সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
পুপাইয়ের গল্প লেখা

সবার মনোযোগ না থাকলে তার লেখাটা বাতুলতা, পড়াটা অনাবশ্যক। পুপাই চারদিক নিরীক্ষণ করে যখন বুঝলো যে সবাই মনযোগী, এমনকি তার পাঁচ বছরের ছোট বোনটাও যখন এক হাতে তার চুল ধরে আর আরেকহাতে চারটে আঙুল মুখে পুরে গভীর মনযোগ সহকারে তার দিকে তাকিয়ে আছে, পুপাই বুঝলো, সময় এখন প্রশস্ত। সে পাতা উল্টে, গলা খাঁকারি দিয়ে গল্প পড়তে শুরু করলো, “এক ছিলো কচ্ছপ। তার নাম কচ্ছপ। কচ্ছপ থাকতো তার মা, বাবা, আর বোনের সঙ্গে সমুদ্রের ধারে। বালির মধ্যে গর্ত্ত খুঁড়ে, একটা গর্ত্তের মধ্যে। মাঝেমাঝে তার যখন খিদে পায়, সে বেড়িয়ে আসে, খায়, আকাশের দিকে চায়, তারপর ঢুকে পড়ে গর্ত্তে আবার। কচ্ছপের পৃথিবীতে থেকে থেকে ঘেন্না ধরে গেছে। সে তাই চাঁদে যেতে চায়। শুনেছে চাঁদে গেলে তার ওজন কমে যাবে – আর যা খুশী করতে পারবে। কিন্তু আজ বাইরে এসে দেখে, আকাশের মুখ ভার। বৃষ্টি নামবে নামবে করছে। চাঁদের দেখা আর মেলেনি। তাই কচ্ছপের মন ভাল নয়। তার স্বপ্ন দেখার ব্যাঘাত ঘটেছে আজ। কচ্ছপ শুনেছে চাঁদের পাহাড়ের কথা। সেই পাহাড়ে এখনোও কোনও কচ্ছপ থাকেনি। চাঁদের পাহাড়ের গল্প শুনে তার ভারী লোভ সেই পাহাড় দেখার। আর তাছাড়া, সে চাঁদে গেলে, সেখানে কোনও কচ্ছপের এই প্রথম যাওয়া হবে। মানুষের মধ্যে চাঁদে প্রথম গেছিলেন নীল আর্মষ্ট্রং এবং এডুইন অল্ড্রিন্। আ্যপেলো ১১ তে, উনিশশো উনসত্তরে। সেদিন তাঁরা প্রায় তিন ঘন্টা ধরে হেঁটেছিলেন চাঁদে। সেসময় রিচার্ড নিক্সন ছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। নীল আর্মষ্ট্রং ওহায়োর ওয়াপাকোনেটাতে উনিশশো ত্রিশ সালে জন্মেছিলেন। উনি কোরিয়ান যুদ্ধে যোগদানের পর, কলেজের পড়া শেষ করে এখনকার নাসাতে যোগদান করেন। নীল আর্মষ্ট্রং এর খুব ছোট থেকেই উড়োজাহাজ সম্পর্কে কৌতুহল ছিল। তিনি মাত্র ষোল বছর বয়সেই ছাত্র পাইলটের লাইসেন্স অর্জন করেছিলেন। রাত্রি দশটা ছাপান্নতে আর্মষ্ট্রং চাঁদে পদার্পণ করে বলেছিলেন, ‘মানুষের জন্য ছোট পদক্ষেপ। কিন্তু সমগ্র মানুষ প্রজাতির জন্য বিশাল উত্তরণ।’ এই সমগ্র মানুষ প্রজাতির উদ্ভাবন হোমোস্যাপিয়েনস্ থেকে, যার সূচনা আফ্রিকা মহাদেশ থেকে। কচ্ছপ চুক্ চুক্ করে এসবই ভাবছিল। মানুষের আগমন দুশো হাজার বছর আগে। কচ্ছপের তিনশো পঞ্চাশ মিলিয়ন বছর আগে। অথচ মানুষেরা চাঁদে চলে গেলো। আর কচ্ছপেরা এই পৃথিবীর মাটিতেই খেয়ে, ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিল জীবন। এখনও মাটিতে গর্ত খুঁড়ে তাকে থাকতে হয়। এসব ভাবতে ভাবতে কচ্ছপ আবারোও আকাশের দিকে তাকিয়ে তার বাসাতে ঢুকে গেলো একরাশ বিরক্তি নিয়ে। মাটির নীচে গিয়ে মনে খুব দুঃখবোধ নিয়ে সে তার খোলশের ভিতরে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়লো। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সে চাঁদের দেশের চাঁদের পাহাড়ে চলে গেল।”

পুপাইয়ের গল্প লেখা

পুপাই তার গল্প শেষ করে চশমাটাকে আলতো টোকা মেরে নাকের ডগায় তুলে সবার দিকে গর্বিত মুখে তাকালো। মন তার প্রশংসাপ্রাপ্তির আশায় বড়োই বিচলিত। মাসি, মেসো, কাকু, কাকি, পিসি, পিসে সবাই সমস্বরে বলে উঠলেন, “বাহ্। পুপাইসোনা কি দারুণ হয়েছে তোমার লেখা!” মনে মনে তারা যখন গল্পের সারমর্ম বোঝার চেষ্টা করছিলেন, তখন বাবা হঠাৎ গলা খাঁকারি দিয়ে মার উদ্দেশ্য বললেন, “ভাত বাড়ো। আমি স্নানে চললাম। অফিসে আমার আজ আবার জরুরী কাজ আছে।“ মুখে তাঁর প্রশান্তি। মনে তাঁর শান্তি। আপদ শেষ। এবারে তাঁর যত্ন আবারও খানিকটা হবে। মা অবশ্য দমবার পাত্র নন একেবারেই। মা বললেন, “পুপাই সোনা, খাবে চলো।” এ তো আর যাহোক তাহোক গল্প নয়। এই গল্পে মাটি আছে, আকাশ আছে, চাঁদ আছে, দেশ আছে, আমেরিকা আছে, আফ্রিকাও আছে। আবার মানুষও আছে, কচ্ছপ আছে, নীল আর্মষ্ট্রংও আছেন। মা মনে মনে ভাবলেন, এতো কিছু নিয়ে গবেষণা করে লেখা তো আর সোজা, সরল কাজ নয়। মা তাই আলগোছে, সস্নেহে পুপাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “কি খাবে পুপাইসোনা? তোমার জন্য খানচারেক রসগোল্লা, দুখানা সন্দেশ, তিনখানা জিবেগজা, লুচি আর হালুয়া রেখেছি। চলো সোনা খাবে চলো।” পুপাইয়ের মুখে বিশ্বজয়ীর হাসি। মার পিছু পিছু সে গর্বিত পদক্ষেপে চলে যেতে যেতে তার বোন তুতাইয়ের উদ্দেশ্যে বু্ড়ো আঙুল আর মধ্যমাতে টুসকি দেওয়ার মত একটা ভঙ্গী করলো। দুভাইবোনের এই সাঙ্কেতিক আলাপন আর কেউ না দেখলেও, পুপাইয়ের বোন তুতাই বাঁ হাতের তর্জনীতে চুল পাকিয়ে, ডান হাতের তর্জনী আর মধ্যমা মুখে ঢুকিয়ে তার গোলাপী ফ্রকে ঝাপটা মেরে শুধু বললো, “ফুঃ।”

ঊর্ম্মি ঘোষদস্তিদার (দত্তগুপ্ত) অঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা করে এখন ব্রুকলিন্, নিউইয়র্কের একটা কলেজে অঙ্ক পড়ান এবং অঙ্ক নিয়ে গবেষণা করেন। তাঁর কাজের অবসরে সময় পেলে অথবা সাব্ওয়ে বা বাসে করে কাজে যাওয়ার পথে তিনি লিখতে বা আকঁতে ভালোবাসেন। তাঁর স্বামী অভিজিত আর দুই ছেলেমেয়ে – সায়ম্ আর ইমনকে নিয়ে তিনি আমেরিকার নিউজার্সিতে থাকেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা