সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

"কী রে কাগা, ইশকুলে যাবি না? এত বেলা হয়ে গেল, এখনও পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিস যে বড়ো?"
"না, মা।"
"কেন রে! কী হল? ইশকুল তো কামাই করিস না তুই?"
"ভালো লাগছে না, মা, মন খারাপ।"
"মন খারাপ! কেন রে? ওঠ ওঠ, শিগগির উঠে পড়। কেন মন খারাপ শুনি? কেউ বলেছে কিছু?"
"কালো বলে সবাই খ্যাপায় আমায় ইশকুলে। বলে কালোমানিক, কালাচাঁদ, কেলেকুষ্ঠি কাকের বংশ। আমি যাব না আর।"

"কালো তো ভালো রে। কালো, জগতের আলো। কালো বললে রাগ করার কী আছে? আমরা কাকেরা তো কালোই হই। যে যত কালো, সে তত ভালো।"
"না মা, আমি ফরসা হব। আমায় পাউডার কিনে দাও, গালে মাখার ক্রিম এনে দাও। দেবে মা?"
"অমন কথা বলে না বাপ! দেবী কাগেশ্বরী পাপ দেবেন। কালো রঙ কাকেদের অঙ্গের ভূষণ, আমাদের পুণ্যফল। কাকেরা তো আগে ফরসাই ছিল, ধবধবে ফরসা। কত পুণ্যি করে দেবী কাগেশ্বরী কালো হয়েছিলেন, জানিস না সেই গল্প? আমি যে প্রতি বছর কাগেশ্বরীর ব্রত করি, পাঁচালি পড়ি, শুনিসনি?

নমি দেবী কাগেশ্বরী, করিনু মিনতি
আজীবন থাকে যেন কৃষ্ণবর্ণে মতি।।"

ভক্তিভরে কপালে ডানা ছোঁয়ালেন কাগার মা, "বলব'খন তোকে সেই গল্প রাত্তিরবেলা। এখন উঠে পড় দেখি তাড়াতাড়ি, উঠে চটপট ডানা ধুয়ে ঠোঁট মেজে খেয়ে নে বাপ আমার!"
"কই বলনি তো কাগেশ্বরীর গল্প! বল না মা!"
"এখন কি আমার গল্প বলার ফুরসত আছে রে সোনা? কত কাজ পড়ে আছে! ঘরদোর পরিষ্কার, রান্নাবান্না, জল তোলা... রাত্তিরে বলব'খন, এখন ওঠ।"
"না মা, রাত্তিরে নয়, এখনই বল। নইলে আমি উঠব না।"
"এরকম করে না সোনা! আচ্ছা, তুই বরং এক কাজ কর। চটপট তৈরি হয়ে জলখাবার খেয়ে তোর বগাদার কাছে চলে যা। আমি তো মুখ্যু কাক, ইশকুলে যাইনি কোনোদিন। বগাদা আমার চেয়ে অনেক ভালো বলতে পারবে। বলবি কাগেশ্বরী- বগেশ্বরীর আখ্যান বলো। বগার কাছে গেলে তোর মনও ভালো হয়ে যাবে। ইশকুল নয় নাই গেলি আজ। নে নে, ওঠ শিগগির!"
এইবারে কাগা বিছানা ছেড়ে তড়াক করে লাফিয়ে উঠে পড়ল।

শীতশেষের কুয়াশামাখা সকাল। বিলের জল শুকিয়ে কমে এসেছে, অনেকটা কাদামাটি পেরিয়ে জলের ধারে পৌঁছোতে হয়। পাশের মাঠের ঘাস শুকিয়ে হলুদ হয়ে আছে।
মাছের খোঁজে বিলের চারদিকে একবার চক্কর মারতে গেছিল বগা। নিজের জায়গায় ফিরেই দেখতে পেল জলের ধারে চুপটি করে বসে আছে কাগা। মুখ ভার।
"কী রে কাগা! ইশকুল যাসনি আজ? মুখটা অমন প্যাঁচার মতো করে আছিস কেন? মন খারাপ?"
সব বলল কাগা।
"কাকেরা নাকি ধবধবে ফরসা ছিল আগে? এখন তাহলে কালো হল কী করে? কাগেশ্বরীর গল্প বলো আমায়।"
"ছিলই তো ফরসা। তোর মা যে কাগেশ্বরীর ব্রত করেন, পাঁচালি পড়েন শুনিসনি?"
"সে পাঁচালি খুব শক্ত। বুঝতে পারি না আমি। তাছাড়া মা এত গড়গড় করে পড়ে... তুমি আমায় গল্প করে বলো বগাদা।"
"আচ্ছা বেশ, শোন তাহলে। চুপটি করে বোস।
"সে অনেক অনেক অনেক দিন আগের কথা। সৃষ্টির আদিপর্ব তখন। পৃথিবীর সমস্ত পাখিদের রানি ছিলেন কাগেশ্বরী আর বগেশ্বরী দুই বন্ধু। কাগেশ্বরী ছিলেন ধবধবে সাদা, দুধের মতো তাঁর গায়ের রঙ, অপরূপ সুন্দরী। রূপে-গুণে তিনি ছিলেন অতুলনীয়া। রানির মতো রানি যাকে বলে। মনটাও ছিল তাঁর ভীষণ নরম। ভারী দয়ালু ছিলেন তিনি।
"বগেশ্বরী অত ফরসা ছিলেন না, তাঁর গা ছিল ছাইরঙা বা ধূসর। তিনি ছিলেন ভাবুক প্রকৃতির। চুপচাপ একলাটি বসে আকাশপাতাল চিন্তা করতেন, ধ্যান করতেন। সংসারে বা রাজকার্যে তাঁর মন ছিল না। একই রাজপ্রাসাদে থাকতেন দুই ছোটোবেলার বন্ধু। দু'জনে ছিল গলায় গলায় ভাব..."
"ঠিক যেমন তোমার-আমার, বগাদা?"
"হ্যাঁ রে! তোর-আমার বন্ধুত্ব কি এই জন্মের রে কাগা! কত জন্ম-জন্মান্তরের বন্ধু আমরা। তারপর শোন...
"কাগেশ্বরীর মতো সমস্ত কাকেরাও ছিল তখন ধবধবে সাদা, আর বকেরা ছিল ধূসর। বাকি কোনও পাখির গায়ে কোনও রঙ ছিল না তখন, সব পাখি ছিল মিশমিশে কালো। সে জন্যই কাগেশ্বরী আর বগেশ্বরীকে বড়ো রানি ছোটো রানি বলে মেনে নিয়েছিল ওরা।
"তো, একদিন হয়েছে কী... ছোটো রানি বগেশ্বরী এসে কাগেশ্বরীকে বললেন – বন্ধু, এই সংসার আমার জন্য নয়। আমি সন্ন্যাস নেব। দেশ দেখতে বেরোব। সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াব।
"এই বলে এক কথায় সব ছেড়েছুড়ে বেরিয়ে পড়লেন তিনি। উড়ে গেলেন তেপান্তরের মাঠ ছাড়িয়ে সাত সাগরের ঢেউ পেরিয়ে কোন দেশে কে জানে!
"বন্ধু চলে যাওয়ায় কাগেশ্বরী খুব মুষড়ে পড়লেন। প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন তিনি বন্ধুকে। একা একা তাঁর দিন কাটে না। সারাদিন মন খারাপ করে বসে থাকেন। কোনও কাজে উৎসাহ নেই।
"রাজকার্যে রানির মন নেই, তাই সারা দেশে বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। এমনিতেই এখন যেমন বিভিন্ন পাখির নির্দিষ্ট কাজ আছে তখন সেরকম ছিল না। যার যেরকম ইচ্ছে তাই করত। ফলে দেশ জুড়ে শুরু হল মারামারি, ঝগড়াঝাঁটি, চিৎকার, চ্যাঁচামেচি, হৈ-হুল্লোড়। নেমে এল দুর্ভিক্ষের অভিশাপ।
"এমন সময় একদিন রানি কাগেশ্বরী মন খারাপ করে চুপচাপ তাঁর উঁচু রাজপ্রাসাদের মাথায় বসে ছিলেন। নীচে তাকিয়ে তাঁর চোখে পড়ল রাজ্য জুড়ে হানাহানি, মারামারি, কাটাকাটি চলছে... কালো কালো পাখিরা নিজেদের মধ্যে বিশ্রিভাবে ঝগড়া করে চলেছে। পাঁচালিতে লেখা আছে -

বসি প্রাসাদের চূড়ে দেখে কাগেশ্বরী
রাজ্যব্যাপী চলে হানাহানি মারামারি।
নরকের কীটসম পক্ষীকুল যেন
মন্বন্তরে মরে সবে পিপীলিকা হেন।।

"সেই কুৎসিত দৃশ্য দেখে কাগেশ্বরীর চৈতন্য হল। প্রতিকার খুঁজতে ওই রাজপ্রাসাদের মাথাতেই ধ্যানে বসলেন তিনি। তিন দিন তিন রাত ধ্যান করার পর তাঁর সিদ্ধিলাভ হল। ভাবলেন, বন্ধু বগেশ্বরী তো চলে গেছে, তিনি একা। কার জন্য তবে রাজপ্রাসাদের অতুল সম্পদ আগলে রেখেছেন তিনি? প্রাসাদের চুড়ো থেকে নেমে এসে রাজবাড়ির সিংহদরজা সাধারণের জন্য খুলে দিলেন কাগেশ্বরী, খুলে দিলেন ভাঁড়ার ঘর, রত্নভাণ্ডার। সমস্ত রাজঐশ্বর্য দেশের পাখিদের মধ্যে বিলিয়ে দিলেন।
"ধন্য ধন্য পড়ে গেল রানি কাগেশ্বরীর নামে। কিন্তু রানির মন ভরল কই? আরও দিতে প্রাণ চাইল তাঁর। নিজের সমস্ত পোশাক-আশাক, প্রতিদিনের ব্যবহারের জিনিসও দান করে দিলেন।
"তাতেও যে মন ভরে না! তখন রানি ঠিক করলেন তাঁর গায়ের ঐ ধবধবে সাদা রঙও তিনি বিলিয়ে দেবেন পাখিদের মধ্যে।
তুই আকাশে রামধনু দেখেছিস তো, কাগা?"
"হ্যাঁ, বগাদা। দেখেছি। রামধনু দেখব না কেন?"
"রামধনুতে ক'টা রঙ থাকে বল দেখি?"
"সাতটা। বেগুনি, নীল, আসমানি, সবুজ, হলুদ, কমলা আর লাল। বেনীআসহকলা... ইশকুলে পড়েছি তো," কাগা বলে।
"বাঃ, ঠিক বলেছিস। রামধনু কী করে তৈরি হয় তা জানিস?"
"সেটা তো জানি না, বগাদা।"
"জানবি। আরও উঁচু ক্লাসে পড়বি। সূর্যের সাদা আলো যখন মেঘের ভেতর দিয়ে যায় তখন অমন সাত রঙে ভেঙে যায়। সাদা রঙ আসলে একটা রঙ নয়, ওই সাত রঙ মিলেমিশে সাদা হয়। একটা একটা করে সাতটা রঙই যদি সাদা রঙ থেকে নিয়ে নেওয়া যায় তবে আর কোনও রঙই পড়ে থাকবে না, তখন কালো দেখাবে। কালো মানে কোনও রঙ নেই যার।
"তো, যা বলছিলাম, রানি কাগেশ্বরী ঠিক করলেন তাঁর গায়ের সাদা রঙ ভেঙে ভেঙে সমস্ত পাখিদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে পৃথিবীকে রঙিন করে তুলবেন। কাকেরা শুধু সাদা, চারদিকে আর সব পাখি কুচকুচে কালো, রঙ নেই কারও গায়ে, বড়ো বিশ্রি লাগে দেখতে। কে কোন রঙ নিতে চাও? - বললেন তিনি।
"সমস্ত পাখিদের মধ্যে আনন্দের ধুম পড়ে গেল। ডানার জন্য, লেজের জন্য, ঠোঁটের জন্য যে যার পছন্দমতো রঙ বেছে নিয়ে রঙিন হয়ে উঠল তারা। রঙে রূপে ভরে উঠল পৃথিবী। পাঁচালিতে আছে -

ময়ূর পালক-লাগি বাছিল বেগুনি
নীলকণ্ঠ নীল, কবুতর আসমানি।
হরিৎ বর্ণ বাছি নিল হরিয়াল
টিয়াও লইল তাহা, ঠোঁটে নিল লাল।
হলুদ হইল বেনে বউ কুলবালা
সাত-সয়ালির তরে রহিল কমলা।
এমনে যতেক পক্ষী হইল রঙ্গিলা
ধন্য দেবী কাগেশ্বরী, ধন্য তব লীলা।। "

এমনি করে নিজের গায়ের দুধসাদা রঙ জগতের বাকি পাখিদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে কাগেশ্বরী নিজে একদম কালো হয়ে গেলেন। তাঁর সঙ্গে সমস্ত কাকও কালো হল। তাই তো কাকেরা বলে কালো রঙ তাদের অঙ্গের ভূষণ, দেবী কাগেশ্বরীর পুণ্যের ফল।"
"তারপর?" বলল কাগা।
"তারপর কাগেশ্বরী সমস্ত পাখিদের বললেন, এবার তোমরা যার যার পছন্দের কাজ বেছে নাও। সবাই সব কাজ করতে গেলে বড়ো গোল বাধে, বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।
"পাখিরা রঙিন হয়ে উৎসবে মত্ত তখন, দেবী কাগেশ্বরীর জয়ধ্বনি দিচ্ছে সবাই, এক কথায় রাজি তারা। ময়ূর এসে বলল আমি নাচ দেখাব। কাগেশ্বরী বললেন, তাই সই। মাছরাঙা বলল, আমি জেলে হব, মাছ ধরব। কাগেশ্বরী বললেন, তথাস্তু। বাবুই বলল, আমি দর্জির কাজ ভালো পারি। কোকিল বলল, আমি সারাদিন গান শোনাব। মুরগি বলল, আমি রোজ ভোরবেলা সব্বাইকে ঘুম থেকে ডেকে দেব। কাগেশ্বরী বললেন, বেশ বেশ, তাই হবে।"

এমনি করে সমস্ত পাখি যখন নিজেদের পছন্দমতো কাজ সব বেছে নিল, কাকেদের জন্য পড়ে রইল রাস্তাঘাটের নোংরা আর ময়লা পরিষ্কারের কাজ। সে কাজ কেউ নেয়নি। কাগেশ্বরী বললেন - এ কাজই সবচেয়ে পুণ্যের, সমাজকে আবর্জনামুক্ত করে সুন্দর রাখাই তো সবচেয়ে পবিত্র কাজ। কী বলো কাকেরা, নেবে না তোমরা এ দায়িত্ব? করবে না এ কাজ?
"কাকেরা সমস্বরে বলল, নিশ্চয়ই করব। একশোবার করব।
"তো, এই হল গিয়ে দেবী কাগেশ্বরীর গল্প। অনেক পুণ্যি করলে তবে কাক হয়ে জন্মানো যায় রে কাগা! কালো বলে দুঃখু করিস তুই!"
"আর বগেশ্বরীর কী হল?" বলল কাগা।
"বগেশ্বরী তো দেশ দেখতে বেরিয়েছিলেন। সাত সমুদ্র সাত মহাদেশ পেরিয়ে উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু অবধি সারা পৃথিবী উড়ে বেড়ালেন তিনি। কত দেশ দেখলেন, কত মানুষজনের সঙ্গে তাঁর আলাপ হল, কত বিচিত্র অভিজ্ঞতায় ভরে উঠল তাঁর ঝুলি! যখন রওনা হয়েছিলেন, গায়ের রঙ ছিল তাঁর ধূসর। সাগরের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় তার নীল রঙ, আকাশের বুক চিরে ভেসে যাওয়ার সময় তার আসমানি রঙ, গভীর অরণ্যের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় তার সবুজ, ভোরের টুকটুকে লাল সূর্যের লাল, বিকেলের অস্তগামী সূর্যের কমলা, সরষে খেতের হলুদ – সমস্ত রঙ শুষে নিয়ে বগেশ্বরী হয়ে উঠলেন ধবধবে সাদা।
"বারো বছরে বারো বার পৃথিবীকে পাক দিয়ে কাগেশ্বরীর কাছে ফিরে এলেন তিনি। আবার দেখা হল দুই প্রাণের বন্ধুতে। গলা জড়িয়ে খুব খানিক কাঁদলেন দু'জনে। কাগেশ্বরী তখন সমস্ত ধনসম্পদ, সমস্ত রঙ বিলিয়ে দিয়ে কুচকুচে কালো। সব শুনে বগেশ্বরী খুব খুশি হলেন বন্ধুর ওপর। বললেন – বন্ধু, আমিও যদি পারতাম তোমার মতো সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে কালো হয়ে যেতে! কিন্তু, আমার যে কিছুই নেই! এতদিন পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছি, সঞ্চয় তো কিছু করিনি।

"কাগেশ্বরী বললেন – তা কেন? এত দেশ ঘুরে, এত মানুষজন দেখে যে বিপুল অভিজ্ঞতা হয়েছে তোমার, যে অগাধ জ্ঞান সঞ্চয় করেছ তুমি, বিলিয়ে দাও সে জ্ঞান সবার মধ্যে। ভাগ করে নাও সে অভিজ্ঞতা সবার সঙ্গে। শিক্ষিত করে তোল সবাইকে।
"বগেশ্বরী বললেন – বেশ, একটা টোল খুলব আমি।
"শুরু হল বগেশ্বরীর পাঠশাল। দূর দূর থেকে পাখিরা এসে ভর্তি হল সে টোলে। চলল শিক্ষাদান।
"কিন্তু জ্ঞান কিম্বা শিক্ষা তো আর ধনদৌলত সোনাদানা নয়, যে দান করলে কমে যাবে বা ফুরিয়ে যাবে। ও জিনিস যত দান করা যায় ততই বেড়ে চলে। তাই বগেশ্বরীর গায়ের সাদা রঙের জেল্লা আরও বেড়ে চলল দিনকে দিন। কালো হওয়া আর হল না তাঁর। তাঁর সঙ্গে সমস্ত বকেরাও সাদাই রয়ে গেল।
"বেশ চলছিল পাঠশাল। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বগেশ্বরীর ডানা ফের আনচান করে উঠল, প্রাণ হাঁসফাঁস করতে লাগল। একবার যে দেশবিদেশ ঘোরার স্বাদ পেয়েছে তাকে কী আর ঘরে বেঁধে রাখা যায়? হঠাৎ একদিন তাই উড়াল দিলেন বগেশ্বরী আবার। বেরিয়ে পড়লেন নতুন নতুন দেশের সন্ধানে।
"সেই থেকে হাজার হাজার বছর ধরে বকেরা যাযাবরের মতো উড়ে চলেছে, পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্ত। কোথাও বেশিদিনের জন্য বাঁধা পড়ে না তারা।
"আমারও ফের বেরিয়ে পড়ার সময় হল রে, কাগা। বহুদিন এই দেকুলের বিলে ঘাঁটি গেড়ে বসে রয়েছি, ডানা দুটোয় মরচে ধরে গেল! শীত শেষ হলেই দখিনা বাতাস বইতে শুরু করবে, সে হাওয়ায় গা ভাসিয়ে মাথার ওপর দিয়ে দল বেঁধে উত্তরের দেশে ফিরে যাবে একের পর এক বকের দল। এবার আমিও উড়াল দেব, তাদের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ব আবার..."
"তুমি চলে যাবে, বগাদা! তাহলে আমিও যে রানি কাগেশ্বরীর মতো মুষড়ে পড়ব। আর ফিরবে না এখানে?"
"ফিরব না কেন? নিশ্চয়ই ফিরব। তোকে ছেড়ে থাকতে পারি আমি?"
"কবে ফিরবে? বারো বছর পরে? বগেশ্বরীর মতো? ততদিন আমি কী করে থাকব একা একা?"
"দূর পাগল! বারো বছর কেন! শরতের শেষে উত্তুরে হাওয়া বইলেই ফেরার পথ ধরব আবার। কিন্তু, এই যে কাগেশ্বরীর গল্প শুনলি, কাল ইশকুলে যাবি তো ফের?"
"হ্যাঁ বগাদা, নিশ্চয়ই। সন্ধেবেলাই বাড়ি ফিরে বই-খাতা গুছিয়ে রাখব আজ।"

ছবিঃ পার্থ মুখার্জি

পেশায় ইঞ্জিনিয়ার তাপস মৌলিক ছোটদের জন্য লিখছে গত কয়েক বছর ধরে। জনপ্রিয় বিভিন্ন ওয়েব পত্রিকা এবং কাগুজে পত্রিকায় নিয়মিত লেখালিখি করেন তিনি। লেখালিখির পাশাপাশি গানবাজনা এবং ভ্রমণে তিনি সমান উৎসাহী ।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা