সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

গ্র্যান্ডভিউ আবাসন কমপ্লেক্সের পাঁচিল ঘেঁষে একদম শেষ প্রান্তে পৌঁছে যেতেই একটা ছোট্ট মাঠের মত জায়গা পেল আকাশ।তাদের সুবিশাল ফ্ল্যাট চত্বরের পেছনেই যে এরকম একটা সুন্দর গাছ-গাছালি ভরা মাঠ আছে তা জানতই না সে। এবার থেকে বিকেলবেলা এক ছুট্টে এখানে চলে আসবে এমনটাই মনস্থির করল  সে। এখানে চারিদিকটা কী সুন্দর। একটু আগেই বৃষ্টি হয়ে গেছে। আশ-পাশের গাছে নানা রঙের ফুল ফুটেছে।প্রজাপতি, ফড়িং উড়ছে। একটা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে কীভাবে খেলা শুরু করবে ভাবছে এমন সময় দেখল একটা ছোট্ট মেয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে তার দিকে আসছে ।

মেয়েটাকে দেখতে ঠিক পাশের ফ্ল্যাটের রিমলির মত। সে এখন ওর খেলার সঙ্গী হতেই পারে। কিন্তু বাবা-মা'র অনুমতি ছাড়া ও খেলবে কী না কে জানে ?
মেয়েটা সাদা ফ্রক পরেছে । মাথাতেও লাগিয়েছে সাদাফুল । কী সুন্দর লাগছে ওকে । ও কাছে আসতেই আকাশ জিজ্ঞাসা করল – "তুমি ও রকম লাফিয়ে লাফিয়ে আসছিলে কেন?"
"ওমা, দেখছো না কত বৃষ্টি পড়েছে। ঘাসের মাঝে মাঝে জল জমে রয়েছে। জলের উপর ছপাৎ করে যাতে পা না পড়ে সেজন্যই তো লাফাচ্ছিলাম। তারপর দূর থেকে তুমি দাঁড়িয়ে আছো দেখতে পেয়ে চলে এলাম" – মেয়েটি উত্তর দিল ।
"খুব ভাল করেছ। আমিও এখানে ভাবছিলাম কার সঙ্গেই বা খেলব? এখন তুমি কী আমার বন্ধু হলে ?" আকাশ জিজ্ঞাসা করল ।
"হ্যাঁ, হতেই পারি। ধরে নাও আমরা বন্ধু হয়েই গেছি। তুমি আমার সঙ্গে আমার গ্রামে যাবে?" – তড়বড় করে মেয়েটি জানতে চাইল।
আকাশতো এক কথায় রাজি। সে তার নতুন বন্ধুর হাত ধরে ছুটতে শুরু করল। ঘন গাছপালা, মাটির রাস্তা আর ছোটো ছোটো বাড়িঘরের পাশ দিয়ে দৌড়তে দৌড়তে ওরা একটা সুন্দর জায়গায় পৌঁছে গেল। এখানকার একটা দিক টিলার মত উঁচু। চারিদিকে তাল, নারকেল, সুপুরি গাছের সারি । অন্যদিকে আম, জাম, কাঁঠাল কী নেই? এসবের পাশ দিয়েই বয়ে যাচ্ছে সরু একটা নদী।
ছোট্ট মেয়েটা আকাশের হাত ছেড়ে দিয়ে বলল, "এই দেখো, এটা আমাদের গ্রাম।"
"কী সুন্দর এই জায়গাটা! চলো আমরা ওই টিলার নীচে গিয়ে খেলি" - আকাশ বলল।
"তাই চলো, তোমাকে আমার বাবা-মা'র সঙ্গেও আলাপ করিয়ে দেবো। খুব মজা পাবে তুমি" – মেয়েটি আকাশকে নিয়ে যেতে যেতে বলল।
হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতেই আকাশ মেয়েটাকে জিজ্ঞাসা করল, "তোমার নাম কী গো?"
"আমার নাম রিমঝিম বৃষ্টি" – মেয়েটি উত্তর দিল।
"খুব সুন্দর নামটা। কিন্তু টাইটেল কোথায়? কে দিল এমন নাম?" আকাশ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল।
"এমন নাম দিয়েছে আমার বাবা" – রিমঝিম উত্তর দিল । বলল, "একদিন হয়েছে কী জানো, আমি আর বাবা গেছি ওই টিলাটার ওপারে। বাবার চাষের কাজ শেষ। আমরা বাড়ি ফিরব। এমন সময় আকাশ ঢেকে গেল কালো মেঘে। তখনই বৃষ্টি নামবে। বাবা বলল তাড়াতাড়ি চ' রিমঝিম, নইলে বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপে হয়ে যাব। তক্ষুনি বাবার কোমর শক্ত করে ধরে সাইকেলের পেছনে চড়ে বসলাম। ফাঁকা মাঠের মাঝখানে লেপটে থাকা মোরামের লাল রাস্তার উপর দিয়ে বাবা জোরে সাইকেল চালাচ্ছে। হু হু করে হাওয়া বেড়িয়ে যাচ্ছে আমার কানের পাশ দিয়ে। দূরে শুরু হয়ে গেছে ঝমঝমে বৃষ্টিটা। ভিজিয়ে দেবে বলে পেছন দিক থেকে সে ক্রমেই ছুটে আসছে আমাদের দিকে – আর আমরাও পালাচ্ছি। অনেকক্ষণ চলল এইরকম দৌড়। কিন্তু বৃষ্টির সঙ্গে আমরা পারব কেন? গ্রামের সবচেয়ে উঁচু আর ঘন বটগাছটার কাছে পৌঁছোনোর আগেই বৃষ্টি আমায় ভিজিয়ে দিল। সাইকেল নিয়ে বাবাও এগোচ্ছে, বৃষ্টিও এগোচ্ছে। বাবার গায়ে একটুও জল লাগছে না, কিন্তু আমি ভিজে চুপচুপে। আমাকে ভিজিয়ে দেবে বলেই যেন ছুটছিল বৃষ্টিটা। সে কী  অবাক কাণ্ড! সেদিনইতো বাবা বলল আজ থেকে তোর নাম রিমঝিম বৃষ্টি" – একটানে এতগুলো কথা বলে আকাশের নাম জানতে চাইল সে।

এক মনে রিমঝিমের কথা শুনছিল আকাশ।সে বলল "আমার নাম আকাশ ভট্টাচার্য।"
"তোমার নামটা কীরকম যেন খাপছাড়া। বাবা বলেছে আকাশের রঙ হল নীল। আজ থেকে তোমায় আমি 'নীল আকাশ' বলেই ডাকব। কী, নামটা পছন্দ তো?" – গড় গড় করে কথাগুলো বলে থামল রিমঝিম।
নতুন একটা নাম পেয়ে খুব খুশি হল আকাশ। বলল, আজকেই স্কুলের বন্ধুদের সে জানিয়ে দেবে নামটা।
"এই দেখ, তোমাকে তো আমাদের স্কুলটাই দেখাতে ভুলে গেছি" – বলল রিমঝিম।
এরপরই আকাশকে হাত ধরে কিছুটা টেনে নিয়ে এগিয়ে গিয়ে তিনটে পাশাপাশি ছোট খড়ের চাল দেখিয়ে বলল – "এই আমাদের স্কুল।"
"ওমা! এ কী স্কুলের ছিরি? টেবিল, চেয়ার, রঙিন পেন, বোর্ড, কমপিউটার কিছুই তো নেই দেখছি। তোমাদের স্কুলে এসি নেই?" – আকাশ অবাক হয়ে বলল।
"আমাদের স্কুলটা এইরকমই। এই দেখ আমাদের ব্ল্যাকবোর্ড" – একটা ভাঙা কাঠের বোর্ড দেখিয়ে রিমঝিম বলল। "এখানে টুকে দেওয়া লেখাপড়া শেষ হলেই আমাদের ছুটি হয়ে যায়। তারপর আমরা ওই মাঠে খেলা করি।"
"আমাদের স্কুলটা না খুব শক্ত। সারাদিন পড়া আর পড়া। একটুও খেলার জায়গা নেই। শুধু সাটারডে-তে তিনতলার ছাদে পিটি করায় দেবলিনা আন্টি। তাতে পা ব্যথা হয়ে যায়" – বলল আকাশ।
রিমঝিম বলল, "দুঃখ পেয়ো না, আমরাতো এখন বন্ধু হয়ে গেলাম। তুমি মাঝে মধ্যেই এখানে চলে আসবে। আমরা খেলব।"
"সেই ভাল হবে"- আকাশ উত্তর দিল।
"তবে এখন চলো আমাদের বাড়ি।"  – এই বলে রিমঝিম আকাশের হাত ধরে টান দিতেই মায়ের মিটিমিটি হাসি মুখ দেখতে পেল আকাশ। মাকে দেখেই ধড়ফড় করে উঠে পড়ল ও। একটা ঘোর লাগা থেকে মুক্ত হয়ে বুঝল ভোর হয়ে গেছে। এখনই স্কুলের গাড়ি এসে পড়বে।
"উঠতে হবে না, উঠতে হবে না। আজ রেনি ডে। দেখছো না কী জোর বৃষ্টি পড়ছে। স্কুলের আন্টিকে ফোন করেছিলাম, আজ ছুটি ডিক্লেয়ার করেছে।" – আকাশের মা বললেন।
তবুও আকাশ উঠে পড়ল। ওদের ফ্ল্যাটের এক চিলতে বারান্দায় গিয়ে দেখল বৃষ্টি হচ্ছে চতুর্দিক জুড়ে। জলে ভিজে সতেজ হয়ে উঠেছে বারান্দায় রাখা বাহারি গাছগুলো। এত বৃষ্টির মধ্যে কী করবে বুঝতে না পেরে কার্নিসে চুপচাপ বসে আছে একটা চড়াই পাখি। এর মধ্যেই আশপাশের সারিবন্দি ফ্ল্যাট বাড়ির মাঝে আকাশ খুঁজছিল সেই রাস্তাটা, যেখান দিয়ে ও চলে গিয়েছিল রিমঝিম বৃষ্টির দেশে।

ছবিঃ মহাশ্বেতা রায়

বর্তমানে একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে সম্পাদনা বিভাগের সঙ্গে যুক্ত। একটা সময় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রবন্ধ ও ফিচার বিষয়ক লেখালিখি করেছেন। তবে সুসমীর ঘোষ নামে। গল্প ও ছোটদের জন্য লেখালিখির শুরু বেশিদিন নয়। ইতিমধ্যেই বিশিষ্ট পাক্ষিক,দৈনিক সহ বেশ কিছু লিটল ম্যাগাজিনে গল্প প্রকাশিত হয়েছে এবং দুটি বই ও প্রকাশিত হয়েছে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা