সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

আমাদের হরিদাকে মনে আছে তো? ওই যে সেই বুড়ো, যার একটু গঞ্জিকাদোষ ছিল আর সম্ভবত সেইজন্যেই তার পুলিশের চাকরিটা গিয়েছিল? তা, একটু টঙে উঠলে কিন্তু সে ফ্যান্টা সব গুল্প ছাড়ত, যা এনি ডে টিভি সিরিয়ালকে ধোপাপাট দেবে। যেসব সন্ধেয় ক্লাবে ক্যারম বা টিভি আর ভালো লাগত না, ওকে একটু খোঁচা দিলেই গলগল বেরিয়ে আসত আরও একটা এপিসোড – যা শুনে আমরা এক্কেবারে বুঝভুম্বল হয়ে বাড়ি ফিরতাম।
তা, সে সুখের দিন গেছে। সরকার গাঁজা নিষিদ্ধ করার পর হরিদার বাড়ির লোকেরাও অনেক বলেকয়ে তাকে ঐ নেশাটা ছাড়িয়েছে – "চাকরিটা তো খুইয়েইছো, এবার ধরা পড়ে জেলে গিয়ে পেনশনটুকুও খাবে?"
হরিদা অবশ্য সহজে হাল ছাড়েনি। "হতভাগা সরকার ভারতের এক চিরাচরিত ঐতিহ্য স্রেফ সাহেবদের দাবড়ানিতে বন্ধ করে দিল – বাবা ভোলানাথ কক্ষণও ওদের ভালো করবেন না" হ্যানাত্যানা টেকনিকাল পয়েন্টে সে অনেক এঁড়ে তক্কো করেছিল। কিন্তু কেউ কান দিলে তো!
গাঁজা ছাড়তে বাধ্য হয়ে সে এরপর একে একে অনেক বিকল্প নেশা ধরেছিল। যেমন আফিম, গুটকা, তামাক। কোনওটাতেই তার বাড়ির লোক তিষ্ঠোতে দেয়নি। নামতে নামতে শেষে সে এখন এসে ঠেকেছে তরকারিতে, ওটা মুখে দিয়েই শান্ত থাকার চেষ্টা করে। এই নির্দোষ নেশায় স্বভাবতই কারও আপত্তি নেই।

আজকে অবশ্য আমরা আদৌ বোর হচ্ছিলাম না। বিশ্বকাপের পরের খেলাটা রাত সাড়ে এগারোটায়। খেয়েদেয়ে সবাই তাড়াতাড়ি ক্লাবে এসে টিভির সামনে বসেছি, এককাট্টা হয়ে উত্তেজিত গুলতানি করতে করতে খেলা দেখব বলে। খেলা শুরু হতে এখনও বেশ কিছুটা বাকি। তাই আমাদের এক্সপার্ট কমেন্ট্রি, তর্কবিতর্ক সমানে চলছে।
"এবারের বিশ্বকাপটা কিন্তু ভাই বেশ জমেছে – দেখেও আনন্দ। গোলের ছড়াছড়ি, গোললেস ড্র মোটে একটা। আর মাঠেই হোক, টিভির সামনেই হোক, গোল দেখতেই তো লোকে আসে।" বলছিল রবিন।
"গোল হওয়ার আর বাধাটা কোথায়?" ভোম্বল খেঁকিয়ে উঠল, "ডিফেন্ডাররা যদি গোল না বাঁচিয়ে উল্টে নিজেদের গোলে বল মারে, তবে তো গণ্ডায় গণ্ডায় গোল হবেই! জানিস, এখন অব্দি দশটা সেলফ-গোল হয়েছে?"
"আর গোলি? তাদের হাত গলে ক'টা গোল হল, বল দেখি?" আমি মনে করিয়ে দিই, "স্পেন আর উরুগুয়ের গোলি যে গোল খেল – কিছু মনে করিস না, ওগুলো আমিও আটকাতে পারতাম। জানি না, আজকাল কোচগুলো কেন ডিফেন্সের দিকে তেমন নজর দেয় না।"
"দেয় দেয়, জান্তি পারো না।"
পেছন থেকে একটা হেঁড়ে গলার আওয়াজ শুনে দেখি, হরিদা। মুখে তার মিটিমিটি হাসি। কখন যে বুড়ো নিঃসাড়ে এসে গুটিসুটি এক কোনে বসে পড়েছে, খেয়ালও করিনি। হাতে তার যথারীতি এক প্রমাণ সাইজের বাটি ভরা তরকারি। একটু একটু করে খাচ্ছে আর দুষ্টু চোখে আমাদের দিকে তাকাচ্ছে।
"মানে?" অবাক হয়ে বললাম।
"মানেটা হচ্ছে – আদিনাথ দাস আর এই হরি শর্মা। এবারের বিশ্বকাপে বিদঘুটে যা কিছু দেখছিস, সব এই দুই মহাপুরুষের লীলা।"
"টিভি সিরিয়ালের মতো সাসপেন্সে না রেখে ঝেড়ে কাশো তো।" বিমল বলল। আমরা সবাই টিভির নীরস 'ম্যাচ প্রিভিউ' ছেড়ে ঘুরে বসলাম।  গন্ধ পাচ্ছি, এবার হয়তো বুড়োর ঝুলি থেকে জম্পেশ কিছু একটা বেরোবে। ফলে খেলা শুরু হওয়া অব্দি 'টাইম পাস'টা ভালোই হবে।
হরিদাও ধীরেসুস্থে উঠে বসল। তারপর আমাদের দিকে চেয়ে কম্যান্ডিং টোনে শুরু করল তার 'কাহিনি।'

"গল্পটার শুরু বলতে পারিস বহু বছর আগে, সেই আদ্যিকালে। ঐ উদ্যোগী আদিনাথ দাস অনেক বুদ্ধি ও পরিশ্রমে একটা খেলার সরঞ্জামের কোম্পানি দাঁড় করালেন। ধীরে ধীরে কোম্পানির নাম ছড়িয়ে পড়ল। দেশের নানা দিক থেকে আসতে আরম্ভ করল অর্ডার।
আদিনাথের মৃত্যুর পর তাঁর বংশধররা ব্যবসাটাকে আরও ছড়ালেন। এককভাবে ও বাইরের নানা কোম্পানির সঙ্গে জোট বেঁধে তাঁরা বিদেশ থেকেও অর্ডার ধরতে লাগলেন। সব ইতিহাস বলতে বলতে তোদের খেলা শুরু হয়ে যাবে। তাই সোজা বর্তমানেই আসছি – যখন ২০১৬ সালে আদিনাথের কোম্পানি 'ফিফা'র কাছ থেকে এক জরুরি এত্তেলা পেল।
"২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপের জন্য আমাদের এক বিশেষ ধরণের ফুটবল চাই। অর্ডারের জন্য আমরা যে ক'টি নামী কোম্পানিকে প্রাথমিকভাবে বেছেছি, আপনারা তার একটা। প্রত্যেক কোম্পানি কিছু নমুনা তৈরি করে আমাদের দেবে। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর যাদের ফুটবলে আমাদের চাহিদা সবচেয়ে ভালো মিটবে তারা ঐ বিশ্বকাপের জন্য প্রয়োজনীয় সব বল সরবরাহের বরাত পাবে।"
ওরে বাবা, সে তো বিরাট ব্যাপার! অর্ডারটা পেলে কোম্পানির যেমন আর্থিক লাভ, তেমন সুনামও গোটা বিশ্বে ছড়াবে। তাদের বিদেশের সহযোগী কোম্পানির কাছে সাথে সাথে খবর গেল। আর কোম্পানির এখনকার কর্তা মহেন্দ্র দাস আমার ছোটবেলার বন্ধু – সে আমার শরণাপন্ন হল।
"হরি, এত বড় ব্যাপার আমি একা সামলাতে পারব না। ফিফা যেমন বল চায়, সেটা বানানোর জন্য কিছু আইডিয়া চাই। আমি জানি তোমার চেয়ে ভালো সেটা কেউ দিতে পারবে না।"
"কিন্তু আগে তো বলবে ফিফা চায়টা কী?"
"চায় গোল।"
"হ্যাঁ, বল তো গোলই হয়।"
"সেই গোল নয় – গো-ও-ও-ও-ল! মানে, ফুটবল খেলার লক্ষ্য অর্থাৎ তেকাঠি। খেলোয়াড়দের মতো দর্শকরাও চায়, খেলায় আরও বেশি বেশি গোল হোক। কিন্তু বিভিন্ন দলের কোচরা আজকাল আগে রক্ষণভাগকে আঁটসাঁট করে নিশ্চিত হয়ে তবেই গোল করার প্ল্যান করে। এমনকি তোদের ঐ বলের জাদুকর ব্রাজিল, আর্জেন্টিনাও এখন ঐ পথের পথিক। এই অবস্থায় ফিফা চাইছে, ফুটবলের ডিজাইন এমন করা হোক যাতে ডিফেন্ডারদের কিছুটা অসুবিধা হয় আর গোল করা একটু সহজ হয়।"
"সাতটা দিন পরে আসুন।" বলে ভাবার সময় নিলাম। ঠিক আট দিনের মাথায় মহেন্দ্র আবার আমার বাড়িতে এসে দেখা করল। আমার ডিজাইন সে কিছুক্ষণ ধরে দেখল ও শুনল। তারপর অবাক হয়ে বলল, "এ তো এলাহি ব্যাপার। এতসব আমরা করে উঠতে পারব?"
"করতেই হবে। একা না পারলে বিদেশি সহযোগীদের কাছ থেকে প্রযুক্তিগত সাহায্য নেবে। অনেক বাঘা বাঘা কোম্পানি এই বরাত পাওয়ার লড়াইয়ে নামবে। লক্ষ্যটাকে বড় না করলে জিততে পারবে না।"
যাই হোক, শেষ অবধি সে আমার কথা মেনে নিল। ফিফার কাছে একটা খসড়া ডিজাইন একান্ত গোপনীয়তার চুক্তিতে পাঠিয়েও দেওয়া হল। ফিফা কিছুদিন পর এক ই-মেইলে জানাল, প্রস্তাবটা তাদের আগ্রহ জাগিয়ে তুলেছে। আমরা যেন যথাসাধ্য তাড়াতাড়ি একটা মডেল তৈরি করে সঙ্গে নিয়ে তাদের সদর দপ্তরে গিয়ে দেখা করি।
"সদর দপ্তর মানে – জুরিখ?" অবাক বিস্ময়ে বললাম।
"তাছাড়া আবার কী!" হরিদা তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলল।
"তারপর? কী ছিল তোমার ডিজাইনে? সেটা কাজ করল?" আমরা বিভিন্ন দিক থেকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম।
"দাঁড়া বাপু – একসঙ্গে এত কথার উত্তর কী করে দিই? দু'দণ্ড ধৈর্য ধর, সব জানতে পারবি।" বলে একটু ভাও নিয়ে হরিদা আবার শুরু করল।

"আমার ডিজাইনটা দুই স্তরে। প্রথমটা, বলের বাইরের। বলের ওপরের চামড়া যদি মসৃণ হয় তবে তা বাতাস কেটে তাড়াতাড়ি ছোটে। আর এই মসৃণতায় যদি অসমতা থাকে, তবে সেটাকে বুদ্ধি ও অভ্যাসের সাহায্যে কাজে লাগিয়ে ঘাগু শ্যুটাররা ফ্রী কিক, কর্নার এইসব শট বেঁকিয়ে কাজ হাসিল করতে পারে – যেমন ক্রিকেটে ফাস্ট বোলাররা করায় রিভার্স সুইং। আবার গোলিকেও তো বলটা ধরার সুযোগ দিতে হবে। তাই বলের ওপরের পিঠটা এমন মসৃণ থাকা চলবে না যাতে সেটা গোলির হাত পিছলে যায়। বড় বড় টুর্নামেন্টের আগে বিভিন্ন ছোটখাটো প্রতিযোগিতায় পরীক্ষা করে আক্রমণ ও রক্ষণভাগের প্লেয়ারদের মত নিয়ে তবেই বলের ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়। সুতরাং মসৃণতার ব্যাপারে একটা মাঝামাঝি রফা করতে হয় আর গোলি যাতে গ্রিপ পায় তার জন্যও কিছু সুবিধে দিতে হয়। যেমন, বলের ওপরের কভারটা কতগুলো বহুভূজ আকৃতির টুকরো দিয়ে বানানো হয়। সেগুলোর জোড় এমনভাবে রাখা হয়, যাতে ওখানে আঙুল দিয়ে গোলি একটু সহজে বল গ্রিপ করতে পারে।
এগুলোকে বাড়াবাড়ি বদলানো যাবে না। তাহলে রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা ট্রায়ালের সময় ব্যাপারটা দেখে শোরগোল করে তা বানচাল করে দেবে। তাই ফুটবলে এমন কিছু করতে হবে যা দেখে চট করে ধরা যাবে না, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে গোলিদের ধন্দে ফেলে দেবে। আমি ছোটবেলা ফরোয়ার্ডে খেলতাম। পাড়ার ক্লাব টুর্নামেন্টে যাওয়ার আগে গ্রিজের সঙ্গে সাপুড়েদের থেকে জোগাড় করা একরকম সাপের তেল মিশিয়ে বল পালিশ করে নিতাম। ফলে বল হাওয়া কেটে সাঁই সাঁই ছুটত। এভাবে আমি অনেক বাড়তি গোল পেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা তো এক্ষেত্রে করা সম্ভব নয়। এই এলাহি কাণ্ডে তাহলে খামকা কত বেচারা সাপের প্রাণ যাবে, বল দেখি! ভেবে ভেবে আমি শেষে উদ্ভিদবিজ্ঞানী প্রফেসার সালধানাকে ব্যাপারটা জানিয়ে চিঠি দিলাম। কিছুদিন দেহরক্ষীর কাজ করার সুবাদে আমি ওঁর খুবই স্নেহভাজন হয়েছিলাম। উনি কিছুদিনের মধ্যেই ঐ তেলের এক উদ্ভিতজাত বিকল্প বের করে আমাকে খবর দিলেন। যে গাছগাছড়া ও দানাশস্য থেকে ওগুলো তৈরি, তা খুব সহজেই পাওয়া যায়।
একটা সমস্যার সমাধান হল। মহেন্দ্রকে বললাম বলের চামড়া 'সীজন' করার সময় সালধানার উদ্ভাবিত ঐ তেল ব্যবহার করতে। এরপর সেলাই। আমি বুদ্ধি দিলাম, সব টুকরোগুলি সেলাই না করে কতগুলোকে শক্তপোক্ত আঠা দিয়ে জুড়ে দিতে। দেখে ব্যাপারটা চট করে বোঝা যাবে না। গোলিরা বল আঁকড়ে ধরার সময় ঐ সেলাইগুলির সুবিধে নেয়। এদিকে এই বলে যে অমন অনেক সেলাই নেই, সেটা খেলার উত্তেজনায় তাদের সব সময় মাথায় থাকবে না। ফলে মাঝে মাঝে বল হাত ফস্কে যাবে।
এ তো গেল বলের বাইরের ব্যাপার স্যাপার। এগুলো বেশি গোল হওয়ার পক্ষে কিছুটা কাজে দেবে। কিন্তু মুস্কিল হচ্ছে, এসব বল বিশ্বকাপের বছরখানেক আগেই ফিফা বাজারে ছেড়ে দেবে। তাই তার ভালোমন্দ বুঝে ডিফেন্ডার আর গোলিরাও তৈরি হয়ে যাবে। তাই আরও কিছু প্যাঁচ রাখতে হবে, যা কারও চোখে পড়বে না আর সেটা হবে বলের ভেতরে।"

"বলের ভেতরে মানে? সেখানে তো থাকে স্রেফ ব্লাডার ভর্তি বাতাস।" আমরা প্রায় সমস্বরে সোচ্চার হলাম।
"কিন্তু এবার আরও কিছু থাকবে – যেমন, একটা ইলেকট্রনিক মাইক্রোচিপ আর কিছু সূক্ষ্ণ যান্ত্রিক বন্দোবস্ত। সেই বন্দোবস্তে খেলার সময় মাঝে মাঝে বলের গতিপথে ছোট্ট পরিবর্তন ঘটবে, যা প্লেয়াররা আগে থেকে বুঝতে পারবে না।"
"কী সব্বোনাশ – খেলা চলার সময় বলের গতিপথ বাইরে থেকে পাল্টানো? এ তো জোচ্চুরি!"
স্মিত হাসিতে মুখ ভরিয়ে হরিদা বলল, "একই কথা ফিফাও বলেছিল। শোন তাহলে আমি কী উত্তর দিয়েছিলাম।"
একটু দম নিয়ে সে আবার শুরু করল।

"আপনারা বলের ভেতরে মাইক্রোচিপ রেখে সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলছেন। কিন্তু এভাবে তো কোনও টিমকে জিতিয়ে বা হারিয়ে দেওয়াও যেতে পারে।"
ফিফার প্রতিনিধির কথায় আমি মৃদু হেসে বললাম, "না। তার কারণ, বলকে বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থাই আমরা রাখছি না।"
"তাহলে বলের গতি নিয়ন্ত্রিত হবে কীভাবে?"
"বল নিজেই নিজের গতি নিয়ন্ত্রণ করবে।"
"অবাক করলেন। একটু বুঝিয়ে বলবেন কী?"
"অবশ্যই। এক কথায়, আমাদের বলটা হবে স্মার্ট বল। যে ব্যবস্থা আমরা রাখছি, তাতে থাকবে প্রথমত একটা তথ্য বা ডেটা সংগ্রহ করার ব্যবস্থা বা সেন্সার। জড়ো করা তথ্যগুলো যাবে একটা মাইক্রোচিপে, যাতে থাকবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এ-আই নিয়ন্ত্রিত একটা স্মার্ট প্রোগ্রাম, যা সেই ডেটা বিশ্লেষণ করে বলটার গতিপথে সূক্ষ্ণ পরিবর্তন আনার কিছু সঙ্কেত তৈরি করবে। এই সঙ্কেত যাবে বলের গতিপথে সামান্য রদবদল সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় কিছু যান্ত্রিক ব্যবস্থা বা 'অ্যাকচুয়েটর'এ, যেটা প্রোগ্রামের শেখানো কতগুলি পদ্ধতি অনুযায়ী এই বদলের কাজ নিজে নিজেই করবে। আবার প্রোগ্রামটা 'স্মার্ট', তাই অতীতের তথ্য বিশ্লেষণ করে সে নিজে নিজেও শিখবে কী করে ডিফেণ্ডারদের সময়মতো ধোঁকা দেওয়া যায়।"
প্রতিনিধিটি বললেন, "আমি নিজে একজন ইঞ্জিনীয়ার। এখানে আপনি বস্তুবিজ্ঞানের এই প্রাথমিক শর্ত লঙ্ঘন করার চেষ্টা করছেন না তো যে কোনও পদার্থ নিজে নিজেকে চালাতে পারে না? একটি প্লেনেও থাকে শক্তি জোগাবার জন্য কয়েকটি পেট্রোল চালিত ইঞ্জিন। তারা বাতাসের ওপর আঘাত করে তার প্রতিক্রিয়ার সাহায্যে চলে। আপনি শূন্যে ভাসমান বলের গতিপথ ভেতর থেকে কী কৌশলে বদলাবেন?"
আমি মৃদু হেসে বললাম, "সেটাও আমরা ভেবে রেখেছি। ঐ 'অ্যাকচুয়েটর'কে চালাতে বলের ভেতরে থাকবে একটা ছোট্ট অথচ শক্তিশালী ব্যাটারি বা পাওয়ার প্যাক, যেটা বলের নড়াচড়ার থেকে নিজেকে রি-চার্জ করে নেবে। আর আমাদের 'অ্যাকচুয়েটর' বলের ভেতরের বাতাসের চাপের এক সূক্ষ্ণ তারতম্য ঘটাবে, যার ফলে বলের আকৃতিরও সামান্য পরিবর্তন হবে। তাহলে তার বাতাস কেটে ছোটার পথেরও সামান্য পরিবর্তন হবে।"   
ভদ্রলোক অবাক হয়ে মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, "সব মিলিয়ে, দারুণ আইডিয়া! তবু দুটো প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। প্রথমত, বল বুঝবে কী করে সে ডিফেন্ডারদের না আক্রমণকারীদের ধোঁকা দিচ্ছে? আক্রমণ করার সময় পাস দেওয়া বল ধরতে গেলে যদি তা বেঁকে যায় তবে গোলের পরিস্থিতিই তো তৈরি হবে না।"
বললাম, "এ ব্যাপারে আপনাদের একটু সহযোগিতা দরকার হবে। আপনারা তো বল গোল লাইন পার হয়েছে কিনা বুঝতে রেফারিকে সাহায্য করার জন্য ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। তার সঙ্গে আর একটা ছোট্ট জিনিস জুড়ে দেবেন – যা নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সিতে একটা শক্তিশালী ইনফ্রা রেড বিম ছুঁড়তে থাকবে। ইনফ্রা রেড বেশি দূর অব্দি যায় না। তাই আমাদের বল তার উৎসস্থল অর্থাৎ গোল লাইনের কাছাকাছি গেলে তবেই সেই বিম ধরতে পারবে। ওই বিম পেলে সে বুঝবে যে গোলের খুব কাছে এসেছে, এবার তার কেরেদ্দানি দেখাবার পালা। হ্যাঁ, গোলের কাছাকাছি আক্রমণকারীরাও হয়তো বল কব্জা করতে গিয়ে একটু ধোঁকা খাবে। হয়তো তার থেকে শিখে তারা আরও বেশি দূরপাল্লার শটে গোল করার চেষ্টা করবে। সব মিলিয়ে দর্শকদের মজা আরও বাড়বে আর হরেদরে গোল আরও বেশি হবে।"
"বাঃ! এবার আমাদের শেষ প্রশ্ন – বলের অমন ভৌতিক গতিবিধি দেখে কি সবার সন্দেহ হবে না যে তাতে কোনও কারসাজি আছে?"
তাঁকে আশ্বস্ত করে বললাম, "সে কথাও ভেবে রেখেছি। প্রথমত, পরিবর্তনটা হবে যৎসামান্য। কিন্তু প্রচুর তালিমে শীলিত ডিফেন্ডার বা গোলিদের ধন্দে ফেলতে সেটুকুই যথেষ্ট। দ্বিতীয়ত, এটা সব সময় হবে না। ঐ প্রোগ্রামে একটা 'র‍্যানডম ফাংশন' থাকবে, যার ফলে কখন যে বলটা বেগড়বাই করবে তা খেলোয়াড়রা কেন, বল নিজেও জানবে না। অর্থাৎ খেলা খেলার মতোই চলবে, শুধু মাঝে মাঝে থাকবে বলের একটু দুষ্টুমি। সুতরাং যখন সেটা হবে, সবাই বলকে নয়, যে ডিফেন্ডারের হাত বা পায়ের ফাঁক দিয়ে বল গলছে তাকেই দোষ দেবে।"
ফিফা প্রতিনিধি উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, "তাতেই কামাল হবে! নব্বই মিনিটের খেলা – বলের ঐ এখন-তখন দুষ্টুমি থেকে দু-একটা বাড়তি গোল হলেই পুরো টুর্নামেন্টের চিত্রটা পাল্টে যাবে।" তারপর তিনি মহেন্দ্রর সাথে হ্যান্ডশেক করে বললেন, "কনগ্রাচুলেশন, মিঃ ডস – কনট্রাক্টটা আপনারাই পাচ্ছেন। ইউ হ্যাভ এ জিনিয়াস উইথ ইউ। এবার আপনাদের বলের ফিল্ড ট্রায়াল। বেস্ট অফ লাক।"

আমাদের চক্ষু চড়কগাছ। "আপনার কল্যাণে কন্ট্রাক্টটা তাহলে আপনার ওই দাস কোম্পানিই পেল? আর ঐ স্মার্ট বলের জন্যেই তবে এত হাত ফস্কে গোল আর আত্মঘাতী গোল?"
হরিদা কিছুক্ষণ মুখে এক তুড়িয় ভাব ফুটিয়ে বসে রইল। তার হাতের তরকারির বাটি ততক্ষণে খালি। কিন্তু তাকে দেখে মনে হচ্ছে কোনও নেশাড়ু টংয়ে পৌঁছে মৌজ করে ঝিমোচ্ছে। একটু পর ক্ষমাসুন্দর হেসে বলল, "লাইফ কি অত সোজা রে! কিছুদিন পর শুনলাম এক সাহেবি কোম্পানি যারা এই কন্ট্রাক্ট পাওয়ার লড়াইয়ে হেরে গেল তারা চ্যালেঞ্জ দিয়েছে যে আমাদের বল সম্বন্ধে যা যা বলা হয়েছে সব মিথ্যে। সুযোগ পেলে তারা দেখিয়ে দেবে এই বলে গোল করা বরং সাধারণ বলের চেয়ে কঠিন।
ফিফা ইতিমধ্যে কিছু গোপন ট্রায়ালের সাহায্যে আমাদের বলের কার্যকারিতা দেখে চমকিত ও মুগ্ধ হয়েছে। কিন্তু বাইরের লোকেদের কাছে সেটা প্রমাণ করা একটা আলাদা ব্যাপার। তারা তাই দাস কোম্পানির প্রতিদ্বন্দ্বী ঐ কোম্পানির সাথে কথা বলে আমেরিকায় এক ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করল, যা আমাদের পরীক্ষামূলক বলে খেলা হবে। ঐ কোম্পানি মহানুভব হয়ে ঘোষণা করল – এই খেলায় যদি একটিও গোল হয়, তবে তারা দাবি ছেড়ে দেবে। কিন্তু খেলা গোলশূন্যভাবে শেষ হলে আমাদেরই দাবি ছাড়তে হবে। চ্যালেঞ্জটা নিতেই হল।
খেলা শুরু হল স্থানীয় দুটি ক্লাবের মধ্যে। আমাদের দাবিমতো, ফিফা চুপিসাড়ে দু'পাশে গোল লাইন প্রযুক্তির সাথে দুটো ইনফ্রা রেড এমিটারও লাগিয়েছে। খেলা শুরু হল। প্রথম প্রথম দু'দলই রক্ষণাত্মক খেলবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কিছুক্ষণ খেলা এগোবার পরই আমি বুঝলাম, দাল মে কুছ কালা হ্যায়! দু দলের প্লেয়াররাই বল নিয়ে কিছুটা এগোবার পর আবার পেছিয়ে আসছে। বিপক্ষের পেনাল্টি এরিয়ায় আর ঢোকেই না। গোল করায় যেন কারওই কোনও গরজ নেই। হাফ টাইম অব্দি গোললেস। এতক্ষণে আমি বুঝে গেছি – প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিটি স্থানীয় প্লেয়ারদের ঘুষ দিয়ে ঠিক করে রেখেছে যে ম্যাচটা গোললেস ড্র হবে।
মহেন্দ্রর মাধ্যমে ফিফার স্থানীয় প্রতিনিধিকে বললাম, "এরা তো ঠিক করে রেখেছে গোলের কাছ অব্দি বলই নেবে না। তাহলে গোল আর হবে কী করে?"
তিনি হতাশ মাথা নাড়লেন, "সেটা আপনাদের এই শর্তে রাজি হওয়ার আগে ভাবা উচিত ছিল। তাহলে আপনাদের পছন্দমতো একটা টিম বাছতে পারতেন। যাক, সেটা যখন করেননি, এখন আমরা আর কী করব?"
একটু ভেবে বললাম, "তবে অন্তত একটা শর্তে ওদের রাজি করান – আমাদের পছন্দমতো একজন সাবস্টিটিউট প্লেয়ারকে আমরা সেকেন্ড হাফে যে কোনও দলে নামাতে চাই।"
প্রতিনিধি কিছুক্ষণ বাদে এসে বললেন, "ওরা রাজি। তবে দুটো শর্তে। প্রথমত, সেই সাবস্টিটিউট আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় হবে না। আর দ্বিতীয়ত, তাকে ডিফেন্সে খেলতে হবে।"
তাই সই। বললাম, "ইন্টারন্যাশনাল কেন, ফার্স্ট ডিভিশন ক্লাবেও সে খেলেনি। সেই প্লেয়ার হচ্ছে এই হরি শর্মা।"    
মহেন্দ্র তো থ! কিন্তু কী আর করে – এতবড় কন্ট্রাক্ট হাতছাড়া হতে চলেছে। ডুবন্ত মানূষ যেমন খড়কুটো আঁকড়ে ধরে, সেও তেমন আমার কথায় রাজি হয়ে গেল।
মাঠে নেমে কিছুক্ষণ আমি হাওয়া বোঝার চেষ্টা করতে লাগলাম। সবাই আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকাছে। তাদের ভুল বোঝাবার চেষ্টায় তাই দু-একটা বলে লাথি মেরে দেখাবার চেষ্টা করলাম যে আমি নিতান্তই আনাড়ি। তাই দেখে আত্মবিশ্বাসী হয়ে তারা দয়া করে আমাকেও দু-একটা পাস দিল। কিন্তু এগিয়ে ওদের হাফে ঢোকার চেষ্টা করতে গেলেই প্রতিপক্ষ নয়, নিজেদের প্লেয়াররাই জোর করে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে বল কেড়ে নিচ্ছে। অর্থাৎ আমার গতিবিধিও শুধু আমার হাফেই সীমাবদ্ধ। মধ্যের থেকে, তারপর আমার পায়ে আর বলই আসে না!
খেলা শেষ হতে প্রায় মিনিট পনেরো বাকি। তখন হঠাৎ আমাদের লেফট ব্যাক রবার্টস কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলল, "ওরা তোমাকে খেলতে দেবে না। আমি চক্রান্তটা সব জানি, তবে তলায় তলায় আমি তোমাদের কোম্পানিরই লোক। খেলা শেষ হওয়ার মুখে মুখে আমি তোমাকে একটা পাস দেব। কিন্তু সেটা আমাদের হাফেই। সেখান থেকে শট নিয়েই তোমাকে গোল করতে হবে। কঠিন, তবে তুমি হয়তো পারবে।"
"ঠিক আছে, তবে পাসটা তুমি আমাদের পেনাল্টি এরিয়ার মধ্যে দেবে। তারপর দেখি কী করা যায়।" আমি জানি, আমার বলের 'ম্যাজিক' ওই গোলপোস্টের আশেপাশেই কাজ করবে।
খেলা শেষ হতে আর মিনিটখানেক বাকি। আমাদের হাফ লাইনের কাছ থেকে রবার্টস বল পেল আর সাথে সাথে আমাকে একটা স্কোয়ার পাস বাড়াল। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, তার মুখে উদ্বেগের ছাপ। বল নিয়ে এক মুহূর্ত আমি ভেবে নিলাম। তারপর দৃঢ়প্রত্যয়ে এগোতে শুরু করলাম – প্রতিপক্ষের নয়, নিজেদেরই গোলের দিকে। দু'জন হাঁ-হাঁ করে ধেয়ে এল, আমি পায়ের ডজে কাটালাম। তারপর কেউ কিছু বোঝার আগেই আমি নিজেদের পেনাল্টি এরিয়ায় আমাদের গোলির মুখোমুখি।
সারা মাঠে তুমুল হৈ-চৈ। দেখছি, মহেন্দ্র প্রতিপক্ষের প্রতিনিধির সঙ্গে উত্তেজিত তর্ক করছে। অনুমান করছি সে ব্যাটা বলছে – এ সব ফোর-টুয়েন্টি চলবে না। সেমসাইড গোল গণ্য হবে না। আর মহেন্দ্র বলছে – কই, শর্তে তো সেসব লেখা ছিল না!
এদিকে আমি বলে শট মারতে তৈরি। গোলিও রেডি গোল বাঁচাবার জন্য। আশেপাশে কোনও প্লেয়ার এসে পড়তে পারেনি, শুধু আমরাই দুজন। হঠাৎ মাঠ নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। আর আমি দুরু দুরু বক্ষে বললাম, "জয় বাবা বলুনাথ, নিরাশ কোরো না। অন্তত একবার তোমার ম্যাজিক দেখিয়ে আমাকে রক্ষা করো।" তারপর চোখ বুঁজে নিলাম এক রামশট।
নিশ্চয়ই বল বাবা আমার মনের কথা শুনতে পেয়েছিল। আমি পোস্টের কোন ঘেঁষে এক তীব্র শট নিলাম। কিন্তু বলটা যেন চালাকি করে একটু বেঁকে পোস্টে লেগে ঠিকরে ফিরে এল। আমি মাথায় হাত দিয়ে ফেলেছি, আবার শট নেবার সময় আর নেই। কিন্তু তার পর যা দেখা গেল তা উপস্থিত সব দর্শক আজীবন মনে রাখবে। বল পোস্টে লেগে গোত্তা খেয়ে আকাশে উঠে গেল। উঠছে আর মাঠের ওপর দিয়ে চলছে। চলতে চলতে প্রতিপক্ষের গোলের কাছাকাছি গিয়ে তা আবার নামতে লাগল। যখন নামছে, কী তার বেগ! গোলের মুখে এসে গোলি কিছু বোঝার আগে সে স্যাঁৎ করে তার হাত গলে জালের মধ্যে জড়িয়ে গেল। মাঠের বাইরে তুমুল হাততালি। মাঠের ভেতর দু'দলের প্লেয়াররাই মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছে। এদিকে রেফারিও গোলের বাঁশির সাথে সাথে খেলা শেষের লম্বা বাঁশি বাজিয়ে দিলেন। রেজাল্ট – আমরা ওয়ান নিলে জিতেছি!
মহেন্দ্র ছুটে আসছেন। সাথে ফিফার প্রতিনিধি। আমার সাথে হ্যান্ডশেক করে তিনি বললেন, "যা দেখলাম, জানি না তা এক অসাধারণ স্মার্ট বলের না এক অসাধারণ ফুটবলারের কেরামতি। কিন্তু কন্ট্রাক্ট তোমাদেরই।"
প্রতিপক্ষের প্রতিনিধি দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বললেন, "এ বেআইনি। কোনও অবৈধ যান্ত্রিক কারসাজির সাহায্যে বলকে বাইরের থেকে চালানো হয়েছে। আমরা টেকনিক্যাল প্যানেলের কাছে প্রতিবাদ জানাব।"
ফিফা প্রতিনিধি কঠোর স্বরে বললেন, "আর আপনারা যে পুরো ম্যাচটাই 'গট-আপ' করেছেন, সেটা যদি তদন্তে প্রমাণ হয়? তাহলে কিন্তু আপনারা জন্মের মতো ব্ল্যাক-লিস্টেড হয়ে যাবেন। আমাদের কাছে ম্যাচ ভিডিও এবং আরও অনেক প্রমাণ আছে। চান আমরা তদন্ত করি?"
জোঁকের গায়ে নুন পড়লে যেমন হয়, লোকটা সাথে সাথে চুপসে গেল। তারপর নিঃশব্দে কেটে পড়ল।"

আমাদের সবারও চক্ষু ছানাবড়া। বিমল বলল, "কিন্তু এটা কেমন করে হল? সত্যিই ওটা তোমার, না তোমাদের বলের কেরামতি?"
হরিদার চোখ দেখলাম বুঁজে এসেছে। জড়ানো গলায় বলল, "দুটোই। আমার ইচ্ছেটা স্মার্ট বল কীভাবে যেন ধরে ফেলেছিল। তারপর সেই কাজে আমায় সাহায্য করেছিল। তবে বলেছি না, স্মার্ট বল যা দেখে তাই শেখে। নিজেদের গোলে বল মারাটা ও সেইদিন থেকে শিখে নিয়েছিল। তাই আজ দেখছিস, ডিফেন্ডাররা বল ক্লিয়ার করতে গেলেও সেগুলো মাঝে মাঝে তাদের নিজেদের জালে জড়িয়ে যাচ্ছে।"
ভোম্বল একটু সন্ধিগ্ধ হয়ে বলল, "তোমাদের রাইভাল কোম্পানিটার নাম কী?"
জড়িত গলায় হরিদা বলল, "সে কী আর মনে রেখেছি! ঐ যে কী যেন – যাদের চাবি নেই আর যাদের আপ্তবাক্য কথা না বলে কাজ সেরে দাও –"
"নাইকি – জাস্ট ডু ইট?" রবিন উত্তেজিতভাবে বলল, "তোমার আদিনাথ দাসের কোম্পানি নাইকিকে হারিয়ে বিশ্বকাপের বলের কন্ট্রাক্ট পেয়েছে?"
হরিদা কিছু বলল না, শুধু মিটি মিটি হাসতে হাসতে শুয়ে পড়ল। বুঝলাম, আজকে আর তার থেকে কিছু আদায় করা যাবে না।
যেন সময় মেপেই একটু পরে হরিদার ভাই এসে হরিদাকে কোনওমতে ধরাধরি করে বাড়ি নিয়ে গেল। গল্প শেষ। একটু পর খেলা আরম্ভ হবে, আমরা ঘুরে বসলাম।

ভোম্বল কিন্তু ছোড়নেওয়ালা নয়। খুটখুট করে স্মার্টফোনে কী যেন দেখছে। একটু পর উত্তেজিতভাবে বলল, "হরিদার বিখ্যাত 'আদিনাথ দাস'-এর কোম্পানিটা আসলে কী জানিস? নামকরা জার্মান স্পোর্টস গুডস কোম্পানি অ্যাডিডাস, যাদের টেলস্টার মেচতা ফুটবলে এবার ওয়ার্ড কাপের খেলা হচ্ছে। বলটাতে সত্যিই একটা চিপ আছে, তবে তা কিছু ডেটা রেকর্ড করার জন্য।"
"অ্যাডিডাস হল আদি দাস? বুড়ো বেশ গুছিয়ে একখান নামিয়ে গেল। পারেও – স্রেফ তরকারি খেয়েই এত!"
"একবার ওর তরকারির বাটির দিকে চেয়ে দেখেছিস?" রবিন বলল।
"কেন, ওতেই কি কিছু মেশানো –"
"ভ্যাট, ওটা আসে বৌদির কিচেন থেকে। বেশ ভরা ভরা দু'বাটি আলু-পোস্ত। আর তাতে আলু কম, পোস্তই বেশি।"
"তো? পোস্তর যা দাম, তাতে বুড়োর গাঁটের পয়সা কিছু হালকা হয়। তা বলে নেশা?"
"আরে পোস্ত কী, জানিস তো? আফিমের ফুল। তাই ওটাই হচ্ছে হরিদার মতো বেচারাদের আফিম। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো আর কী!"
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, "আসলে যাদের নেশাটাই নেশাড়ু হওয়া, তারা ভাত খেয়েও চড়ে যায়। হরিদার এতদিনের অভ্যেস নেশায় টং হয়ে ভাট গল্প বলা – সেটা ছাড়ে কী করে, বল?"
"নে, এবার ঐদিকে তাকা।" ভোম্বলের কথায় ফিরে দেখি, কিক অফ শুরু হতে চলেছে। বেলজিয়াম বনাম ব্রাজিল। দেখা যাক, আজ হরিদার স্মার্ট বল কী ভেলকি দেখায়!

ছবিঃ পার্থ মুখার্জি

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনীয়ার ও মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী অনিরুদ্ধ সেন কলকাতা-মুম্বইয়ের বিভিন্ন সাময়িকপত্র ও ওয়েব ম্যাগাজিনের নিয়মিত লেখক। তাঁর লেখা ও অনুবাদ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, এবং সংকলিত বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা