সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
বিচিত্র বার্তালাপ

এবারের পুজো নিয়ে দীপদের ব্যস্ততার আর শেষ নেই। পঞ্চাশ বছরের পুজো বলে কথা! এমনিতেই এপাড়ার পুজোতে ছোটোদের ইনভল্ভমেন্ট ভালোই থাকে, এবার তো আরো বেশী। আস্ত একটা স্বেচ্ছাসেবকদের টিমই তৈরী হয়েছে ছোটোদের নিয়ে। দর্শনার্থীদের প্রয়োজনে জল দেওয়া, কেউ দাঁড়াতে না পারলে চেয়ার এগিয়ে দেওয়া, অঞ্জলিত সময়ে ফুল বেলপাতা বিতরণ করা – কাজ কি কম! আর দীপের মতো যারা একটু বড়ো মানে ক্লাস নাইন টেনে পড়ে তাদের তো আবার এই কুঁচোগুলোকে সামলানই একটা বাড়তি কাজ। সব মিলিয়ে ওদের ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে। পুজোও তো রায় দোরগোড়ায়।

এছাড়াও পুজোতে আরো দুজনকে সামলানোর ব্যাপারও আছে। সেটা অবশ্য শুধু ছোটোদের দায়িত্ব নয়, বড়োদেরও, মানে যে যখন সামনে থাকবে তাকেই সামাল দিতে হবে। যতই হোক পুজো প্যাণ্ডেল বলে কথা, বাইরের লোকজন ভর্তি থাকবে, পাড়ারও তো একটা প্রেস্টিজ আছে।

ব্যাপারটা একটু খুলেই বলা যাক। যে দুজনের কথা বলা হচ্ছে তাঁরা হলেন উষারঞ্জনবাবু এবং কমলকৃষ্ণবাবু। এর মধ্যে উষারঞ্জনবাবু দীপদের পাড়ার পুরোনো বাসিন্দা। কয়েক বছর হল রিটায়ার করেছেন। গোলমাল বাধল কমলকৃষ্ণবাবু মাস ছয়েক আগে এখানে নতুন ফ্ল্যাট কিনে আসার পর। দুজনের পরিচয় হওয়ার পর কি এমন ঘটনা ঘটল কেউ জানে না, দেখা গেল দুজনে মুখোমুখি হলে কথা তো বলছেন কিন্ত সে একেবারেই ট্যারাবেঁকা কথাবার্তা।

এই সেদিনের কথাই ধরুন না। বাড়ি থেকে বেরিয়ে উষারঞ্জনবাবু সবে চৌমাথার কাছাকাছি পৌঁছেছেন এমন সময় কমলকৃষ্ণবাবুর সঙ্গে দেখা।

‘কি বেড়াতে বেরিয়েছেন বুঝি?’ কমলকৃষ্ণবাবু জিজ্ঞেস করলেন।
‘বেরিয়েছি যে সে তো দেখতেই পাচ্ছেন। ঘরের ভেতর যে নেই তাতো বোঝা উচিত,’ বলেই আর না দাঁড়িয়ে উষারঞ্জনবাবু হনহন এগিয়ে যেতে চাইলেন।

কিন্তু কমলকৃষ্ণবাবু যেতে দিলে তো!

‘ঘরে যে নেই তা দেখেই তো জিজ্ঞেস করলাম বেড়াতে বেরিয়েছেন নাকি। ঘরের ভেতর যে কেউ বেড়ায় না তাতো জানিই। আবার ঘরের বাইরে বেরোন মানেও যে বেড়াতে বেরোনো তাও নয়। দোকানেও তো যেতে পারেন।’
‘তাতো পারিই। যেখানে খুশী যেতে পারি। কিন্তু আপনাকে বলব কেন?’ উষারঞ্জনবাবু চলে গেলেন।

কমলকৃষ্ণবাবুর সঙ্গে ওনার প্রতিবেশী সোমেশ ছিলেন, বয়েসে ওনার চেয়ে অনেকটাই ছোটো। উষারঞ্জনবাবুর এ হেন উত্তর শোনার পর উনি আড়চোখে সোমেশকে দেখলেন। দেখলেন সোমেশ আকাশের তারা দর্শনে ব্যস্ত, যেন কিছুই শোনেন নি। আসলে এই দুই ব্যক্তি মুখোমুখি হলে আশেপাশে অন্য কেউ থাকলে তাঁরা চাঁদ, তারা, মেঘ নিদেনপক্ষে রাস্তার গাড়ি চলাচল গভীর মনোযোগ সহকারে দেখেন কিন্তু এই দুজনের কথোপকথন শুনেও না শোনার চেষ্টা করেন। কি যে হয় এই দুজনের দেখা হলে! কথা না বলেও ছাড়বেন না, অথচ বলবেন এরকম তির্যক ভাবে।

পাড়ার লোক মজাও পায়। কিন্তু আজ অবধি কেউ জানতে পারে নি এর কি কারণ। ছোটো ছেলেপিলেরা তো ইচ্ছে করেই দুজনকে মুখোমুখি করানোর জন্যে তক্কে তক্কে থাকে। মজার ব্যাপার দুজনের স্ত্রীরা কিন্তু একে অপরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। পাড়ার মহিলামহলের কেউ কেউ তাঁদের সোজাসুজি নয়, ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করেছিল এই ব্যাপারে কিন্তু দুজনেই কায়দা করে এড়িয়ে গেছেন। ফলে সবাই যে তিমিরে সেই তিমিরেই।

কিছুদিন আগে পাড়ার পুজোর মিটিং এ যা কাণ্ড হল! পাড়ার প্রায় সবাই আস্তে আস্তে আসছেন। উষারঞ্জনবাবু আর কমলকৃষ্ণবাবুও এসেছেন। দুজনে বসেছেন একদম মুখোমুখি। এটা হয়ে গেছে নাকি ইচ্ছে করে হওয়ান হয়েছে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। যাই হোক মিটিং শুরু হল, নানা জনে নানা ব্যাপারে তাঁদের মতামত দিতে থাকলেন।

এমন সময় উষারঞ্জনবাবু বললনে, ‘চাঁদা ছাড়াও আমি অন্যভাবে কিছু কন্ট্রিবিউট করতে চাই।’
অন্য কেউ কিছু বলার আগেই কমলকৃষ্ণবাবু বলে উঠলেন, ‘অন্যভাবে বললে তো হবে না, পরিষ্কারভাবে বলতে হবে কি করতে চান, কিভাবে করতে চান।’
উষারঞ্জনবাবুর বোধহয় এতক্ষণে খেয়াল হল যে কমলকৃষ্ণবাবুও বসে আছেন।
মুহূর্তের মধ্যে তাঁরও কথা বলার ভঙ্গি বদলে গেল, ‘অবশ্যই বলব, কিন্তু আপনাকে নয়, পুজো কমিটিকে। সব ডিটেলসেই বলব।’
দু একজন ব্যাপারটা মেটানোর চেষ্টা করলেন, ‘আরে ছাড়ুন না এসব। আপনি বলুন উষারঞ্জনবাবু কিভাবে কি করতে চান।’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ বলতে তো হবেই,’ কমলকৃষ্ণবাবুও বলে উঠলেন।

কিন্তু উষারঞ্জনবাবু আর মুখ খুললেন না। সাফ জানিয়ে দিলেন যে যা বলার তিনি পুজো কমিটিকে যথা সময়ে জানাবেন এবং একান্তে জানাবেন।

পুজো কমিটির লোকজন দেখল উষারঞ্জনবাবুর চাঁদা ছাড়াও আরো কিছু কন্ট্রিবিউট করার ইচ্ছে আছে, ভালোই। এখনই এখানে বলার জন্যে বেশী জোরাজুরি করলে হিতে বিপরীতও হতে পারে। বলা যায় না বিগড়ে গেলেন, আর কিছু দিতে রাজী হলেন না। তার থেকে ব্যাপারটাকে এখন থামান যাক। যেমন ভাবা তেমন কাজ। কয়েকজন মিলে উষারঞ্জনবাবুকে আশ্বস্ত করলেন যে এখনই কিছু বলতে হবে না, পরে বললেও হবে। এতে উষারঞ্জনবাবুর মুখে বিজয়ীর চওড়া হাসি ফুটল আর কমলকৃষ্ণবাবু বিলক্ষণ চটলেন।

উষারঞ্জনবাবু কিন্তু পুজো কমিটিকে নিরাশ করেননি। একদিন রাত আটটা সাড়ে আটটা নাগাদ সোজা পুজো কমিটির প্রেসিডেন্টের বাড়ি গিয়ে উপস্থিত। জানালের যে তিনি মহাষ্টমীর পংক্তি ভোজনের খরচ বহন করতে ইচ্ছুক কিন্তু এক শর্তে – একথা কেউ যেন জানতে না পারে।

প্রেসিডেন্ট তো শুনে অবাক। লোকে একটা কিছু দিলেই ঘটা করে দশজনকে ডেকে বলে বেড়ায় আর ইনি একদিনের পংক্তি ভোজনের পুরো খরচ দিতে চাইছেন অথচ কাউকে জানাতে চাননা! সত্যিই অদ্ভুত! কিন্তু মুখে তো আর এসব প্রকাশ করা যায় না।

প্রেসিডেন্ট তাই আকর্ণ হেসে বললেন, ‘এ আর এমন কি কথা! আপনি এতটা করবেন আর আমি এটুকু পারব না? আপনি যা চাইছেন তাই হবে, নিশ্চিন্ত থাকুন।’

ষ্টমীর পংক্তি ভোজনের খরচের একটা আনুমানিক হিসেব নিয়ে উষারঞ্জনবাবু চলে গেলেন, বলে গেলেন যে যথাসময়ে তিনি নিজে এসে টাকা দিয়ে যাবেন।

ইতিমধ্যে অনেকেই জানতে চেষ্টা করেছে উষারঞ্জনবাবু কি কন্ট্রিবিউট করতে চান, কমলকৃষ্ণবাবু তো বটেই কিন্তু কেউই জানতে পারেন নি। প্রেসিডেন্ট দেখলেন এত সহজে একদিনের খাওয়ানোর খরচা উঠে যাচ্ছে তাই তিনিও স্পিকটি নট। অতএব রহস্য রহস্যই রইল।

অদিতি সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। কর্মসূত্রে আরব দুনিয়ায় বসবাসের অভিজ্ঞতাও আছে। বই পড়তে ভালোবাসেন। ভ্রমণ,ছবি তোলা,এম্ব্রয়ডারির পাশাপাশি লেখালিখিতেও সমান উৎসাহী। নানান ওয়েব ম্যাগাজিন ও পত্রপত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা