সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
মগার গল্প

কুসুমপুর গাঁয়ে বাস ছিল এক গরীব তাঁতির। সে ছিল বেজায় বোকা। সবাই তাকে মগা বলে ডাকত। মগা মানে কিনা বোকা! গাঁশুদ্ধু লোকে মগার পেছনে লাগত, তাকে নিয়ে মজা করত।

বোকাসোকা মগা কাজকম্ম বিশেষ পারত না। বৌ বাড়ি বসে তাঁতে গামছা বুনত, মগা মাঝেসাঝে হাটে গিয়ে সেই গামছা বিক্রি করে আসত। বাকি সময় টো টো করে গাঁয়ের মধ্যে ঘুরে বেড়াত। কষ্টেসৃষ্টে দিন চলত তাদের।

গরীব হলে হবে কী, মগার ছিল বেজায় নোলা। সারাদিন খালি খাই খাই। এদিকে বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, ওদিকে মগা দিনরাত স্বপ্ন দেখে মাংসভাত খাওয়ার। তা, মাংসভাত আর পাবে কোথায়! তাই মগা গাঁয়ের সবাইকে জিগ্যেস করে বেড়াত তারা সেদিন বাড়িতে কে কী খেয়েছে। লোকের মুখে তাদের ভালোমন্দ খাওয়ার গল্প শুনেই মগা জিভ চাটত, নোলা জুড়োত।

একদিন দুপুরবেলা, মগা বসে আছে বাড়ির দাওয়ায়। রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল গাঁয়েরই একজন। মগা হেঁকে জিগ্যেস করল, "কী গো হাবুদাদা, আজ দুপুরে বাড়িতে কী রান্না হল শুনি। খেলে কী?"

লোকটি পেটে হাত বুলোতে বুলোতে একটা প্রকাণ্ড ঢেঁকুর তুলে বলল, "আজ! ওঃ, আজ গিন্নি যা খাইয়েছে না! পেঁয়াজ-লঙ্কা দিয়ে কষে গাছপাঁঠার ঝোল রান্না করেছিল। সে যা সোয়াদ হয়েছিল, আর বলব কী, জিভের আড় ভেঙে গেছে একেবারে। বড় ভালো খেয়েছি গো।"

শুনে তো মগার জিভ থেকে নাল পড়ে যায় আর কি! গাছপাঁঠার ঝোল!

গ্রামেগঞ্জে এঁচোড়কে অনেকে গাছপাঁঠা বলে। তরিবৎ করে রাঁধলে এঁচোড়ের ঝোল দিয়ে ভাত মেখে খেতে অনেকটা মাংসভাতের মত লাগে। গ্রামের গরীব মানুষ পাঁঠার মাংস তো বিশেষ খেতে পায় না, তাই এঁচোড় খেয়েই সাধ মেটায়। ভালবেসে এঁচোড়ের নাম দিয়েছে গাছপাঁঠা।

এখন, মগা তো সেটা জানত না! সে ভাবল, পাঁঠার ঝোল! আহা! এই না হলে খাওয়া! প্রতিদিন কুমড়োসেদ্ধ আর পুঁইশাক চচ্চড়ি খেয়ে খেয়ে জিভে একেবারে চরা পড়ে গেল। মাংসভাত না খেলে কী চলে? কিন্তু পাই কোথায় মাংসভাত? কাছাকাছি কোনও বিয়ের নেমন্তন্নও নেই যে পেট পুরে মাংসভাত খাব। আচ্ছা, হাবুদা যেন কী বলল? গাছপাঁঠা? পাঁঠা কি তবে গাছে ফলে? নিশ্চয়ই তাই। নইলে গাছপাঁঠা বলবে কেন? তাহলে তো পাঁঠার একটা গাছ খুঁজে বের করলেই হয়! গাছ থেকে পাঁঠা পেড়ে আনব। হাবুদা যখন খেয়েছে তখন পাঁঠার গাছ এ গাঁয়েই আছে নিশ্চয়। কই চোখে তো পড়েনি! ভালো করে খুঁজে দেখতে হয়!

এই বলে মগা বেরোল পাঁঠার গাছ খুঁজতে। এ বাগান সে বাগান করে সারা দুপুর ঘুরে বেড়াল সে, কোথাও পাঁঠার গাছ খুঁজে পেল না। শেষে বিকেলবেলা উপস্থিত হল গাঁয়ের পণ্ডিতমশাইয়ের বাড়ির পেছনের বাগানে। পণ্ডিতমশাইয়ের ছোট্ট বাগানে অনেক ছোট ছোট গাছ। লেবু গাছ, করমচা গাছ, কুল গাছ; জবা, শিউলি, রজনীগন্ধা ফুলগাছ; কিন্তু পাঁঠার গাছ একটাও চোখে পড়ল না। ওদিকে পণ্ডিতমশাইয়ের শ্যেন দৃষ্টি, তিনি জানালা দিয়ে দেখলেন মগা তাঁর বাগানে ঘুরঘুর করছে। কি যেন খুঁজছে। বেরিয়ে এসে বললেন, "কী রে মগা, কী খুঁজছিস এখেনে?"

মগার গল্প

মগা বলল, "আজ্ঞে পণ্ডিতমশাই, পাঁঠার গাছ খুঁজছি। মনে খুব সাধ হল পাঁঠার মাংসের ঝোল দিয়ে ভাত খাব। তাই দেখছি কোন গাছে গাছপাঁঠা ফলেছে।"

পণ্ডিতমশাই রেগেমেগে বললেন, "ওরে বোকা, আমি কি পাঁঠার মাংস খাই যে আমার বাগানে পাঁঠার গাছ খুঁজতে এয়েছিস? ওসব আমিষ খাবারের কথা কানে শুনলেও পাপ। রাম রাম রাম রাম। পাঁঠার গাছ খুঁজবি তো যাদের বাড়ি ছাগল-পাঁঠা আছে তাদের কাছে যা না। এখেনে কেন?"

মগা ভাবল তাই তো, তাই তো! এ কথাটা তো মাথায় আসে নি? ইস, সে কী বোকা! গাঁয়ে যারা ছাগল-পাঁঠা পোষে তাদের গিয়ে জিগ্যেস করলেই তো হয় যে পাঁঠাগুলো কোন গাছ থেকে পেড়েছে! বাড়িতেও নিশ্চয়ই পাঁঠার গাছ আছে তাদের।

মগা চলল তিনুখুড়োর বাড়ি। তার বাড়িতে অনেক গরু-ছাগল।

"বলি ও তিনুখুড়ো, তোমার পোষা পাঁঠাগুলো কি গাছপাঁঠা? কোন গাছ থেকে পেড়েছ গো? তোমার বাড়িতে আছে পাঁঠার গাছ?"

তিনুখুড়ো রসিক মানুষ। গঞ্জে তাঁর দোকান আছে। ফি হপ্তায় একদিন কলকেতা যায়। ব্যাপার বুঝে বলল, "আমার পাঁঠার গাছ দেখাবো কেন তোকে আমি? সে সব বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছি, কাউকে দেখাই না। মতলবটা কী তোর বল তো?"

"খুড়ো, খুব সাধ হয়েছে পাঁঠার মাংসের ঝোল দিয়ে ভাত খাব। তা, কোনও গাছ খুঁজে পাচ্ছি না যে পাঁঠা পাড়ব। তোমার গাছের একটা পাঁঠা দেবে আমায়?"

"সে সব হবে না বাপু। এতই যখন পাঁঠা খাওয়ার শখ তো নিজের বাড়িতে পাঁঠার গাছ লাগিয়ে নে না একটা। আমার গাছের পাঁঠা কেন? এ সব হল যার যার তার তার। হুঁ হুঁ বাবা, হিজ হিজ হুজ হুজ, হার হার হুর হুর।" "বেশ, তাই সই। তাহলে গাছের কলম দাও একটা। বাড়ি নিয়ে গিয়ে পুঁতে দি।"

"ওরে বোকা, পাঁঠার গাছ কি কলম থেকে হয় নাকি? সে হয় বীজ থেকে। ওই যে কালো কালো গোল গোল বীজগুলো দেখছিস, ওই নিয়ে পুঁতে দে গা যা। বেশ করে জল দিবি রোজ, দেখবি পাঁঠার গাছ হবে।" এই বলে তিনুখুড়ো উঠোনে ছড়িয়ে থাকা ছাগলের কালো কালো নাদিগুলো দেখিয়ে দিল।

মগা মহানন্দে কোমরের গামছার কোঁচড়ে একমুঠো ছাগলের নাদি নিয়ে নাচতে নাচতে বাড়ির দিকে চলল। খুড়ো পেছন থেকে চেঁচিয়ে বলল, "রোজ তিনবেলা জল দিতে ভুলিস নে মগা। মাঝে মাঝে বাতাস করিস এট্টু। দেখবি একহপ্তায় পাঁঠার গাছ মাথা তুলবে।"

পরদিন সকালে মগা বাড়ির উঠোনের একটা কোণ পরিষ্কার করে বীজগুলো পুঁতে দিল। তারপর থেকে একটু পর পরই সে সেখানে জল দেয়। ঘর থেকে তালপাতার পাখা নিয়ে এসে বসে বসে বাতাস করে জায়গাটায়। মগার বৌ কাণ্ড দেখে বলল, "এসব কী হচ্ছে গা? বাতাস করো কারে?"

মগা খেঁকিয়ে উঠল, "ও তুমি বুঝবে নাকো। যাও ঘরে যাও। ডিস্টাব কোরো না।"

দু'দিন যায়, তিন দিন যায়। একদিন বিকেলে তিনুখুড়ো এসে জিগ্যেস করল, "কী রে মগা, তোর পাঁঠার গাছ বেরোল?"

"না খুড়ো, বেরোয়নি এখনও। তবে বেরোবে বেরোবে করছে। জায়গাটা একটু উঁচু উঁচু লাগছে যেন, নিচ থেকে গাছটা ঠেলছে মনে লয়। জল তো দিচ্ছি খুব, বাতাসও করছি।"

"বাঃ বাঃ, কর কর। খুব করে বাতাস কর, জল দে। শিগগিরই বেরোবে।"

এক হপ্তা গেল। দু হপ্তা গেল। গাছ আর বেরোয় না। ওদিকে তিনুখুড়োর কাছে খবর পেয়ে গাঁয়ের লোকে ভিড় করে দেখতে আসে বিকেলবেলা। নানারকম প্রশ্ন তাদের - "কী রে মগা, বীজ পোঁতার আগে মাটিটা ভালো করে খুঁচিয়ে নিয়েছিলি তো? দিনে তিনবার জল দিচ্ছিস তো?"

"হ্যাঁ গো দাদা হ্যাঁ। তিনবার কেন, দশবার জল দিচ্ছি। সকাল-বিকেল বাতাস করছি।"

"তাহলে এইবারে ঠিক বেরোবে দেখিস। হাল ছাড়িস না মগা। কথায় বলে, সবুরে মেওয়া ফলে, পাঁঠা তো কোন ছার!"

মগার গল্প

তারপর একদিন, ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই মগা রোজকার মতো ছুট্টে উঠোনের সেই কোণে গেছে। দেখে কি – সত্যিই একটা ছোট্ট গাছের চারা মাটি ফুঁড়ে মাথা তুলেছে। কচি কচি তিনটে পাতা, লালচে লালচে কাণ্ড, বাতাসে অল্প অল্প দুলছে।

সে ছিল এমনি একটা জংলি গাছের চারা। দু'হপ্তা জল পেয়ে পেয়ে মাথা তুলেছে, বর্ষাকালে যেখানে সেখানে আকছার যেমন গজায়। কিন্তু মগা সেটা বুঝলে তো! সে তার পাঁঠার গাছ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। তাড়াতাড়ি বৌকে ডেকে আনল, "দ্যাখো দ্যাখো, আমার পাঁঠার গাছ বেরিয়েছে। ঠাকুর অ্যাদ্দিনে মুখ তুলে চেয়েছেন। এবারে আর আমাদের কোনও চিন্তা নেই।"

বৌ ভুরু কুঁচকে বলল, "পাঁঠার গাছ? সে আবার কী গা? মরণ! পাঁঠার আবার গাছ হয় নিকি? যত সব আদিখ্যেতা।"

মগা রেগেমেগে বলল, "হয় না মানে? আলবাত হয়! তিনুখুড়ো বলেছে। যা জানো না তাই নিয়ে বকরবকর কোরো না তো। যাও ঘরে যাও।"

মগা দ্বিগুণ উদ্যমে গাছের যত্নআত্তি করতে লেগে গেল। এই জল দেয়, তো তারপরই বাতাস করতে বসে যায়। চারদিকে পাটকাঠি দিয়ে ঘের দিয়ে দিল, আশপাশের ঘাস নিড়িয়ে দিল; আর একটু পরপরই কাঠি দিয়ে মেপে মেপে দেখতে লাগল গাছ কত লম্বা হল।

গাঁয়ে খবর রটে গেল। বিকেলে তিনুখুড়ো দলবল নিয়ে মগার গাছ দেখতে এল।

"কী রে মগা, তোর পাঁঠার গাছ বেরিয়েছে শুনলুম। বীজটা কেমন দিয়েছিলুম বল! গাছে পাঁঠা হলে আমাদের কিন্তু নেমন্তন্ন খাওয়াতে হবে, এই এখনই বলে রাখলুম।"

"হ্যাঁ গো খুড়ো, সে আর বলতে! নিচ্চয় খাওয়াবো। তোমাদের না খাওয়ালি চলে? তুমি বীজ দিলে বলেই না হল গাছটা। এখন এটারে বড় করি আগে।"

"হ্যাঁ, যত্নআত্তি কর। জল দে, বাতাস কর, দু'হপ্তায় গাছে ফুল আসবে। দেখিস, লোভে পড়ে সেই ফুল আবার ভেজে খেয়ে নিস নি যেন, তাহলে তোর মাথা থেকেই পাঁঠার গাছ গজাবে।"

এই বলে হাসাহাসি করতে করতে গাঁয়ের লোকে চলে গেল।

মগা ক'দিন খুব জল দিল, খুব বাতাস করল, তারপর একদিন সকালে দেখে কি – তার গাছে সত্যিই দুটো কুঁড়ি এসেছে। বেলা বাড়তে কুঁড়ি থেকে ছোট্ট দুটো বেগুনি রঙের ফুল ফুটল। মগার আনন্দ আর দেখে কে! সে ধেই ধেই করে তিনপাক নেচে নিল, আর গান জুড়ল –

"ফুল ফুটেছে আমার গাছে, ছোট্ট সে ফুল বেগুনি
তোমরা তো কেউ দেখনি গো তোমরা তো কেউ দেখলে নি!"

সেদিন দুপুরে মগাদের পুঁইশাক চচ্চড়িও জোটে নি। তাতে কী হয়েছে! অনেক দিন পর বেশ তৃপ্তি করে, নুন-লঙ্কা দিয়ে মেখে, একপেট পান্তাভাতই খেয়ে নিল মগা। তারপর তালপাতার পাখাটা নিয়ে দাওয়ায় বসে ঝিমোতে লাগল, আর ভাবতে লাগল, পান্তাভাত আর ক'দিন! গাছে ফুল এসেছে, এবারে পাঁঠা হবে। বাজার থেকে মশলাপাতি সব নিয়ে আসতে হবে, তারপর গিন্নিকে বলতে হবে খুব করে কষিয়ে, ঝাল ঝাল করে একদিন পাঁঠার মাংসের ঝোল রান্না করতে।

এদিকে হয়েছে কি, দুটো ছোট্ট ছাগলছানা ঘুরতে ঘুরতে মগার উঠোনে এসে হাজির। তারা নিড়োনো উঠোনে কিছু না পেয়ে, পাটকাঠির বেড়ার ফাঁক গলে ঢুকে দেখে ছোট্ট একটা গাছ, তাতে ছোট ছোট দুটো বেগুনি রঙের ফুল ফুটে আছে। দেখেই তারা ফুলদুটো কুচমুচ করে চিবিয়ে খেয়ে ফেলল। খেতে নিশ্চয়ই খুব ভালো লেগে থাকবে, তাই তারা মহাফুর্তিতে ব্যা ব্যা করে গান ধরল আর তিড়িং বিড়িং নাচ জুড়ল।

চটকা ভেঙে মগা তাড়াতাড়ি এসে দেখে তার গাছে ফুল দুটো নেই, আর দুটো ছাগলছানা পিড়িং পিড়িং লাফাচ্ছে। তাকে আর পায় কে তখন! সেও ধিন ধিন নাচ জুড়ল, সঙ্গে গান –

"ফুল ছিল সে বেগুনি, দেখে গেলাম তখুনি
ফলল পাঁঠা এখুনি, দেখবে এসো ও গিন্নি।"

গিন্নির সাড়া নেই, সে তখন ঘরের ভেতর নিদ্রা দিচ্ছে। তার বদলে দেখা দিল হাবুদাদা। রাস্তা থেকে উঠোনে ঢুকতে ঢুকতে বলল, "মগা বাড়ি আছিস? বলি, আমার দুটো ছাগলছানা এদিকেই এসেছে মনে হল যেন। বড্ড চঞ্চল হয়েছে সে দুটো। ওই তো, ওই তো ওখানে লাফাচ্ছে দুটিতে। যাক বাবা, পাওয়া গেল। অ্যাই, চল চল, বাড়ি চল।"

মগার গল্প

মগা তো তাজ্জব! "তোমার ছাগলছানা মানে? কী যে বলো হাবুদাদা! এ দুটো তো আমার গাছের। এই তো এট্টু আগে ফলল, এই যে, এই গাছের ফুল থেকে।"

এই বলে মগা তাড়াতাড়ি ছানাদুটোকে তুলে দুই বগলে আগলে ধরল।

হাবুদাদা রেগে কাঁই, "বটে, আমার সঙ্গে ফাজলামি! তোর পেটে পেটে এত কুবুদ্ধি বুঝিনি তো আগে! তুইই তাহলে ছানা দুটো চুরি করে এনেছিস! দে বলছি শিগগিরি। ভালো চাস তো দিয়ে দে।"

"বাঃ রে, আমার গাছের ছানা আমি দেব কেন তোমায়? তুমিই বুঝি শুধু গাছপাঁঠার ঝোল খাবে, আমি বুঝি খাবো না!"

এদিকে গোলমাল শুনে একজন দু'জন করে গাঁয়ের লোক জড় হতে শুরু করেছে। মগার কাণ্ড দেখে তাদের বেজায় হাসাহাসি। ওদের কাছে ব্যাপার শুনে হাবুদাদা বলল, "ওরে ছাগল! মগা কি আর সাধে বলি তোকে? পাঁঠা কি গাছে ফলে?"

মগা বলল, "আলবাত ফলে, একশবার ফলে। এই তো ফলেছে। ওই যে আমার গাছ। ফলে কি ফলে না তিনুখুড়োকে জিগ্যেস করো না গিয়ে। ইঃ, আমার গাছের পাঁঠা, আর বলে কি না আমি চুরি করেছি!"

"বটে! ভালো কথায় তুই সিধে হবি না মনে হচ্ছে। দাঁড়া, তোকে পাঁঠার গাছ দেখাচ্ছি আমি," এই বলে হাবুদাদা হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেল।

একটু পরেই সে ফিরে এল দড়িতে বাঁধা মোটাসোটা এক ছাগল নিয়ে। সেটা ছিল ওই ছাগলছানা দুটোর মা। মাকে দেখেই তো ছানাদুটো মগার বগলের মধ্যে ম্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যা ম্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যা করে চিৎকার জুড়ল। আর ছানাদের ফিরে পেয়ে মা-ছাগল দড়িদড়া ছাড়িয়ে শিং বাগিয়ে ছুটে গিয়ে মারল মগার পেটে এক ঢুঁসো।

এক ঢুঁসোতেই মগা চিৎপাত। ছানাদুটো ছাড়া পেয়ে ম্যা ম্যা করতে করতে তিড়িং বিড়িং করে একটু নাচ দেখাল, তারপর মায়ের দুধ খেতে লাগল। হাবুদাদা তার ছাগল নিয়ে গাঁয়ের লোকের সাথে হাসিমস্করা করতে করতে ফিরে চলল।

মগার বৌ দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখছিল সব। আঁচলের খুঁট দিয়ে চোখ মুছে বাইরে এসে মগার হাত ধরে বলল, "ন্যাও, ওঠ, চল, ঘরে চল। তোমারে নিয়া সকলে তামাশা করে বোঝ না তুমি? তোমারে পাঁঠার মাংস খাওয়াব নে আমি। আজ থিকা দিনরাত গামছা বুনব। ওঠ এখন। আমার হইসে যত জ্বালা!"


ছবিঃ ত্রিপর্ণা মাইতি

পেশায় ইঞ্জিনিয়ার তাপস মৌলিক ছোটদের জন্য লিখছে গত কয়েক বছর ধরে। জনপ্রিয় বিভিন্ন ওয়েব পত্রিকা এবং কাগুজে পত্রিকায় নিয়মিত লেখালিখি করেন তিনি। লেখালিখির পাশাপাশি গানবাজনা এবং ভ্রমণে তিনি সমান উৎসাহী ।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা