সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
 বাড়ি ফেরার পর

আমি মারা গেছি। এই ঘন্টা খানেক আগে। বাস দুর্ঘটনায়। স্কুল বাসে বাড়ি ফিরছিলাম। ড্রাইভারের কী হয়েছিল জানি না, তবে দেখলাম বাসটা গড়িয়ে পড়ল রাস্তার ধারের খাদে। তারপর অনেকক্ষণ কিছু মনে ছিল না। যখন চোখ মেললাম দেখি একগাদা লোক আমাদের সবাইকে ঘিরে দাঁড়িয়ে। একজন বলল --
"ইস, এতটুকু বাচ্চাগুলো। কেউই তো বাঁচল না?"
"নাহ, ডাক্তারবাবু তো বললেন। কেউ বেঁচে নেই।"
আমি চেঁচালাম - "এই তো, আমি বেঁচে আছি।"
কেউ শুনতেই পেল না। আবার চেঁচালাম। আবার কেউ শুনল না। এবার কাঁধে হাত পড়ল। বিকাশ স্যারের হাত।
"চেঁচিও না তমাল, তুমি বেঁচে নেই।"
"স্যার আপনি?"
"না, আমিও নেই। আমরা কেউই নেই। বুঝছি না বাকিরা চুপচাপ আছে কেন। যাকগে চল।"
"কোথায়?"
"আপাতত এখান থেকে চল। এই ভিড়ের মধ্যে থেকে কী হবে?"
বুঝতে পারছিলাম না হাঁটতে পারব কিনা। দেখি, মরে গিয়ে কিন্তু হাঁটতে সুবিধা হচ্ছে। আগে ঐ খাদ থেকে বাড়ি অবধি হাঁটতে কষ্ট হত। পাহাড়ি রাস্তা তো। আজ দেখলাম আমরা দুজন বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে হেঁটে এলাম।
আমাদের পাড়াতেই থাকেন বিকাশ স্যার। পাড়ায় ঢুকে স্যার বললেন
"বাড়ি যাও তমাল।"
"বাড়ি গিয়ে কী করব? আপনি কোথায় যাবেন?"
"দেখ বাড়ি গিয়ে বাড়ির কী হাল। আর কিছু না হোক, মা বাবার সঙ্গে দেখা তো হবে। আমি বাড়ি যাই। দেখি আমার বাড়ির কী অবস্থা।"
বাড়ির কাছে পৌঁছে ভাবতে লাগলাম কী করব। গল্পে বা সিনেমাতে শুনেছি মৃত ব্যক্তিরা দরজা ভেদ করে ঢুকতে পারে। সেটাই করি।
পারলাম না। দরজায় ধাক্কা খেয়ে ফিরে এলাম। নাহ, বেলটাই বাজাই। মা হয়ত এখন বাড়িতে। আমাকে দেখতে তো পাবে না। ভয় না পায়।
মা দরজা খুলে আমার দিকে তাকিয়ে থমকে গেল। একটু ভাবল, তারপর বলল
"এ কী হাল হয়েছে তোর! অ্যাক্সিডেন্ট?"
"তুমি আমাকে দেখতে পারছ? কী করে বুঝলে এক্সিডেন্ট?"
"এদিকে আয়।"
আয়নার সামনে গিয়ে নিজের চেহারা দেখে চমকে যাই। মাথার উপরটা পুরো ভেঙ্গে গিয়ে অর্ধেক ঘিলু বাইরে ঝুলছে।

 বাড়ি ফেরার পর


"কীকরে হল এটা?" মা আবার জানতে চাইল।
"স্কুল বাস উল্টে পড়েছিল খাদে। কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে পারছ কী করে?"
"তুই আজ যখন সব জেনেই যাবি, এখনি বলা যায়। আমি আর তোর বাবা আজ থেকে ছয় বছর আগে মারা যাই।"
"মানে? কী করে?"
"ঐ সেবার আমরা গ্রামের বাড়িতে যখন গিয়েছিলাম, সাপের কামড়ে। আশেপাশে কেউ ছিল না আমাদের দেখার মত। লোক আসতে আসতেই দুজনেই শেষ।"
"তাহলে এত বছর ধরে তোমরা..."
"কী করি বল? তুই এত ছোট। তোকে কে দেখত আমরা না দেখলে।"
"তাহলে বাবার অফিস যাওয়া... "
"সে তোর বাবা পাশের পুকুরে মাছ ধরতে যেত। এই দেখ এখনও বাড়িতে ঘুমোচ্ছে।"
"ভূতে ঘুমোয়?"
"ছি বাবু। নিজের বাবাকে এভাবে বলে না। অবশ্য এখন তো তুইও আমাদের দলে। হ্যাঁ রে বাবা, ভূতেও ঘুমোয়।"
"আর বাকি কেউ জানত না তোমাদের ব্যাপারে?"
"কেন জানবে না? যারা আমাদের মত তারা সবাই জানত। এই তো তোর বন্ধু রন্টুর মা তো আমাদের মত। তিন্নির বাবা মা দুজনেই এরকম। আর প্রশ্ন করিস না, চল, এবার যেতে হবে। তোর বাবাকে ডাকি।"
"কোথায় যাবে?"
"তুইও যাবি। এতদিন তুই ছিলিস বলে আমাদের এখানে থাকতে হত। আর তো থাকতে হবে না। চল, দেখতেই পাবি কোথায় যাব।"

 

ছবিঃ অঙ্কুশ চক্রবর্তী

কণাদ বসুর শৈশব কেটেছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে; অধুনা ব্যাঙ্গালোর নিবাসী। বাঙলা বই পড়তে, বাঙলা গান শুনতে আর বাঙলা সিনেমা দেখতে ভীষণ ভালোবাসেন। অবসর সময়ে স্মৃতির মণিকোঠার আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা