সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

শৈশবের যে ঘটনা এখনও স্মৃতিপটে আঁকা আছে তা থেকেই আজের গল্পের অবতারণা । আমি তপু,তখন চার বছরের ছিলাম । আমাকে রোজ নার্সারি স্কুলে যেতে হয় । মাঝে রবিবারটা অবশ্য ছুটি । কি পড়ি তখন--অ,আ, ক,খ—এক,দুই,তিন,চার,তা না হলে ওয়ান,টু,থ্রি । একটু এগিয়ে গিয়ে পড়তে হচ্ছে,এ ফর অ্যাপেল,বি ফর বার্ড । এই বার্ড মানে পাখি--পাখির কথা মনে হতেই আমার মনে হল,আমাদের ব্যালকনির পায়রাদের কথা । পায়রা পাখি কিনা সে বয়সে আমার মনে সন্দেহ ছিল । মা বলে ছিলেন,"হ্যাঁ,তপু পায়রারাও পাখি।"

তখন আমাদের পাড়ায় পায়রাদের বড় উপদ্রব । অবশ্য মা,বাবাই উপদ্রব কথাটা ব্যবহার করতেন । উপদ্রব কথার অর্থটা আমি মা,বাবার কাছ থেকেই জেনে ছিলাম । কই আমার তো পায়রারা উপদ্রব করে বলে মনে হয় না ! আমাদের পাড়ায় এত পায়রা যে ওরা বাসা বাঁধার জাগা খুঁজে পায় না,তাই বারবার আমাদের ব্যালকনিতে রাখা ফুল গাছের টবগুলির ওপর ওরা খড় কুটো এনে বাসা বানাতে চায় । আর বাসা বানাতে চায় নাকি ডিম পারবে বলে ! কিন্তু মা,বাবা তা করতে দেন না । পায়রাগুলিকে তাঁরা বারবার তাড়িয়ে দেন । ওদের আনা খড় কুটোগুলি বাবা ফেলে দেন । এটা কিন্তু আমার মোটেও ভালো লাগত না ।

পাখি নিয়ে আমার অনেক কৌতূহল,মাকে বলে ছিলাম,"মা,তুমি বল--পাখি কিনতে হয়,খাঁচা কিনতে হয়,অনেক পয়সা খরচ হয়,তবে এই পাখিগুলিকে কেন তাড়াও বল ?"

মা বলে ছিলেন,"ওরা জায়গা নোংরা করে,খড় কুটো এনে ঘর ভরে,হেগে ছড়ায়,ও সব কে পরিষ্কার করবে বল্ ?"
"আচ্ছা,ওরা তবে বাসা ছাড়া থাকবে কোথায় বল ?" আমি বলে ছিলাম ।
মা বলে ছিলেন,"ওরা দিন ভর তো উড়ে বেড়ায়,রাতে গাছে কিম্বা ছাদে থাকবে ।"
"ওদের ভয় করে না--রাতে ঘরের বাইরে থাকতে ? আমরা তো ঘরে থাকি,তাই ভয় পাই না",পাখিদের পক্ষ নিয়ে আমি বলছিলাম।
মা বলেছিলেন,"তোর এত কথার জবাব আমি দিতে পারবো না--আমার অনেক কাজ আছে--যা বাবার কাছে যা," বলে মা রান্নার কাজে চলে গেলেন ।

আমি এবার বাবার কাছে গেলাম । দেখলাম বাবা দাড়ি কামাচ্ছেন। বড় হলে নাকি লোকদের দাড়ি কাটতে হয়--না হলে গালে নাকি দাড়ির জঙ্গল হয়ে যায় । আমি বাবাকে বললাম, "বাবা ! পায়রাগুলিকে ব্যালকনি থেকে তাড়িও না--ওদের একটু ঘর বানিয়ে থাকতে দাও না বাবা ! রাতে, অন্ধকারে ওরা নিশ্চয় ভয় পায় ! ওই ছাদে আর গাছে থাকতে পারে না বলেই তো ওরা ব্যালকনিতে বাসা বানায় !"

বাবা আমার দিকে তাকালেন, আমার কথাগুলি তাঁর মনে লেগেছিল মনে হয় । শুনেছি বাবাও ছোট বেলায় পশু-পাখি খুব ভালোবাসতেন । তাঁর মনে পাখি পালার শখ ছিল । কিন্তু ওই-- বাবার মা-বাবার কাছেও পশুপাখি পোষা উপদ্রব ছিল নিশ্চয়!

বাবার চিন্তাকে ভেঙে দিয়ে আমি আবার বলে উঠলাম, "কি হল বল না বাবা, ওদের বাসা বানাতে দাও না !"
বাবা যেন একটু সদয় হলেন, বললেন, "ঠিক আছে দেখবো--তোর মাকে বলে ।" বাবা, মার কথা বলে যেন আপাতত ছেলের কাছ থেকে পার পেলেন ।

এর দু দিন পরের কথা । আমি দেখলাম, মার হাতে ছোট লাঠি, তিনি পায়রা তাড়াচ্ছিলেন । আমি তাড়াতাড়ি বলে উঠলাম, "তাড়িও না মা ! ওরা রাতে থাকবে কোথায় বল ?"
"ওরে দয়ার সাগর বিদ্যাসাগর এলেন রে ! তুই জানিস না,তপু, ওরা বাসা বানিয়ে ডিম দেবে--তারপর একুশটা দিন ডিমের ওপরে তা দেবে ।"

আমি আশ্চর্য হলাম, ডিম দেবে ! পায়রা ছোট ছোট ডিম দেবে,কি ভালো হবে, কিন্তু মার মুখে 'তা' শব্দ শুনে বড় আশ্চর্য হলাম, মাঝ কথাতেই মাকে জিজ্ঞেস করলাম, "মা ! তা, কাকে বলে ?"
মা ব্যালকনিতে কাপড় মেলতে মেলতে বললেন, "মা পাখি ডিম দিয়ে ডিমের ওপর বসে থাকে ।"
"বসে থাকাকে তা, বলে ?" আমি প্রশ্ন করে ছিলাম ।
"না, না, কেবল বসে থাকাকে তা, বলে না--বসে থেকে নিজের ডিমকে যে গরম করে, তাকে তা, বলে, ".মা আমাকে নিজের কাজ করতে করতে বোঝাবার চেষ্টা করলেন ।
"কেন তা দেয় ?" আমার আবার প্রশ্ন ।
কাজের মাঝে আমার এত প্রশ্ন মার বিরক্তির উদ্বেগ করল, তিনি বলে উঠলেন, "যা তুই বাবার কাছে যা--আমি তোর এত কথার জবাব দিতে পারব," মা এবার অন্য দিকে নিজের কাজে চলে গেলেন ।

বাবা তখন অফিসে যাবার জন্যে তৈরি হচ্ছিলেন । আমি ভাবছিলাম, এটাই খারাপ, আমার স্কুল বেলা দশটা অবধি--আর স্কুল থেকে এসে দেখি যে বাবা অফিসে যাওয়ার জন্যে তৈরি হচ্ছেন। তবু আমাকে জানতে হবে, জিজ্ঞেস করলাম, "বাবা, তা দেয় কেন ?"
"তা, দেয় কেন !" প্রথমটায় বাবা আমার প্রশ্নের কিছুই বুঝতে পারলেন না--আমার দিকে তাকিয়ে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,"কিসের তা ?"
"ওই যে মা বলল, পায়রা ডিমে বসে তা দেয় ! তা কেন দেয় ?" আমি বললাম ।

বাবা ব্যস্ত, তবু কি করা যাবে,ছেলের প্রশ্নের জবাব না দিলেও চলবে না--বাবার মতে ছোট বাচ্চাদের কথার জবাব না দিলে নাকি ওদের জানবার ইচ্ছেটা মরে যায় । জানার ইচ্ছে নাকি ছোটদের স্বাভাবিক ধর্ম । আমার দুষ্টুমি, আর বারবার প্রশ্ন নিয়ে মা যখন বিরক্ত হতেন তখন বাবা এ কথাগুলি বলে মাকে বোঝাতেন । বাবা এবার বলে উঠলেন, "তা দিলে ডিম থেকে বাচ্চা হয় ।"
"ডিম থেকে বাচ্চা !" আমি অবাক বিস্ময়ে বাবার দিকে তাকিয়ে ছিলাম, "ওই ডিম থেকে বাচ্চা হয় ?"
"হ্যাঁ, বাবা", বলে বাবা এবার পা রাখলেন অফিসে যাবার জন্যে।

তাপস কিরণ রায় অর্থশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন। স্কুলে শিক্ষকতা করেন বেশ কিছু বছর। পরে আয়কর বিভাগে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি মধ্য প্রদেশের জবলপুর শহরে বাস করেন। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালিখি করেন। ছোটদের এবং বড়দের জন্য লেখা তাঁর অনেকগুলি বই-ও প্রকাশিত হয়েছে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা