সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
   ভাইফোঁটা

জানলার পাশটাতে মুখ ভার করে বসে আছে অরিত্র। কাল সবে কালীপুজো গেছে। তাই এখনও চারিদিকে বাজির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। অরিত্রর বাড়িতেও অনেক বাজি পড়ে আছে। কাল সব বাজি পোড়ানো হয়ে ওঠেনি। কিন্তু সেগুলো আজ শেষ করার ইচ্ছাও নেই তার। অন্ধকার ঘরটায় রাস্তার আলো এসে পড়েছে। পাশের ঘর থেকে মা হাঁক দিলেন - " অরি, এখানে আয়। অন্ধকারে বসে আছিস কেন?"

অরিত্র উত্তর দিল না। ছেলের সাড়া না পেয়ে আবার বললেন - " কীরে, দিদির সঙ্গে ছাদে গিয়ে বাকি বাজিগুলো পুড়িয়ে আয়।"  একথারও কোনো উত্তর দিলনা অরিত্র। তার এখন কারুর সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। দিদির ওপর রাগটা এখনও কমেনি।

অরিত্রর দিদি অনিষা। এবছরই উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করে কলেজে ভর্তি হয়েছে। তাই তাদের বাবা মেয়েকে একটা নতুন মোবাইল উপহার দিয়েছেন। মোবাইল পেয়ে দিদি যত না উৎসাহিত, অরিত্র তার থেকে অনেক বেশি খুশি হয়েছিল। দিদির ফোনে নিজের পছন্দ মতো গেম ডাউনলোড করে নিয়েছে। গেম খেলতে সে খুব ভালোবাসে। যে কোনো গেমেই খুব তাড়াতাড়ি অনেক স্কোর করতে পারে অরিত্র। স্কুলে বন্ধুদের ভিডিও গেম আছে, কিন্তু ওর নেই। তাই দিদির মোবাইলই ভরসা। দিদি প্রথম প্রথম তাকে মোবাইলে গেম খেলতে দিলেও এখন আর দেয়না। ফোন চাইলেই বলে 'ব্যাটারি শেষ' নয়ত 'আমার কাজ আছে'।আর মাকে বলতে গেলে তো আরও বিপদ। মা বলবে - " এইটুকু বয়সে মোবাইল ব্যবহার করা একদম উচিত না। পড়াশোনার ক্ষতি হবে। ইত্যাদি ইত্যাদি।"

আজও তো সেরকমই ঘটল। অরিত্র স্কুলের দেওয়া এত্তো হোম ওয়ার্ক সেরে সবে দিদির কাছে ফোনটা চেয়েছে, আর তখনি দিদি হঠাৎ চিৎকার করে মাকে বলে দিল। ব্যাস, মা ও সঙ্গে সঙ্গে একপ্রস্থ বকে দিল অরিত্রকে।
-" তোর না স্কুল খুলেই অ্যানুয়াল?? পড়াশোনা না করে গেম খেলা?? "
-"  মা, আমি তো সব হোম ওয়ার্ক করেই এলাম। "
-"  শুধু হোম ওয়ার্ক করলেই হল?? আর পড়া করতে হবে না?? দেখ তো তোর দিদিকে, উচ্চ মাধ্যমিকে কত নম্বর পেয়েছে।। তোর কী দিদিকে দেখেও পড়তে ইচ্ছে করে না?? সারাদিন শুধু খেলা আর খেলা। এই বয়সেই চোখে এত পাওয়ার। "
দিদিও এই সুযোগে বলে উঠল - " ভাই তো গেম খেলে খেলে কম্পিউটারের কিবোর্ডটাকেও নষ্ট করে দিচ্ছে। এখন আমি নিজের দরকারি কাজও ঠিক করে করতে পারি না।"

এই কথায় মায়ের রাগে যেন আরও কিছুটা ঘি পড়ল। হাতে থাকা খুন্তির এক ঘা চাপিয়ে দিলেন অরিত্রর পিঠে। তারপর নিজের মনেই বলে উঠলেন - " দিনে দিনে বাঁদর তৈরি হচ্ছে ছেলেটা!!"

এই ঘটনার পর থেকেই অরিত্র সেই একভাবে বসে আছে জানলার ধারে। দিদির জন্য আজ তাকে মার খেতে হল মায়ের কাছে। সে সব সময় পড়া করেই খেলতে যায়। পড়াশোনা না করলে কী আগের বছর ক্লাস ফাইভ থেকে সিক্সে ওঠার সময় সে ফার্স্ট হতে পারত? এই কথাটা কারুরই আর মনে নেই। ভাবনায় বাধা পড়ল অরিত্রর। দিদি এসে ঘরের লাইট জ্বালাল।

-" কীরে ভাই, মা তখন থেকে ডাকছে। কোনো উত্তর দিচ্ছিস না যে?? চল্, বাজিগুলো পুড়িয়ে আসি। "
-"  আমার ইচ্ছা করছে না। তুই যা। "
-"  একা একা ভালো লাগে নাকি?? তাছাড়া বাবা তো দুজনের জন্যই এনেছে বাজিগুলো। আমার একার জন্য তো আনেনি। "
-"  আজ আমি পোড়াব না। "
-"  ঠিক আছে। আমিও যাব না তাহলে। ওগুলো নষ্ট হোক, তুই বসে থাক অন্ধকারে। " দিদি চলে গেল।রাতেও সকলের সঙ্গে তেমন কথা বলল না অরিত্র। চুপচাপ খেয়ে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ল।

সকাল হতেই বাড়িতে হইচই শুরু হয়ে গেল। আজ ভাইফোঁটা। বাড়িতে অনেক লোকের আনাগোনা। মামারা, পিসিরা সবাই একে একে আস্তে শুরু করেছে। অরিত্র উঠে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিল। আজকের দিনটাতে খুব আনন্দ হয়ে বাড়িতে। সব ভাই বোনেরা মিলে সারাদিন অনেক হই হুল্লোড়, খাওয়া দাওয়া চলে।দিদিও মায়ের সঙ্গে হাত লাগিয়ে কাজ করছে আজ। আজকের দিনে দিদিও অরিত্রকে ফোঁটা দেয়। অরিত্র ছোটো বলে দিদি নিজেই তাকে চকোলেট উপহার দেয়। বাবা এনে দেয়। অরিত্রকে কিছু দিতে হয় না। তবে অরিত্র প্রতিবারই দিদিকে বলে - " আমি বড় হলে তোকে অনেক অনেক গিফট দেব।"

আস্তে আস্তে দুপুর হল। মামাদের, পিসিদের ফোঁটা পর্ব শেষ হওয়ার পর এবার অরিত্রর পালা। দিদি বলল - " এবার তুই বসে পড় ভাই।" দিদির কথা মতো অরিত্র বসে পড়ল। সে দেখল দিদিও বেশ গম্ভীর। কাল থেকে অরিত্রর রাগ ভাঙানোর চেষ্টাও করেনি। অরিত্রর বাজি পোড়াতে না চাওয়াতে দিদি মনে হয় কষ্ট পেয়েছে।

দিদি ফোঁটা দেওয়া শুরু করল। পাশ থেকে মায়ের শাঁখ বাজানোর শব্দ। ধান-দুব্বো দেওয়ার পর দিদি একটা রঙীন কাগজে মোড়া বাক্স অরিত্রকে দিল। অরিত্র একটু অবাক হল - " এটা তো চকোলেটের বাক্স বলে মনে হচ্ছে না। তাহলে কী আছে এতে?"
দিদি - " নিজেই খুলে দেখ্।"

   ভাইফোঁটা

অরিত্র প্যাকেট খুলে হতবাক্। একটা আস্ত ভিডিও গেম। বিস্ময় আপনিই মুখটা হাঁ হয়ে গেল তার। দিদিকে বলল - " এত টাকা তুই পেলি কোথায়? বাবা কিনে দিল এটা?"

মা পাশ থেকে বলল - " না রে, তোর দিদি রোজ কলেজ যাওয়ার হাতখরচা থেকে টাকা জমিয়ে তোর জন্য এটা কিনে এনেছে।"   মায়ের কথা শুনে আরও অবাক হল অরিত্র। সে আনন্দে নাচবে নাকি দিদিকে কাল কষ্ট দেওয়ার জন্য কাঁদবে বুঝতে পারল না। অরিত্রকে চুপ দেখে দিদি মুচকি হেসে বলল - " ভাই, এখন থেকে আর তোকে আমার ফোন নিয়ে ঝগড়া করতে হবে না আর মায়ের কাছে মারও খেতে হবে না।"  বাবা অরিত্রকে বলল - কী রে, তুই এখনও চুপ করে আছিস?? দিদিকে কিছু বলবি না?? "  অরিত্র কিন্তু এখনও কোনো কথা বলল না, শুধু এক লাফে উঠে দিদিকে জড়িয়ে ধরল। তার সব মনখারাপ দিদির জন্যই নিমেষে ভ্যানিশ হয়ে গেছে। পাশের ঘরের টিভিতে ঠিক তখনই গানটা বেজে উঠল
" ফুলোকা তারোকা সবকা ক্যাহনা হ্যায়
এক হাজারো ম্যায় মেরি ব্যাহেনা হ্যায় "...

 

ছবিঃ অঙ্কুশ চক্রবর্তী

সুনিষ্ঠা প্রাণিবিদ্যায় স্নাতক এবং পরিবেশ বিদ্যায় স্নাতকোত্তর । শখ বই পড়া এবং গল্প লেখা । প্রধানত সমাজ ভিত্তিক এবং ছোটদের জন্য লিখতে পছন্দ করেন । বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে ।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা