সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

পার্থ একদিন এসে বলল ওর মামা নাকি মশা মারার এক্সপার্ট , কোলকাতায় বড় বড় কাজ ধরে আর নিমেষে মশার বংশ ধ্বংস , তা আমরা ভাবছি কোন বিশেষ তেল বা ধোঁয়া নিশ্চয় ব্যবহার করেন যার ফর্মুলাটা একবার জোগাড় করতে পারলে কেল্লা ফতে, ও মা আমাদের চমকে দিয়ে বলে কিনা ওর মামা মশা দিয়ে মশা তাড়ান।

আমাদের কিছু বলবার সুযোগ না দিয়ে পার্থ বলতে লাগল ওর মামার নাকি কিছু কুনকি মশা আছে,আমি যেই বলতে গেছি কুনকি তো হাতি হয় শুনেছি সে তো ভয়ানক রেগে গিয়ে বলল হাতি হলে মশা কি দোষ করল? এই জন্য তোদের কিছু বলতে ইচ্ছে করে না ইত্যাদি,অনেক সাধ্য সাধনার পর সে যা বলল তাতে তো আমাদের ভিমরি খাবার জোগাড়, ওর মামা নাকি সেই পোষা কুনকি মশাদের রোজ ট্রেনিঙ দেন, বিভিন্ন রকমের ওড়া,ভলট,ঝাপিয়ে পড়ে বিপক্ষের প্ল্যান ভেস্তে দেওয়া,লুকোচুরি খেলা, মশাদের ঘুম পাড়ানি গান,আহিংস মন্ত্র আরও কত কি?কি খায়?মামার বানান স্পেশাল জুস যা খেলে শক্তি,বুদ্ধি,একাগ্রতা বাড়ে- সেটাই নাকি ওই মশাদের খাদ্য বা পানীয় বলতে পার। মামার অফিস কোলকাতায় সেটা অবশ্য করপরেট অফিস ,অফিসিয়াল কাজকর্ম , টাকা পয়সার লেনদেন, অর্ডার বুকিং এসব কাজকর্ম সেখানে হয়। আসল কাজ হয় গোবরডাঙ্গায়, সেখানেই মামার আর একটা বাড়ি আছে জমি জমা পুকুর সব।সেই এঁদো পুকুরটা কচুরিপানা ভর্তি, সেটা অবশ্য করতে হয়েছে নইলে খামোখা সেখানে মশারাই বা থাকতে যাবে কেন?

ওই পুকুরেই প্রথমে মশাদের লার্ভা থেকে হাত পা ওয়ালা মশাদের জন্ম হয় আর তারপরেই আসল কাজ, মামার কর্মচারীরা সেই মশাদের থেকে নাদুস নুদুস কিছু মশা বেছে নেয় ট্রেনিং এর জন্য। তারপর শুরু হয় মশাদের শিক্ষাদান। আমি হঠাৎ জিজ্ঞেস করলাম মশা তো সব একই রকম দেখতে, চিনতে পারে কি করে? বিরক্ত হয়ে পার্থ বলল আরে ওদের সব জার্সি থাকে তাতে নাম্বার দেওয়া, সো নো প্রবলেম। টানা একমাস চলে এই ট্রেনিং, তারপর আর এক দফা বাছাই, সেটা অবশ্য মামাই করেন। ও হ্যাঁ এই সমস্ত ট্রেনিংটা দেয় কিছু ট্রেনার মশা, এদের কাজই হল বিভিন্ন ব্যাচ কে রেডি করা, স্কিলড কুনকি বানান। তারপরেও আরও অনেক ব্যাপার আছে, কুনকি মশাদের এক একটা গ্রুপ বানান, অর্ডার বুঝে একশো থেকে এক হাজার মশার টিম বানান হয়, তাদের একজন কাপ্তেন, অ্যানোফিলিস,কিউলেক্স, এডিস মশাদের ভারসাম্য বজায় রাখা হয় প্রত্যেক টিমে। আমি যেই জিজ্ঞেস করেছি টিমে কি গোল কিপার, হাফ, মিডফিল্ডার ও থাকে কিনা তা শুনে তো পার্থ তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল, বলল শুনতে হয় শোন নাহয় আমায় ছাড়।

মশা তো রেডি এবার অর্ডার অনুসারে তাদের যুদ্ধ ক্ষেত্রে পাঠাবার পালা, অর্ডার শিলচর না শিলিগুড়ি না কোস্টারিকা বা ঘানা কিংবা জাপান সেটা দেখে কোন গ্রুপ যাবে তা ঠিক করা হয়। বিদেশ থেকেও অর্ডার আসে? আলবাত আসে, মশা সবখানেই আছে আর তাদের বংশ ধ্বংস করবার জন্য ডাক আসবেই। এই তো গতবারই ইউএস, চায়না থেকে দুটো বড় অর্ডার এসছিল। কাজ শেষ হবার পর ইউএস প্রেসিডেন্ট মামাকে একটা লুডো উপহার পাঠিয়েছিলেন, আর চীন থেকে খুশী হয়ে একশো প্যাকেট নুড্‌ল্‌স্‌ পাঠিয়েছিল, যা টেস্ট না সেগুলোর, সুপার্ব !

পার্থর মামাকে আমারা দেখেছি, রোগা প্যাটকা চেহারা , এক খানা এয়া মোটা গোফ কিন্তু বেশ মজার , আসলেই আমাদের সবাইকে বসিয়ে গল্প বলেন, লেবেঞ্চুস, ঝালমুড়ি খাওয়ান। ঠিক হল এক ছুটির দিনে আমারা দলবেঁধে মামার ওখানে যাব এসব কাণ্ড কারখানা দেখতে। যেমন ভাবা তেমনি কাজ, একদিন রোববার সকালে আমি,তুকি,গপু,মনা, চিনি, মকাই,পার্থ চললাম।

গোবরডাঙ্গা কি এখানে ? প্রায় দু- ঘণ্টা লাগল পৌঁছতে, ষ্টেশন পৌঁছে ভ্যান রিক্সা ধরে চলতে থাকলাম, যাচ্ছি তো যাচ্ছি , বাড়ি ঘর আস্তে আস্তে কমতে লাগল, চারদিকে মাঠ, পুকুর রাস্তা কাদা ভর্তি, আর বাড়তে লাগল মশার উৎপাত। অবশেষে গাছপালা ভর্তি একটা বাড়ির সামনে এসে আমরা থামলাম। বেশ পুড়নো একটা বাড়ী, কিছু দূরে কচুরিপানা ভর্তি একটা পুকুর, বোঝা গেলো এটাই সেই বিখ্যাত মশা তৈরির কারখানা।

পার্থকে জিজ্ঞেস করলাম এত মশা কেন রে, পাত্তাই দিল না কথাটার বলল ওসব পোষা মশা কিছু করবে না। মামিমা তো আমাদের দেখে খুব খুশী, শরবত ,আম, মিষ্টি, লুচি দিয়ে বেশ জল খাবারটা শেষ করলাম। এইবার আমাদের জায়গাটা ঘুরে দেখবার পালা, এক একটা ঘর দেখিয়ে পার্থ বলতে লাগল এটা ট্রেনিং রুম, এটায় মশাদের রাখা হয়, এটাই ট্রেনাররা থাকে, কিন্তু সবগুলো ঘর বন্ধ।

কিছুক্ষণ পরে মামা বাজার থেকে ফিরলেন একগাদা বাজার নিয়ে, আমি যেই জিজ্ঞেস করতে গেছি কুনকি মশারা কোথায়, আমায় থামিয়ে পার্থ অন্য গল্প শুরু করে দিল। দুপুরের খাওয়াটা দারুন হল, পাঁঠার মাংস, মাছের কালিয়া, পটোলের দোলমা,ভাজা ,চাটনি আর মিষ্টি। ভাবলাম খাবার পর আমাদের অভিযান শুরু হবে।

খেয়ে দেয়ে উঠে মামা বললেন মশারি ছাড়া কিন্তু কেউ ঘুমস না, ভয়ঙ্কর মশা হয়েছে, কামড়ালে নির্ঘাত ম্যালেরিয়া।পুকুরটা পরিষ্কার করাবার লোকগুলো কে বলে আসলাম, তারাও আসল না। মামী ঘরে ঘরে মশারি আর কচ্ছপ ছাপ জ্বালিয়ে দিয়ে গেলেন। আমরা তো মুখ চাওয়াচাওয়ি করছি, পার্থ বলল, মামা যে কি করে,সব কুনকি মশাগুলোকে দেশ বিদেশে পাঠিয়ে নিজেরা সব মশারির মধ্যে বসে আছে।

বিকেলে আর এক প্রস্থ খাওয়া, মামা মামি খুব করে থেকে যেতে বলেছিলেন কিন্তু আমাদের ফিরতে হবে, পরদিন স্কুল আছে। হইহই করতে করতে আমরা বাড়ি ফিরলাম। তারপর থেকে মশা দেখলেই আমরা পার্থ কে জিজ্ঞেস করতাম হ্যাঁ রে এগুলো কি কুনকি মশা?


ছবিঃ দাড়িদা

আশুতোষ ভট্টাচার্য্যি নিয়মিত ছোটদের এবং বড়দের বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালিখি করেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা