সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo


"বলছি।" কাকা একটু দম নিয়ে বললেন, "তবে একটু ধৈর্য ধরে শুনতে হবে।" আমরা গুছিয়ে বসার পর তিনি আবার শুরু করলেন:
"ওই অঙ্কগুলি কষেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ সান্যাল, যিনি সম্পর্কে আমার প্রপিতামহ অর্থাৎ ঊর্ধ্বতন তৃতীয় পুরুষ। তোমরা হয়তো জানো, প্রাক-স্বাধীনতা মেদিনীপুর প্রসিদ্ধ ছিল বিদ্যাচর্চা আর স্বাদেশিকতার জন্য। এই শ্রীকৃষ্ণ সান্যালের রক্তে এর দুইই ঢুকে গিয়েছিল। অল্প বয়েস থেকেই তাঁর ছিল অঙ্কে অসাধারণ পারদর্শিতা। আর স্কুলে থাকতেই তিনি স্বদেশী আন্দোলনেও জড়িয়ে গিয়েছিলেন। বিপ্লবী দীনেশ গুপ্তের ফাঁসির পর হিজলি জেলে দুই বন্দি বিপ্লবীর মৃত্যু অজস্র যুবকের বুকে প্রতিশোধের স্পৃহা জাগিয়ে তোলে। কয়েকজন অত্যাচারী শাসক তাদের গুলিতে নিহতও হন।
শ্রীকৃষ্ণকে দেখেশুনে অবশ্য বিপ্লবীরা বুঝেছিল এর হাতে ট্রিগার নয়, কলমই বেশি মানায়। তাই তাঁর ওপর ছিল লেখালেখি আর যোগাযোগের ভার। ঐ যে ধাতুর ফলকটা দেখলে, ওটা বিপ্লবীরা তৈরি করেছিল, যাতে খোদাই করা ছিল 'স্মরণে ১৯৩১'। অমন অনেকগুলি চাকতি তারা তৈরি করেছিল, নতুন কাউকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য সেগুলো চালান করত। এই চালানের দায়িত্বটা প্রায়ই থাকত শ্রীকৃষ্ণের ওপর। অমন একটা চাকতিই তাঁর কাছে রয়ে গিয়েছিল, সেটাই তোমাদের সূত্র হিসেবে রেখেছিলাম।"
"আর অমন একটা স্মৃতিচিহ্ন তুই হারিয়ে ফেললি? ওটা গেলই বা কোথায়?" আমি বলে উঠলাম।
পেঁচো মৃদু ধমকে আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, "কাকা, আপনি বলুন।"
"যা বলছিলাম। যোগাযোগের কাজে শ্রীকৃষ্ণকে প্রচুর ঘুরতে হত, প্রায়ই পায়ে হেঁটে। সে যুগে এত গাড়িঘোড়া ছিল না, থাকলেও ভাড়ার পয়সা কম পড়ত। শ্রীকৃষ্ণ তাঁর অঙ্কের মগজ দিয়ে বুঝেছিলেন যে আগেই কিছু আঙ্কিক হিসেব করে নিলে অনুমান করা যায় কীভাবে সবচেয়ে কম হেঁটে একই ঘোরাঘুরির কাজ সারা যায়। তিনি সেই নিয়ে নানা আঁকজোকও কষেছিলেন।"
"ট্র্যাভেলিং সেলসম্যানস প্রবলেম – যা আজও দুনিয়ার অন্যতম সেরা সমস্যা! যার ভারতে প্রথম অপ্রত্যক্ষ প্রচেষ্টা হিসেবে নথিবদ্ধ আছে প্রবাদপ্রতিম সংখ্যাতাত্ত্বিক প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের কাজ!" পেঁচো অবাক হয়ে বলে উঠল।
"সে তুমি ভালো বুঝবে। এ ছাড়াও আরও অনেক সমস্যা নিয়ে তিনি মাথা ঘামাতেন, যার বৃত্তান্ত লিপিবদ্ধ থাকত তার অঙ্ক কষা দিস্তে দিস্তে কাগজে। কালের প্রকোপে তার কিছু হারিয়ে গেছে। কিছু অবোধদের হাতে পড়ে নষ্ট হয়েছে। এই ক'টি আমার হাতে পড়ার পর আমি পরম যত্নে রক্ষা করেছি। শুনেছিলাম বুড়ির বর অঙ্কের যাদুকর আর তার অসাধারণ ব্রেন। পরীক্ষা করে দেখলাম সেসব একটুও অতিরঞ্জিত নয়। তাই জ্যোতির্ময়, আমি এখন তোমার হাতে এগুলো দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চাই।"
পেঁচোও বিনয়াবতার হয়ে বলল, "না না কাকাবাবু, আপনি বেশি শুনেছেন। আমি অঙ্কযুদ্ধের একজন সামান্য সৈনিকমাত্র। কিন্তু এই অমূল্য সম্পদ আমিও আপনার মতো বুক দিয়ে রক্ষা করব। চোখ বুলিয়ে দেখলাম শুধু ট্র্যাভেলিং সেলসম্যান সমস্যা নয় – যুগ্ম মৌলিক সংখ্যা, ফিবোনাক্কি সিরিজ প্রভৃতি বিষয়েও তাঁর কাজ এই কাগজগুলোয় রয়েছে। হতে পারে এর মধ্যে কিছু চিন্তা আজকের যুগেও মৌলিক। তাহলে এটা এক যুগান্তকারী দলিল হবে। আবার এও হতে পারে যে এই কাজের অনেকটাই ওনার আগেপরে অন্য কেউ করে ফেলেছেন। সেক্ষেত্রেও এর ঐতিহাসিক মূল্য অসীম।"

"কিন্তু এসবের মানে কী?" উত্তেজনা একটু থিতোবার পর কুহেলি একটা দলিল কাকার মুখের কাছে তুলে ধরে বলল, "তুমি এই বাড়িটা আমার নামে দানপত্র করেছ – কিন্তু কেন?"
"তুই তো জানিস, আমি নিঃসন্তান। তোর কাকিমা চলে যাওয়ার পর আমার কাছের বলতে ছিলি তুই। তোকেই এই বাড়িটা দেওয়ার ইচ্ছে আমার বরাবরের। শুধু ভেবেছিলাম তোর বর কেমন হয় একবার দেখে নিয়ে দলিলটা তোর হাতে দেব। কে জানে, সে যদি উড়নচণ্ডি, বদ হয়? তারপর অবশ্য শুনলাম তোর বর তেমন নয়, তবে একটু পাগলাটে গোছের। সব সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে অঙ্ক কষে আর মাঝে মাঝে সব অদ্ভুত রহস্যে জড়িয়ে পড়ে। সেসব শুনে অবশ্য আমার মনে জ্যোতির্ময় সম্বন্ধে আশঙ্কা নয়, আগ্রহই জন্মাল। এখন তোদের দেখে বুঝলাম ও এক অনন্য ছেলে, যা লাখে এক হয় না। আর তোরা দুজন দুরকম হলেও তোদের অদ্ভুত মিল। তোরা সুখী হবি, অন্যদেরও ভালো রাখবি।
তবে ছোঁড়া, বৌ'র সাথে সম্পর্ক যদি অটূট রাখতে চাও তো তার জন্মদিনটা মনে রেখো। প্যান কার্ড সব সময় হাতের কাছে পাবে না।"
"তার দরকার হবে না, কাকা।" পেঁচো সবিনয়ে বলল, "ফেসবুকই মনে করিয়ে দেবে।"
সম্মিলিত হাসি থামলে পেঁচো বলল, "কিন্তু কাকা, আপনি বাড়িটা দান কেন করবেন? ওটা আপনারই থাক না। নিতান্তই যদি চান বরং উইল করুন।"
"কেন জানো? ঐ যে 'আমরা যথা হইতে আসি তথায় ফিরিয়া যাই', ঐ ডাক আজ আমার মন শুনতে পেয়েছে। এবার আমি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ব। এখানে-ওখানে ঘুরব, হয়তো মাঝে মাঝে ধর্মশালায় আশ্রয় নেব। তাহলে বোধহয় আমার পেনশনের টাকা আর সামান্য সম্বলেই হয়ে যাবে।"
"কিন্তু এভাবে তুমি কদ্দিন ঘুরে ঘুরে বেড়াবে, মেজকা?"
"কেন, ঘুরতে ঘুরতে পা দুটো ক্লান্ত হয়ে পড়লে তোদের বাড়িতে একটু আশ্রয় মিলবে না?"

পেঁচোর গুপ্তধন সন্ধান

"যে কোনও দিন। আপনি আজই চলুন না, কাকা? আর এর সাথে আপনার দানপত্রের কোনও সম্বন্ধ নেই। আসলে আমার মনে হয় আপনার ভাইঝি –"
মাথা নিচু করে কুহেলি বলল, "তুমি যখন বাড়িটা আমাকে দিয়েই দিয়েছ, না নেওয়ার প্রশ্ন আসে না। কিন্তু এটা যদি আমি আবার কোনও সেবা প্রতিষ্ঠানকে দান করি, তোমার আপত্তি আছে?"
"কীসের আপত্তি? তোর জিনিস তুই যা খুশি কর না! কিন্তু তোর অসুবিধাটা কোথায়?"
"আসলে জানো – বিয়ের পর আমরা ঠিক করেছিলাম আমাদের ভবিষ্যত আমরা নিজেদের হাতেই গড়ব। এ ব্যাপারে কারও সাহায্য নেব না।"
"খুবই সদিচ্ছা। আশীর্বাদ করি তোরা এই ইচ্ছে বজায় রেখে সফল হ। তবে এই দানপত্রের ব্যাপারে আরও কিছু ফর্মালিটি আছে। একজন অ্যাডভোকেট এই নিয়ে তোদের সাথে কথা বলবেন। তাঁর কাছ থেকে যা যা জানার জেনে নিস।"
রহস্য ভেদ হয়েছে। তবু যেন সেদিনের মধ্যাহ্নভোজ কেমন বিষাদময় পরিবেশে শেষ হল। বিকেলে কাকা আমাদের স্টেশনে পৌঁছে দিলেন। ট্রেনে ওঠার আগে কুহেলি সজল নেত্রে বলল, "কাকা, তোমার ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ার ইচ্ছে হয়েছে, ভালো। তবে বেরোবার আগে একবার আমাদের কাছে ঘুরে যেও।"
"আসবো রে পাগলি।" কাকা ওর মাথায় হাত দিয়ে বললেন। আর দেরি করার উপায় নেই, ট্রেন প্ল্যাটফর্মে ঢুকছে।

ট্রেন হু হু করে হাওড়ার দিকে ছুটছে আর আমরা উদাস হয়ে বসে। বরফ ভাঙার চেষ্টায় আমি বললাম, "কিন্তু ঐ '১৯৩১' লেখা ফলকটা গেল কোথায়? সত্যিই কি মারামারির সময় পড়ে গেছে? নাকি কাকাই পেয়ে আবার রেখে দিয়েছিলেন? আবার মনে হচ্ছে, প্রফেসর সেনগুপ্তেরও ওটার দিকে নজর ছিল। যদি তাঁর অফিসে পড়ে গিয়ে থাকে, উনি সেটা পেয়েও চেপে যেতে পারেন।"
"না, ব্যাপারটা আমি জানি – ওটা পড়েছিল গাড়ির ভেতর।"
কুহেলির কথায় পেঁচো ঘুরে বসল। বলল, "জানতে তো আগে বলোনি কেন?"
"আমিও আগে জানতাম না। মেজকার গল্পের আর একটুও আছে, যা তোমরা জানো না। আমিও সবটা জানতাম না, কালই জানলাম।"
"কী বলতে চাও? ঝেড়ে কাশো।"
"বলছি।" কুহেলি একবার চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিল। গাড়িতে তেমন ভিড় নেই। আমাদের আশেপাশে তেমন কেউ নেই, একটু দূরে কয়েকজন ঢুলছে। কুহেলি গলা নামিয়ে শুরু করল:
"মেজকা ছিলেন রেলের অফিসার। তাঁদের আদি বাড়ি মেদিনীপুরে, তাই তিনি খড়্গপুরেই পোস্টিংয়ের চেষ্টা করতেন। কাকা-কাকিমা নিঃসন্তান। কিন্তু পরস্পরের প্রতি তাঁদের ছিল অসম্ভব টান। কাকা বহুদিন নীতিনিষ্ঠা মেনে চাকরি করেন। কিন্তু রেলের কেন্দ্র খড়্গপুর রেলকে ভিত্তি করে চুরি, ডাকাতি ও বেআইনি ব্যবসারও এক কেন্দ্র। একদিন মেজকা সেই লোভের ফাঁদে পা দিলেন।
কিছুদিন ভালোই কাটল। চেয়ারে বসে শুধু কিছু সইসাবুদ করে আর দেখেও না দেখার ভাণ করে মেজকার বেশ বাড়তি রোজগার হচ্ছিল। তাই দিয়ে সীমিত মাইনে পেয়েও তিনি এই বাড়িটার কাজ শুরু করলেন। রেল কোয়ার্টারে থাকতে থাকতে কাকিমার মনে একটা বাড়ির ইচ্ছে জেগেছিল। তাই তিনি খুব খুশি হলেন।
কিন্তু কিছুদিন বাদেই তাঁর সন্দেহ জাগল। ধীরে ধীরে তিনি মেজকার অনৈতিক ও অবৈধ কার্যকলাপের কথা জানতে পারলেন। তিনি মেজকাকে সাবধান করলেন। কিন্তু টাকার নেশায় মত্ত মেজকা সেসব অগ্রাহ্য করলেন। স্বদেশী ঐতিহ্য থেকে আমাদের পরিবারে নৈতিকতার একটা ধারা ছিল। আমরা হয়তো কালক্রমে সেসব ভুলে গেছি। মেজকাও ভুলেছিলেন। কিন্তু সেই পরিবারের বৌ হয়ে আসা কাকিমার মনে নীতিবোধ ছিল প্রবল। বারবার চেষ্টায় স্বামীকে শোধরাতে না পেরে তিনি একদিন গৃহত্যাগ করলেন।
মেজকার তখন টনক নড়ল। কাকিমা প্রথমে বাপের বাড়ি উঠে তারপর নিজের চেষ্টায় একটা চাকরি জোগাড় করে ছোট্ট বাসা ভাড়া করে থাকতে লাগলেন। মেজকার অনেক চেষ্টাতেও তিনি আর ফিরলেন না। ইতিমধ্যে মেজকাও বুঝতে পারলেন যে যাদের সঙ্গে তিনি দুর্নীতিতে যুক্ত তারা শুধু চোর নয়, নির্মম খুনি। তাঁর নিজের ওপর ধিক্কার এল। তিনি সব বেআইনি কাজকর্ম ধীরে ধীরে ছেড়ে দিলেন। কিন্তু কাকিমা আর ফিরলেন না। কয়েক মাস আগে তিনি গত হয়েছেন। এখন বুঝতে পারছি, এই ঘটনা মেজকার মনে কী বিরাট অনুশোচনার সৃষ্টি করেছিল। তাই তিনি আজ সব কিছু ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে চাইছেন। তাঁকে আটকানো যাবে না।"
আমরা নীরব। কিছুক্ষণ পর আমি আবার বললাম, "কিন্তু ওই ধাতুর ফলকটা –"
"সেটা ওর প্যান্টের পকেট থেকে গাড়ির মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। কাকা যখন ঐ পালিয়ে আসা ছেলেটিকে, মানে যতীন্দ্র সান্যালকে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন, তখন সে দেখতে পেয়ে ওটা তুলে নেয়।"
"কিন্তু – তুমি এতসব জানলে কী করে?" পেঁচোর অবাক জিজ্ঞাসা।
"জানলাম মেজকার ই-ডায়েরি পড়ে। যতীন্দ্র মেজকাকে বলেই ফলকটা নিয়েছিল। মেজকা শ্রীকৃষ্ণ সান্যালের পরোক্ষ বংশধর, কিন্তু যতীন্দ্র প্রত্যক্ষ বংশধর। ও মেজকাকে ভালোভাবেই চিনত। ও চাকতিটা পেয়ে বলেছিল – বুড়ো দাদুর অঙ্কের কাগজগুলি আপনি আপনার অঙ্ক বিশারদ জামাইকে দিন, আপত্তি নেই। কিন্তু এই স্মারকটায় আপনার নয়, আমার অধিকার। আমি এটা নিয়ে যাচ্ছি।"
"ওর অধিকার মানে – ও-ও তো একজন গ্যাংস্টার!"
"ঠিকই। তবে ওর আসলে ইচ্ছে ছিল একজন আধুনিক রবিন হুড হবে। মানে, রেলের সম্পদ লুট করে গরিবদের বিলোবে। কিন্তু ঐসব দুর্বৃত্তদের সাথে যুক্ত থেকে সে চেষ্টা তো আকাশকুসুম কল্পনা। তাই কিছুদিনের মধ্যেই ওদের সাথে যতীন্দ্রের সংঘর্ষ শুরু হয়। জানতে পেরে ওকে নিরাপদে এলাকার বাইরে বের করে দেওয়ার জন্য মেজকাই ব্যবস্থা করে। কিন্তু সেটা ওদের দলের চোখ এড়ায়নি দেখে বিপত্তির সৃষ্টি হয়। ঐ ছেলেগুলোও মেজকাকে চিনত – বলছিল না, এককালে আপনিও তো আমাদের ভরে ভরে দিয়েছেন? তবে, তার মানে চাঁদা নয়।"
বললাম, "কিন্তু সেদিন আমরা – মানে তোমরা না থাকলে কিন্তু ছেলেটির আর মেজকার 'জান-কা-খতরা' হয়ে যেত।"
"তোমরা জানো না, মেজকা বিপদে পড়লে কত বেপরোয়া হতে পারে। হয়তো ওদের গাড়ি চাপা দিয়ে তিরবেগে বেরিয়ে যেত।"
"কিন্তু এসব তুমি মেজকার ই-ডায়েরি থেকে – মানে, সেটা পেলে কোত্থেকে?"
কুহেলি একটু ইতস্তত করে বলল, "কাল গভীর রাতে আমি মেজকার ঘরে ঢুকে তাঁর স্মার্টফোনটা চুপিসাড়ে তুলে নিয়ে বাথরুমে দরজা বন্ধ করে দেখতে থাকি। আমার উদ্দেশ্য ছিল, যদি শেষ ক্লু-টা মেজকা কোথাও লিখে রাখেন তো সেটা হাতানো। তোমার বন্ধু যেভাবে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছিল, মনে হচ্ছিল ও চেষ্টা ছেড়েই দিয়েছে।"
"তুমি পেঁচোকে চেন না। সমাধানটা ও নিশ্চয়ই আগেই পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু – তারপর তুমি ওই ডায়েরি পেয়ে গেলে আর এতসব ঐ ডায়েরি থেকে জানলে?"
"সব নয়। কাকিমা মেজকাকে ছেড়ে চলে গেছেন সেটা আমরা জানতাম। কিন্তু তার কারণটা কালই জানলাম।"
পেঁচো এবার সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে কুহেলির মুখের দিকে তাকাতে তাকাতে বলল, "কিন্তু ডিয়ার, যদ্দুর মনে পড়ে কাকার স্মার্টফোনে পাসওয়ার্ড আছে। তুমিও কি তাহলে –"
"এজ্ঞে না, আমি আমার মানসী দিদির মতো এথিকাল বা আনএথিকাল হ্যাকার নই। তবে, আমি পাসওয়ার্ড গেস করতে জানি। কাকা কাকিমাকে প্রাণের চেয়েও ভালোবাসতেন। তাঁর নাম Sunanda দিয়ে ট্রাই করতেই স্মার্টফোনটা চট করে খুলে গেল।"

খেয়াল করিনি, গাড়ি হাওড়া ঢুকছে। বাইরে আকাশ থমথমে। আমরা নিঃশব্দে গেটের দিকে এগিয়ে গেলাম। এবার যার যার বাড়ির বাস ধরব।

 

ছবিঃ পিনাকী দত্ত

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনীয়ার ও মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী অনিরুদ্ধ সেন কলকাতা-মুম্বইয়ের বিভিন্ন সাময়িকপত্র ও ওয়েব ম্যাগাজিনের নিয়মিত লেখক। তাঁর লেখা ও অনুবাদ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, এবং সংকলিত বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা