাকে দুর থেকে দেখে গঙ্গা ভাল্লুক মনে করেছিল। তার মানে এখানে ভাল্লু্কের উৎপাতও আছে বোঝা গেল। আমরা এগিয়ে চললাম। বোধহয় বিশ-পঁচিশ পা এগিয়েছি, হঠাৎ পিছন থেকে গঙ্গার ডাকে পিছন ফিরতে গঙ্গা বললো, "বাবু, বকরী মর্ গিয়া"। এই তো ছাগলটাকে দেখলাম, এর মধ্যে এমন কী হ'ল, যে মরেই গেল! গঙ্গার কাছে ফিরে এসে দেখি ছাগলটা বোধহয় অসুস্থ, দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আর তারপরেই মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। গঙ্গা তাকে আবার দাঁড় করিয়ে দিল, কিন্তু ছাগলটা আবার মাটিতে পড়ে গেল। বোঝা যাচ্ছে যেকোন কারণেই হোক, ছাগলটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে, দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। এক্ষেত্রে আমাদের করণীয়-ই বা কী থাকতে পারে, তাই এগিয়ে যাবার উদ্যোগ নিতেই, গঙ্গা বললো- "বাবু, টাং কাট লি"? ও ঠিক কী বলছে বুঝতে না পারায়, ও আবার বললো, টাং কাট লি? কলকাতা থেকে যাবার সময় প্রয়োজন হতে পারে ভেবে, একটা চামড়ার খাপে ভরা বড় ভোজালির মতো ছুরি নিয়ে গেছিলাম। সেটা গঙ্গার ব্যাগেই আছে। গঙ্গা সেটা দিয়ে অর্ধমৃত ছাগলটার পাগুলো কেটে নিতে চায়, রাতে মাংসের খিচুড়ি বানাবার জন্য। শুনে জিভে জল এসে গেল, কিন্তু পরমুহুর্তেই সাবধান হয়ে গেলাম। ওকে এই কাজ করতে বারণ করে বললাম- প্রথমত, ছাগলটা অসুস্থ, কিন্তু মরে নি। দ্বিতীয়ত, এখানে ছাগল যখন আছে, তখন ওর মালিকও কাছেপিঠে কোথাও আছেই। এই দীর্ঘ পথে এখন পর্যন্ত কোন মানুষ দেখিনি। কাজেই পা কাটা ছাগল দেখে তার মালিক সহজেই বুঝতে পারবে, আমরাই তার ছাগলের হত্যাকারী। সেক্ষেত্রে এই নির্জন, অচেনা, অজানা, জায়গায় বিপদ হতে পারে। গঙ্গা জানালো, ছাগলটা অসুস্থ, ওটা একটু পরেই মরে যাবে। কাজেই ওটাকে কেটে ফেললে ছাগলের মালিক কিছু মনে করবে না, বা কিছু বলবে না। এ যুক্তি মেনে নিতে পারলাম না। গঙ্গা আবার রাতের লোভনীয় খাবারের কথা মনে করিয়ে দিয়ে পাগুলো কেটে ফেলতে চাইলো। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমি ওর মধ্যে আগের সহজ সরল গঙ্গাকে খুঁজে পেলাম না। এরমধ্যে ওপরের সেই জায়গাটায়, যেখানে কিছুক্ষণ আগে আমি ও সিতাংশু গঙ্গার ইঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ছিলাম, কুমার ও হরিশ এসে উপস্থিত হ'ল। গঙ্গা চিৎকার করে কুমারকে ডাকলো। কুমার ও হরিশ ছুটে নেমে এলে, গঙ্গা জানালো বকরী মর্ গিয়া। চোখের পলক পরার আগেই কুমার বললো, টাং কাট লো। মরেছে, সব শিয়ালের এক রা। এবার ছাগলের পা কাটা থেকে এদেরকে রোখা, আর বোধহয় আমার পক্ষে সম্ভব হ'ল না। আমি ওদের অনেক ভাবে বোঝালাম। সিতাংশুও ওদের এ কাজ থেকে বিরত থাকতে বললো। ওরা অনেক ভাবে আমাদের বুঝিয়েও যখন আমাদের রাজী করাতে পারলো না, তখন গঙ্গা আমাদের এগিয়ে যেতে বললো। আমরা এগিয়ে চললাম। বোধহয় মিনিট তিনেকের পথ হেঁটে এসে, গঙ্গা আবার আগের জায়গায় ফিরে গেল। আমরা বিপদের গন্ধ পেয়ে আবার পিছিয়ে এসে ছাগলটার কাছে এলাম। গঙ্গা কিন্তু ছুড়িও বার করলো না, ছাগলটার পা কাটারও কোন চেষ্টা করলো না। এমন কী টাং কেটে নেওয়ার জন্য আমাদের নতুন করে অনুরোধ পর্যন্ত করলো না। সে তার হাতের কঞ্চিটা দিয়ে ডাংগুলি খেলার মতো, ছাগলটাকে অনেক নীচে ফেলে দিল। আবার নীচে ছাগলটার কাছে ছুটে গিয়ে, ছাগলটার পেটের নীচে কঞ্চিটা দিয়ে একই কায়দায়, ওটাকে আবার বেশ কিছুটা নীচে তুলে ফেলে দিল। জায়গাটা ঢালু মাঠের মতো, ইতস্তত ছোট বড় পাথর পড়ে রয়েছে। ফলে অনেকটা দুরে ছিটকে পড়ে, ছাগলটা গড়াতে গড়াতে আরও খানিকটা নীচে চলে গেল। এইভাবে তিন-চারবার ছাগলটাকে ফেলে, একটা বড় পাথর দিয়ে তাকে আঘাত করে, সে আমাদের কাছে ফিরে এসে বললো, "চলিয়ে"। ছাগলটা কিন্তু তখনও মরে নি। টাং-ই যদি না কাটবে, তবে ছাগলটাকে এইভাবে আঘাত করার কী কারণ থাকতে পারে বুঝলাম না। তবে কী আমাদের ওপর রাগটা ছাগলের ওপর বর্তালো? আমরা আবার এগিয়ে চললাম এবং একটু আগে যে জায়গাটা থেকে ফিরে এসেছিলাম, সে জায়গাটায় এসে পৌঁছলাম। গঙ্গা, বহু নীচে বিন্দু বিন্দু কালো, সাদা রঙের কিছু দেখিয়ে বললো, বাবু ঐ দেখুন নীচে কত ছাগল, ভেড়া চরছে। ওখান থেকেই এই বকরীটা কী ভাবে এখানে চলে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ওটাকে এমন ভাবে আঘাত করা হয়েছে যে, ওটা কিছুক্ষণের মধ্যেই মরে যাবে। যাবার পথে বকরীর মালিককে বকরীর সন্ধানটা দিয়ে যাব। ও তখন বাধ্য হবে আপনাদের কাছে ঐ বকরীর মাংস সামান্য কিছু দামে বিক্রী করে দিতে। কারণ এখানে একটা গোটা ছাগল খাবার মতো লোক কোথায়? আপনারা যদি কিনতে রাজী না হন, তবে বিনা পয়সায় আপনাদের ও মাংস দিয়ে যাবে। আজ রাতে মাংসের খিচুড়ির পাকা ব্যবস্থা করে দিয়ে এলাম। এতক্ষণে গঙ্গার ছাগলটাকে পৈশাচিক ভাবে আঘাত করে আধমরা করে রেখে যাবার কারণ বোঝা গেল। ও কেন ঐ ভাবে ছাগলটাকে আঘাত করলো, তাও বোঝা গেল। ছাগলের দেহে কোন আঘাতের চিহ্ন রেখে গেল না। ওর দুরদর্শিতা দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না। ভয়ও হ'ল, মাংসের লোভে যেভাবে ও ছাগলটাকে আধমরা করে রাখলো, টাকার লোভে আমাদের না আবার পুরো মেরে রেখে যায়। ছাগলের তবু মালিক আছে, আমাদের তো ত্রিসীমানায় কেউ নেই। আস্তে আস্তে একসময় আমরা ছাগলের মালিকের সাম্রাজ্যে এসে উপস্থিত হ'লাম। তিনি তাঁর একপাল ছাগল, ভেড়া নিয়ে অবস্থান করছেন। গঙ্গা তাকে খুব দুঃখের সঙ্গেই জানালো যে, তার একটা বকরী দলছুট হয়ে ওপরে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। উত্তরে নিরুত্তাপ কন্ঠে মালিক জানালো, উসকো তো বিমার থা। আর কোন কথাবার্তা উভয় পক্ষের মধ্যে না হওয়ায়, আমরা এগলাম।

একে একে আমরা তিনটে তালই দেখলাম। তাল বলতে কেউ যদি এগুলোকে নৈনিতাল জাতীয় তাল বলে ভাবে, তবে এদের দর্শন করলে সে মর্মাহত হবে। ব্রহ্মতাল, বিগুন তাল (বিখল তাল) ও খপলু তাল আসলে তিনটে ডোবা। বিগুন তালে দেখি কয়েকটা বাচ্চা ছিপ দিয়ে মাছ ধরছে। মাছ বলতে ছোট ছোট পুঁটি মাছের মতো সাইজের কী একটা মাছ। ছেলেগুলো কোথায় থাকে, ছিপের বঁড়শি কোথায় পেল, বা এই পুকুরে মাছ কোথা থেকে এল, কিছুই জানিনা। তবে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম—এরা ছিপের ফাৎনা জিনিসটার সঙ্গে পরিচিত নয়। ফলে মাঝে মাঝে আন্দাজে ছিপটা টেনে, মাছ ধরার চেষ্টা করছে। ছোট ছোট কয়েকটা মাছ ধরেছে, তাই বিশ্বাস করতেই হ'ল যে এই পুকুর, বা তালে মাছ আছে। আমি একটা ছোট্ট চারা গাছের ডাল ভেঙ্গে, তার ভিতরের শোলার মতো নরম অংশটা দিয়ে ফাৎনা বানিয়ে দিলাম। এবার দিব্বি ফাৎনা নড়তে শুরু করলো। ওরাও খুব খুশী। এত বড় একটা আবিষ্কারের জনক হিসাবে আমাকে পেয়ে, ওরা খুব আনন্দিত হ'ল বটে, কিন্তু আমাকে বেশীক্ষণ মাছ ধরার ডেমো দিতে রাজী হ'ল না।

ছোটবেলা থেকে মাঠে, ঘাটে, জলাজঙ্গলে ঘুরে ঘুরে ফড়িং, প্রজাপতি, মাছ, পশুপাখি, গাছের সাথে সখ্যতা। একটু বড় হয়ে স্কুল, এবং তারপরে কলেজ পালানোর নেশায় এর ব্যাপ্তি আরও বৃদ্ধি পাওয়ায়, অনেক নতুন ও অদ্ভুত সব মানুষের সান্নিধ্য লাভের সুযোগ ঘটে। পরবর্তীকালে ছত্রিশ বছরের কর্মজীবনে ও ভ্রমণের নেশায় আরও বিচিত্র চরিত্রের মানুষ, বিচিত্র সংস্কার, বিচিত্র জায়গা দেখার ও বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ ঘটে। সুবীর কুমার রায় কর্ম সুত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক অফিসার ছিলেন। নেশা ভ্রমণ ও লেখা।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা