সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

ধড়ফড় করে ঘুম থেকে উঠে বসল নিধিরাম। ইশশশশশ...কত দেরি হয়ে গেছে। চটপট উঠে যেটার ওপর সে শুয়ে ছিল সেই পিচবোর্ডটাকে সে গুটিয়ে রাখল। সামনে দাঁড়ানো গাড়িটার কাঁচে নিজেকে একবার দেখে খুব খুশি না হলেও সন্তুষ্ট হল নিধিরাম। কাঁচাপাকা দাঁড়িতে আর চুলে একবার হাত বুলিয়ে সামনের চায়ের দোকান থেকে একটু ছাই চেয়ে নিয়ে এসে রাস্তার কলটায় ভালো করে মুখ ধুয়ে নিল সে। এবার একদম ফ্রেশ! এইবার পুঁটুলির ভেতর থেকে খবরের কাগজটা বের করে চায়ের দোকানের সামনে বসল। দেখা যাক, আজকে যদি কোন ভদ্রলোক আসে চা খেতে।

নিধিরামের চোখে ভদ্রলোক হওয়ার জন্য বেশি এলেম লাগে না, ওকে চা খাওয়ার পয়সা যেই দেয় সেই ওর চোখে ভদ্রলোক। তার ওপর কেঊ যদি সঙ্গে বিস্কুটও দেয় তো তাকে একদম সজ্জনের দলেই ফেলে দেয় সে। তবে সজ্জনের সংখ্যা শহরে বেশ কমে আসছে দিন কে দিন।
নাঃ, ফালতু চিন্তা ভাবনার সময় নেই তার। খবরের কাগজটাতেই মন দিল সে। লোভীর মত সব চায়ের দোকানের খদ্দেরদের দিকে চেয়ে থাকা তার ধাতে সয় না। শুধু মাঝে মাঝে ছোটুর উদ্দেশ্যে হাঁক ছাড়তে থাকে সে, 'কৈ রে, চা টা দিয়ে যা বাপ!'
যেদিন চা থাকে কপালে সেদিন শুধুমাত্র এতেই সে পেয়ে যায়, যেদিন থাকে না সেদিন হাজার ছোঁক-ছোঁক করলেও কিচ্ছুটি হওয়ার যো নেই। একদিন ভগবানকেও বিশ্বাস করে দেখেছে নিধিরাম, গোটা দিন কিচ্ছু খাবার জোটে নি সেদিন। মনে হয় ভগবানও তার বিশ্বাস করাটাকে ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারেন নি। তারপর থেকে ওনাকে ছাড়াই বেশ চলে যাচ্ছে নিধিরামের। দুজনেই যে যার মত আছে।
বিজ্ঞাপন গুলো শেষ করে সবে নিরুদ্দেশের ঘোষণাগুলো পড়া যেই শুরু করেছে অমনি নিধিরামের চোখ গেল রাস্তার ওপারে একটা উড়ন্ত কাগজের দিকে। একবার ডানদিক, বাঁদিক দেখে, কাগজটাকে বগলদাবা করে এক ছুটে রাস্তার ওপারে গিয়ে খপাৎ করে কাগজটাকে নিজের মুঠোদাবা করল সে। হু হু বাবা! নিধিরাম চাটুজ্জের চোখকে ফাঁকি? দূর থেকে দেখেই সে বুঝেছে উড়ন্ত কাগজটি একটা লটারির টিকিট না হয়ে যায় না। কত টাকা পুরস্কার যেন? আইব্বাস, একেবারে এগার লক্ষ! ভালই হল, এই লটারির পুরস্কারের টাকায় সে কী কী  কিনবে সেই চিন্তাতেই তার আজকের দিনটা বেশ ফুর্তিতেই কেটে যাবে।
'নিধি পাগলা আবার একটা লটারি পেয়েছে!' চায়ের দোকানের মালিক কালুয়া ওকে ফিরে আসতে দেখে বলল।
'ব্যাপারটা নিয়ে ইয়ার্কি কোরো না, হয়ত দেখলে সে কোন একদিন সত্যিই লটারি পেয়ে গেল। এরকম ঘটনা অনেক ঘটেছে।' ওর দোকানের এক খদ্দের চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিতে দিতে বিজ্ঞের মত বলল।
লোকটা বেশ ভালই, কিন্তু ভদ্র নয় বলে মনে মনে আফসোস করল নিধিরাম। ওরই ক্ষতি, নইলে এক ভাঁড় চায়ের আর কতই বা দাম। আবার মাঝে মাঝে কালুয়াটাও ভদ্রলোকের মত ব্যবহার করে তবে আজকে সেরকম দিন মনে হচ্ছে না। সামনের বসা কাকটার দিকে চেয়ে রইল নিধিরাম কিছুক্ষণ। ওও সকাল থেকে কিছু খায়নি, এদিক ওদিক চাইছে। তবে কাকেরা হ্যাংলা হয়, অনেকটা কুকুরদের মতোই, অন্যদের খাবারের দিকে ঘাড় বেঁকিয়ে চেয়ে থাকে।
'চা!'
'অ্যাঁ?'
'এই নাও, চা!' দোকানের ছেলেটা নিধিরামের সামনে চা নাবিয়ে চলে গেল।
কিন্তু দিল কে? দোকানের দিকে সন্দেহের সাথে তাকাল নিধিরাম। নাঃ, দেখে তো কিছু বোঝা যাচ্ছে না তিনজন খদ্দেরের মধ্যে চা টা পাঠাল কোন জন? তবে কি তিনজনকেই ভদ্রলোক করে দেবে নাকি সে? একটু সস্তা হয়ে যাচ্ছে কিন্তু চায়ে চুমুক দিয়েই নিধিরামের মনটা দরাজ হয়ে গেল। তাই সই! তিন ব্যাটাই ভদ্রলোক। আরে দূর, দিচ্ছেই যখন তখন আর কিপ্টেমী কেন - কালুয়াটাকেও সে মনে মনে ভদ্রলোক বানিয়ে দিয়ে চায়ের ভাঁড়টা নালির দিকে ছুঁড়ে উঠে পড়ল সেখান থেকে। অনেক কাজ বাকি এখনও।
ব্রিজের নিচে নিজের বসার জায়গায় যেতেই ব্যোমশঙ্কর ন্যাজ নাড়তে নাড়তে এগিয়ে এসে পাশে বসল। ভালই হল, একা একা কথা বলতে আজকাল খুব একটা ভাল লাগে না নিধিরামের। ব্যোমশঙ্করের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে নিজের মনের কথা বলতে শুরু করল সে। কুকুরটাও চোখ বন্ধ করে নিধিরামের ভবিষ্যতের প্ল্যান শুনে যেতে লাগল।
বেশিক্ষণ কথা হল না, একটু পরেই মেয়েটিকে প্যাকেট নিয়ে আসতে দেখে সজাগ হল নিধিরাম। মেয়েটির বয়স বেশি নয়, দশ এগারো হবে, নাম রুমা। সে তার মায়ের সঙ্গেই বোধহয় সামনের বড় বাড়িটায় থাকে আর রোজ ঠিক এই সময় কিছু খাবার দিয়ে যায় প্যাকেটে করে নিধিরামকে। এই ব্যাপারটা একদমই পছন্দ নয় নিধিরামের, নিশ্চই ওদের কোন বদ মতলব আছে। খাবারগুলো সে রোজ ব্যোমশঙ্করর সঙে ভাগাভাগি করে খায় বটে কিন্তু সেই সঙ্গে সাবধানেও থাকে খুব, বলা যায় না যে কোন দিন হয়ত খাবারে বিষ মিশিয়ে মেরে ফেলবে দুজনকেই।
'ভাগ এখান থেকে! রোজ রোজ খাবার পাঠাতে কে বলেছে,অ্যাঁ?' হুঙ্কার দিল নিধিরাম মেয়েটার উদ্দেশ্যে। রোজই দেয়; আগে আগে ভয় খেত মেয়েটা, খাবার নাবিয়েই ছুটে পালিয়ে যেত কিন্তু আজকাল আর ভয় খায় না। বরং নিধিরামের বকুনি খেয়ে হাসতে হাসতেই রাস্তা পার হয়ে নিজের বাড়ির দিকে রওনা দেয় সে। আর ব্যোমশঙ্করটাও এমনি নির্লজ্জ যে মেয়েটাকে দেখলেই সে আজকাল ন্যাজ নাড়তে নাড়তে সব কাজ ফেলে হ্যাংলার মত এগিয়ে যায়। কুকুরদের বদনাম তো আর এমনি এমনি হয় নি!
কটমট করে মেয়েটাকে রাস্তা পার হয়ে চলে যেতে দেখল নিধিরাম। তারপর ধিরে সুস্থে প্যাকেটটাকে তুলে সেটাকে খুলল সে। কয়েক খানা পাউরুটি আর দুটো মিষ্টি! খাবারটা দুজনে মিলে ভাগ করে খেয়ে নিল।
নাঃ, আজকেও বিষ দেয়নি বলেই মনে হচ্ছে খাবারে। তবে দেবে ঠিক। একদিন পুরো দুপুর চিন্তা করে কাটিয়েছিল নিধিরাম যে ওরা ঠিক কী জন্য তাকে মারতে চায়। তার সম্পদের মধ্যে আছে শোওয়ার পিচবোর্ড খানা, পুটলিতে একটা জামা, একটা কম্বল, কয়েকটা পুরনো খবরের কাগজ আর একটা লাল রঙের ডিবে যেটা এমনি এঁটে রয়েছে যে অনেক চেষ্টার পরেও নিধিরাম তার ঢাকনা খুলতে পারে নি কিছুতেই। এই কটা জিনিসের জন্য মানুষ খুন করবে ওরা? কত বড় বদমাইশ হলে মানুষের মাথায় এমন চিন্তা আসে!
নিধিরামের আর একটা ছোট সমস্যা আছে। মাঝে মাঝেই তার মাথার মধ্যে থেকে একটা আওয়াজ মিনমিন করে নানান শলাপরামর্শ দেয় নিধিরামকে। যেমন এই মুহূর্তেই মিনমিন করে বলে উঠল, 'না হে, তুমি ভুল বুঝছ, ঐ মেয়ে আর তার মা মোটেই মারতে চায় না তোমাকে।' 'চোপ, সব ব্যাপারে নাক গলাতে আসিস কেন তুই?' বলে সে দাবড়ে দেওয়ার পর আওয়াজটা শান্ত হয়।
আর এখন অবশ্য একটা লটারির টিকিটও যোগ হয়েছে নিধিরামের সম্পত্তির সঙ্গে। টিকিট টা ভাল করে পকেট থেকে বের করে দেখল সে। পড়তে সে পারে ভালোই, বাংলা - ইংরেজি দুটোই। পড়েও ফেলল সে চটপট - 'বঙ্গলক্ষ্মী সুপার বাম্পার' - মোট পুরস্কার মূল্য এগার লক্ষ টাকা। আচ্ছা, এগারো লক্ষ মানে ঠিক কত টাকা? কথায় বলে 'মরা হাতি লাখ টাকা' - তার মানে কি জ্যান্ত হাতির কোন দাম নেই? হাতি বিক্রি করার আগে তাকে মেরে ফেলাটাই কি নিয়ম? তো একটা মরা হাতি যদি এক লাখ টাকায় পাওয়া যায়, এগারো লাখ টাকায় সে এগারটা মরা হাতি কিনতে পারবে। চিন্তা করেই ফিক ফিক করে হেঁসে উঠল নিধিরাম, পুরো ব্রিজের তলাটা তাহলে মরা হাতিতেই ভরে যাবে। কিন্তু শুধু শুধু মরা হাতিই বা কিনতে যাবে কেন সে? আর কি কেনা যায় এগারো লাখ টাকায়? উঁহু, ব্যাপারটা নিয়ে শুধু আজকেই চিন্তা করলে হবে না, পুরো এক সপ্তাহই হয়ত লেগে যাবে তার। একটু বিরক্ত হল নিধিরাম। এমনিতেই তার ব্যাস্ততা কিছু কম নেই, তার ওপর এই এক ঝামেলা বাড়ল।
টিকিটটা পকেটে আবার ঢুকিয়ে রাখতে গিয়েই তার মনে হল একটা কথা। যে কাগজটা পড়ছিল আজ সকালে তার নিরুদ্দেশের ঘোষণার পাশেই সে 'বঙ্গলক্ষ্মী' কথাটা দেখেছিল না?
'শান্তি নেই, মানুষের কপালে শান্তি নেই' এই কথাটা বিড়-বিড় করতে করতে খুব বিরক্তির সঙ্গেই উঠল নিধিরাম। কাগজটা মাটির ওপর ভালো করে পেতে বসল সে। এই তো সেই লেখাটা - 'বঙ্গলক্ষ্মী সুপার বাম্পার' এর বিজয়ীদের ফলাফল। টিকিটটা খুব সাবধানে বের করে নাম্বার মেলাতে শুরু করল সে। প্রথম পুরস্কার - মিলল না। কোই বাত নেহি! দ্বিতীয় পুরস্কার - আরে, এতো মিলে গেল মনে হচ্ছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষন হাসল নিধিরাম। এই নিয়ে সতের বার! নয় নয় করে সতের বার তার মনে হয়েছে যে সে লটারি জিতেছে কিন্তু প্রত্যেক বারই শেষে দেখা গেছে যে সে ভুল পড়েছিল নাম্বারটা।
হাঁসি শেষ করে চোখের জল মুছে আরেক বার নাম্বার মেলাল সে। এবারও মিলল। এটাও তিনবার ঘটেছে আগে। আরেকবার নাম্বার মেলাল খুব সন্তর্পণে নিধিরাম। যাব্বাবা! পর পর তিনবার মিলে গেল? তার মানে কি? লটারি জিতেই গেছে নাকি সে? আরও বার কয়েক পেপারে লেখা নাম্বারের সঙ্গে নিজের নাম্বার মিলিয়ে দেখে নিল সে।
এটা একটা নতুন ফ্যাঁকড়া! লটারি জিতে গেছে বটে সে কিন্তু এরপর কী করতে হয়?
প্রথমেই যেটা সে করল সেটা হল চট করে পেপারটা আর লটারির টিকিট দুটোকেই প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে রাখল। তারপর খুব সন্দেহের দৃষ্টিতে চারিদিকে তাকাল একবার। এই রে, রাস্তার ওপারে দাঁড়িয়ে একটা লোক সিগারেট খেতে খেতে ওকেই যেন দেখছে মনে হচ্ছে? চট করে চোখ নাবিয়ে একটু ঘুরে বসল নিধিরাম। নাঃ, আর লোকটা তাকে দেখতে পাবে না।
দ্বিতীয় পুরস্কার মানে পাঁচ লাখ টাকা। এগার লাখ থেকে একটু কম বটে তবে তাও তো পাঁচ-পাঁচটা মরা হাতি, সেই বা কম কী? টাকাটা পেলে কী কী কিনবে ভাবতে বসল নিধিরাম। একটা বিছানা, বেশ গদি দেওয়া। সঙ্গে একটা টি ভি হলেও মন্দ হয় না, বেশ আয়েস করে বিছানায় শুয়ে শুয়ে টি ভিতে খেলা দেখবে সে। সামনের বাড়ির জানালার কাঁচে নিজের মুখটা দেখতে পেয়েই চমকে উঠল নিধিরাম। এ তো বড্ড হাঁসি হাঁসি মুখ, যে দেখবে সেই বুঝে যাবে যে সে লটারি পেয়েছে। উঁহু, এটা চেঞ্জ করতে লাগবে!
নানা রকম মুখভঙ্গি করে দেখে সে শেষে ভ্রু কুঁচকে থাকা মুখটাকেই ফাইনাল করল। এইরকম মুখ যে লোকের থাকে তারা কখনও ভদ্রলোক হয় না, সজ্জন হওয়ার তো প্রশ্নই নেই। তবে বড়লোক হয়। প্রায় সব গাড়িওয়ালা মানুষেরাই এই রকম ভ্রু কুঁচকে ঘুরে বেড়ায়। এখন থেকে নিধিও তাই করবে। নিজের বিচক্ষনতায় খুব খুশি হল নিধিরাম।
বাকি টাকায়, অবশ্য যদি বিছানা আর টি ভি কেনার পর কোনও টাকা বাকি থাকে, আর কী কিনবে সেটা ভুরু কুঁচকে ভাবতে বসল সে। একটা সাইকেল কেনার কথা মাথায় আসছিল কিন্তু সঙে সঙ্গেই ভাবনাটাকে দুর-দুর করে তাড়িয়ে দিল সে। সাইকেলে মহা হ্যঙ্গাম, পাম্প করো রে, পাম্পচার ঠিক করো রে, ব্যালেন্স ঠিক রেখে সিটে বসে থাকো রে, লোক দেখলে ঘণ্টি মারো রে - ও সব সইবে না তার। বরং কয়েকটা ফুল গাছের টব কিনলে হয়। এটাতেও হ্যাঙ্গাম আছে তবে অনেক কম। মাঝে মাঝে বোতলে করে জল দাও আর ফুল ফুটলে সেটা তুলে বসে বসে শোঁকো। দেখতেও ভালো লাগবে জায়গাটা।
আর ঝামেলা বাড়াবে না নিধিরাম, বাকি টাকাটা হোটেলে খেয়ে শেষ করে ফেলবে চটপট। ব্যাস, নিশ্চিন্দি! সে বিছানায় শুয়ে শুয়ে টি ভি দেখছে, এক হাতে একটা ইয়া বড় গেঁদা ফুল - দৃশটা কল্পনা করেই তার ঘোর লেগে গেল। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিয়ে ভ্রু কুঁচকে জানালার কাঁচে একবার দেখে নিল নিজের বিরক্ত মুখটা সে। নিজের মুখের বিরক্ত ভাবটা দেখে ভারি খুশি হল সে।
এইবার আসল কাজে নাবতে হবে। লটারির দোকান সে দেখেছে কোথাও একটা কিন্তু কিছুতেই মনে পড়ল না সেটা ঠিক কোন জায়গায়। পার্ক স্ট্রিটের দিকে মেলা দোকান আছে, ওখানে থাকলেও থাকতে পারে, এই চিন্তা করে হাঁটতে শুরু করল সে। মাঝে মাঝে দোকানের কাঁচে শুধু দেখে নিচ্ছিল মুখটা আবার আহ্লাদি আহ্লাদি হয়ে ওঠেনি তো? নাঃ, এখনও পর্যন্ত সব ঠিক আছে।
লটারির দোকানটা আচমকাই চোখে পড়ে গেল নিধিরামের। রাস্তার ওপারে একটা ঘিঞ্জি গলির মধ্যে, যেন লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করছে। তা করবে না, কত সব লাখ লাখ টাকার লটারি জিতে নিয়ে লোকেরা আসে এখানে, সবাই দেখতে পেলে খুন-জখম হয়ে যেতে কতক্ষন? বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করে যেই মনে হল ওকে কেউ দেখছে না, এক ছুটে রাস্তা পেরিয়ে গলিতে ঢুকে পড়ল নিধিরাম।
'কী চাই এখানে? এখানে কিছু হবে না, যা ভাগ এখান থেকে।' খিঁচিয়ে উঠল লটারির দোকানের মালিক। নিধিরাম কিছু মনে করল না তাতে। যে লোক ওর কাছ থেকে বলা নেই কওয়া নেই পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে কেটে পড়বে, তার ওপর রাগ হওয়া স্বাভাবিক মানুষের। কিন্তু লোকটাকেও তো একেবারেই বড়লোক বলে মনে হচ্ছে না। নাকি নিধিরামের মতই সেও বিরক্ত হওয়ার ভান করছে? তাই যদি করে থাকে তবে এটা মানতেই হবে যে লোকটা উঁচু দরের অভিনেতা।  
'ফালতু বকো না, এই দ্যাখো লটারি। এবার দাও আমার পাঁচ লাখ টাকা।' বেশ গরম হয়ে বলে উঠল নিধিরামও। এটাতেই কাজ হল। কিছুক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল লোকটা।
'মাথা খারাপ নাকি তোমার? তুমি লটারির টিকিট দেখাবে আর আমি তোমাকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে দেব?'
'আলবৎ দেবে! আমার নাম্বার মিলেছে না! এই দ্যাখো।' বলে খবরের কাগজটা মেলে ধরল লোকটার চোখের সামনে ও। লোকটাও বার কয়েক তার টিকিট আর কাগজটাকে মেলাল আর ঢোঁক গিলল বার চারেক। তারপর নরম গলায় সে বলল, 'ঠিক আছে, এটা রেখে যাও আমার কাছে, কাল সকালে আমি টাকা আনিয়ে রাখব।'
'এ লোক সুবিধের নয়!' মাথার ভেতরের আওয়াজটা মিনমিন করে উঠল। কথাটা শুনেই ফট করে লটারির টিকিট আর কাগজটা ছিনিয়ে নিল নিধিরাম লোকটার কাছ থেকে।
'আমিও তা হলে কাল সকালেই এই টিকিট নিয়ে আসব।'
'আরে শোন, শোন! কথাটা শুনেই যাও না একবার।'
কিন্তু কে শোনে কার কথা, ততক্ষনে নিধিরাম আবার হাঁটা দিয়েছে মেন রোড ধরে। লোকটা এক নাম্বারের ধড়িবাজ। এখন টিকিট রেখে যাও, কালকে টাকা পাবে - মামার বাড়ি কিনা? তারপর কালকে যদি টাকা না দেয়, তখন? তখন কে শুনবে নিধিরামের কথা?
'শালা জোচ্চোর!' পেছন ফিরে চেঁচিয়ে উঠল একবার নিধিরাম সেই দোকানদারের উদ্দেশ্যে।
'একদম ন্যায্য কথাই বলেছেন আপনি। এক নম্বরের জোচ্চোরই লোকটা।' কানের পাশ থেকেই খুব মোলায়েম গলায় কে যেন বলে উঠল। চমকে উঠে নিধিরাম নিজের বাঁ পাশে তাকাল, আওয়াজটা ওদিক থেকেই এসেছিল কিনা।  
'আমার কাছেও সে গতকাল লটারি চেয়ে নিয়েছিল আজ টাকা দেবে বলে, আজকে আর আমাকে চিনতেই পারল না। আপনার মত বিচক্ষন তো নই, তাই ঠকে গেলাম।' দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল লোকটা।  
লোকটাকে আপাদমস্তক জরিপ করল নিধিরাম একবার। ও নিজেই যথেষ্ট রোগা, কিন্তু এ তার থেকেও রোগা বলেই মনে হচ্ছে। তার ওপর পান খেয়ে নিজের দাঁতের বারোটা বাজিয়ে রেখেছে। তবে গলার স্বরটা ভারি অমায়িক।

'কত টাকার প্রাইজ তোমার?' লোকটার কাছে এগিয়ে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল সে।
'আজ্ঞে, দুই লাখ। আপনি?'
'পাঁচ!' একটু তাচ্ছিল্যের সঙ্গেই উত্তর দিল সে। লোকটার ওপর একটু মায়াও হল তার। মাত্র দু লাখ টাকার প্রাইজ, তাও দোকানদারটা মেরে দিল।
'খুব ভালো! আমার নিজের সর্বনাশ হলে কি হয়, অন্যের ভালো হতে দেখলেও কি কম আনন্দ হয় আমার!' বলেই পকেট থেকে রুমাল বের করে দুচোখ মুছল লোকটা। এঃ, এতো নরম মানুষ হলে চলে নাকি? ভালো মানুষের পৃথিবী নাকি এটা? এখানে একটু শক্ত হতে হয়।
'সে তো হল, কিন্তু এখন টাকাটা পাই কোথা থেকে!' চিন্তিত হয়ে বলল নিধিরাম।
'সে ব্যাপারে কোনও চিন্তা নেই আপনার, নিজের টিকিট খোয়া গেলে কী হয়, আজকেই আমি সব খবর নিয়ে রেখেছি। চলুন, আগে কোন একটা ভদ্র জায়গায় বসা যাক। রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে এসব কথা বলাও বোধহয় ঠিক হচ্ছে না।' বিনয়ের সঙ্গেই বলল লোকটা।
'বসব মানে? এখন খুব ব্যস্ত আমি, বসার শোওয়ার কোনকিছুরই সময় নেই আমার।'
'সে কি আমি জানি না, দাদা? তবে কাজের জন্যই তো বসব কিনা। একটু চা বিস্কুট খাবো, দুটো সুখ দুঃখের কথা বলব আর আমাদের টাকা কী করে উদ্ধার হয় তার মতলব বের করব।'
'কিন্তু আমার কাছে টাকা নেই একটাও।' লোকটাকে সাবধান করল নিধিরাম। লটারি পেয়েছে শুনেই সে যেন না তাকে ভদ্রলোক বা সজ্জন ঠাওরায়, ও সব হওয়ার সময় এখনও আসে নি তার, আগে টাকাটা তো হাতে আসুক।
এত্ত বড় লাল জিভ বের করে কানে হাত দিল লোকটা, 'রাম, রাম! এ কথা শুনলেও পাপ হয় দাদা। আপনার এখন টাকা কোথা থেকে আসবে? আপনি শুধু আমার সঙ্গে চলুন না, বাকি সব দায়িত্ব আমার।'  
অনেকদিন পর কারো সঙ্গে কথা বলে এত আনন্দ পেল নিধিরাম। অবশ্য ব্যোমশঙ্করকে সে হিসেবের বাইরে রাখছে সে কুকুর বলে। আর শুধু চা আর বিস্কুটই নয়, সঙ্গে শিঙ্গাড়া আর রাজভোগও এল। এই জন্যই বলে লটারি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। তা ভাগ্য যে খুলেছে নিধিরামের তা সে দস্তুরমতোই টের পাচ্ছিল।
প্ল্যান মোটামুটি পাকা হয়ে গেল। কাল সকালেই সে আর লোকটা, যার নাম এখন সে জেনেছে নবাব বলে, সোজা চলে যাবে বড় বাজারে যেখানে এই লটারির কোম্পানির অফিস। ওখানে গিয়ে লটারি দেখালেই হাতে হাতে টাকা। ভাগ্য খুবই ভাল নিধিরামের কারণ সপ্তাহে মাত্র একটা দিনই অর্থাৎ বুধবারে টাকা দেওয়া হয় ওখান থেকে আর কালকেই সেই বুধবার। আর ওখানেই ঐ জোচ্চোর দোকানদারটার বিরুদ্ধেও কমপ্লেন করবে নবাব, চাই কি তার হাতেও দু লাখ টাকা চলে আসতে পারে কালকে।
জব্বর প্ল্যান! দোকানের আয়নায় নিজের হাঁসি হাঁসি মুখটা দেখে আর বিরক্ত হল না সে। এখানে আর কিছু লুকোনোর নেই তার। আয়নার দিকে আরও কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল সে।
'আর শুনুন দাদা, সব সময় সবাইকার সামনে আসল টিকিট বের করে দেখানো ঠিক হচ্ছে না একেবারেই। টিকিটটা একবার দিন, পাশেই জেরক্সের দোকান রয়েছে, আমি দুটো নকল করে আনি এটার।'
জেরক্স জিনিসটা কী বুঝতে কিছুক্ষন সময় লাগল নিধিরামের। বেশ মজার জিনিস তো - ফট করে একটা ছবি দুটো হয়ে যাবে?
'চলো আমিও দেখব জেরক্স কেমন হয়।' বলে উঠতে গেল নিধিরাম। হাঁ হাঁ করে উঠল নবাব, 'আরে আরে করছেন কী! এক্ষুনি মাংসের ঘুঘনি এল বলে। জেরক্সের দোকান তো ফেরার পথেও দেখে নিতে পারেন আপনি।'
'তা হলে চট করে বাথরুমটা সেরে আসি।' বলেই নবাবকে কোন কথা বলার অবসর না দিয়েই হোটেলটার ভেতরদিকে পা বাড়াল নিধিরাম। খেতে বসার আগে হাত ধোওয়ার সময়েই বাথরুমটা দেখে নিয়েছিল সে। আর বাথরুমের  ঠিক পেছনেই একটা ছোট রাস্তা বেরিয়ে যাচ্ছে বাজারের দিকে। সেই রাস্তাটা ধরেই সোজা বাইরে বেরিয়ে এল নিধিরাম। কোমরে হাত দিয়ে কিছুক্ষন নিঃশ্বাস নিল সে। উফফফফ... লটারি পাওয়ার হ্যাপাও তো কম নয়!
ভাগ্যিস হোটেলের আয়নায় নবাবের ঠোঁটের বাঁকা হাঁসিটা নজরে এসেছিল তার আর ঠিক সেই সময়েই মাথার ভেতরের আওয়াজটাও মিনমিন করে বলে উঠেছিল 'খুব সাবধান! এও কম ধড়িবাজ নয়!' নইলে তারও আজ নবাবের মতই অবস্থা হত। লোকটা সজ্জন সন্দেহ নেই, বরং তার চেয়েও উঁচুদরের কিছু, কিন্তু তবুও তাকে ভালো বলা যায় না কিছুতেই। এই একটা নতুন কথা শিখল সে - সব ভদ্র বা সজ্জন মানুষ হলেই সে ভালো হয় না।

'ও দাদা, আরে ও দাদা!'
নবাবের গলাটা পেয়েই ছুটল নিধিরাম। নাহ, যে লোক তাকে চা, বিস্কুট, শিঙ্গাড়া খাইয়েছে, আবার মাংসের ঘুঘনিও খাওয়াবে বলেছিল, তার সঙ্গে ঝগড়া করতে পারবে না সে। তাই পাঁই পাঁই করে ছুটল নিধিরাম, সামনে-পেছনে, ডাইনে-বাঁয়ে - কোনদিকে না তাকিয়ে সে ছুটল। আর ছুটতে ছুটতেই তার ধাক্কা লাগল একটা বিশাল শরিরের সঙ্গে।
'ধীরে ভাইয়া!' নিধিরামের প্রায় পড় পড় শরীরটাকে দুটি বলিষ্ঠ হাত সামলে তুলল। লোকটার মুখের দিকে তাকাল নিধিরাম। এক মুখ দাঁড়ি আর মাথায় বিশাল লাল রঙের পাগড়ি মানুষটার। কোথায় যেন দেখেছে একে সে? খুব চেনা চেনা মুখ লোকটার যেন। মনে পড়েছে, গত বছর দেওয়ালির পর এই লোকটাই তো এক ঠেলা ভর্তি কম্বল দিয়ে গেছিল ব্রিজের নিচে থাকা সমস্ত মানুষদের।
'ক্যা হুয়া ভাই, তুম ঠিক হো?' নিধিরামকে ঝাঁকিয়ে প্রশ্নটা করল সর্দার জি।
পেছনে কারো ছুটে আসার শব্দ পাচ্ছে যেন সে। একবার পেছন ফিরে দেখল নিধিরাম - না, কেউ নেই। 'দিয়ে দাও, একেই দিয়ে দাও' মেনিটার আওয়াজ আবার শুনতে পেল নিধিরাম। কাঁপতে কাঁপতে পকেট থেকে লটারি আর কাগজটা বের করে নিধিরাম লোকটার হাতে ধরাল।
'ইয়ে ক্যা হ্যায়...'
'এবার পালাও!' আবার ছুট! এবার আর কারো সঙ্গে ধাক্কা লাগল না নিধিরামের। রাস্তার মানুষদের পাশ কাটিয়ে সে এগিয়ে গেল নিজের প্রিয় ব্রিজটার দিকে। ঐ তো দেখা যাচ্ছে ব্রিজটা, আর ভয় নেই।
দৌড়ের স্পিডটা একটু কমাল নিধিরাম। মনটাও বড্ড ভালো লাগছে তার কোন কারণ ছাড়াই। বিছানা, টি ভি, ফুলের গাছ - নাই বা হল এ সব। আর সকালের ঐ মেয়েটাকেও আর তত খারাপ বলে মনে হচ্ছে না এখন, কালকে একবার চিন্তা করে, উঁহু, ভদ্র বা সজ্জন নয়, ভালো মানুষের দলেই না হয় ফেলে দেবে মেয়েটাকে সে। সঙ্গে তার মাকেও।
ব্রিজের কাছাকাছি এসে তবে থামল সে। এহে, একটা বড় ভুল হয়ে গেছে তার!  সে নিজে তো বেশ গান্ডে পিণ্ডে গিলে এসেছে হোটেল থেকে কিন্তু বেচারি ব্যোমশঙ্কর বোধহয় এখনও না খেয়ে ওর অপেক্ষাতেই বসে আছে।
"স্টপ, স্টপ! ওয়ান ক্লিক প্লিজ।"
সামনের দুটি মূর্তিকে দেখে বেশ ঘাবড়েই গেল নিধিরাম। এক সাহেব আর তার সঙ্গে এক মেম কী যেন ইকড়ি মিকড়ি কথা বলছে তার সঙ্গে। "ইয়েস, ইয়েস" বলে মাথা ঝাঁকাল নিধিরামও। আরও একটা ইংরাজি কথা সে জানত কিন্তু এখন কিছুতেই সেটা মনে পড়ছে না।
হাতের যন্ত্রটা দিয়ে ফটাফট ছবি তুলতে শুরু করল দুজনেই নিধিরামের। তা তোল, নিধিরাম কোমরে হাত দিয়ে পোস্টারে দেখা সিনেমার হিরোর মত পোজ দিয়ে দাঁড়াল। খুব খুশি দুজনেই তাই দেখে, মেয়েটা তো একবার "লাভলি" না কী যেন বলে হাততালিই দিয়ে উঠল। আর সেটা শুনেই খপাৎ করে হঠাৎ নিধিরামের সেই ইংরেজি কথাটা মনে পড়ে গেল।
"থ্যাঙ্ক ইউ!"
এবার দুজনেই একসঙ্গে হাততালি দিল। সঙ্গে একটা কুড়ি টাকার নোটও এগিয়ে দিল লালমুখো সাহেবটা। টাকাটা নিয়ে পকেটে রাখল নিধিরাম, যাক ব্যোমশঙ্করের আজ রাত্রের খাওয়ার ব্যাবস্থাও হয়ে গেল তা হলে!
এদেরকেও ভাল লোকের দলে ফেলে দিতে গিয়েও থমকে দাঁড়াল নিধিরাম। উঁহু, ইংরেজ মানুষের সঙ্গে সেটা ঠিক খাপ খাচ্ছে না। একটা যুতসই ইংরেজি শব্দ পেলে ভাল হত। অনেক চিন্তা করেও হিন্দিতে 'বড়িয়া আদমি' ছাড়া আর কিছু মনে এল না তার। এটাতেই কাজ চালাতে হবে, অন্তত বাংলার থেকে তো ভাল – এই ভেবে সাহেব আর মেমকে বড়িয়া আদমির দলে ফেলল নিধিরাম।
নিধিরামকে ফিরতে দেখেই ল্যাজ নাড়তে নাড়তে হাজির ব্যোমশঙ্কর। সেই জলখাবারের পর আর পেটে কিছু পড়েনি মনে হয়।
"খুব খিদে পেয়েছে তো? চল, চল, কালুয়াটার দোকানে।" তারপর দোকানে গিয়ে বেশ মেজাজে হেঁকে বলল নিধিরাম, "ব্যোমশঙ্করকে ঘুঘনি আর তিনখানা রুটি দে দিকিনি।"
"তাই? তা খাওয়ার দাম দেবে কে?"   
উত্তরে কিছু না বলে কালুয়ার মুখের সামনে কুড়ি টাকার নোটটা নাচাল নিধিরাম বেশ কায়দা করে।
"কী রে, লটারি পেয়েছিস নাকি আজ?"
কুকুরের খাওয়ার টাকা কেটে বাকিটা ফেরত দিতে গেলে কালুয়ার কাছ থেকে কিছুতেই টাকা নিল না নিধিরাম। টাকা নিয়ে সে কী করবে?  
"আরে যা দাম হয় তা তো নিলামই, বাকিটা তো তোকে ফেরত নিতেই হবে নিধি।" হতাশ গলায় বলল কালুয়া।
"আচ্ছা তুই এক কাজ কর, ঐ যে গাড়িটার পেছনে বুড়ো-বুড়ি দুজন বসে আছে দেখতে পাচ্ছিস? যা, বাকি টাকায় ওদেরকেও যা পারিস খাইয়ে দিয়ে আয়।"
তা যত্ন করেই দুখানা প্লেট সাজাল কালুয়া ঐ দুজনের জন্য। পাগল হলে কী হয়, হিসেব জানে নিধিরাম। তাই সে জানে যে বাকি টাকাতে দুজনের অত খাবার কিছুতেই হয় না। এর মানে একটাই – কালুয়াটাও নিছক ভদ্রলোকই নয়, তাকেও অনায়াসে "বড়িয়া আদমি"র দলেও ফেলে দেওয়া যেতে পারে।
"কী রে ঠিক বললাম তো?" ব্যোমশঙ্করের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল নিধিরাম। ব্যোমশঙ্কর নিজের খাবার শেষ করে ছোট্ট একটা হাই তুলে নিধিরামকে সমর্থন জানাল, "ভুক!"

ছবিঃ শাশ্বত ও সুশ্রুত

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা