সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

মিলু আজ বেশ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। পাশে টেবিলেই রাখা ছিল ওর চশমাটা। মিলুর সুন্দর চোখ দুটো মোটা কাচের আড়ালে কেমন যেন ড্যাবড্যাবে দেখায়, কিন্তু উপায় নেই, ওটা ছাড়া যে ও চোখে সব কেমন ঝাপসা দেখে। পাশে শুয়ে আছে ওর ভাই নাদু। ওর থেকে ৩ মিনিটের ছোটো। আসলে ওরা যমজ ভাইবোন। সামনের দাঁত দুটো ওর খরগোশের মত, তাই ঘুমালেও বেরিয়ে থাকে সামান্য। নাদুরও চশমা আছে, তবে পাওয়ার কম, মিলুর মত নয়। মিলু চশমা নেওয়ার তিনদিনের মধ্যেই নাদু হঠাৎ চোখে কম দেখতে শুরু করে। দোতলার পশ্চিমের ঘরটা ওদের দুই ভাই বোনের। মিলুর সূর্য ওঠা দেখতে খুব ভালো লাগে। গতবছর ওরা যখন নেতারহাটে বেড়াতে গিয়েছিল, তখন প্রথম দেখেছিল সূর্য কিভাবে উদয় হয়। খুব ভোরে প্রায় অন্ধকার থাকতে থাকতেই মা ওদের ঘুম থেকে টেনে তুলেছিল। প্রথমে খুব রাগ হয়েছিল মিলুর। স্কুলের জন্য তো রোজই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হয়, ঘুরতে এসেও কি একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না! মুখ গোমড়া করে ঢুলতে ঢুলতে ওরা দুই ভাই বোন, বাবা মা’র সাথে হোটেল প্রভাত বিহারের ছাদে গিয়ে যখন পৌঁছালো,তখন পূব দিকে সরু সুতোর মত একটা লালচে রঙ দেখা যাচ্ছিল। তারপর হঠাৎ আকাশটা কেমন যেন লাল আলোয় ভরে উঠলো। ধীরে ধীরে হলুদ,কমলা নান রঙ যেন আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো! এর মাঝেই হঠাৎ করেই দেখতে পেল লাফ দিয়ে কেমন বলের মত লাল রঙের সূর্যমামা আকাশের বুকে ছবির মত ভেসে উঠলো। সবাই তখন ছবি তুলতে ব্যস্ত। মিলু সেই প্রথম ভোর বেলায় পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ শুনেছিল। সেই থেকেই ভোরের প্রতি ওর মনে একটা ভালোবাসা জন্মেছে। প্রতিদিনই ভাবে সকালে উঠবে, কিন্তু কিছুতেই ঘুম ভাঙে না!  কিন্তু আজ যে ওর সকাল সকাল ঘুম ভেঙেছে তার পিছনে একটা কারণ আছে।
ওদের বাড়ি থেকে প্রায় পঞ্চাশফুট দূরত্বে যে লাল রঙের বাড়িটা, সেটা পল্টনদাদাদের। কাল মাঝ রাতে ঘুম আসছিলনা বলে ও জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েছিল। যদিও তখন চশমাটা খুলে রেখেছিল টেবিলে। তবুও পল্টনদাদাদের ছাদে ও যে আলোটা দেখাছিল, সেটার রঙ যে সবুজ সেটা ওর স্পষ্ট মনে আছে। আলোটা দপ করে একবার জ্বলেই বন্ধ হয়ে গেল। তারপরই দেখেছিল ঘোড়ার লেজের মত গুচ্ছ সবুজ ধোঁয়া দুলতে দুলতে উপরে উঠেই মিলিয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। ওটা দেখেই এমন ভয় পেয়ে গিয়েছিল যে, সারা রাত আর ভালো করে ঘুমাতেই পারে নি! ভোরের দিকে একটু ঘুমটা এসছিল, কিন্তু চোখ বন্ধ করতেই কেমন যেন সব ভয়ের স্বপ্ন দেখে ঘুমটা ভেঙে গেল। এর মধ্যেই নাদুও ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। ওরা দুই ভাইবোন চোখে চশমা লাগিয়ে হাত-পা ছড়িয়ে বিছানায় বসেই আছে। এমন সময় মা ঘরে ঢুকেই ওদের এভাবে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে গেল। চোখ গোল গোল করে ওদের দিকে তাকিয়ে বললো—
ও বাবা! আজ যে দেখি সূর্যটা পশ্চিম দিকে উঠেছে!
সূর্যের পশ্চিম দিকে ওঠার কথা শুনেই মিলুর মনটা গেল খারাপ হয়ে। ইস্‌! সত্যিই যদি সূর্যটা পশ্চিম দিকে উঠতো! তবে বিছানায় বসে বসেই ও প্রতিদিন সকালে সূর্য ওঠা দেখতে পেত! এবাড়িতে সূর্যোদয় দেখতে হলে সেই তিনতলার ছাদে যেতে হবে, আর একা একা ওদের যে ছাদে যাওয়া নিষেধ আছে। মা কে দেখেই ওরা দু’জন বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে নেমে এলো, তারপর দুজনেই একসাথে জড়িয়ে ধরলো মাকে। ওরে ছাড়...ছাড় বলতে বলতে মা দুজনের গালেই চুমু খেল।

স্কুলে নাদু আর মিলু পাশাপাশি বসেছে। মিলু সেই সকাল থেকেই ভাবছে গতরাতের ঘটনাটা নাদুকে জানানো ঠিক হবে কিনা! ওর তো আবার একটু পেট পাতলা। যা বলতে নিষেধ করা হবে, সেটাই সবাইকে বলে দেবে। অনেক ভেবে মিলু তখনই আর নাদুকে বিষয়টা বললো না। মনে মনে ঠিক করলো বিকালে বাড়ি ফেরার পথে নিজেই পল্টন দাদার সাথে একবার দেখা করে জেনে নেবে। পল্টনদাদা মিলুকে ভীষণ ভালোবাসে। ভালো বাসবে না কেন? একমাত্র মিলুই আছে, যে পল্টন দাদার মনের দুঃখটা বুঝতে পারে। ওর চেহারা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে না। পল্টন দাদা ক্লাস এইটে পড়ে, কিন্তু দেখতে মিলুর থেকেও ছোট। পল্টন দাদার বয়স বেড়েছে, হাত-পা, বড় হয়েছে, কিন্তু হাইটটা সেই ছোটই থেকে গিয়েছে। সবাই সেই জন্য পল্টন দাদাকে বেঁটে বামুন বলে খ্যাপায়। মাঝে মাঝে ছুটির দিনে ওরা যখন পল্টনদাদার বাড়িতে যায়, তখন পল্টনদাদা ওদেরকে দেশ বিদেশের অনেক গল্প শোনায়।
স্কুল ছুটি হতেই মিলু আর নাদু তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে এলো। এই সময় প্রতিদিনই পল্টনদাদা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে,উদোর মাঠের পুকুরের ধারের ভাঙা বেঞ্চিতে গিয়ে একা একা বসে থাকে। মাঝে মাঝে মিলুদের নিয়ে যায়। মিলু ঠিক করলো উদোর মাঠে যাবে পল্টনদাদার সাথে দেখা করতে, কিন্তু তার আগে বাড়িতে তো একটা খবর পাঠাতে হবে! ঠিক তখনই দেখতে পেল খোকনকে। ওদের পাশের বাড়িতেই থাকে। ওকে ডেকে বাড়িতে খবর পাঠিয়ে মিলু আর নাদু এগিয়ে চললো উদোর মাঠের দিকে। দূর থেকেই ওরা দেখতে পেল পল্টনদাদা বসে পা দোলাচ্ছে আর একটা একটা করে কী যেন ছুঁড়ে ফেলছে পুকুরের জলে।
মিলু পিছন থেকে পল্টনদাদা বলে ডাকতেই ওদের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললো—
কী রে তোরা? খবর কী তোদের? অনেকদিন তো বাড়িতে আসিস নি।
 মিলু আর নাদু ব্যাগ দুটো বেঞ্চের উপর রাখলো। তারপর পল্টনদাদার দু’দিকে দুজনে পা ঝুলিয়ে বসে পড়লো।
পল্টন আবার যেন কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে পুকুর পেরিয়ে দূরের দিকে চেয়ে রইলো। বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর মিলুই প্রথম বলে উঠলো—
আচ্ছা পল্টনদাদা, কাল রাতে তোমাদের বাড়ির ছাদে ওটা কিসের আলো ছিল গো?
পল্টন প্রায় আঁতকে উঠে মিলুর দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললো—কো – কো-কোন আলো? কই কোনো আলো তো নেই! আ- আ-মি তো কাল রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েছিলাম।
না গো আমি যে স্পষ্ট দেখলাম, সবুজ আলো। জ্বলে উঠে নিভে গেল, তারপর সবুজ ধোঁয়া।
না না , তুই ভুল দেখেছিস।
মিলু পল্টনের হাতটা জড়িয়ে ধরে বললো, বলো না দাদা, ওটা কিসের আলো ছিল। আমি নিশ্চিত তোমার কিছু হয়েছে। অন্য দিন আমাদের দেখলেই তুমি আনন্দে লাফিয়ে ওঠো। কত গল্প শোনাও। আজ সেই তখন থেকে এসে বসে আছি আমরা,অথচ তুমি কেমন চুপ করে আছো,কোনো কথা বলছো না! কী হয়েছে তোমার পল্টনদাদা? বলো না...
পল্টনের চোখ দিয়ে দু’ফোঁটা জল গড়িয়ে এলো। আনন্দের না দুঃখের বোঝা গেল না। দুই হাত দিয়ে মিলু আর নাদু কে কাছে টেনে বললো--
আমি আর বেশি দিন তোদের সঙ্গে থাকবো না রে। তোদের সাথে আর দেখা হবে না আমার!
মিলু আর নাদু দুজনেই এক সাথে বলে উঠলো—কেন পল্টনদাদা? তুমি কি মরে যাবে? তোমার কি অসুখ করেছে?
হা হা হা , না রে পাগল। আমি এক জায়গায় চলে যাচ্ছি। তোদের জন্য মন খারাপ করলে না হয় আসবো দেখা করতে।
কোথায় যাচ্ছো পল্টন দাদা?
বলতে পারি, তবে কথা দে কাউকে বলবি না। নাদুর দিকে ঘুরে বললো, "তুই যদি কথা দিস কাউকে বলবি না, তবেই বলতে পারি’।
নাদু ঘাড় নেড়ে বললো, "ঠিক আছে কথা দিলাম। কাউকে বলবো না। খুব যদি কাউকে বলতে ইচ্ছা করে, তবে খাতায় লিখবো’।
ঠিক আছে, তবে বলি শোন, আমি প্লুটোতে চলে যাচ্ছি।
প্লুটো! সেটা তো একটা গ্রহ, অনেক দূর! কী আছে সেখানে? কেন যাচ্ছো পল্টনদাদা?
আরে তোরা এটাও জানিস না, প্লুটোকে এখন গ্রহ বলে আর কেউ সম্মান করে না। সবাই বলে ওটা নাকি একটা বামন গ্রহ ছিল। ওর ব্যাস মাত্র ২৩৭২ কিলোমিটার। ছোট্ট আমার মত রে! বলতে গিয়ে গলাটা ধরে এলো পল্টনের। এখানে আমাকে যেমন সবাই অসম্মান করে, হাসি ঠাট্টা করে আমার রূপ নিয়ে। প্লুটোরও একই অবস্থা! তাই আমি ঠিক করেছি ওখানেই চলে যাবো। আর তাছাড়া দ্যাখ, পৃথিবীর সাড়ে ছয় দিন সমান ওখানে একদিন। তবেই বোঝ,স্কুলেও তো কম যেতে হবে ওখানে থাকলে।
স্কুল কম যাওয়ার কথা শুনেই লাফিয়ে উঠলো নাদু। কী মজা পল্টনদাদা, আমিও তবে তোমার সাথে যাব।
মিলু সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো, "তুই থাম তো নাদু, যেন বললেই যাওয়া যাবে! আগে পল্টন দাদা তো ঘুরে আসুক’।
হ্যাঁ, ঠিক বলেছিস মিলু। আমি আগে সব কিছু দেখে বুঝে আসি। তবে জানিস, ওখানে তো প্রচন্ড ঠান্ডা! অনেক জামা, সোয়েটার পরে যেতে হবে।
মিলু বললো, ‘সে তুমি চিন্তা করো না। নাদু, আমার অনেক গরম পোশাক আছে সেই গুলো আমরা তোমাকে দিয়ে দেবো।
তবে তো এই সমস্যাটা মোটামুটি মিটলো। বলতে বলতে পল্টন বেশ ভাবুক হয়ে পশ্চিম দিকে অস্ত যাওয়া সূর্যের দিকে তাকিয়ে বললো, "জানিস, সেখানে গেলে একটা নতুন জিনিস দেখবো, যা আমরা পৃথিবীতে বসে শুধু মাত্র কল্পনা করি। কী বলতো নাদু, মিলু?
কী পল্টন দাদা?
ওখানে গেলে পশ্চিমদিক থেকে সূর্য ওঠা দেখতে পাবো রে!
পশ্চিমদিকে সূর্য! বলো কী পল্টনদাদা! এটা কি সত্যি হয়?
হবে না কেন? প্লুটো নিজের অক্ষের উপর পূর্ব থেকে পশ্চিমে ঘুরছে, ঠিক পৃথিবীর উলটো। তবেই বোঝ, পৃথিবীতে সূর্য পূর্ব থেকে উঠলে প্লুটোতে তো পশ্চিমেই উঠবে তাই না?
ঠিক বলেই মিলু গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ বসে থেকে হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, "প্লিজ, আমাকেও নিয়ে চলো না! আমার খুব ইচ্ছা হয় পশ্চিমদিকে সূর্য ওঠা দেখতে!’
আরে সব হবে, দাঁড়া আমি আগে যাই। নে, এবার চল বাড়ি ফেরা যাক। বাড়িতে খবর দিয়েছিস তো?
হ্যাঁ, খোকনকে বলে দিতে বলেছি।
ঠিক আছে, চল আমাদের বাড়িতে। একটা জিনিস দেখাবো। পল্টন মিনিট দশেকের মধ্যে মিলু,নাদুকে নিয়ে উপস্থিত হলো ওদের বাড়ির দোতলার চিলেকোঠায়। দরজা খুলতেই চমকে উঠলো মিলু আর নাদু। চিলেকোঠার প্রায় অর্ধেকের বেশি অংশ জুড়ে ডিমের আকারের একটা বস্তু, যার মাথার উপরে অংশটি শঙ্কু আকৃতির টুপির মত। শঙ্কুর একেবারে উপরের অংশে সিলভার কালারের চকচকে চওড়া নল ছাদের মাথা ফুঁড়ে বাইরে বেরিয়ে আছে। শঙ্কুর গায়ে অসংখ্য আলো বসানো।
এটা কী পল্টনদাদা?
আরে এটাই তো প্লুটোযান। বাড়ির ওয়েস্ট মেটেরিয়াল দিয়ে এইটা বানানো। দেখবি একটা মজা? বলেই ঐ ডিম আকৃতির বস্তুটির গায়ে লাগানো সরু নলের একেবারে নিচে একটা কাগজে গুঁড়ো গুঁড়ো কী সব রেখে আগুন ধরিয়ে দিতেই সবুজ ধোঁয়া নল বেয়ে সোজা উপরে উঠে গেল।
মিলু এবার বুঝতে পারলো কাল রাতে ঐ সবুজ ধোঁয়ার আসল রহস্য। কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো, ‘তুমি এটা বানালে কী করে?’
বলছি, আমার সঙ্গে চল, বলেই ওদের টেবিলের কাছে নিয়ে গেল। সেখানে একটা বেশ বড় কাচের পাত্রের মধ্যে একটা অদ্ভুত পতঙ্গের মত জীব কে দেখিয়ে বললো-- এ কে জানিস? ‘প্লুটোরিয়ান’ আমাকে নিয়ে যেতে এসেছে প্লুটো থেকে। পতঙ্গটির আকৃতি বিশাল আকারের গঙ্গা ফড়িং এর মত, তবে রংটা ধূসর। মাথার উপর দুটি স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায় এমন গোলগোল চোখ। তবে এত বড় আকারের গঙ্গা ফড়িং কেউ কখনও দেখেছে বলে মনে হয় না! জানিস সেদিন ঘুমিয়ে আছি, হঠাৎ দেখলাম ঠিক এই রকম দেখতে একটা যান এসে নামলো আমাদের ছাদে। কে যেন গম্ভীর গলায় বললো, এই যন্ত্রের গঠনটা দেখে আমি যেন এমনই একটি যন্ত্র বানিয়ে প্লুটোতে চলে যাই। উপাদান সব যন্ত্রের গায়েই লেখা আছে। ওখানে সবাই নাকি আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি পুরো যন্ত্রটাকে খুলে দেখলাম কিভাবে, কী কী জিনিস দিয়ে বানানো। সব দেখা প্রায় শেষ এমন সময় ঘুমটা গেল ভেঙে। ওরা বলেছিল ওদের প্রতিনিধি আমাকে নিতে এসেছে। ঘুম ভাঙতেই দেখি মাথার কাছে ইনি বসে আছেন।
কী মজা তোমার তাই না পল্টনদাদা? আচ্ছা, তোমার মাকে বলেছো?
একটা যন্ত্র বানাচ্ছি জানে, কিন্তু কেন বানাচ্ছি জানে না। যাওয়ার আগে বলবো না, বললে কান্নাকাটি করে আটকে দেবে আমায়। একটা চিঠি লিখে চলে যাবো। তারপর আবার ফিরে এসে বাবা-মাকে নিয়ে যাবো। আর ভালোই হলো তোরা জেনে গেলি। আমি চলে যাওয়ার পর তোরা ক’টাদিন মাকে সামলে রাখতে পারবি না?
হ্যাঁ, পারবো পল্টনদাদা।
ঠিক আছে, আজ তোরা বাড়ি যা। আমার কাজ প্রায় শেষ করে ফেলাছি। ১৪ই আগস্ট রওনা দেবো ঠিক করেছি।
মিলু আর নাদু সিঁড়ির শেষ প্রান্তে পৌঁছাতেই উপর থেকে পল্টন চেঁচিয়ে বললো, "তবে ১৪ই আগষ্ট ঠিক রাত বারোটা, দেখা হবে’।

১৪ই আগষ্ট সকাল থেকেই মিলু আর নাদুর মন বেশ চঞ্চল। রাতেই ঘটতে চলেছে সেই ঐতিহাসিক ঘটনা।  এই ক’দিন ধরে কাকাইকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছে দশ মিনিটের জন্য কাকাই রাতে ওদের নিয়ে যাবে বলেছে। কারণটা যদিও জানায় নি কাকাইকে। স্কুলে ঢুকেই নাদু দেখতে পেল পল্টনদাদাও অন্য দিনের মত স্কুলে এসেছে। আসলে কারোর যাতে কোনো সন্দেহ না হয়। ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করতে করতে রাত্রি প্রায় পৌনে বারোটা। মিলু আর নাদু চুপিচুপি বেরিয়ে পড়লো কাকাইয়ের হাত ধরে। কাকাইকে বাইরে রেখে ওরা পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকে পড়লো ঘরে। পল্টনদাদা দরজা খোলা রেখেছিল। চিলেকোঠার ঘরে ঢুকেই দেখলো পল্টনদাদা প্রস্তুত হয়ে ওদের জন্যই অপেক্ষা করছে। মিলু আর নাদুর চোখে জল চলে এলো। আবার কবে পল্টনদাদার সাথে দেখা হবে কে জানে! পল্টনের চোখেও জল, ওদের জড়িয়ে ধরে বললো, ‘বিদায় বন্ধু’। তারপর সেই পতঙ্গের পাত্রটা সঙ্গে নিয়ে প্লুটোযানে ওঠার আগে সেই নলের নিচে গুঁড়োগুঁড়ো কীসব রেখে দিল,তবে এবার আর আগুন দিলনা। মিলু দেখলো একটা গ্যাসপাইপ নতুন সংযোজন করেছে, সেই পাইপের নবটা ঘুরিয়ে দিতেই আগের দিনের মত সবুজ ধোঁয়া উপরে উঠতে শুরু করতেই পল্টনদাদা ভিতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল। মিলু আর নাদু হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। মিনিট দুয়েক হবে, হঠাৎ প্রচন্ড এক শব্দে মিলু আর নাদু ছিটকে পড়লো হাত তিনেক দূরে। ঘটনার আকস্মিকতায় দুজনেই যখন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সামনে তাকিয়েছে, দেখলো, কালো কালি মাখা পল্টনদাদা গোলগোল চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আর প্লুটোযান তখন ছিন্নভিন্ন! শব্দ শুনে ততক্ষণে পল্টনদের বাড়ির ছাদে ভিড় জমে গিয়েছে। মিলু আর নাদুর কানের কাছে পল্টন ফিসফিস করে বললো, "ইস্‌! একটু ভুল হয়ে গেল রে! আসলে কী বলতো, সেদিন স্বপ্নে পুরো যন্ত্রটা খুলে দেখার আগেই আমার ঘুমটা ভেঙে গিয়েছিল, তাই শেষটুকু আমি নিজের বুদ্ধিতে করেছিলাম’।
নাদু আর মিলু তখনও গোল গোল চোখে চেয়ে আছে পল্টনদাদার দিকে!

ছবিঃ পার্থ মুখার্জি

কলেজে কবিতার হাত ধরে সাহিত্য জগতে প্রবেশ। বর্তমানে বিভিন্ন সমকালীন  পত্রিকা ও ওয়েব ম্যাগাজিনে গল্প ও উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। 

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা