সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হতে চলেছে । একটু পরেই অন্ধকার নেমে আসবে চারিদিকে । গ্রামের বয়োবৃদ্ধরা একে একে সিমেন্টের তৈরি গোল চাতালটাতে বসতে আসছে, তাদের সব সুখ-দুঃখের গল্প করার জন্য । সুন্দর করে সিমেন্ট আর টাইলস্ দিয়ে, গ্রামের সব-থেকে-পুরনো অশ্বত্থ গাছের   গুঁড়িটাকে ঘিরে, তৈরি করা হয়েছে এই মসৃণ গোল চাতালটা । এখানে বসে গল্প করার জন্য এই গোলাকার, যেন-কোন রাজকীয়-মঞ্চের মত চাতালটা খুব সুন্দর জায়গা । গ্রামে ঢোকার ঠিক মুখেই এই প্রাচীন অশ্বত্থ গাছ, সবাই এই মহীরুহকে বলে 'বুঢঢা-পিপড়া' আর এই চাতালটার নাম সকলের মুখে মুখে ঘোরে, 'পিপড়িয়া চবুতরা' ।

তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হওয়ার সেই গোধূলি লগ্নে গ্রামের সবারই গরু-বাছুর ফিরে এসেছে যে যার ঘরে ঘরে । গরুর পালের খুরে চারিদিকে যে ধুলো উড়েছে তা ধীরে ধীরে নেমে আসছে মাটিতে । খুব হাল্কা হলেও জ্বালানি কাঠের পোড়া-গন্ধ হাওয়াতে বেশ স্পষ্ট, মনে হচ্ছে চারি দিক ঘিরে যেন ব্যাপ্ত হয়ে আছে । সব থেকে শেষে ধীরে ধীরে আসা গোরুর গাড়ীটির সামনে বসে এক মহিলা, নাম হরপ্রীত, পিছনে পিছনে আপনমনে হেঁটে আসছে, তার স্বামী গগন-সিং, তারা দুজনাই পরিশ্রমী চাষি । তবে খুব বেশী একটা জমিজমা অবশ্য তাদের নেই । ধন ঐশ্বর্যের দেবী মা লক্ষ্মীর কৃপা-দৃষ্টি বিশেষ-ভাবে না থাকলেও তারা কিন্তু এককথায় সুখী পরিবার । কারণ তারা কারো মুখাপেক্ষী নয় । হরপ্রীত ও গগন-সিং এই দুজনার দুই ছেলে আর গগন-সিং-এর বুড়ি-মা এই নিয়েই তাদের ছোট্ট সুখী পরিবার ।
তাদের গোরুর গাড়ীটির পাশ দিয়ে পাতলা ছিপছিপে এক কিশোর, বয়স বছর বার অথবা তের হবে, তার নতুন চকচকে সাইকেলে চড়ে উল্টো দিক থেকে পেরিয়ে যেতে যেতে হরপ্রীতকে জিজ্ঞাসা করে, "ও চাচি, চাচি, ধন্না কোথায় আছে বলতে পারো ?"
'ধন্না' মানে হোল গগন-সিং আর হরপ্রীতের ছোট-ছেলে, সেই কিশোরেরই সম-বয়েস হবে ।  হাসতে হাসতে হরপ্রীত তাকে জানায়, "আমরা কি করে জানবো বেটা, আমরা তো চাষের জমি, খেত-খামার, সেখান থেকে এইতো সবে ফিরে আসছি । দেখ, হয়তো ধন্না ইস্কুলের মাঠে ফুটবল খেলতে গেছে ।"
এই কথা শোনার সাথে সাথেই সে তার নতুন নতুন পাওয়া সাইকেলের পেডাল আরও জোরে জোরে ঘোরাতে শুরু করে যাতে কিনা সে খুব তাড়াতাড়ি তার গন্তব্য স্থানে পৌঁছে যায় ।  একটি হাত তুলে কিছু একটা বলে সে ক্ষিপ্র গতিতে চলল ইস্কুলের দিকে ।  
হরপ্রীত নিজের মনে বলতে থাকে, "আমাদের পিণ্ডের (গ্রামের) এই মুণ্ডাটা (ছেলেটা) বড্ড চঞ্চল, তবে এটাই তো ওদের বয়েস । এখন চঞ্চল হবে না তো কখন হবে? এর পরে তো যত বড় হবে তত জগত-সংসারের দায়দায়িত্ব পড়বে তাদের কাঁধে । খেল-কুদ আর কখন করতে পাবে ।"
সন্ধ্যের পর গগন-সিং এর বুড়ি-মা যখন গ্রামের সব-ঘরের-জন্য-তৈরি-করা অনেক-বড়-উনুন, যাকে তারা বলে 'সাঁঝা-চুলহা', সেখান থেকে গরম গরম মকাই এর রোটি নিয়ে বাড়ি ফেরে তখন গগন-সিং আর হরপ্রীতের পরিবার সান্ধ্য-ভোজনের আয়োজন শুরু করে । আঙ্গিনায় খোলা আকাশের নীচে, তারা সবাই একসাথে খেতে বসে । পরিবারের এই সান্ধ্য ভোজনের সময় প্রায় সবাই খুব একটা কথা বলে না শুধু গগন-সিং এর বুড়ি-মা ছাড়া । ছোট-ছেলে ধন্না দাদীর সাথে মজাক করতে করতে বলে, "দাদী তুমি এতো বেশী কথা বললে তোমার তো পেটের মধ্যে হাওয়া ভরে যাবে তাহলে আর খাবার খাওয়ার জায়গাই থাকবে না ।"
মন্না, বাড়ীর বড় ছেলে, খুবই কম কথা বলে সে, চুপচাপ সে তার খাওয়া শেষ করে, মা কে সেই কথা ছোট্ট করে জানিয়ে দেয় । হরপ্রীত তার উত্তরে মাথা হেলিয়ে ইশারায় ছেলেকে জানিয়ে দেয়, "হ্যাঁ বাবা, তুমি তোমার খাতা পত্তর সাথে নিয়ে পড়াশুনা করার জন্য ছাদে গিয়ে বসে পড় ।"   
এক হাতে একটি হ্যারিকেন আর অন্য হাতে তার বই খাতা-পত্তর সব নিয়ে মন্না সিঁড়ি দিয়ে ধীরে ধীরে উঠতে থাকে । হ্যারিকেন বা লালটেন খানা সে কাছেই রাখে কারণ লাইট চলে গেলে তখন আর তাকে নীচে নেমে আসতে হবে না । সে তার ক্লাস টেনের বোর্ড পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে সেসময় । পড়াশুনাতে তার যথেষ্ট মনোযোগ । গ্রামের ইস্কুলের হেড-মাষ্টার-মশায় কিছু দিন আগেই গগন-সিং কে বলেছেন, "তোমার বড় ছেলের জন্য কোন চিন্তা করতে হবে না তোমাকে, পড়াশুনাতে তার প্রচণ্ড ইচ্ছে, সে তার নিজের রাস্তা নিজেই করে নেবে ।" একথা শুনে গগন-সিং এর খুব গর্ব বোধ হয় । বেশ খুশী হয় সে । বাড়ীতে এসেই তার মাকে এই কথা জানায় সে ।
 হরপ্রীত গগন-সিং কে মনে করিয়ে বলে, "তোমার মনে আছে, আমাদের মন্না যখন পিণ্ডের প্রাইমারি ইস্কুলে পড়ত তখন কী রকম গড় গড় করে স্কুলের সব বন্ধুদের, এবং তাদের পরিবারের লোকজনদেরকে নিয়ে, কত কথাই সে বলত । মনে আছে ?"
"আর কী রকম ভাবে কোন বিষয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়লে ঠিক তখনই তাড়াতাড়ি করে বলতে গিয়ে কেমন ওর কথাগুলো আটকে যেত, মনে আছে তোমার?" গগন-সিং মনে করিয়ে দেয় ।
হরপ্রীত সাথে সাথে বলে উঠে, "তা আবার মনে নেই আমার । ওর আটকে আটকে যাওয়া কথা-বলা শুনে স্কুলের বন্ধুরা প্রায়ই হাসাহাসি করত ।"
"তার জন্য কিন্তু আমাদের মন্না কখনও কিছু মনে করত না । কারো উপর কখনো রাগারাগিও করত না সে" গগন-সিং আবার মনে করিয়ে দেয় ।
হরপ্রীত আপনমনে হাসতে হাসতে এঁটো বাসন গুলিকে একটার উপর একটা সাজিয়ে রাখতে থাকে পরিষ্কার করতে নিয়ে যাওয়ার জন্য ।  
ধন্না বাসন গুলিকে দেখিয়ে বলে, "মা, মা, আমি এই সব বাসন গুলোকে টিউবওয়েলের কাছে নিয়ে যাই, তুমি কি এখনই পরিষ্কার করবে ? তাহলে চল আমি তোমাকে টিউবওয়েল থেকে জল বের করে দিচ্ছি, তোমার যত জল চাই ততই ..."   
একথা শোনা মাত্রই গগন-সিং বলে উঠে, "দেখেছ হরপ্রীত, তোমার এই মুণ্ডা, খুব চালাক হচ্ছে, পড়াশুনা না করার কী রকম বাহানা খুঁজতে থাকে ..." ধন্নার দিকে তাকিয়ে শাসন করার সুরে গগন-সিং বলে, "কি রে তোর স্কুলের হোম-ওয়ার্ক করা হয়ে গেছে ? আমাদের পিণ্ডের স্কুলের মাস্টার-জী এই তো সেদিন বলছিলেন, ধন্না মোটেই পড়াশুনাতে মনোযোগ দেয় না । ধন্না ওর বড় ভাইয়ের মত নয় মোটেই । কই তোর বই খাতা-পত্তর নিয়ে আয় আমার কাছে । দেখি কেমন পড়াশুনা করছিস ।"
গগন-সিং এর বুড়ি-মা সঙ্গে সঙ্গে আপত্তি করেন, তিনি তাঁর ছেলেকে বলে দিলেন "ঠিক এখনই তোমার সময় হোল ধন্নার বই খাতা-পত্তর দেখার ... হে ভগবান, যেন ধন্নার পড়াশুনা নিয়ে তুমি সত্যিই কতই না চিন্তিত ... সবুর কর কিছুক্ষণ, এখন ধন্না তার মাকে সাহায্য করবে টিউবওয়েল থেকে জল বের করে দিয়ে বাসন গুলো পরিষ্কার করার জন্য ..."
এরপর দাদী বড়বড় করে নিজের মনেই বলতে থাকেন ... "ধন্না সে তো তার নিজের মত, সে অন্য কারো মত কেন হবে ... যত সব বাজে কথা, এই কথার কোন মানে নেই, কোন দুই জনার মধ্যে তুলনা করার কোন মানে হয় কি? ভগবান, রব্ব, তার জন্যও কিছু না কিছু ঠিক করে রেখেছেন ।"
  বাচ্চা হলে কী হবে, ধন্না, তখন মোটামুটি নিশ্চিত, কারণ পরিবারের সবথেকে বরিষ্ঠ সদস্যের কাছ থেকে সে সবুজ সংকেত পেয়ে গেছে, সুতরাং সে স্ফূর্তির সাথে টিউবওয়েলের হাতলে চাপ দিতে শুরু করে । চাপ দেওয়ার পর তার দুবলা-পাতলা শরীরটা টিউবওয়েলের ভারি হাতলের সাথে সাথে উপরের দিকে কিছুটা উঠে আসে । কিন্তু তবুও সে আবার তার অদম্য সংকল্প নিয়ে টিউবওয়েলের হাতলটাকে চাপ দিয়ে নামায় ।            
কয়েক মাস পরের কথা ।
সেটা এক অতি সাধারণ সন্ধ্যে । গগন-সিং, হরপ্রীত আর মন্না তিনজন চলেছে কাছেরই এক আরোগ্য-কেন্দ্রতে । গগন-সিং আর হরপ্রীতের পরিবার আর আগের মত সুখী সম্পন্ন পরিবার নয় । তারা আজ নিষ্ঠুর বাস্তবের এক অতি আপত্তিকর এবং অত্যন্ত লজ্জাজনক সামাজিক-আঘাতের সম্মুখীন হয়েছে । বাড়িতে দাদী সর্ব-প্রথম জানতে পারে এই পরিবর্তন, মন্নার হাবভাব আর তার ব্যবহারে । মন্নার নতুন নতুন বন্ধু-বান্ধবকে দেখেশুনে দাদীর মনে বেশ কয়েকদিন আগের থেকে সন্দেহটা তো হয়েই ছিল ।
মন্না তার নতুন নতুন বন্ধু-বান্ধবদের পাল্লায় পড়ে, আর না জেনে, না বুঝে, 'ড্রাগস' অর্থাৎ নেশাকর বস্তুর আকর্ষণে পড়ে যায় । শুরু শুরুতে অবিশ্বাস্য ভাবে তার মনোযোগ এবং একাগ্রতা দারুণ ভাবে বেড়ে যায় যার ফলে সে এই ড্রাগসের প্রতি আকৃষ্ট হয়, তার মনে হয় এ যেন কোন জাদু, দিনে দিনে সে আরও বেশি করে আকর্ষিত হয়ে পড়ে । এ যেন এক রহস্যময় কিছু, যার চরম আকর্ষণের মোহে মন্না দুনিয়ার সব কিছু ভুলে যায় । ধীরে ধীরে সে এই ভয়ানক ড্রাগসের আদি অর্থাৎ 'নেশাখোর' হয়ে পড়ে ।
একদিন স্কুলে এক প্রোগ্রামে তার চোখ খুলে যায় । স্কুলের সেই প্রোগ্রামের মধ্যে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছিল । তারই একটি, এক ছোট নাটকে, মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা অভিনয় করে সেখানে উপস্থিত সকলের মন জয় করে নেয় । সেদিনই সন্ধেবেলা মন্না, বাড়িতে তার সব থেকে কাছের বন্ধু, তার দাদীকে সব কিছু বলে দেয় । সমস্ত কিছু যে সব কথা সে আর কাউকে বলে নি ।
হরপ্রীত আর গগন-সিংদের সংসারে শোকের ছায়া নেমে আসে ...
কয়েক দিন পর ...  
সেদিন বিকেল বেলা আরোগ্য কেন্দ্র থেকে ফেরার সময় হরপ্রীত খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করে গগন-সিং এর দুই চোখের চারিদিকে গোল করে কালি পড়েছে । তার চোখে-মুখে গভীর বিষাদের কালো ছায়া । কথা বলাটাও যেন আরও বেশি করে কম হয়ে গেছে, কিছু জিজ্ঞাসা করলে তবেই সে 'হ্যাঁ, হু, না, যাই' এই কটি মাত্র শব্দ দিয়েই, একরকম তার কথা বলা । সব সময় সে কেমন যেন গুম হয়ে থাকে ।
    তাকে সান্ত্বনা দিয়ে হরপ্রীত বলে, "তুমি কেন এত ভেঙ্গে পড়ছ ? উল্টে ঈশ্বর কে ধন্যবাদ দাও, মন্না তার দাদীকে সময় থাকতে সব কিছু খুলে বলে দিয়েছে, শুনলে তো, ডাক্তার বাবু আমাদের বললেন বেশী দেরী হয় নি, শীঘ্রই আমাদের মন্না ভালো হয়ে যাবে, তুমি একদম ভেঙ্গে পড় না ।"
    গগন-সিং উদাস হয়ে নিজের মনে নিজের সাথেই কথা বলতে থাকে, "হায় রে হরপ্রীত-অ, জীবন বহুত আনহোনি আছে, যেন মনে হয় আনাজের দানা মুঠি-বন্ধ করার মত, না তো ঢিলা করতে পারি, না তো শক্ত করে মুঠি-বন্ধ করতে পারি । হে ঈশ্বর, আমাদের তুমি এ কী রকম পরীক্ষায় ফেললে ?"
গগন-সিং এর কালি পড়ে যাওয়া দুই চোখের দিকে তাকিয়ে হরপ্রীত তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, "মন্নার পাপা, তুমি কেন এত ভেঙ্গে পড়ছ ? আমরা আমাদের সবকিছু হারায়নি মোটেও । কয়েক মাসের মধ্যেই আমাদের মুণ্ডা এক্কেবারে ঠিক হয়ে যাবে । ছাড় তো ওর পড়াশুনার চিন্তা, আমি তো কোন পরোয়া করি না । দ্যাখ, জীবন হল সব থেকে বেশি মূল্যবান অন্য যা-কিছুর থেকে । বল সত্যি কি না ? সে তোমাকে ক্ষেতের কাজে মদত করবে । তোমাকে সাহায্য করবে, আজকাল ক্ষেতের কাজ করার সময় ক্লান্ত হলেই, তুমি তো প্রায়ই গজগজ করে বলতে থাকতে, আমাকে কেউ একটা মদত করার নেই । মনে আছে তোমার ?  
- গগন-সিং শান্ত ছেলের মত মাথা হেলিয়ে জানায় যে, সে-কথা তার মনে আছে ...  
- মন্নার পাপা, আমাদের অল্প রোজগার কোন ভাবেই আমাদের সুখ আর সন্তোষ এর বাধা হবে না, তুমি দেখে নিও । ভেবে নাও না, এবার থেকে, আমাদের মন্নাই তোমাকে ক্ষেতের কাজে মদত করবে । কথায় বলে -জান হৈ তো জাহান হৈ-  
দাদী দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে দেখতে থাকেন কখন তার ছেলে-বৌ তাঁর বড় নাতি মন্নাকে সাথে করে আরোগ্য কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরে আসবে, তার অপেক্ষায় । সেদিন সন্ধ্যে হয়ে যাওয়ার বেশ কিছু সময় পর গগন-সিং আর হরপ্রীতের পরিবার তাদের সান্ধ্য-ভোজনের আয়োজন শুরু করে । তাদের বাড়ির সেই পরিচিত আঙ্গিনায়, খোলা আকাশের নীচে, তারা সবাই একসাথে খেতে বসে । সেদিন কিন্তু খাওয়া-দাওয়া হয়ে যাওয়ার পর ধন্না মোটেও উৎসাহ দেখায়নি টিউবওয়েলের হাতলে চাপ দেওয়ার জন্য, সেদিন সে বেশ ক্লান্ত । সারা দিন সে বাড়ির কাছাকাছিই ছিল, আর মাঝে মধ্যেই সে এক বার করে ছুটে ছুটে এসে দাদীকে জিজ্ঞাসা করেছে তার মা বাবা আর মন্না ফিরে এসেছে কিনা । এই কদিন ধন্না বেশ লক্ষ্য করেছে তার মা প্রায় সব সময় বড় ভাই মন্নার খেয়াল রাখে, তার মা তাকে বলেছে, "মন্নার তো শরীর খারাপ তাই ।" সেদিন সন্ধ্যাবেলা ধন্না তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে, আর তাই খাওয়া-দাওয়া হয়ে যাওয়ার পর গগন-সিং নিজেই টিউবওয়েলের হাতলে চাপ দিয়ে জল বের করে দেয় হরপ্রীতকে বাসন-পত্র ধোয়ার জন্য । আর তারপর পরিষ্কার বাসন-পত্র-গুলি তুলে রাখে নির্দিষ্ট জায়গায় ।  
তখন জ্যোৎস্নার আলো চারিদিকে । হরপ্রীত সেই সন্ধ্যাবেলা বার বার গগন-সিংকে বাইরে বেরিয়ে, খোলা হাওয়াতে তার বন্ধুদের সাথে মিলে, এবং গল্প করে ঘুরে আসতে বলে । বাড়িতে একা একা মনমরা হয়ে যাচ্ছে সে । হরপ্রীত বেশ ভাল করেই জানে যে গগন-সিং তার বন্ধু-মহলে খুব লোকপ্রিয়, যে কোন ভাঙ্গরা আসরে তার ডাক পড়বেই কেননা তার মত ভাঙ্গরা-নাচ করতে আর ঢোল বাজাতে খুব কম লোকই পাওয়া যায় তাদের গ্রামে ।
সেই রাত্রিতে পিপড়িয়া চবুতরার কাছে গগন-সিং এর পরিচিতদের মধ্যে এক বন্ধু তাকে একটি সত্যি ঘটনা শোনায় । সেই বন্ধুর এক আত্মীয় যার নাম তরন-সিং, তাদের কথা । এই তরন-সিং এর ছোট ছেলেকে দত্তক নিয়েছিল বিদেশের কোন এক দম্পতি । তরন-সিং ও তার স্ত্রী, তাদের দুই ছেলে আর দুই মেয়ে । দুটি মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর তাদের পরিবারে তখন অর্থ এবং সম্পত্তি খুবই স্বল্প । তাদের রোজগার খুবই সীমিত । তরন-সিং আর তার স্ত্রী তখন বাধ্য হয়ে স্বীকার করে নেয় এই নিষ্ঠুর বাস্তবকে । আলবাত, তাদেরকে বেশ কিছু পরিমাপের অর্থও দিতে হয়েছিল কোন একজন প্রতিনিধিকে । তাদের মুণ্ডার ভবিষ্যৎ চিন্তা করে সেই টাকা তারা কষ্ট করে হলেও জোগাড় করেছিল । কারণ তাদের মুণ্ডা তো ইউরোপের এক ধনী দেশে সেট হয়ে যাবে । সেটা কি কম কথা ?  
গগন-সিং জানতে চেয়েছিল, "দেশটা কি ইংল্যান্ড ?"
"না সেটা ফ্রান্স দেশ "
গগন-সিং ইউরোপের সমস্ত দেশ গুলির নামের সাথে পরিচিত নয় । সে তার কয়েক জন বন্ধুদের কাছে জেনেছে ইংল্যান্ড দেশের লন্ডন শহরের কথা, সেই মহান শহর টেমস নদীর উপর, যেখানে বাকিংহাম প্যালেস, ওয়েস্টমিনিস্টার- অ্যাবে, বিগ-বেন আরও কত কিছু, সেখানে তাদের পাঞ্জাবের অনেক মানুষ থাকে, সেটাও সে জেনেছে ।
পরের দিন চাষের জমিতে কাজ করার পর যখন তারা গাছের ছায়াতে বসে নাস্তা করার জন্য তখন সে হরপ্রীতের সাথে গল্প করে তরন-সিং এর পরিবারের কথা । মন্না কিছুক্ষণ মাত্র কাজ করার পরই ক্লান্ত হয়ে পড়ে । মন্নার তো শরীরটা তেমন ভাল নেই তাই । আরোগ্য কেন্দ্রের ডাক্তার বাবু মন্নাকে নিরীক্ষণ করে হরপ্রীতের সময়নিষ্ঠার জন্য বেশ খুশী হয়েছেন । হরপ্রীত সমস্ত নির্দেশ পালন করেছে অক্ষরে অক্ষরে । তিনি হরপ্রীতকে আশ্বস্ত করেছেন যে মন্নার শরীর খুব শীঘ্রই একদম ভাল হয়ে যাবে । এবং তারপর অল্প সময়ের মধ্যেই সে আবার পড়াশুনো করতে পারবে ।  অনেকদিন পরে হরপ্রীতের মুখে অল্প হাসি দেখা যায়। সেটা দেখে গগন সিং ও খুশি হয়।
  গগন-সিং এর মুখে তরন-সিং পরিবারের বৃত্তান্ত শুনে অবাক হয়ে হরপ্রীত গগন-সিং কে জিজ্ঞাসা করে, "কত বড় এই মুণ্ডা ?"  
গগন-সিং জানায়, "সেই মুণ্ডা মাত্র তের বছরের ।"
হা ঈশ্বর, ও মালিক, তার খেয়াল রেখো, সে যে অনেক ছোট ... হরপ্রীত নিজের মনে নিজের সাথেই কথা বলতে থাকে । তার মানে সেই মুণ্ডা আমাদের ধন্নার মত । তাই না ? হা ঈশ্বর, কী করে তার মা বাপ তাদের মুণ্ডা কে ছেড়ে দিল ?  
গগন-সিং চুপ করে থাকে আর তার সাথে-সাথেই তার মনের মধ্যে এক অদ্ভুত চিন্তা ঘুরে-ফিরে আসতে থাকে । আজকাল কিভাবে পরিচিত আশপাশের সব কিছুই পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে, আধুনিক জীবন-যাত্রার মধ্যে কত কিছুই যেন মনে হয় আমাদের চারিপাশে দানবের মত ভয়ানক ভাবে তেড়ে আসছে যেমন ড্রাগসের-নেশা; মূল্য-বোধ, চরিত্র-বল আর সুআচরনের অভাব; সংযুক্ত পরিবারের বিঘটন; অন্ধের মত পশ্চিমী-সভ্যতার অনুকরণ; সামাজিক-রাজনৈতিক অধঃপতন; এই সব কিছু আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ? তরন-সিং এর মত আমিও কি খোঁজ করব কোন এক প্রতিনিধিকে, যার সাহায্য নিয়ে তাদের মুণ্ডার মতই আমাদের ধন্নাকেও তার ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করে কষ্ট করে হলেও আমরাও কি অর্থ জোগাড় করতে পারি না ? কারণ আমাদের মুণ্ডাটাও তো ইউরোপের কোন এক ধনী-দেশে সেট হয়ে যাবে । সেই দেশের নাগরিক হয়ে যাবে । সেটা কি কম কথা ? কিন্তু হরপ্রীত কি তার ছোট ছেলে ধন্নাকে ছাড়তে রাজি হবে ?
কী  কথা ভাবছ, কী ? হরপ্রীত তাকে ডাকে   
গগন-সিং নির্বাক হয়ে তার চিন্তার জালে নিজেকে যেন হারিয়ে ফেলে সে ...
কী হল হাত মুখ ধুয়ে নাও ... কী এত চিন্তা করছ ? হরপ্রীত আবার তাকে ডাকে  
ওদিকে হরপ্রীত তার নিজের হাত মুখ ধুয়ে নিয়ে আবার নিজের-কাজ করতে শুরু করে দেয় ।

দেখতে দেখতে কয়েক বছর পার হয়ে যায় ।
মন্না এখন সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থ । সে পড়াশুনাও করেছে এবং বর্তমানে সে একটি আন্তর্জাতিক এন. জি. ও. তে কর্মরত । ওদিকে হাইস্কুলের পরীক্ষা পাশ করার পর ধন্না একটি টেকনিক্যাল ট্রেনিং কোর্স করেছে তারপর সে একটি ছোট্ট ব্যবসা করছে আর সে সময়ে সময়ে তার মা বাবা কে তাদের চাষের কাজেও সাহায্য করে ।  
হরপ্রীত আজকাল আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে একটি সুযোগ্য পাত্রীর খোঁজ করছে তার বড় ছেলে মন্নার জন্য, কারণ সে মনে করে, তার ছেলের এখন বিয়ে করার সঠিক সময় । সে আরও মনে করে, দেরী করার তো কোন যথার্থতা নেই । সুতরাং সে তার বড় ছেলে মন্নার শীঘ্রই বিয়ে দিতে চায় । ঠিক এই যোগাযোগ করার সূত্র ধরে এক বিকেলে এক পরিবারের সাথে তার দেখা হয় । এবং কথায় কথায় একটু পরেই সে জানতে পারে তরন-সিং সেই পরিবারেরই এক নিকট আত্মীয় ।
কথায় কথায় তাদের মুখে হরপ্রীত জানতে পারে বিদেশের কোন এক দম্পতির তরন-সিং এর ছেলেকে দত্তক নেওয়ার ঘটনা । আর তারপর হরপ্রীত জানতে পারে, শুরু শুরুতে কোন একজনের মারফতে তাদের ছেলের খবরাখবর তারা পেত । কিন্তু কয়েক মাস পরের থেকে তরন-সিং ও তার স্ত্রী, দুজনাকেই ধমকি দিয়ে চেতাবনি দিয়ে গেছে, তরন-সিং ও তার স্ত্রী যেন আর কক্ষনো তাদের বাচ্চার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা না করে, তাতে তাদের বাচ্চারই মুশকিল বাড়বে । তরন-সিং ও তার স্ত্রী এই কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলে । চোখের জল গড়িয়ে আসে গালের উপর ।

কোন এক সন্ধ্যের পর গগন-সিং এর বুড়ি-মা গ্রামের 'সাঁঝা-চুলহা' থেকে গরম গরম মকাই এর রোটি নিয়ে বাড়ি ফেরে । আর তার পর গগন-সিং আর হরপ্রীতের পরিবার সান্ধ্য-ভোজনের আয়োজন শুরু করে তাদের উঠোনে, খোলা আকাশের নীচে, তারা সবাই একসাথে খেতে বসে । তাদের বাড়ির উঠোনের সব কিছুই প্রায় একই রকম আছে শুধু মাত্র ঈশান কোনে বুড়ি-মায়ের লাগান পেয়ারার গাছটা ছাড়া । তার মায়ের কথামত গগন-সিং আর ধন্না নিয়মিত সকাল বেলা ব্রাশ করার পর পেয়ারার-পাতা চিবিয়ে ভাল করে দাঁত মেজে নেয় । পরিবারের এই সান্ধ্য ভোজনের সময় তারা প্রায় সবাই মিলে নিজেদের মধ্যে নানান কথাবার্তা বলে ।
সেদিন মন্না তার মাকে জানায়, "মা, জান তো শুধু তরন-সিং-জীর বাচ্চা নয় তারই মত অন্য আরও বাচ্চাদেরকে বেআইনি ভাবে ইউরোপের ফ্রান্স দেশে পাচার করা হয়েছে একথা আমরা আমাদের এন জি ওর বিদেশের হেড-অফিস থেকে জানতে পেরেছি, কিছু কিছু আরও অবিশ্বাস্য তথ্যই আমরা জেনেছি, সেসব কথা শুনলে ভয়ে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায় ।"
"সে সব কি এমন কথা বেটা ?" মায়ের প্রশ্ন ।
সাথে সাথেই মন্না তার মাকে জানায়, "তবে শোন, তৃতীয় বিশ্বের অনেক গরীব দেশের মা-বাপ, তাদের বাচ্চারা যেন ভবিষ্যতে কোন ধনী দেশের নাগরিকত্ব পায়, তার লোভে, জমি-জায়গা বিক্রি করেও টাকাপয়সা দিয়ে কোন দালাল বা তার প্রতিনিধিকে ধরে নিজেদের বাচ্চা বিদেশে পাচারে রাজী হচ্ছে । এ এক বিশাল চক্র, মা । সমস্ত বিশ্বে পুলিশ এবং অধিকারীরা এর নাম দিয়েছে মানব-শিশু-পাচার ।"
গম্ভীর ভাবে মায়ের বিচার-মগ্ন মতামত, "তাই আমাদের পূর্বপুরুষ বলে গেছেন, বাবা, লোভে পাপ । কি অবাক করা কথা, বেআইনি জিনিসপত্র-পাচার করার মত মানব-শিশুরও-পাচার ? ঘোর কলিকাল বাবা, কোন সন্দেহ নেই । আমি বুঝতে পারছি না, কেন এসব করছে তারা ?"
উত্তরে ছেলে মাকে জানায়, "অবশ্যই কারণ তো আছে, তবে সেকথায় পরে আসছি মা, যেটুকু তথ্য আমাদের এন জি ও একত্রিত করেছে তার ভিত্তিতে আমি এটুকু বলতে পারি যে ঈশ্বরের কৃপায় তরন-সিং-জীর মুণ্ডা (বাচ্চা) খুব সম্ভবত কুশলেই আছে ।"
"কী কী কথা জানতে পেরেছ বেটা ?" মায়ের প্রশ্ন ।
উত্তরে ছেলে জানায়, "মা, যা যা সব টুকরো টুকরো কথা আর যত সব নানান তথ্য আমরা জানতে পেরেছি তার উপর ভিত্তি করেই আমি হলফ করে বলতে পারি অন্য বেশ কয়েকটি বাচ্চার মতই তরন-সিং-জীর বাচ্চাও সম্ভবত কুশলে আছে । তার কারণ আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থার বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে এই সব বাচ্চাদের ফ্রান্সের বড় বড় শহরে যেমন ধরো প্যারিস কিম্বা মিলানে, যারা দত্তক মা বাবা সেজে আমাদের দেশ থেকে বাচ্চাকে নিয়ে যায়, তারা ছলকপট করে এমন সব রাস্তাতে এই বাচ্চাদের সহায়-সম্বল-হীন ভাবে ছেড়ে দেয় যেখানে কাছাকাছি 'পরোপকারী-সংস্থা' অথবা 'গুরুদ্বারা' আছে । এই সব দত্তক-নিয়েছে-এমন সেজে-থাকা-মা-বাবা দের আন্তর্জাতিক পুলিশ খুঁজে বেড়াচ্ছে । ধরা তারা পড়বেই, আজ নয়ত কাল ।"
"কিন্তু বেটা তারা এমন করে কেন ?" আশ্চর্য হওয়া মায়ের আবার প্রশ্ন ।

উত্তরে ছেলে জানায়, "টাকা-পয়সার জন্য মা, স্রেফ টাকা-পয়সার জন্য, লোভী দালাল আমাদের দেশেই আছে, তারা বাচ্চার মা, বাবা কিম্বা অভিভাবক-দের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে, তাদেরকে রাজি করাতে থাকে যাতে তারা তাদের বাচ্চার সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ আশা করে সেই সব বাচ্চাদের ধনী-বিদেশে পাঠানোর জন্য তৈরি হয়ে যায় ।"
এই সব কথাবার্তা শুনতে শুনতে গগন-সিং হটাৎ তার পেটের তলার দিকে প্রচণ্ড তীব্র-এক-ব্যথা অনুভব করে । সেই কুণ্ডলী-পাকিয়ে-ওঠা ব্যথায় সে কুঁকড়ে যায় । সে একদম স্থির চুপচাপ হয়ে যায় ।
তাকে লক্ষ্য করে হরপ্রীত জিজ্ঞাসা করে, "কী হল তোমার, খাচ্ছ না কেন ?"
গগন-সিং জানায়, "আমি তো খাচ্ছি । আজ মনে হচ্ছে শরীরটা একটু খারাপ লাগছে ।"
"এই সব কথা শুনে কি তোমার ভাল লাগছে না ?" হরপ্রীত জিজ্ঞাসা করে ।
মাথা হেলিয়ে হরপ্রীতের কথায় সে সম্মত হয় । তার চোখে মুখে বিষণ্ণতার ছাপ স্পষ্ট ।
হরপ্রীত পুনরায় মন্নাকে জানায়, "সুতরাং বেটা আমাদের দেশের এমনও মা-বাপ আছে যারা তাদের বাচ্চাদের অজানা বিদেশে পাচার করতেও রাজী হয়ে যায় । নিঃসন্দেহে এ হোল ঘোর কলি যুগ ।"
ছেলে জানায়, "হ্যাঁ মা, যা বলেছ, এই সব জোর-করে অনাথ-করে-দেওয়া বাচ্চাদের মন থেকে শৈশব কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে, যেন গুমনাম হয়ে যাচ্ছে । তবে ঈশ্বরের কৃপায় সেই দেশের মানব-সেবা-মূলক-পরোপকারী-সংস্থার কোন না কোন দয়ালু মানুষ এই পরিত্যক্ত বাচ্চাকে পেয়ে তাকে সে দেখাশুনা করে । আর তারপর এই নাবালক বাচ্চা যখন  আঠেরো বছরের হয় তখন সেই-বাচ্চা সে-দেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারে । এটাই সেই দেশের নিয়ম ।"
সেদিন খাওয়া-দাওয়া হয়ে যাওয়ার পর গগন-সিং তার ছোট ছেলে ধন্নাকে হাতের ইশারায় কাছে ডাকে দড়ির খাটিয়াটাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য । ধন্না কাছে আসতেই গগন-সিং তাকে নিজের বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে মাটির থেকে একটু উপরে তুলে নেয় । ধন্না অবাক হয়ে বাবার মুখের দিকে তাকায় । গগন-সিং মুচকি হেসে বলে, "দেখ পুত্তর, যদিও তুই বহুত লম্বা হয়েছিস ঠিকই, কিন্তু ফির-ভি আমি তোকে উঠাতে তো পারলাম, বল্ ঠিক কি না !"
কয়েক মিনিট পরে দড়ির খাটিয়াটাতে শুয়ে শুয়ে নিজের মনে মনেই গগন-সিং বিড়বিড় করে বলতে থাকে, "ও ঈশ্বর তোমাকে লাখ লাখ ধন্যবাদ, আমাদের ছোট্ট মুণ্ডাটা চিরদিনের জন্য হারিয়ে যেত, শুধু আমার একটা ভুলের জন্য, না হারিয়ে সে যায় নি, আমার বড় ছেলেটা ভয়ানক ড্রাগসের নেশাতে জড়িয়ে পড়লেও, হে ঈশ্বর তোমার কৃপায় আজ সে সুস্থ, তোমাকে লাখ লাখ ধন্যবাদ ... আমাকে তুমি শিশু-পাচারের মত নির্মম কাজের মধ্যে জড়াতে দাওনি, হে ঈশ্বর তোমাকে আমার লাখ লাখ ধন্যবাদ ।"

ছবিঃ শিল্পী ঘোষ

চান্দ্রেয়ী ভট্টাচার্য্যের বাড়ি ও জন্মস্থান বাঁকুড়া জেলার মন্দির-নগরী বিষ্ণুপুর শহর। বাবার কর্মসূত্রে সূত্রে গুজরাতে আসা। আর তার জন্যই স্কুল কলেজের পড়াশুনা গুজরাতের কাঠিয়াবাড় প্রান্ত থেকে। বর্তমানে ফার্মাকোলজি নিয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েশনের ফাইনাল ইয়ারে। মাতৃভাষা বাংলার সাথে শিশু অবস্থা থেকে কখনই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি। নিজের পড়াশুনোর মাধ্যমে ইংরেজি, হিন্দি এবং গুজরাতি শেখার সাথে সাথেই বাংলা বইও পড়তে ভালো লেগেছে বরাবরই।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা