সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
স্নেহার বন্ধু

স্নেহারা বদলি হয়ে নতুন শহরে এসেছে। নতুন স্কুলে ক্লাস টুতে ভর্তি হয়েছে সে, পরের সপ্তাহ থেকে স্কুলে যাওয়া শুরু হবে। সেই নিয়ে তার ভারি চিন্তা।

মাকে গিয়ে সে বলল, "মা, নতুন স্কুলে আমার বন্ধু হবে তো?"

মা বললেন, "হ্যাঁ, হ্যাঁ, তোমার ক্লাসে তো অনেকেই থাকবে। এই পাড়া থেকেও তো অনেকে ওই স্কুলটায় যায় তাই তুমি ঠিক বন্ধু পেয়ে যাবে দেখো।"

স্নেহার কিন্তু মার ওই কথাতে মন ভরল না। পরদিন সকালে সে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রইল ওদের পাড়া থেকে কারা ওদের স্কুলে যাচ্ছে সেটা দেখার জন্যে। ভাগ্য ভাল ওদের স্কুলের বাস স্টপটা ঠিক ওদের বাড়ির সামনেই। স্কুলের ইউনিফর্মটাও ভারি সুন্দর, হাল্কা হলুদ ব্লাউজ, গাঢ় নীল স্কার্ট আর টাই। স্নেহার ইউনিফর্ম এখনও কেনা হয়নি, ইস কবে যে কেনা হবে! তিন চারজন মেয়ে অপেক্ষা করছে বাসের জন্যে। কয়েকজন বেশ বড় বোঝাই যাচ্ছে তবে স্নেহার মতনই একজনকে দেখতে পেল স্নেহা! তার কাঁধে বার্বির ছবি দেওয়া গোলাপি রঙের ব্যাগ। স্নেহারও ঠিক ওই রকম একটা বার্বি দেওয়া ব্যাগ আছে! আনন্দে নেচে উঠল স্নেহার মন।

সে ঘরে ছুটে গিয়ে মাকে বলল, "মা, মা, আমি বন্ধু পেয়ে গেছি!"
ওর কথা শুনে মা একটু অবাকই হলেন, বললেন, "সে কি! স্কুলে না গিয়েই তুমি বন্ধু পেয়ে গেলে কি করে?"
"হ্যাঁ পেয়েছি, তুমি দেখবে এসো!"

তবে মার হাতের কাজকর্ম সেরে যেতে যেতে স্কুলের বাস চলে গেল তাই বন্ধুকে মার আর দেখা হল না।

সেদিন বিকেলে বাবার অফিসের কলিগ মজুমদার কাকুর মেয়ে মিষ্টিদির জন্মদিনে গেল স্নেহা। অনেক লোকজন এসেছে কিন্তু স্নেহা কাউকেই চেনে না। মিষ্টিদি নিজের বন্ধুদের নিয়ে ব্যস্ত। স্নেহা কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না এমন সময় আবার সেই মেয়েটাকে দেখতে পেল সে! দেখেই খুশিতে ঝলমল করে ঊঠল স্নেহার মুখ – আরে সে যাকে বন্ধু করতে চায় সেও এখানেই রয়েছে, এবং সেও একা! স্নেহা যেচে ওর সাথে গিয়ে আলাপ করল। ওর নাম রিয়া। দুজনে মিলে অনেক গল্প করল।

স্নেহা ওকে বলল, "আমিও তোমাদের স্কুলে ভর্তি হয়েছি!"
রিয়া শুনে বলল, "ও তাই নাকি! তাহলে তো রোজ তোমার সাথে দেখা হবে!"
"হ্যাঁ, আজ সকালে আমি ব্যালকনি থেকে তোমাকে দেখেছিলাম। তোমরা সবাই বাসের জন্যে অপেক্ষা করছিলে।"
"হ্যাঁ!"

মিষ্টিদির জন্মদিনটা স্নেহার বেশ ভালই কাটল। সবাই মিলে হ্যাপি বার্থডে গাওয়া হল তারপর কেক খাওয়া। আর শুধু কি কেক আরো অনেক কিছু খাওয়াদাওয়া হল।

বাড়ি ফেরার পথে মা বললেন, "তুমি যার সাথে সারাক্ষণ কথা বলছিলে সেই মেয়েটা কে?"
একগাল হেসে স্নেহা বলল, "ঐ যা:! তোমার সাথে আলাপ করানই হল না তো! ওটাই তো আমার নতুন বন্ধু! আমি ব্যালকনি থেকে যাকে দেখে আমার বন্ধু করব ভেবেছিলাম রিয়াই তো সেই বন্ধু!" সব শুনে মা বললেন, "বাহ! তাহলে তো খুব ভাল হল। পরের সপ্তাহ থেকে তুমি যখন স্কুলে যাবে তখন তাহলে তোমার আর কোন অসুবিধা হবে না!"

পরের সোমবার নতুন ইউনিফর্ম পরে বাসের জন্যে দাঁড়াল স্নেহা। রিয়া তখনও আসেনি। অধৈর্য হয়ে উঠছিল স্নেহা, রিয়া যেন বড্ড দেরি করছে আসতে! শেষমেশ রিয়া এলো কিন্তু স্নেহার দিকে একবার তাকিয়ে অল্প হেসে মুখটা ঘুরিয়ে নিল! ভীষণ চমকে উঠল স্নেহা, কি ঘটছে কিছুই বুঝতে পারছিল না সে। বাস আসতে ওরা সবাই বাসে গিয়ে উঠল। স্নেহার পাশে জায়গা থাকা সত্বেও রিয়া ওর পাশে বসল না, অন্য জায়গায় গিয়ে বসল, যেন চেনেই না স্নেহাকে! খুব কষ্ট হল স্নেহার। চোখ ফেটে জল এসে গেল প্রায়।

সেদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে স্নেহার সে কি কান্না!

মা তো বেশ ঘাবড়েই গেলেন!

"কি হয়েছে?" জিজ্ঞেস করতে স্নেহা কিছুই বলে না, কেবল কাঁদে!
"কি হয়েছে? টিচার কিছু বলেছেন? চোট লেগেছে? শরীর খারাপ?"
অনেক সাধাসাধির পর ফোঁপাতে ফোঁপাতে স্নেহা বলল, "রিয়া আমার সঙ্গে কথা বলছে না!"
মা বেশ শঙ্কিত হয়ে বললেন, "কেন?"
"সেটাই তো ফেরার সময় বাসে ওকে জিজ্ঞেস করলাম। তখন ও গম্ভীর মুখে বলল, 'আমাকে রিয়া বলে ডাকবে না মোটেই তুমি! রিয়াদিদি বলবে! তুমি ক্লাস টুতে পড়ো আর আমি পড়ি থ্রিতে! তোমার সঙ্গে তো আমার বন্ধুত্ব হতে পারে না! সেদিন মিষ্টিদির জন্মদিনে যখন কথা বলছিলাম তখন তো তুমি একবারও বলনি যে তুমি ক্লাস টুতে পড়ো! নাহলে আমি সেদিনই তোমাকে সাবধান করে দিতাম!'"

চোখের জলে একাকার হয়ে স্নেহা বলল, "আমি টুতে পড়ি আর ও থ্রিতে পরে বলেই ও আমার সঙ্গে কথা বলবে না! ও নাকি আমার সিনিয়ার হয়ে গেছে! আমার আর স্কুলে কোন বন্ধু রইল না, আমি কাল থেকে আর স্কুলে যাব না!"

মা দেখলেন এ তো মহা সমস্যা হয়ে যাচ্ছে! স্নেহা খাচ্ছে দাচ্ছে না শুধু কেঁদেই চলছে।

অনেক কষ্টে ভুলিয়ে ভালিয়ে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হবে, চকোলেট কিনে দেওয়া হবে বলতে ওর কান্না থামল।

স্নেহার বন্ধু

বিকেলবেলা স্নেহা বসে বসে ছবি আঁকছিল তখন দরজায় বেল পড়ল। মা দরজা খুলে দেখলেন রিয়া দাঁড়িয়ে রয়েছে, ওর সঙ্গে আরেকটা মেয়ে।

"স্নেহা আছে কাকিমা?"
ততক্ষণে স্নেহাও এসে দাঁড়িয়েছে মার পাশে।

রিয়া ওকে দেখে একগাল হেসে বলল, "স্নেহা, সরি আজকে তোমার সঙ্গে খুব খারাপ ভাবে কথা বলেছি। সেদিন মিষ্টিদের জন্মদিনে যে সব বড় দিদিরা ছিল তারাই আমাকে বলল, 'ছি ছি তুমি না ক্লাস থ্রিতে পড়ো আর ক্লাস টুয়ের মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করে বেড়াও! জুনিয়ারদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে নেই জান না? ওদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে ফেললে ওরা আর আমাদের কথা শুনবে না! তাছাড়া ওই রকম করলে তোমার ক্লাসেরও কেউ তোমার সঙ্গে কথা বলবে না!' ওদের ভয়ে বাসে আমি তোমার পাশে বসিনি। যাই হোক আলাপ করিয়ে দি এই হল আমার খুড়তুতো বোন দিয়া। ওর টাইফয়েড হয়েছিল বলে এত দিন স্কুলে যাচ্ছিল না। ও ক্লাস টুতে পড়ে তাই ওর তোমার সাথে কথা বলতে বাধা নেই!"

ব্যস আর কি! সেই থেকেই বন্ধু হয়ে গেল স্নেহা আর দিয়া। রোজ বিকেলে স্কুলের পরও খেলা জমে ওঠে ওদের আর তখন মহানন্দে ওদের সাথে যোগ দেয় দিয়ার দিদি রিয়াও!


ছবিঃ মঞ্জিমা মল্লিক

অনন্যা দাশ কর্মসূত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। নেশা বই পড়া আর গল্প লেখা। শিশুদের জন্যে সামাজিক গল্প ও কিশোরদের জন্যে রহস্য গল্প লিখতে ভালবাসেন। বাংলাতে প্রকাশিত অধিকাংশ শিশু কিশোর পত্রিকাতেই লিখেছেন কোন না কোন সময়ে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা