সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
বিচিত্র বার্তালাপ

পুজো এসে গেল। সবাই মহানন্দে পুজোতে মেতে গেল। বাদ গেলেন না উষারঞ্জনবাবু আর কমলকৃষ্ণবাবুও। শুধু পুজো বলে আগে থেকেই সবাইকে সাবধান করে দেওয়া হয়েছে যে ওনারা যেন সামনাসামনি না পড়ে যান। দৈবাৎ পড়ে গেলেও ওনাদের ওই কথোপকথন যেন কিছুতেই না শুরু হয়, তার আগেই ব্যাপারটাকে সামলাতে হবে। নয়তো বেপাড়ার লোকজনের কাছে মানসম্মান বলে আর কিছু থাকবে না। কিন্তু এত সাবধানতা সত্ত্বেও শেষ রক্ষা হল না, দুজনে মুখোমুখি হয়েই গেলেন।

মহাষ্টমীর পংক্তি ভোজনের ফার্স্ট ব্যাচ সবে খেয়ে উঠেছে। কমলকৃষ্ণবাবু স্ত্রীর সঙ্গে খাওয়াদাওয়া সেরে বেরোতে যাচ্ছেন এমন সময় উষারঞ্জনবাবুর সঙ্গে দেখা।

‘কি কেমন খেলেন? রান্নাবান্না সব ঠিকঠাক হয়েছিল তো? আপনার তো এখানে এটাই প্রথম পুজো,’ জিজ্ঞেস করলেন উষারঞ্জনবাবু।
তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে কমলকৃষ্ণবাবু উত্তর দিলেন, ‘দারুন, দারুন! অনেকদিন পরে এরকম বেগুনভাজা খেলাম। ছোটোবেলার কথা মনে পড়ে গেল। চাটনীটাও খুব ভালো হয়েছিল। পুজো কমিটির ব্যবস্থাপনাও খুব ভালো। রান্নাবান্না একেবারে ফার্স্ট ক্লাস।’
উষারঞ্জনবাবু হোহো করে হেসে উঠলেন। কমলকৃষ্ণবাবু একটু থমকালেন, তারপরেই হনহন করে চলে গেলেন।

দীপরা আশেপাশেই ছিল, তারা তো অবাক। আজ যে কমলজেঠু একদম ঠিকঠাক উত্তর দিল! দীপদের কথা তো প্রথমে বড়োরা কেউ বিশ্বাসই করতে চাই নি। কিন্তু সন্ধ্যেবেলা থেকে দেখা গেল উষারঞ্জনবাবু আর কমলকৃষ্ণবাবু দিব্যি স্বাভাবিকভাবে কথা বলছেন, বরং দুজনেই যেন বেশ অন্তরঙ্গ। রহস্য জানতে ছোট বড়ো সবাই উদগ্রীব কিন্তু ওনারা দুজন খালি মিটিমিটি হাসেন, কিছুই বলেন না।

শেষে উষারঞ্জনবাবু বললেন, ‘পুজোটা মিটুক, বিজয়া সম্মিলনীতে নাহয় বলব।’

একাদশীর দিন বিজয়া সম্মিলনীতে সবাই উষারঞ্জনবাবু আর কমলকৃষ্ণবাবুকে ঘিরে বসেছে। এবারের বিজয়া সম্মিলনীর যেন এটাই প্রধাণ আকর্ষণ।

উষারঞ্জনবাবু প্লেট থেকে একটা সন্দেশ তুলে মিখে পুরে বললেন, ‘এটা আসলে আমাদের ছোটোবেলার একটা মজা ছিল, খেলাও বলতে পারো।’
‘ছোটোবেলার? আপনারা দুজন দুজনকে ছোটোবেলা থেকে চেনেন?’ সবাই অবাক।
‘আমরা ছোটোবেলার বন্ধু। এক স্কুলে এক ক্লাসে পরেছি ক্লাস টেন অবধি। তারপর অনেককাল ছাড়াছাড়ি, দুজন দুজায়গায়। বছর দুয়েক আগে স্কুলে রিইউনিয়নে আবার দেখা হয়ে গেল। দুজনেই ঠিক করলাম এক জায়গায় থাকব। আমি এখানে আসার পর আবার ছোটোবেলার খেলাটা খেলতে শুরু করলাম,’ বললেন কমলকৃষ্ণবাবু।
‘খেলা?’
হ্যাঁ খেলা। ছোটোবেলায় আমরা কেউ কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করলে ঠিকঠাক উত্তর দিতাম না। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে অন্য কথা বলতাম। অন্যজন চেষ্টা করত ঠিক উত্তরটা বার করার। ঠিক উত্তর বার করতে পারলে তার জিত নাহলে হার। স্কুলে শেষবার আমিই জিতেছিলাম……….’
‘কিন্তু এবার আমি জিতেছি!’ ছেলেমানুষের মতো চেঁচিয়ে উঠলেন উষারঞ্জনবাবু, ‘যা হারান হারিয়েছি না!’
উপস্থিত সকলের কৌতূহলও ততক্ষণে বেড়ে গেছে, ‘কি করে হারালেন?’
‘ওই যে অষ্টমীর দিন জিজ্ঞেস করলাম কেমন খাওয়াদাওয়া হল। খেয়েদেয়ে এত তৃপ্তি হয়েছিল যে খেলার কথা আর মনেই ছিল না। দিল ঠিকঠাক উত্তর দিয়ে। আরো কিছু হয়তো বলত কিন্তু আমার হাসি শুনে চুপ করে গেল। তখন বাবুর খেয়াল হল কি সর্বনাশ হয়েছে! কিন্তু যা হওয়ার তাতো হয়ে গেছে, আমি জিতে গেছি।’
‘যাক বাবা সব মিটে গেছে। আপনাদের খেলা এখানেই শেষ তো?’
‘দেখা যাক, হয়তো আবার কিছু করা যেতে পারে,’ বললেন কমলকৃষ্ণবাবু।
‘আবার!’ সবাই সমস্বরে বলে উঠল।

অদিতি সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। কর্মসূত্রে আরব দুনিয়ায় বসবাসের অভিজ্ঞতাও আছে। বই পড়তে ভালোবাসেন। ভ্রমণ,ছবি তোলা,এম্ব্রয়ডারির পাশাপাশি লেখালিখিতেও সমান উৎসাহী। নানান ওয়েব ম্যাগাজিন ও পত্রপত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা