সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
সাপুড়ে-অঞ্জন নাথ

ওই মাঠে এসে ওরা খুব ভালো করে চারদিক দেখে ঝিলের কাছে এলো – দুই সাপুড়ে সমস্ত ঝোপ ঝাড় গুলো ভালো করে দেখে নিলো তারপর ঝিলের জলের দিকে নজর দিলো। নাঃ, মনে হচ্ছে সাপ দুটো বাইরে নেই। এবার ওরা ওই পড়ো বাড়ির কাছে এলে রন্তু ওদের দেখিয়ে দিলো প্রথম দিন ওরা সাপটাকে কোথায় দেখেছিলো আর ওটা কোন দিকে চলে গিয়েছিলো। তারপরই ওরা তিন জন চটপট একটু দূরের একটা আম গাছের উপর উঠে পড়লো যেখান থেকে বাড়ির পেছনের দিকটা ভালো করে দেখা যায়। গত মাস কয়েকে বাড়ির ভেতরের দিকের জঙ্গল অনেকটা বেড়ে গিয়েছে তবে পেছনের সিঁড়ির সামনের চাতালটা যেখানে ওই ছেলেধরাকে অন্তু ও রন্তু পিটিয়েছিলো সেখানটা মোটামুটি পরিষ্কারই আছে। অন্তু আম গাছের উপর দিকের একটা মোটা ডালে উঠে ভালো করে নজর দিয়ে বাড়ির পেছনের সিঁড়ির নিচে চাতালটা দেখেই চমকে ফিস ফিস করে বললো,
‘এই রন্তু সন্তু, পেছনের চাতালে ওটা কি রে? - - ওরে বাপরে, একটা সাপ তো ওখানে কুণ্ডলী পাকিয়ে রোদ পোয়াচ্ছে রে আর পেছনের ঘরের দরজাও দেখি খোলা। তাড়াতাড়ি গুরুজীকে ডাক এখান থেকে জায়গাটা যেন ভালো করে দেখে নেয়।’

সন্তু তাড়াতাড়ি গাছ থেকে নেমে একটু এগিয়ে খুব আস্তে গুরুজীকে ডাকতেই গুরুজী চোখ তুলে সন্তুর হাত ছানি দেখে এগিয়ে এসে আম গাছের যে ডালটায় অন্তু বসে ছিলো সেখানে উঠে এলো। ওখান থেকে ওরা হঠাৎ দেখে পেছনের জঙ্গল থেকে আর একটা বিরাট সাপ ধীরে ধীরে বেরিয়ে এসেছে আর ওটাকে দেখে কুণ্ডলী পাকানো সাপটা একটু মাথা তুলে আবার নামিয়ে নিলো আর অন্য সাপটা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে ঘরে ঢুকে গেলো। গুরুজী আস্তে করে বললো,
‘এত বড় কাল কেউটে আগে আমি দেখি নি তার উপর জোড়া। মনে হয় ঘরেই বাসা বেঁধেছে। এদিকের জানালাটা তো খোলা – ওখান দিয়ে বেরিয়ে আসবে না তো?’
সন্তু বললো,
‘ওই জানালাটা প্রায় ফুট চারেক উঁচুতে – সাপটা কি এতটা উঠতে পারবে?’
‘কি জানি – সবই খোদার হাতে।’

আম গাছ থেকে নেমে গুরুজী সঙ্গের ছেলেটার সাথে নিচু গলায় একটু সময় আলোচনা করে ওদের বললো,
‘দাদাভাইরা, আমাদের যাই হোক না কেন তোমরা কোন রকম সাহায্য করতে আসবে না আর চার দিক ভালো করে দেখে শুনে তবেই গাছ থেকে নামবে। কথাটা মনে রেখো।’

তারপর গুরুজী ও ছেলেটা বস্তাগুলো ও ঐ দুটো লাঠি নিয়ে খুব সাবধানে গেট দিয়ে ঢুকে ওই সুঁড়ি পথ ধরে বাড়ির পেছন দিকে এগিয়ে গেলো। শেষের ঘরের খোলা জানালার নিচে এসে গুরুজী জানালার কোণা দিয়ে ভেতরটা দেখে নিয়ে ছেলেটার কানে কানে কী যেন বোঝালো তারপর মাথার পাগড়ি খুলে বাঁ হাতে ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে আর ডান হাতে লাঠিটাকে শক্ত করে ধরে খুব ধীরে এগিয়ে গেলো পেছনের চাতালের দিকে। ছেলেটা একটা বড় পাথর তুলে গুরুজীর প্রায় গায়ে সেঁটে চললো। অন্তুরা উত্তেজনাতে আম গাছের ডাল শক্ত করে চেপে ধরেছে – কত বড় বিপদ হতে পারে ওরা ঠিক ধারনা করতে পারছে না। ছেলেটাকে বড় পাথরটা তুলতে দেখে অন্তু ফিসফিস করে বললো,
‘ঐ পাথরটা দিয়ে কী করবে রে?’

সন্তু ও অন্তু দুজনেই মাথা নাড়লো মানে ওরাও ঠিক বুঝতে পারছে না। তারপরের ঘটনা গুলো খুব দ্রুত ঘটে গেলো। গুরুজী খুব আস্তে বাড়ির কোনাটা ঘুরে পেছনের চাতালে আসতেই সেই অল্প শব্দে সাপটা কুণ্ডলী থেকে যেই না মাথা তুলেছে গুরুজী বিদ্যুৎবেগে হাতের লাঠির ‘Y’ মাথাটা দিয়ে নিঁখুত ভাবে সাপটার গলার কাছে আটকে মাটিতে চেপে ধরেছে আর ছেলেটা সাথে সাথে পেছনের ঘরের দরজাটা এক টানে বন্ধ করে ঐ পাথর দিয়ে চাপা দিয়ে দিয়েছে যাতে চট করে খুলে না যায় - তারপরই ওর হাতের হুক লাগানো লাঠিটা দিয়ে সাপের শরীরের মাঝামাঝি গায়ের জোরে চেপে ধরলো। সাপটা প্রচণ্ড জোরে হিস্‌ হিস্‌ আওয়াজ করে লেজের দিক দিয়ে ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করেও ঠিক নাগালের মধ্যে পেলো না। এদিকে বাইরের সাপটার আওয়াজে ঘরের ভেতরের সাপটা ফোঁস ফোঁস শুরু করেছে কিন্তু পাথরের জন্য বেরিয়ে আসতে না পেরে সেই ফোঁসফোঁসানি আরো বেড়ে গেলো। সন্তুরা কোন দিনও সাপের এই রকম ফোঁসফোঁসানি আর হিস্‌হিসানি শোনে নি – ওরা ভয়ের চোটে আম গাছের ডাল জড়িয়ে ধরেছে যাতে হঠাৎ পড়ে না যায়। সাপটা সমস্ত শরীরকে মুচড়ে লাঠি দুটো থেকে বেরিয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করছে – সন্তুরা বুঝতে পারছে গুরুজী ও ছেলেটা গায়ের জোরে সাপটাকে চেপে রাখতে একেবারে ঘেমে নেয়ে উঠেছে - ওরা জানে একটু ঢিলে হলেই সাপটা পিছলে বেরিয়ে আসবে আর তার মানে সাক্ষাৎ মৃত্যু। এবার ছেলেটা চট করে হাতের লাঠিটা পা দিয়ে চেপে ধরে একটা বস্তা গুরুজীর দিকে এগিয়ে দিতেই গুরুজী বাঁ হাতে শরীরের সমস্ত সমস্ত জোর দিয়ে লাঠিটাকে চেপে রেখে ডান হাত দিয়ে বস্তাটাকে সাপের মাথার নিচের দিকে ঢুকিয়ে চোখের পলকে ওটা দিয়ে মাথাটাকে চেপে ধরে লাঠিটা ছেড়ে দিয়ে দুই হাতে সাপের মাথার চার দিকে বস্তাটাকে জড়িয়ে সাপের শরীরের দিকে বস্তাটা টেনে নামিয়ে নিতেই সাপের মাথা ও শরীরের প্রায় ফুট দুয়েক ওই বস্তার মধ্যে ঢুকে গেলো। এর মধ্যে ছেলেটা লাঠি ছেড়ে দিয়ে সাপটার শরীরের মাঝখানটাকে বগলদাবা করে বস্তার ভেতর দিকে ঠেলে মিনিট খানেকের মধ্যেই ওটাকে বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলতে গুরুজী বস্তার মুখে লাগানো একটা শক্ত দড়ি টেনে খুব শক্ত করে বস্তার মুখটা বেঁধে ফেললো। বস্তার মধ্যে সাপটার কী তড়পানি, মনে হচ্ছে বস্তা ছিঁড়ে বেরিয়ে আসবে আর সেই সাথে প্রচণ্ড হিস্‌হিসানি – বস্তা তো মাটিতে গড়াতে শুরু করেছে। ওদিকে বিশেষ নজর না দিয়ে ওরা দুজনে সিঁড়ির পাশের কাঁটা গাছের ঝোপে লুকিয়ে লাঠি দিয়ে দরজা আটকে রাখা পাথরটা একটু সরাতে ঘরের সাপটা প্রায় সাথে সাথে দরজা ঠেলে বেরিয়ে আসতেই পলক ফেলার আগে গুরুজী ওর মাথাটা লাঠি দিয়ে চেপে ধরতে ছেলেটা দরজাটা শক্ত করে সাপের গায়ে চেপে ধরে বস্তাটা ওটার মাথার নিচে দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে দুজনে মিলে আগের মত সাপটাকে বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে শক্ত করে বস্তার মুখ বেঁধে দিলো। দরজার জন্য সাপটার দাপাদাপি ঘরের মধ্যে হওয়াতে এবারের কাজটা বেশ সহজ ভাবেই হয়ে গেলো। এবার ছেলেটা তাড়াতাড়ি ঝুড়ি দুটো এনে তার মধ্যে বস্তা দুটোকে ঢুকিয়ে ঢাকনা চাপা দিয়ে খুব শক্ত করে ঝুড়ি দুটো বেঁধে ফেললো কিন্তু তাহলেও বস্তার মধ্যে সাপ দুটোর দাপানিতে মনে হচ্ছে ঝুড়ি দুটোই যেন ফেটে যাবে। এর মধ্যে গুরুজী আর একটা বস্তা নিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকতে রন্তু বললো,
‘মনে হচ্ছে ঘরের মধ্যে এদের বাচ্চা কাচ্চারা আছে।’

একটু পরে গুরুজী মুখ বাঁধা বস্তাটা নিয়ে বেরিয়ে এসে খুব সাবধানে ঝুড়ি দুটো মাথায় নিয়ে আর তৃতীয় বস্তাটা হাতে ঝুলিয়ে গেটের বাইরে বেরিয়ে এসে অন্তুদের ডাকতেই ওরা আম গাছ থেকে ঝটপট নেমে দৌড়ে এসে ঝুড়ি দুটোর চার দিকে নাচতে শুরু করলো। গুরুজী ও ছেলেটা রীতিমত হাঁপাচ্ছে – একটু দম নিয়ে আর মুখের ঘাম মুছে গুরুজী বললো,
‘দাদাভাইরা, তোমাদের জন্যই এই প্রথম এত বড় দুটো সাংঘাতিক সাপ ধরতে পারলাম – একটু এদিক ওদিক হলেই আমাদের ছোবল খেয়ে মরতে হতো। ওদের গোটা চারেক বাচ্চাও পেয়েছি – বাচ্চা হলে কী হবে ওগুলোর ফোঁস কম ছিলো না – শুধু হাতে ধরতে ভয়ই করছিলো। এদের বিক্রি করলে ভালো টাকাই পাওয়া যাবে। আমার নাম মজিদ মিঞা আর এ হলো আমার ভাইপো সিরাজ – আমরা ঝিলের ওপাশে নবনারায়ণপুর গ্রামে থাকি। তোমাদের কোন দরকার হলে ওই গ্রামের যে কোন লোককে দিয়ে খবর পাঠালেই আমরা চলে আসবো।’

সিরাজ আস্তে আস্তে দুটো ঝুড়ি সহ বাঁকটা কাঁধে তুলে বললো,
‘গুরুজী, এরা তো বড্ড ভারি – রাস্তায় বার কয়েক বিশ্রাম নিতে হবে মনে হচ্ছে।’

গুরুজী খুব আনন্দের সাথে হাসলো,
‘ওরে, এত দিনে সত্যিকারের সাপ ধরেছিস – ওজনদার তো হবেই। এই না হলে সাপের রাজা। ও হ্যাঁ, দাদাভাইরা আর একটা কথা – তোমরা এ বাড়িতে আর এসো না – বাড়িটা ভালো না। খোদাকে ধন্যবাদ দাও যে তোমাদের কিছু হয় নি। তবে এ ধরনের কাল কেউটে বা কিং কোবরা তো পাহাড়েই থাকে – এখানে কোথা থেকে এলো সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।’

সন্তুরা মনের আনন্দে ফিরে এলো – এখন আর ওদের ঝিলের ধারে গল্প করার আর খেলার কোন রকম ভয় নেই।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা