সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
সেই ছোট্ট কালো কুকুরটা

চেনা অচেনার যার সঙ্গেই দেখা হয় বিলি ম্যান্সফিল্ড তাকে ওই ছোট্ট কালো কুকুরটার কথা বলে। একটা ছোট কালো কুকুর নাকি সর্বক্ষণ ওর পিছন পিছন ঘোরে! মজার ব্যাপার হল সেই কুকুরকে বিলি ছাড়া আর কেউ দেখতে পায় না। লোকে তাই বিলিকে পাগল বলে। অনেক সময়ই দেখা যায় সেই অন্যদের কাছে অদৃশ্য কুকুরটাকে তাড়ানোর জন্যে বিলি চিৎকার করছে, বা এটা সেটা ছুঁড়ে মারছে, কিন্তু কুকুরকে নাকি তাড়ানো যায় না, সে আবার ঠিক ফিরে আসে।

সাইলাস বার্টনের সঙ্গে যেদিন মারামারিটা হয়েছিল সেদিনই কুকুরটাকে প্রথম দেখে বিলি। তখন বিলির বয়স অনেক কম। বার্টন পরিবারের সঙ্গে ম্যান্সফিল্ড পরিবারের বহু পুরনো ঝগড়া। একদিন বিলি সাইলাসকে ঘোড়ায় চড়ে আসতে দেখে রাগের মাথায় বন্দুকটা বার করে ফেলে। সাইলাসও নিজেরটা বার করেছিল কিন্তু সে ঘোড়া থেকে নামার আগেই প্রথম গুলিটা চালিয়ে দেয় বিলি। গুলিটা সাইলাসের লাগে এবং সে ঘোড়া থেকে পড়ে যায় এবং হাতের বন্দুকটা দূরে নাগালের বাইরে ছিটকে পড়ে। এরপর তার ঘোড়াটা ভয়ে পালিয়ে যায়।

মাটিতে পরে গিয়ে বিলির কাছে কাকুতি মিনতি করে নিজের প্রাণের ভিক্ষা চেয়েছিল সাইলাস কিন্তু বিলির মন ভেজেনি। গুলি করেই হত্যা করেছিল সে সাইলাসকে। ছোট কালো কুকুরটা তখন সাইলাসের সঙ্গেই ছিল। মনিবের মৃত্যুর পর সে ব্যকুল হয়ে তায় মুখ চেটে দিচ্ছিল আর বিলিকে দেখে প্রবল ঘেউ ঘেউও করছিল। বিলির তখন মাথায় রক্ত চড়ে গেছে। দিগবিদিগ জ্ঞানশূন্য হয়ে সে তখন কুকুরটাকেও গুলি করে মেরে ফেলেছিল।

অনেকদিন আগেকার ঘটনা এটা। তখন পুলিশ, আদালত, আইন শৃঙ্খলা বলে তেমন কিছু ছিল না তাই বিলি পার পেয়ে যায়। কেউ তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে জেলে পুরে দেয়নি। ঘটনাটার পর সারাটা রাত কুকুরের কান্না শুনেছিল বিলি নিজের কেবিনের বাইরে। কাঠের দরজায় যাঁচড় কেটেছিল কুকুরটা সারারাত ভিতরে ঢোকার জন্যে। বিলি ক্রমাগত নিজেকে বলেছিল, “নাহ, এটা হতে পারে না! এটা আমার মনের ভুল। কুকুরটা বেঁচে থাকতে পারে না, নিজের হাতে মেরেছি ব্যাটাকে আমি! মরে গেছে সেটাও নিজের চোখে দেখেছি।”

পরদিন সকালে কেবিন থেকে বেরিয়ে কুকুরটাকে দেখতে পায় বিলি। দরজার বাইরে বসে ওর জন্যে অপেক্ষা করছিল। তারপর থেকে এমন একটাও দিন হয়নি যখন কুকুরটাকে দেখেনি বিলি, আর এমন কোন রাত হয়নি যখন সে ভিতরে ঢোকার জন্যে দরজার আঁচড় কাটেনি!

সেই দিন থেকেই বিলি নিজের চতুর্দিকে কালো লোম দেখতে পায়। ওর বাড়ির আসবাবে, বিছানায় এমনকি খাবারেও কালো লোম পায় সে। ঘরে বাইরে সর্বত্র কুকুরের গায়ের গন্ধ। অন্তত বিলি তো তাই বলে।

তাকে যখন কেউ বলে, "কোথায় কুকুর? আমি তো কিছু দেখতে পাচ্ছি না!"
বিলি তখন প্রচন্ড খেপে যায় আর বলে, "তুমি দেখতে পাচ্ছ না তো কী? আমি তো দেখতে পাচ্ছি! আর আমি তো তোমার মতনই পাগল, তার চেয়ে বেশি তো নই!"

সেই ছোট্ট কালো কুকুরটা

ওই ভাবেই চলতে থাকে সব কিছু বছরের পর বছর। তারপর একদিন সকালে উঠে লোকজন দেখে যে বিলির বাড়ির চিমনি থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে না। তারা তখন দল বেঁধে গিয়ে দেখে দরজা খোলা আর বাড়ির ভিতরে বিলি নেই। অনেক খোঁজাখুঁজির পর বরফে ঢাকা একটা মাঠের ধারে বিলির মৃতদেহটা পাওয়া যায়। জায়গাটা ওর বাড়ির চেয়ে কিছুটা দূরেই। বিলির শত্রু সংখ্যা কিছু কম ছিল না তাই প্রথমে অনেকে ভেবেছিল তাদেরই কেউ ওকে খুন করেছে কিন্তু পরে দেখা যায় যে ওর দেহে আঘাতের কোন চিনহ নেই। তাছাড়া আশপাশে বিলি ছাড়া অন্য কারো পায়ের ছাপও পাওয়া যায়নি।

ডাক্তার দেখে বলেছিলেন হয়তো বার্ধক্য জনিত কারণের মৃত্যু হয়েছিল বিলির কিন্তু ওর মৃতদেহটাকে যারা দেখেছিলেন তাদের মনে একটা খুঁতখুঁত থেকেই গিয়েছিল। বিলির জামাকাপড়ে কুকুরের কালো লোম ছিল, মৃতদেহের মুখেও কুকুরের লোম দেখেছিল তারা। জায়গাটায়ে কুকুর কুকুর গন্ধও পেয়েছিল তারা কিন্তু কেউ কোন কুকুরকে দেখতে পায়নি।


(এই গল্পটা অ্যালভিন শোয়ার্টজের (এপ্রিল২৫, ১৯২৭-মার্চ১৪, ১৯৯২) লেখাগল্প 'দা লিটিল ব্ল্যাক ডগ'এর অনুবাদ।অ্যালভিন শোয়ার্টজ কিশোর এবং অল্পবয়সী পাঠকদের জন্যে প্রাচীন উপকথা, লোককথা ঘেঁটে গল্প লিখতে ভালবাসতেন যাতে তারা সেই সব গল্পগুলোর কথা জানতে পারে। নিজের পছন্দ মত একটু আধটু বদলও অবশ্য তিনি করে দিতেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি রাজ্যের প্রিন্সটন শহরে বাস করতেন তিনি। পঞ্চাশের ওপর বই লিখেছেন কিশোরদের জন্যে। )


ছবিঃ ঈশিতা চন্দ্র

অনন্যা দাশ কর্মসূত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। নেশা বই পড়া আর গল্প লেখা। শিশুদের জন্যে সামাজিক গল্প ও কিশোরদের জন্যে রহস্য গল্প লিখতে ভালবাসেন। বাংলাতে প্রকাশিত অধিকাংশ শিশু কিশোর পত্রিকাতেই লিখেছেন কোন না কোন সময়ে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা