সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
ডাকাত সন্ন্যাসী-অঞ্জন নাথ

এর পর দুদিন ওদের মধ্যে নানা আলোচনা ও খোঁজ খবরেই কেটে গেলো। তারপরের দিন মায়েদেরও বুড়ো বটতলায় সন্ন্যাসীর আবির্ভাব দেখতে যাবার কথা তাই বিকেলেই মায়েরা একটা ভ্যান রিক্সা ভাড়া করে রওয়ানা হতেই রন্তু বললো,
‘তোরা বুড়ো বটতলায় যা - আমি একটা দরকারি কাজ সেরেই আসছি।’

সাইকেল চালাতে চালাতে অন্তু বললো,
‘এখন আবার রন্তুর কি কাজ পড়লো রে? সময় মত হাজির হলে হয়।’

সন্তু মাথা নাড়লো, মানে জানে না। প্রায় সন্ধ্যের মুখে বুড়ো বটতলায় এসে দেখে এর মধ্যেই গ্রামের বেশ কিছু লোক ওখানে এসে গিয়েছে। সবাই হাত জোড় করে উদগ্রীব হয়ে বসে আছে সন্ন্যাসী মহাপ্রভুর দর্শনের জন্য। এর মধ্যে মায়েরাও এসে হাজির। বেঁটে লোকটা ধুনিতে কাঠ পাতা দিয়ে আগুন ধরাতে ব্যস্ত তবে লম্বুর পাত্তা নেই। সন্তু মুচকি হেসে অন্তুকে খোঁচা মারলো,
‘লম্বু ব্যাটা ঠিক গাছের ওপরে বসে ছিপে ফুল মিষ্টি লাগাচ্ছে রে।’

এদিক ওদিক দেখতে গিয়ে সন্তুর নজরে এলো বটতলার একটু বাইরে জনা তিনেক লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে আর একজন ধুতি পাঞ্জাবী পরা ভদ্রলোক চুপ করে দাঁড়িয়ে। ভালো করে দেখে অন্তুকে খুব আস্তে বললো,
‘নিবারণ কাকু না? কি ব্যাপার? ঠিক কোন খবর পেয়ে এসেছে মনে হয়। দেখিস আমাদের যেন দেখতে না পায়। বাকি তিনটে লোক কি ওরই চেলা?’

এর মধ্যে রন্তু হাঁপাতে হাঁপাতে এসেই ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে ওদের চুপ করে থাকতে বললো। অন্তু আঙ্গুল দিয়ে নিবারণ কাকুকে দেখাতে রন্তু মুচকি হাসলো। ভেজা পাতা আর কাঠের ধোঁয়াতে চোখ জ্বালা করতে শুরু করেছে। বেঁটে লোকটা হাত জোড় করে কি সব ওঁ বং করছে যার কোন মাথা মুন্ডু কেউই বুঝতে পারছে না। এর পর পাশের মাটির সরা থেকে এক মুঠো ধুনো নিয়ে আগুনে ছুড়ে ফ্যাসফেসে গলায় চেঁচিয়ে উঠলো,
‘জয় বাবা বটেশ্বরানন্দ, দেখা দাও বাবা। ভক্তরা যে তোমার দর্শনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে - ওদের নিরাশ করো না বাবা। দয়া করে নেমে এসো এই ভূমিতে।’

ঘন ধোঁয়াতে বটতলা প্রায় অন্ধকার হয়ে গিয়েছে - হঠাৎ ‘ব্যোম ব্যোম মহাদেব’ বলে ধোঁয়ার ভেতর থেকে এক বিরাট চেহারার লোক লাফিয়ে বেরিয়ে এলো সামনে - রীতিমত নাটকীয় ব্যাপার। মাথায় বিরাট জটা, এই-ই লম্বা দাড়ি, খালি গায়ে বিভূতি মাখা, ছয় ফুট খানেক লম্বা আর সেই রকম শক্ত চেহারা। বেশির ভাগ দর্শনার্থী ভয়ে হাত জোড় করে বসে আছে - এমন কি সন্তুদের মায়েরাও হাত জোড় করে নিয়েছেন। বটেশ্বরানন্দ নিজের আসনে বসে সবাইকে আর্শীবাদের ভঙ্গীতে হাত তুলে গমগমে গলায় বলে উঠলো,
‘তোমাদের জন্যই হিমালয় থেকে নেমে আসতে হলো। আজ মহাদেব ডেকেছিলেন কৈলাসে - বললেন, বাবা বটু, বুড়ো বটতলায় আমার মন্দির করতে এত দেরী কেন বাবা? আমি অনেক বোঝালাম যে জিনিষ পত্রের দাম বেড়ে গিয়েছে তাই গ্রামবাসীদের দানে তো মন্দির হবে না - আরো অনেক টাকা চাই। সেটার ব্যবস্থা হলেই মন্দিরের কাজ শুরু হবে। হে আমার শিষ্যরা, এখন বুঝতে পারছো স্বয়ং মহাদেব মন্দিরের জন্য কতটা উতলা হয়ে উঠেছেন। তোমাদেরই তো এর ব্যবস্থা করতে হবে - আমি তো নিমিত্ত মাত্র।’
বলতে বলতে বটেশ্বরানন্দ কেমন যেন ছটফট করতে শুরু করলেন।

রন্তু মুচকি হেসে বললো,
‘এবার মজাটা দ্যাখ - কেমন ভারতনাট্যমের নাচ শুরু হয়।’

তারপরই মনে হলো আর সহ্য করতে না পেরে ডান হাতে দাড়ি চুলকাতে শুরু করলেন - ডান হাতে না পেরে দুই হাত দিয়ে পাগলের মত দাড়ির ভেতর গাল, মুখ ও জটার মধ্যে হাত ঢুকিয়ে মাথা চুলকাতে লাগলেন। ওর বেঁটে চেলা ও সব দর্শনার্থীরা অবাক হয়ে দেখছে বাবার কাণ্ড। তারপর চুলকানি আর সামলাতে না পেরে বটেশ্বরানন্দ লাফিয়ে আসনের ওপর দাঁড়িয়ে এক টানে মাথার জটা আর লম্বা দাড়ি খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে দুই হাতে মাথার বিরাট টাক আর মুখ চুলকাতে শুরু করলেন - চুলকানি ধীরে ধীরে ঘাড়, বুক পেটের ঘন লোমের মধ্যেও শুরু হয়েছে। চুলকানির চোটে বটেশ্বরানন্দ রীতিমত লাফালাফি শুরু করে দিয়েছেন আর ওর ছুঁড়ে ফেলা পরচুলা ও দাড়ি ধুনির আগুনে পড়ে চড় চড় করে জ্বলতে লাগলো। হঠাৎ ‘ওরে বাবারে, সাপ’ বলে লম্বু গাছের ওপর থেকে ধড়াম করে এসে পড়লো বেঁটে চেলার ঘাড়ে - ওর দাড়ি ও পরচুলা গাছের ডালে আটকে ঝুলতে লাগলো - ওই ধাক্কায় দু জনেই ভির্মি খেয়ে চোখ উল্টে দিয়েছে। এর পরই একটা বেশ মোটা চিত্র বিচিত্র সাপ গাছের ডাল থেকে ঝুলে বটেশ্বরানন্দের নাকের সামনে দোল খেতে শুরু করতেই ‘ইয়া আল্লা’ বলে বটেশ্বরানন্দ ওখানেই চিৎপাত আর ওর হাতের ধাক্কায় শিব লিঙ্গ ছিটকে পড়লো এক পাশে, ওটা যে পৃথিবীর মাঝ খান থেকে উঠে আসে নি তার প্রমাণ হিসাবে। সন্তুরা খেয়াল করে নি কখন নিবারণ কাকু ওদের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন।

‘তোরাই তো দেখছি কেল্লা ফতে করে দিলি রে। দেখি বদরু মিঞা আর লরেল হার্ডির কী সমাচার - অনেক দিন ধরেই ওদের খুঁজছিলাম গোটা কয়েক ডাকাতির ব্যাপারে। ও ব্যাটাই যে শ্রীমৎ স্বামী বটেশ্বরানন্দ অবধূত হয়ে এই বটতলায় বসে আছে প্রথমে বুঝতে পারি নি। রন্তু একটু আগে ফোনে মজা দেখতে এখানে আসার কথা বলতেই বুঝলাম কাবাব ম্যে কুছ হাড্ডি হ্যায়।’ বলেই এগিয়ে গেলেন তিন মূর্তির দিকে। ওর হাতের ইঙ্গিতে বাইরের তিনটে লোক দৌড়ে এসে বটেশ্বরানন্দ, বেঁটে ও লম্বুর হাতে হাতকড়া পরিয়ে দিলো।

এর মধ্যে সিরাজ গাছ থেকে নেমে হাসতে হাসতে ওই সাপটাকে কোলে টেনে নিলো।
‘আয়রে সুলতান, শেষ খেলা তো তুই-ই দেখালি - না হলে লম্বুকে গাছ থেকে নামানো মুস্কিল হতো - আজ তোর জন্য দুটো বড় ইঁদুর রেখেছি। দাদাভাইরা বুদ্ধিটা কিন্তু খুব ভালো দিয়েছো।’

রন্তুরা সুলতানের গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করতেই মায়েরা ভয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন। সিরাজ হেসে বললো,
‘ভয় পাবেন না মা-জীরা - সুলতান আমার পোশা অজগর - কাউকে কিচ্ছু বলে না।’

নিবারণ কাকু এগিয়ে এলেন,
‘হুঁ, প্ল্যানটা তো তোরা ভালোই বানিয়েছিস দেখছি - নাটক জমেওছিলো ভালো তবে এর মধ্যে মহাদেবের তাণ্ডব নৃত্যটা কি ভাবে হলো?’

রন্তু মুচকি হাসলো,
‘বটেশ্বরানন্দের দাড়ি আর পরচুলা জানালায় ঝুলতে দেখে আইডিয়াটা মাথায় এসেছিলো। বাড়ির কাজের মাসিকে বলে এক ছোট শিশি অব্যর্থ দাওয়াই জোগাড় করেছিলাম গতকাল। এখানে আসার আগে উনি যখন গঞ্জিকা সেবন করে উচ্চমার্গে ঘোরা ফেরা করছিলেন তখন জানালায় ঝোলানো ওর পরচুলা আর দাড়িতে সেটা ঢেলে দিয়ে আসি। সেই জন্যই আপনাকে ফোনে নাচ দেখার নিমন্ত্রণ জানাই।’

সন্তু ও অন্তু অবাক হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে প্রায় এক সাথেই জিজ্ঞেস করলো,
‘সেই অব্যর্থ দাওয়াইটা কি রে?’
রন্তু খুব গম্ভীর মুখ করে উত্তর দিলো,
‘ছারপোকা।’

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা