সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
অভিযান

"আমরা যাব এখানে" বলে স্যাম ম্যাপে একটা দ্বীপ দেখালো, সেটার নাম আমেরিকান সামোয়া, ভূগোলের ভাষায় বলতে গেলে জায়গাটা প্রাকৃতিক ভাবে পলিনেশিয়া,কিন্তু আমেরিকার দখলে, সম্ভবত এখনও নীরক্ষরেখার দক্ষিণে ওটাই আমেরিকার শেষ সীমানা। কাছেই আবার একই নামের আরেকটা স্বাধীন দ্বীপ রয়েছে।। আমি স্যামের কাছ থেকে ওখানে যাবার প্রস্তাব পেয়ে যখন সত্যিই খুব খুশি তখন স্যাম জানিয়ে দিল জায়গাটা খুব শান্তির নয়, নেটিভ পলিনেশিয়দের সাথে দ্বীপগুলোর দখল নিয়ে ফরাসী, ব্রিটীশ, আমেরিকান সকলে মিলে ঝামেলা চলছে সেখানে। যাই হোক হাওয়াই দ্বীপে দুদিন কাটিয়ে আমরা সামোয়াতে পৌঁছলাম।প্লেন থেকে দেখে মনে হচ্ছিল নীল সমুদ্রের বুকে ফুল ছড়িয়ে দিয়েছে কেউ, অসংখ্য ছোট ছোট দ্বীপ সেখানে।

দেবু একটু উস্ খুস্ করছিল, দাদু বলল, “কি বলবি বলে ফেল”,
সে বলল “বাবার আই ফোনটা এনে ম্যাপটা দেখে নিলে সুবিধা হোত না বুঝতে?”
দাদু বুক সেলফের ওপর রাখা পুরোনো গ্লোবটা দেখিয়ে বলল, “ সত্তর সালের গল্প যখন গ্লোবেই কাজ চালিয়ে নে”

সবাই মিলে জায়গাগুলোর অবস্থান একটু দেখে নিলে দাদু আবার শুরু করলেন-

সামোয়া পৌঁছে স্যাম ছোটছেলের মতো খুশী হয়ে উঠল, বেশ কিছু আত্মীয় বন্ধু আছে তার সেখানে, তাদের সাথে ওদের ভাষায় অনবরত বকে যাচ্ছিল সে, আমি যার বিন্দুবির্সগও বুঝছিলাম না। আমার সাথে অবশ্য ইংলিশেই কথা বলছিল সবাই। ওখানকার বেশিরভাগ মানুষ সমুদ্রে মাছ ধরে, ওখানে টুনা মাছ পাওয়াও যায় প্রচুর, আর সেগুল ক্যানে ভরার কাজ হয় । গোটা আমেরিকার টুনার চাহিদার একটা বড় অংশ মেটায় এই ছোট্ট দ্বীপগুলো। ঐ দ্বীপে একটা বড় বন্দর রয়েছে যার নাম পাগো পাগো, বিশ্বযুদ্ধের সময় যেটা আমেরিকার প্রচুর কাজে লেগেছিল, সেনা ঘাঁটি তখনও বহাল আছে, তাই মূল ভূখন্ড থেকে অত দূরে থাকলেও সামোয়া বেশ আধুনিক জায়গা। আর ভূস্বর্গ খেতাবটা আমাদের কাশ্মীর নিয়ে না নিলে প্রথম ঐ শব্দটাই মনে আসে জায়গাটা দেখে, পশ্চিমের লোকেরা বলেও ট্রপিক্যাল প্যারাডাইস।

যেদিন পৌঁছলাম সেদিন ওদের আতিথেয়তার বাড়াবাড়িতে কিছুই কাজ হল না স্যামের, দুপুরে আমি একটু ঘুমিয়ে পরেছিলাম একটা বিশ্রী স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেল, শুনলাম সামনের বারান্দায় স্যামের সাথে কয়েকজনের কথা কাটাকাটি হচ্ছে, দু একটা ইংলিশ শব্দের মধ্যে 'ডেথ' আর 'প্রহিবিটেড' কানে এল। ঝামেলা মিটলে ভয়ে ভয়ে জানতে চাইলাম কি হয়েছে, স্যাম জানাল এখান থেকে একটু দূরে একটা ছোট দ্বীপ আছে যেটা সে একটু এক্সপ্লোর করে দেখতে চায় কিছু ছবি আর তথ্য তার কাজে লাগতে পারে, তা এখানকার লোকজন তাকে ঐ দ্বীপে যেতে দিতে চাইছে না, ওটা নাকি অশুভ জায়গা, কেউ থাকে না, নামটাও নাকি 'মালিয়ু' যার অর্থ 'মৃত্যু'। যার বাড়ি উঠেছি সে স্যামের কাজিন, নাম ওহিয়া। সে আমাকে একা পেয়ে বলল ওই দ্বীপে বছর দশ আগে কজন মানুষ গিয়েছিল, তাদের মৃতদেহ নাকি একটা গর্তের মত জায়গায় পাওয়া যায়, কোনরকম আঘাতের চিহ্ন ছিল না যেন ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে কেউ। এই ঘটনার বহু আগে থেকেই অবশ্য ওই দ্বীপ সম্পর্কে নানা কথা চালু ছিল,মাছ ধরা বোট থেকে নানা ভয়ানক দৃশ্যও নাকি অনেকে দেখেছে ঔ দ্বীপে। তবে ওহিয়াদের মত যুবকদের মনে থাকার মত ওটাই শেষ ঘটনা। তার পর থেকে আর কেউ যাতে সেখানে না যায় সেটা দেখা হয়।

স্যামকে এবার একটু অন্যরকম প্ল্যান করতে হল, সে প্রথমেই আমাকে বলে নিল আমার এ ব্যাপারে কোনোরকম ভয়ডর থাকলে পিছিয়ে যেতে পারি, সেক্ষেত্রে সে একাই ঐ দ্বীপে যাবে, যেহেতু স্থানীয়দের মধ্যেও কেউ যাবে না। আমি তাকে আশ্বাস দিলাম আমার পিছিয়ে আসার কোনো প্রশ্নই নেই। সে মনে হল বেশ খুশী হয়েছে, তার মুখের রেখার নরনচরন বড্ড কম। স্যাম তার চেনা লোকজনদের জানাল সে আমাকে সামোয়া নিয়ে যাচ্ছে, মানে যেটা শুরুতে তোদের বলেছিলাম স্বাধীন দ্বীপরাষ্ট্র , সেই দেশে বিখ্যাত লেখক রবার্ট লুই স্টিভেনসনের সমাধী আছে, সেটা দেখাতে।

দাদুর শ্রোতার দল কলকল করে উঠল "উনি কি 'ট্রেজার আইল্যান্ড' এর লেখক " ?

অবশ্যই, তোরা নিশ্চই সবাই পড়েছিস, ছেলেবেলায় ট্রেজার আইল্যান্ড' পড়েনি এমন লোক মেলা ভার। যাহোক আমার নিজেরই জানা ছিলনা যে তিনি তাঁর জীবনের শেষ চার বছর সামোয়াতে কাটিয়েছিলেন। এই অভিজ্ঞতাও আমার সারা জীবনের মনে রাখার মত যেটা স্যামের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে এক্সট্রা পাওনা ।এই প্রসঙ্গে আমি পরে আসছি এখন গল্পে ফেরা যাক।

বহরমপুর মুরশিদাবাদে জন্ম ও বেড়ে ওঠা, প্রথম দিকের পড়াশোনা বিঞ্জান নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে, পরে তুলনামূলক সাহিত্যে বিষয় বদল শুধু ভালবাসা থেকে। বর্তমানে আমেরিকার বস্টন শহরে বসবাস। কবিতা আবৃত্তি , লেখা আর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়ানো শখ ।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা