সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

সেদিন দুপুরের পর থেকে হঠাৎ আকাশ কালো হয়ে এল,মনে হল সব মেঘ একসঙ্গে আকাশে কোন মিটিং বসিয়েছে।আকাশ ভেঙে পড়বে যেন। সকালে কোন লক্ষণ ই ছিলনা আর দুপুরে এত কালো মেঘ দেখে রীতিমত ভয় ভয় করছে মাধুর্য' র। মাধুর্য মিত্র।ও ক্লাস টু' এ পড়ে। আজ ওদের স্কুল ছুটি  ঈদের জন্যে।
 তুলি! তুলি!
কী হল মা?
কোথায় তুমি?
এই যে আমি, বারান্দায়!
চল,একটু ঘুমিয়ে নেবে, নয়ত সন্ধ্যে বেলা পড়তে বসে ঘুম পাবে আর শুধু হাই উঠবে। চলে এসো।
প্লিজ মা,আজকে আমি ঘুমোবনা,আজকে আমি একটু আমার পুতুল গুলো নিয়ে বারান্দায় বসে খেলি,প্লিজ মা!
ঠিক আছে,তবে কথা দাও,পড়তে বসে ঘুম পাবেনা!
'উফ! এই যে তোমায় প্রমিস করলাম,সত্যি আমার ঘুম পাবেনা।'
'আচ্ছা,কিন্তু বাইরে যাবেনা একদম,কেউ আজ খেলতে বের হবেনা, দেখছতো, কেমন ঝর উঠছে,দরজাও খুলবেনা কিন্তু!'
'ঠিক আছে,খুলবনা, সত্যি বলছি।'

 মা ঘরে যাওয়ার পর মাধুর্য বারান্দায় ওর খেলনা সাজিয়ে বসল,যত পুতুল আছে ওর কাছে সব ক' টা নিয়ে বসেছে,ওদের পিকনিক আজ।কোনওটাকে ওর সাইকেলে,কোনওটাকে ওর স্কুটিতে আর কোনওটাকে ওর টুলে বসিয়ে রেখেছে,বারান্দাটা পুরোই ওর দখলে।
বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে বিরাট জোরে,বাইরে বড় বড় লিচু আর আম গাছ গুলো এত জোরে জোরে হেলছে যেন মনে হচ্ছে এক্ষুনি ভেঙে পড়বে।এমন সময় হঠাৎ গ্রিলের গেট টা' র বাইরে সিড়ির কাছে কিছু একটা দেখতে পেল,জিনিসটা জড় বস্তু নয়।কারণ ওটা নড়ছে।

মাধুর্য প্রথমে একটু ভয় পেল।তারপর সাহস করে উঁকি দিল।দেখে একটা সবুজ রঙের চন্দনা পাখি। মাধুর্য অবাক হয়ে গেল পাখিটাকে দেখে,ও আসলে বেড়াল ভেবেছিল।
মা' কে দেওয়া প্রমিস ভুলে গিয়ে গেটের ছিটকিনি খুলে দিল ও।দৌঁড়ে গিয়ে অবশ্য ঘরে দেখে এসেছে মা ঘুমোচ্ছে,তাই আর জাগায়নি।এবার নীচে বসে পাখিটা' কে আলতো করে কোলে উঠিয়ে নিল ও।আহারে,কী মিষ্টি পাখিটা, কী ভয়ই না পেয়েছে! মাধুর্য' র চোখ ভিজে এল।নিজের সঙ্গে তুলনা করল,ও যদি ঝড় বৃষ্টির রাতে এমন হারিয়ে যেত মা বাবার কাছ থেকে! ভেবেই আঁতকে উঠল ও।

পাখিটাকে একটা বাক্সের মধ্যে একটা তোয়ালের মধ্যে রাখল মাধুর্য। ওর কষ্ট হচ্ছে মনে হচ্ছে,আহারে কতদিন খায়নি। ও একটা বাটিতে করে জল এনে ওকে খাওয়াল,ওর হাতে কী সুন্দর খেয়ে নিল পাখিটা।উফ,মা যে কোথায় ছাতু রেখেছে,এখন রান্নাঘরে খুঁজতে গেলে মা বুঝে যাবে,তাছাড়া অনেক উঁচুতে কৌটো গুলো রাখা,ও নাগাল পাবেনা।কিন্তু পাখিটার যে খিদে পেয়েছে,কী করে ও!
পাখিটার মাথায় হাত বুলোতে থাকল মাধুর্য।
পাখি তুই চকলেট খাবি? আমার স্কুল ব্যাগে আছে,আমি জানি টিয়া আর চন্দনারা ছোলা আর ছাতু খায়,কিন্তু আমি কোথায় পাই বলতো?

একটা বিরাট জোরে বাজ পড়ল।নিজেই ভয় পেয়ে গেল মাধুর্য!পাখিটাও।

তুলি! চল বাবা ভেতরে চ...!
এটা কি? কোথায় পেলে?
মা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,যেমনি পাখিটাকে প্রথম দেখে ও তাকিয়েছিল।
মা, দেখ,এটা একটা ছোট্ট চন্দনা পাখি,ঝড়ে ভয় পেয়ে বারান্দার সিড়িতে এসে বসে ছিল,আমি দরজা খুলে ওকে ভেতরে নিয়ে এসেছি।তুমি ঘুমোচ্ছিলে তাই ডিস্টার্ব করিনি।ওর খুব খিদে পেয়েছে মা!
আমাকে ডাকোনি কেন তুমি? এসো এসো,ওকে খেতে দাও শিগ্‌গির।
থ্যাংকইউ মা!
মা' কে জড়িয়ে অনেক আদর করে দেয় মাধুর্য।
ছাতু মেখে একটু একটু করে পাখিটার মুখে দেয় ও।কপকপ করে সবটুকু ছাতু খেয়ে নেয় সে,মাধুর্য'র খুব ভাল লাগে ওকে খাইয়ে।প্রথম দু'দিন ছোলার ছাল ছাড়িয়ে না দিলে খেতে পারতনা,কিন্তু এখন ও শিখে গেছে একাই।  মনে মনে ওর একটা নাম ঠিক করে ফেলে ও, ' পিটু'।
পিটু ওদের কাছেই থাকে এখন।মাধুর্য'র পপো মানে ওর বাবা পিটুর জন্য একটা সুন্দর খাঁচা এনে দিয়েছে,কিন্তু ও খাঁচায় থাকেনা।সারা ঘরময় ঘুরতে থাকে,যেন পায়চারি করে বিজ্ঞের মত।অল্প অল্প উড়তেও পারে।ভয় শুধু বিড়াল আর বেজিতে।এদের উৎপাতে সবসময় আতঙ্কে থাকতে হয়।বারান্দার গ্রিলে পর্দা লাগিয়ে রেখেছে ওরা,শুনেছে যে বেজিরা নাকি ঠিক লক্ষ রাখে, কোনওদিন সুযোগ বুঝে হামলে পরে শিকারের ওপর।

আজ মাধুর্য' রা ঘুরতে যাচ্ছে সেবকে।রবিবার বলে।অন্যান্যদিন ওর পপো ছুটি পায়না,অনেক বড় চাকরি করেতো তাই খুব চাপ অফিসের,বেশিরভাগ দিন রবিবারও কাজ করতে হয়।আজ দিনটা শুধু মাধুর্য'র সঙ্গেই কাটাবে বলেছে পপো,অনেক খেলনা কিনে দেবে,ওর পছন্দমত বইও।সঙ্গে থাকবে চকলেট আইসক্রিম। সকাল সকাল লিটন আঙ্কেল হাজির তার সাদা স্করপিও গাড়িটা নিয়ে।যদিও গাড়ি চড়তে ওর একটুও ভাল লাগেনা,গা গুলোয়,তবু উপায় কী দূরে যেতে গেলে গাড়িতেতো চড়তেই হবে।

'তুমি নিশ্চিন্তে যাও তুলি,আমি কাজের ফাঁকেফাঁকে বারবার ওকে এসে দেখব।'
মাসিদিদা কে পিটুর ভার দিয়ে চলে গেল ওরা।মাসিদিদা খুব ভাল,পিটুকে খাওয়ায়, ওর খাঁচা পরিস্কার করে,আদর করে।

সারাদিন দারুণ মজা করল ওরা,সকালে সেবক ঘুরে শিলিগুড়ি হয়ে খেলনা, বই কিনে বাড়ির পথে ওরা।হঠাৎ মা' র মোবাইলে ফোন আসে।
'মাসির ফোন! কী হল আবার!'
মাধুর্য' র বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল,পিটুর কিছু হ'লনাতো!
'হ্যালো! মাসি বল,কী হয়েছে?'
ওপ্রান্ত থেকে কী বলল জানেনা ও।শুধু মা'র কথা শুনতে পাচ্ছে।
' কী? '
'কীকরে এমন হল?তুমি খেয়াল রাখনি? ইস!'

মাধুর্য' র চোখ ফেটে জলের দানা প্রায় গড়িয়ে পড়ল ওর গালে।ও বুঝে গেছে কী হয়েছে।চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে, সামনে কিচ্ছু দেখতে পারছেনা।এবারে দু' হাতে চোখ
ঢেকে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলল।

পপোও তাকিয়ে মা'এর দিকে,চোখে উৎকণ্ঠা।আসলে পিটু বাড়িরই একজন হয়ে গেছে এখন,ওকে ছাড়া থাকাটা ভাবতেই পারেনা ওরা।মাসিদিদোর ওপরে খুব রাগ হচ্ছে মাধুর্য' র।একদিন ওকে রাখতে বলল ওরা,তাই পারলনা! নিশ্চই কাজ করতে করতে ভুলে গেছিল, আর তখুনি ওই হুলোটা....!!!
আর ভাবতে পারছেনা ও,কেন যে খাঁচায় করে ওকে নিয়ে আসেনি,তাহলে ওর কিছু হতনা,শয়তান পাজি বেড়ালটা আমাদের প্রিয় পিটুকে.....!
মা' কে জড়িয়ে কেঁদে ভাসাতে লাগল ও।
'আরে, কী হল মেয়ের,তুলি? কি রে? আর কি চাই তোর? এত খেলনা  কিনলি তাও মন ভরলনা? '
'পিটু!!! ' ফোঁপাতে লাগল ও।
'পিটুর কি হয়েছে?' মা বলল।
এইবার মাধুর্য মুখ তুলল
'তুমি যে বললে,মাসিদিদো পিটুকে খেয়াল রাখেনি তাই ওই বেড়ালটা পিটুকে...'
'ওমা,কখন বললাম এ কথা আমি?'
'মাসিদিদোকে বলছিলে যে!'
'ইস! কথাটা শোনোইনি তুমি তুলি ভালমতো, আগে পুরোটা শুনবে তারপরতো বলবে!'
'কি হয়েছে তবে? 'পপো জিজ্ঞেস করল
' আরে আর বোলনা,মাসি পাম্প চালিয়ে বন্ধ করতে ভুলে গেছে,তারপর জল পড়ে গিয়ে উঠোনে স্লিপারি হয়েছিল,মাসি পড়ে গেছে স্লিপ কেটে, সামান্য চোট হয়েছে, বলেছে ওষুধ নিয়ে আসতে।নেটওয়ার্ক চলে যাওয়ায় পরের আর কথা বলতে পারলামনা। আর তোমরা কি বুঝলে?

রীতিমতো দৌড়ে দৌড়ে ঘরে ঢুকল মাধুর্য। বারান্দায় আসা মাত্রই পিটু উড়ে এসে ওর কাঁধে এসে বসল,কী আদর কী আদর,মুখ দিয়ে কত রকমের যে আওয়াজ করতে লাগল ও! আর মাধুর্য' র ওকে পেয়ে প্রাণে জল এল,কোলে নিয়ে যত্ন করে ছোলা খাওয়াতে লাগল ওকে,দু' বন্ধুর ভালবাসার দৃশ্য মোবাইলে ক্যমেরাবন্দী করল ওর পপো,উহু, ওদের পপো!

ছবিঃ মঞ্জিমা মল্লিক

ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশুনো, সবে সবে লেখালেখি শুরু করেছেন,ছোট বড় সবার জন্য কলম ধরতে ভাল লাগে।ভাল লাগে বই পড়তে,অয়েল পেন্টিং করতে,আর মাঝে মাঝে সঞ্চালনার কাজে যেতে।নতুন নতুন জায়গায় ঘুরতে গিয়ে সেই অভিজ্ঞতা খাতায় তুলে ধরতেও বেশ লাগে।

More articles from this author

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা