সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

আকাশে অনেক রং জড়ো হয়েছে। সম্ভবত আকাশের দেশে আজকে হোলি উৎসব। অন্তত আয়ুষীর তাই মনে হলো। ইশ! আকাশটা কী সুন্দর রং মাখামাখি করছে!

পড়ন্ত বিকেলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের আগ আগে আকাশের হোলি খেলা দেখতে ভীষণ ভালো লাগে আয়ুষীর। ও প্রতিদিনই এই কাজটা করে। আর প্রতিদিনই খুব অবাক হয়ে ভাবে, আকাশের দেশে কী প্রতিদিনই হোলি উৎসব হয়? একদিন সে দিদিকে কথাটা জিজ্ঞেস করেছিল। দিদি বলেছে আকাশের দেশে নাকী প্রতিদিনই অনেক আনন্দ। তাই সেখানে প্রতিদিন রংখেলা হয়।

‘আয়ুষী! আয়ুষী...!’ বিদুষী এক গ্লাস দুধ হাতে নিয়ে আয়ুষীকে ডাকতে ডাকতে বারান্দায় আয়ুষীর পেছনে এসে দাঁড়িয়ে চোখ পাকিয়ে বলল, ‘কী? এখনো আকাশের হোলি উৎসব নিয়ে ভাবা হচ্ছে? দুধটুকু কে খাবে শুনি?’

‘দিদি! দুধ খেতে আমার মোটেই ভালো লাগে না।’ ঠোঁট উল্টে বলল আয়ুষী।

‘দুধ না খেলে তুই দেখতে পরীর মতো হবি না। তাহলে পরীও তোকে পরীর দেশে নিয়ে যাবে না। আমার কী! আমার তো ভালোই হবে, আমি একা একা পরীর দেশে চলে যাব।’ বলল বিদুষী।

‘না না! আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতেই পারবো না দিদি। আমি দুধ খাবো। কিন্তু তুমি তার আগে আমাকে বলো, পাঁচদিন পর তো আমার জন্মদিন। তুমি আমাকে কী দেবে?’ জানতে চায় আয়ুষী।

বিদুষী বলল, ‘তুই যা চাইবি, তাই দেব। কী চাস বল তো?’

আয়ুষী বলল, ‘একটা পরীর ডানা।’

বিদুষী হাসল। ‘বেশ, তাই পাবি তুই।’ আয়ুষীকে আদর করে দিয়ে বলল সে। আয়ুষীও লক্ষী মেয়ে হয়ে দুধটুকু খেয়ে নিল।

গতকাল থেকেই বিদুষী ভেবেছে আয়ুষীর পরীর ডানাটা কিনতে যাবে। সময় করতে পারছে না কিছুতেই। কলেজ থেকে বেরুতে অনেক দেরি হয়ে যায়। এরপর আর সময় থাকে না শপিং-এ যাওয়ার। বাবা দেশের বাইরে থাকেন। মা তো ঘর থেকে বেরই হন না বলতে গেলে, বাড়ির কাজ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত থাকেন। তাই মা কিনে আনবেন- সে জো-টুকুও নেই। আজ আয়ুষীর উপহারটা কিনতেই হবে। মেয়েটার জন্মদিন প্রায় এসে গেছে। পরশুদিন ওর জন্মদিন। কী শখ করেই না পরীর ডানা চেয়েছে আয়ুষীটা! এসবকিছু ভাবতে ভাবতে কলেজে পৌঁছে গেলো বিদুষী। কলেজে গিয়ে প্রচণ্ড মাথাব্যথা শুরু হলো ও। একটা ক্লাসও মনোযোগ দিয়ে করতে পারলো না । এরপর হঠাৎ গা কাঁপিয়ে জ্বর চলে এলো। তাই ইচ্ছে থাকলেও আর আয়ুষীর জন্য পরীর ডানা কিনতে যেতে পারলো না ও। খুব বেশি শরীর খারাপ লাগছিল- বাসায় চলে এলো।

পরদিনও বিদুষীর জ্বর কমল না। বিছানা ছেড়েই উঠতে পারলো না ও। মা ডাক্তারকে ফোন করে ডেকে আনলেন। ডাক্তার বলল ভাইরাল জ্বর। সপ্তাহখানেক লাগবে সেরে উঠতে। আয়ুষী সারাক্ষণ দিদির কাছে বসে রইল। সারারাত মায়ের সঙ্গে দিদির পাশে জেগে কাটাল সে। বিদুষী তার প্রতিদিনের অভ্যেসমতো ভোর হতেই জেগে গেল। চোখ খুলে সে দেখল, বিছানার পাশে আয়ুষী মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ বিদুষীর মনে পড়ল, আয়ুষীর আজ জন্মদিন!

‘ওহ! আয়ুষীর পরীর ডানাটা তো কিনতেই যেতে পারলাম না। ইশ! আয়ুষী ভীষণ মন খারাপ করবে।’ ভাবল বিদুষী। দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে হাতমুখ ধুতে গেল সে। আজ কলেজ থেকে আসার পথে পরীর ডানাটা কিনতেই হবে, সে যতই দেরি হোক না কেন।

বিদুষী উঠে পড়ার কিছুক্ষণের মাঝেই আয়ুষীও জেগে গেলো। আয়ুষী কোল থেকে নেমে যাওয়ায় উঠে পড়লেন মা-ও। বিদুষীকে তৈরি হতে দেখে আয়ুষী অবাক হয়ে বলল, ‘দিদি, তুমি কোথায় যাচ্ছ?’

‘কেন? প্রতিদিন যেখানে যাই, কলেজ যাচ্ছি।’ হেসে বলল বিদুষী।

মা উঠে এসে বিদুষীর কপালে হাত রাখলেন। তারপর চেঁচিয়ে উঠে বললেন, ‘এ কী রে বিদুষী! তোর জ্বর তো কমে নি। গা পুড়ে যাচ্ছে। এই জ্বর নিয়ে কোত্থাও যাবি না তুই।’

বিদুষী মায়ের হাতটা ধরে বলল, ‘আমি পুরোপুরি ঠিক আছি মা।’ এরপর সে কলেজের ব্যাগটা আনতে টেবিলের দিকে এগুলো। কিন্তু টেবিলের কাছাকাছি গিয়ে মাথা ঘুরে চেয়ারের উপরে বসে পড়ল সে।

‘ওহ বিদুষী! কোনো কথা তুই শুনিস না! এক্ষুণি শুয়ে পড়বি চল।’ ব্যস্ত হয়ে বললেন মা।

‘হ্যাঁ দিদি, তুমি আজ কলেজ যেও না। একদিন না গেলে কী আর ক্ষতি হবে দিদি? তুমি শুয়ে পড় তো।’ বিদুষীর হাত চেপে ধরে বলল আয়ুষী।

বিদুষী চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল। ‘মা... আমি ঠিক আছি। আর আয়ুষী, তুই মোটে পাকামি করবি না। মা, আজ আয়ুষীর জন্মদিন। ওর পরীর ডানাটা কেনা হয় নি মা। সেটা কিনতে হবে। আর তাছাড়া ওর জন্য তো একটা কেকও কিনতে হবে। কয়েকটা বেলুন, ছ’টা মোমবাতি...’ বলতে বলতে আবারো মাথা ঘুরে বিছানায় বসে পড়ল বিদুষী।

‘দিদি, আমার জন্য তোমায় কিচ্ছু কিনতে হবে না। তুমি ঠিক হয়ে যাও, তারপর আমার জন্মদিনের একটা পার্টি করবো, আচ্ছা?’ বলল আয়ুষী।

বিদুষী জ্বরের ঘোরে বলল, ‘আয়ুষী আমার কাছে ঐ একটা পরীর ডানাই তো চেয়েছে। সেটা আমি না দিয়ে কী করে...’

‘দিদি, আমার পরীর ডানা লাগবে না। আমি পরীর দেশে যেতে চাই না দিদি। তুমিই তো আমার সবচেয়ে সুন্দর পরী। তুমিই তো আমার সবচেয়ে সুন্দর জন্মদিনের উপহার। তুমি সবসময় আমার কাছে থাকলেই হবে দিদি, আমার আর কিচ্ছু চাই না। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি দিদি, অনেক ভালোবাসি।’ বিদুষীকে জড়িয়ে ধরে বলল আয়ুষী। তার ঠোঁটে শীতের কুয়াশা কাটানো সূর্যের মতো ঝলমলে হাসি। বিদুষী জ্বরের ঘোরেই হেসে উঠল। বোনকে জড়িয়ে ধরে রেখে বলল, ‘তুই আর কোন পরীর দেশে যাবি রে? তুই-ই তো পরীর দেশের রাজকন্যা।’


ছবিঃ মহাশ্বেতা রায়

কিশোরী লেখক মীম নোশিন নাওয়াল খান বাংলাদেশের ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। পড়াশোনার পাশাপাশি সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছে লেখালেখি, সাংবাদিকতা, ছবি আঁকা, ফটোগ্রাফি ও হাতের কাজ। ইউনিসেফ থেকে চারবার মীনা অ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন পুরস্কারজয়ী মীমের অনেকগুলো গল্প, ছড়া ও কিশোর উপন্যাস বই আকারেও প্রকাশিত হয়েছে।  

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা