সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

(৩)

বাড়ির দরজায় ঢুকতে ঢুকতে সারমেয় ধ্বনি কানে আসল রাতুলের। বাড়ির উঠানে একটা বড় গাড়ি দাড়িয়ে আছে। তার মানে কি বড় মানি এল। দ্রুত পা চালিয়ে ঘরে প্রবেশ রাতুলের। পিছনে স্কুলের ব্যাগ হাতে রাতুলের বাবা। প্রবেশদ্বার পার করতেই মা-এর কণ্ঠস্বর আর মাসির ফিসফিস কানে এল। কিন্তু সেই সব ধ্বনি ছাপিয়ে যাচ্ছিল গোল্ডির আওয়াজ। রাতুলের তক্ষুনি মনে পড়ল জেলির কথা। রাতুলের প্রায় দৌড়ে ঘরে ঢুকে দেখল গোল্ডি আকুইরিয়ামের সামনে দাড়িয়ে গলার বাগিয়ে হাকাচ্ছে। রাতুল পলকের মধ্যে দুটো হাত ছড়িয়ে রক্ষনাত্মক ভঙ্গিতে আকুইরিয়ামের সামনে দাড়িয়ে পড়ল।

“এই গোল্ডি যা, যা বলছি, বের এখান থেকে”।
“পাপা দেখ না গোল্ডি জেলিকে ভয় পাওয়াচ্ছে”।
ওপ্রান্ত থেকে কোন ইতিসূচক সাড়া এল না।
“যা গোল্ডি, যা”
এবার রাতুল সাহস করে গোল্ডির কলার ধরে ঘরের বাইরে নিয়ে আসল। সোফায় পা মেলে রাতুলের মা ও মাসি বসে গল্প করছে।
“বড় মানি তুমি গোল্ডিকে আর আনবে না, দেখ কি ভাবে জেলিকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে”।
বিস্ময়সূচক চিহ্ন নিয়ে রাতুলের মাসি তার বোনের দিকে তাকাল।
“আরে পল্লব ওকে একটা মাছ এনে দিয়েছে”
“ও আচ্ছা”
“ঠিক আছে বাবাই আমি গোল্ডিকে বকে দেব, ও এইরকম আর করবে না”।



(৪)

“এই তুই আমার পেন্সিলটা কেন ভাঙলি?”
“তুই আমার রাবারটা দেওয়ালে কেন ঘষলি?”
“বেশ করেছি”
“আমিও তাহলে বেশ করেছি”
“দাঁড়া আমি তাহলে মিসকে বলছি”

“কুন্তল, পারিজাত নিজের নিজের জায়গায় বস। বি কোয়াইট।"
“তো এই স্টোরির-র মরাল হল, কোন অ্যানিম্যালস্‌দের দের বন্ধ করে রাখা উচিত না। যেমন আমরা বার্ডস কেইজ-এ বন্ধ করে রাখি”।
রাতুল খুব সুন্দর করে নিজের নামটা কপির উপর লিখছিল, অন্যমনস্ক হয়ে। হঠাৎ করে তার কান খাড়া হয়ে গেল।
“কিন্তু সেটা আমাদের করা উচিত না. “উই শ্যুড নট কেইজ এনি অ্যানিম্যালস্‌।”
রাতুলের সামনে জেলির ছোট্ট পরিসরটা ভেসে উঠল।
আচ্ছা আন্টি বলছে, কোন অ্যানিম্যালস্‌কে কে আটকে রাখতে না। আচ্ছা জেলি তো ফিশ, জেলি কি তাহলে অ্যানিম্যাল? সেদিন যে টিভিতে দেখচ্ছিল, মাছগুলো কি সুন্দর বড় সমুদ্রে খেলে বেরাচ্ছিল? কই অ্যাকোয়ারিয়ামে তো মাছ দেখাল না। তাহলে কি আমিও জেলিকে আটকে রেখেছি? ওই যে আন্টি যে স্টোরিটা বলেছিল সেই কিং-এর মতো? কিন্তু জেলি আমার বন্ধু।

“কিরে রাতুল টিফিন-এ কি এনেছিস?”
রাতুল এতক্ষণ জানলার দিকে তাকিয়ে বাইরের বড় গাছটা দেখছিল। কিন্তু ঠিক তা দেখছিল না। অনিমেষ দু’হাতে টিফিন বক্সটা ধরে রাতুলের সামনে দাড়িয়ে আছে।
“দাঁড়া দেখছি” বলে রাতুল নিজের ব্যাগ গহ্বরে হাত ঢোকাল।
“ইস... মা আবার সাদা সাদা স্যান্ডউইচ দিয়েছে, ছ্যাঃ নে তুই খেয়ে নে”।
“কেন তুই খাবি না?”
“না, এই নে”।
“এই নে, আমার মা বেগুন ভাজা আর রুটি দিয়েছে। তুই এইটা খা”।
রাতুল একবার টিফিন বক্স টা দেখল, তারপর আর সেদিকে আর হাত বাড়াল না।


অনিমেষ যেমন আমার বন্ধু, জেলি বড় সমুদ্রে থাকলে তারও অনিমেষ-এর মতো অনেক বন্ধু হত। তাহলে ও ঠিক ওই স্বপ্নের মতো কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে ওদের সাথে নাচত।

(৫)

“রাতুল তুমি এখানে নামছ?”
“হ্যাঁ আমি এখান থেকেই চলে যাব”।
“কিন্তু তোমার বাড়ি তো একটু এগিয়ে”।
“মা আজ বাড়ি থাকবে না, তাই এই পিসির বাড়ি যেতে বলেছে”।
“ঠিক আছে”
ধ্যাৎ কিরকম মিথ্যে কথা বলতে হল। বললেই পারতাম যে পুকুরে মাছ দেখতে যাচ্ছি। তাহলে কি বাসকাকু বকত?

কালো জল কোথাও কোথাও হালকা মনে হচ্ছে সূর্যের আলোতে। পুকুরের চারিপাশে বেড়ার ঘেরাটোপ। শুধু দুটো জায়গা খালি। রাতুল তার মধ্যে একটি জায়গা বেছে নিল পর্যবেক্ষণের জন্য। তার গলায় ঝোলানো জলের বোতল আর পিঠে ছোট্ট নীল ব্যাগটাও স্থির। রাতুলের চোখের কালো মণি এপাশ থেকে ওপাশ ঘুরে বেরাচ্ছিল।
ওই যে ওই যে একটাকে দেখলাম। ওই যে ছোট্ট কালো সুতোর মতো। নড়ে নড়ে চলছে।
“এই এই কোথায় যাচ্ছিস?”

ওই তো কত গুলো একসাথে আসছে। আচ্ছা এইখানে জেলিকে ছেড়ে দিলে কেমন হয়? সবার সাথে বেশ বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলবে।
জেলি এখানে বেশ ভালই থাকবে, জায়গাটাও বেশ বড়। রাতুল ভেবে দেখল এধার থেকে ওধার দৌড়ে গেলে রাতুলকে দু’বোতল জল খেতে হবে। তাই সেই চিন্তা রাতুল মনে থেকে বের করে দিল।
রাতুলের মনের মধ্যে খেয়ালের বাজির ফাটছিল। এখানে থাকলে রাতুল রোজ এসে একবার জেলিকে দেখে যেতে পারবে। কিন্তু বাসকাকুকেও তো তাহলে রোজ মিথ্যে কথা বলতে হবে। সে না হয় দেখা যাবে। চারিদিক ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে রাতুলের পা জোড়া এবার বাড়ির দিকে চলতে শুরু করল।

দীপশিখা তরফদার পেশায় লেখক ও সাংবাদিক, সহ-সম্পাদক হিসেবে কলকাতার একটি প্রকাশনা সংস্থায় কর্মরত। বইয়ের দুনিয়ায় বিচরণে সর্বদা আগ্রহী ও কল্পনার জগত সব সময় হাতছানি দেয় তাঁকে। ফাঁক পেলেই সাদা কাগজ লিখে ভরিয়ে দেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা