সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
বীর বালক

প্রতি বারের মত এবারও পিকনিকে যাবার ব্যবস্থা হল। যদিও সামান্য গরম পড়ে গেছে,ডিসেম্বর,জানুয়ারি মাস পার হয়ে গেছে। দেরী হলেও বছরে অন্তত একটা পিকনিক না হলে জমে না। মাত্র তিন পরিবার মিলেই ঠিক হল যাওয়া। প্রত্যেক বারের মত অত দশ পরিবার মিলে হই হল্লা করে পিকনিকে যাওয়ার ব্যাপারের মধ্যে মজাই আলাদা। কিন্তু তা এবার আর হল না। তবু পিকনিক তো পিকনিকই হয়,তিন পরিবারের তের চোদ্দ জন মিলে একেবারে খারাপ জমবে না।

পিকনিকের নামে মিন্টুর খুব আনন্দ। বলতে গেলে ওর তাগিদেই এটা হল। ও বাবা,মাকে অনেক বার বলেছে,‘বাবা ! এবার পিকনিকে কবে যাবে ?’
বাবা বললেন,‘এবার বোধ হয় আর যাওয়া হবে না।’
পাশে দাঁড়ানো মার দিকে তাকিয়ে মিন্টু কান্না কান্না সুরে বলে উঠলো,‘দেখো না মা,বাবা বলছে এবার পিকনিকে যাওয়া হবে না।’
--‘থাক না এবার,এবার তো আমরা কোলকাতা ঘুরে এলাম! অনেকেই তো সে সময় পিকনিক করে নিয়েছে’,মা বলে উঠলেন।
--‘কিন্তু দাস কাকুরাও তো যায় নি’,মিন্টু করুণ মুখ করে বলে ওঠে।
এবার মিন্টুর মা মিন্টুর বাবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,‘আচ্ছা চল না গো,আমরা আর দাস বাবুরা দুই পরিবার মিলে পিকনিক করে আসি।’
--‘দাস বাবুরা যাবেন কিনা কি করে বলব !’ মিন্টুর বাবা,মলয়বাবু বললেন।

শেষে দুইয়ের জাগায় তিন পরিবার জুটে গেল। পাড়ায় ক’মাস আগে মণ্ডল পরিবারের লোকেরা এসেছেন। ওরাও জানতে পেরে যোগ দিলেন সবার সঙ্গে। এ ভাবে তিন পরিবার হল। সদস্য সংখ্যা মোট চোদ্দ জন। এর মধ্য ছোট বাচ্চা জুটল পাঁচজন।

মিন্টুর আনন্দ আর দেখে কে ! মোবাইল নিয়ে দাস কাকুর মেয়ে জুনিকে সব কথা জানালো। মণ্ডল বাড়ির দুই ছেলে--কদম আর সুমন। ওদের সঙ্গেও ইতিমধ্যে ভালো ভাব জমে গেছে ওর।

ঠিক হল নদীর পারে পিকনিক হবে। ভিলাই থেকে দশ বার কিলো মিটার দূরে খারুন নদী--তার পারেই হবে ওদের পিকনিক স্পট।

নদী খরস্রোতা--বেশী চওড়া না। কোথাও অল্প,কোথাও বেশী, আবার কথাও বেশ কম জল। তবে কোন্ জাগায় জল বেশী বা কম তা জানার উপায় নেই। মাঝে মধ্যে ঘূর্ণিও আছে--পাঁকের জাগায় দেখা যায় জল কেমন ঘুরপাক খাচ্ছে !

পাহাড়ি নদী। যদি বর্ষা হল তো জল বেড়ে যায়। স্থানীয় বর্ষায় অনেক সময় জলস্তর ফুলে ফেঁপে ওঠে। আবার ক'দিনের খরা রোদেই জল অনেক শুকিয়ে যায়। নদীর মাঝখানে মাঝখানে কথাও কোথাও পাথর মাথা চাড়া দিয়ে দৃশ্যমান হয়ে আছে। স্থানীয় লোকেরা হাঁটু জলের খানিকটা বেশী হলেও হেঁটে এপার ওপার হয়ে যায়। ওদের হিসাব থাকে কোথায় জল বেশী আর কোথায় কম।

দুটো গাড়ি ঠিক হল। একটা টাটা সুমো আর একটা সফারী। চোদ্দ জন লোকের বসার জাগা ভালো ভাবে হয়ে গেল।

সকাল থেকেই মিন্টুদের বাড়ি কদম,সুমন,জুনি,জুনির বোন অলিভিয়া,এসে হাজির। আসল আনন্দ তো ছোটদেরই।
কদম বলল,‘নদীতে মাছ ধরা যাবে ?’
মিন্টু বলল,‘আমাদের ছিপ কোথায় যে মাছ ধরবো ?’
সুমন খুব ছোট। এই আট বছরের হবে,ও বলে উঠলো,‘মিন্টু দা,গামছা দিয়ে মাছ ধরা যাবে না ?’
মিন্টু একটু ভেবে বলল,‘হ্যাঁ,তা যাবে।’
কদম বলল,‘সে তো ছোট্ট মাছ !’

কিন্তু এ প্রসঙ্গ চলতে থাকা কালীনই নিষেধ আজ্ঞা জারি হয়ে গেল,মিন্টুর বাবা,মলয় বাবু বলে উঠলেন,‘ছোটরা কিন্তু একা একা কেউ নদীর ধারে যাবে না !’ 
দাস বাবু বললেন,‘তোমরা কেউ সাঁতার জানো না,তাই নদীর কিনারায় কেউ যাবে না,মনে থাকে যেন !’

বাচ্চারা সবাই একটু দমে গেল। কিন্তু পিকনিকে এসে দমে গেলে চলবে কেন ! একটু দূর থেকে নদী তো দেখা যাবেই। নদীর পারের নৌকো,জেলেদের মাছ ধরা,এ সব দেখার আনন্দ তো থাকবেই!
জুনি বলল,‘আমরা নদীর বেশী কিনারে যাব না,পারে থেকেই খেলব।’
--‘কি খেলবি ?’ মিন্টু বলে।
--‘কেন,ছোঁয়াছুঁয়ি খেলব’,জুনি বলে।
জল্পনা কল্পনা করতে করতে সবাই মিলে পৌঁছে গেল পিকনিক স্পটে।

সবাই তাড়াতাড়ি হুড়মুড় করে গাড়ি থেকে নেমে গেল। সবাই চারিদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। জুনির বোন সবচেয়ে ছোট,এই পাঁচ বছরে পড়ল,চারিদিক দেখে,আনন্দের আবহাওয়া যে বেশ মজার হবে,সেটা সেও বুঝতে পারল,ও হাত তালি দিয়ে বলে উঠলো,‘বা বা,কি মজা! কি মজা ! !’
--‘কিসের মজা রে?’ মিন্টুর মা বলে উঠলেন।
সঙ্গে সঙ্গে অলিভিয়া আবার হাত তালি দিয়ে বলে উঠলো,‘খেলার মজা,খেলার মজা !’ 

সবাই গিয়ে খারুন নদীর পাশে গিয়ে পৌঁছল। এবার গাছতলা দেখে,সমতল জাগা দেখে বসার জাগা পাতা হল,রান্নাবান্নার জাগা তার পাশেই করা হল। শুরুতেই পাউরুটি,ডিম,কলার ব্যবস্থা ছিল। এ সব জল খাবার খেয়ে তারপর এক কাপ চা না হলেই নয়! বাচ্চারা জল খাবার খেয়ে এদিক ওদিক ঘুরতে লেগে গেল। চা খাওয়া,ওদের অভ্যাস নেই।

কদমের মা বললেন,‘বাচ্চারা,তোমরা কেউ দূরে যাবে না,সবাই এক সঙ্গে থাকবে !’ 
বাচ্চারা,মাথা হেলিয়ে,‘হ্যাঁ,’বলে আশপাশ দেখতে বেরিয়ে গেল। ঘুরতে ঘুরতে ওরা এক সময় নদীর পাড়ে এলো। ওরা দেখল, সুন্দর এক নদী! আপন বেগে কলকল শব্দ করে বয়ে চলেছে। স্বচ্ছ তার জল।
--‘ওই দেখ দুটো নৌকো !’ নৌকোর দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে মিন্টু বলে উঠলো।
বাচ্চারা সবাই দেখল,সত্যি,নদীর পার ঘেঁষে দুটো নৌকো রয়েছে না!
জুনি বলল,‘কিন্তু ও গুলি তো জলে নেই! ডাঙার ওপরে উঠানো!’
সবাই ওরা লক্ষ্য করে দেখল,সত্যি তো একটা নৌকোও তো জলের ওপরে নেই! সব ডাঙার অনেকটা ওপরে। একটা নৌকো তো অনেক ভাঙাচোরা।
কদম ওদের মধ্যে একটু দুষ্ট প্রকৃতির,ও বলল,‘মিন্টু চল আমরা নৌকার কাছে যাই। দেখে আসি গিয়ে।’
জুনি বলল,‘না বাবা,বাবা বকবে।’
--‘আরে আমরা জলে তো নামছি না। নৌকার কাছে গিয়ে একটু দেখে চলে আসব’,কদম বলে।
শেষে ঠিক হল,না এখন না,খাওয়া দাওয়া শেষ হলে তখন একবার নদীর পার ঘুরে ফিরে দেখে যাবে সবাই।

তাপস কিরণ রায় অর্থশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন। স্কুলে শিক্ষকতা করেন বেশ কিছু বছর। পরে আয়কর বিভাগে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি মধ্য প্রদেশের জবলপুর শহরে বাস করেন। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালিখি করেন। ছোটদের এবং বড়দের জন্য লেখা তাঁর অনেকগুলি বই-ও প্রকাশিত হয়েছে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা