সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
বিষাক্ত গ্যাস রহস্য

(৪) ছুঁচ হয়ে ঢুকে...

'ফ্যান্সি কসমেটিকস'-এর গেটে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে বলাই। গ্যাস লিক হবার পরই কারখানার সুরক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছিল। আজকাল নাশকতার ভয়ে সেসব আরও জোরদার করা হয়েছে। ইলেকট্রনিক সুরক্ষা, তার সাথে বাছা বাছা সিকিউরিটি স্টাফ। সুবল ও বলাইকে সুপারিশ করেছিলেন এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, তাই তাদের গার্ড হিসেবে নিয়োগ করা নিয়ে কোনও ঝামেলা হয়নি।

সাধারণতঃ ওদের পালা করে ডিউটি পড়ে। বলাইয়ের আজ ডে ডিউটি। যে ফাঁকা থাকে, ভেলী তার কাছে থাকে। আজ কিন্তু ও কারখানা গেটের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। ওর গলায় একটা বকলেস। তাতে নম্বর লেখা, যাতে বোঝা যায় ও পোষা কুকুর। এখন কারখানা ছুটির সময়। অনেক কর্মী ভেলীর তাগড়া চেহারার দিকে তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে বেরোচ্ছে। একজন বিড়বিড় করে বলল, "সিকিউরিটি এসব দেখে না!"

"না না, ও কামড়ায় না।" তাড়াতাড়ি বলেই বলাই যেসব কর্মী বেরোচ্ছে তাদের চেক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তার পকেটে একটা বাঁশি, সেটা বাজিয়ে গেটের বাইরের গাড়িগুলিকে কন্ট্রোল করছে। মাঝে মাঝে আর একটা বাঁশিতেও ফুঁ দিচ্ছে, কিন্তু সেটা বাজছে না।

হঠাৎ বলাইয়ের কান খাড়া হয়ে উঠল। তার বাঁশির সঙ্কেত শুনে ভেলী তার দিকে ফিরলে সে আড়চোখে একজন লোককে দেখিয়ে দিল। হাসিখুশি, মাঝবয়েসি এক কর্মী ব্যাগ হাতে ধীরে ধীরে বেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে গেটের বাইরে পা দিতেই ভেলী চাপা গর্জন করে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।

তারপর তুলকালাম। বলাই দৌড়ে গিয়ে ভেলীকে ছাড়িয়ে দিয়েছে। লোকজন ছুটে আসছে। "আরে, কুত্তাটা তো ডেঞ্জারাস", "মার, পিটিয়ে মেরে ফেল", নানা মন্তব্য ভেসে আসছে।
"আপনারা ভুল করছেন।" বলাই বলল, "এ শিক্ষিত কুকুর, অকারণে কাউকে আক্রমণ করে না।" আশ্চর্য, কুকুরটি যাকে আক্রমণ করেছে সে কিন্তু একদম চুপ। "আপনার লেগেছে?" বলাই এগিয়ে গেল।
"না না, তেমন কিছু নয়!" লোকটা তালেগোলে কেটে পড়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু বলাই ততক্ষণে তার পোশাকের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিয়েছে আর টেনে বের করেছে একটা প্রমাণ সাইজের সেন্টের শিশি।
"এই যে দেখুন, কোম্পানির মাল পাচার করছিল। আমার কুকুর ধরেছে।" বিজয়গর্বে বলল বলাই।

চারদিকে শোরগোল, পাচারকারীকে ঘিরে উত্তেজিত জটলা। হঠাৎ নিঃশব্দে পেছনে একটা গাড়ি এসে দাঁড়াল। তার থেকে মুখ বাড়িয়ে এক জাঁদরেল চেহারার মানুষ জিজ্ঞেস করলেন, "এত গোলমাল কেন?"
"মালিক!" সসম্ভ্রমে সবাই সরে দাঁড়াল। তারপর একজন বলল, "কারখানার মাল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিল, স্যার। সিকিউরিটি ধরেছে।"

ওঃ, এই তবে দেবকুমার সিনহা! অ্যাদ্দিন পর তবে দেখা হল! হঠাৎ বলাইয়ের ইচ্ছে হল, ঝাঁপিয়ে পড়ে তার শক্ত হাতদুটি দিয়ে লোকটার গলা টিপে ধরে। কিন্তু তারপরই মনে হল, তাহলে তাদের সব প্ল্যান চৌপাট হয়ে যাবে। ডঃ চন্দ্র বারবার বলে দিয়েছেন, "শত প্ররোচনাতেও কিন্তু আমরা বেআইনি কিছু করব না, স্রেফ প্রমাণ সমেত ওকে আইনের হাতে তুলে দেব।" অনেক চেষ্টায় সে নিজেকে সংযত করল।
ইতিমধ্যে মালিক বলাইয়ের দিকে ফিরে বললেন, "বাঃ, তুমি ধরেছ? মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে বুঝি?"
"না স্যার, লোকটা কাঁচের শিশিতে সেন্ট নিয়ে যাচ্ছিল। কাঁচ মেটাল ডিটেক্টরে ধরা পড়ে না, ধরেছে আমার কুত্তা। ওকে আমরা ট্রেনিং দিয়েছি। কারও চালচলন দেখেই বদ মতলব ধরে ফেলতে পারে।"
মালিক চিন্তিত মুখে কী যেন ভাবলেন। তারপর পেছনের দরজা খুলে বললেন, "উঠে এস।"
"স্যা-র!" বলাই একটু ভড়কে গিয়ে বলল, "আমার গেটের ডিউটি –"
"দাসকে বলে দিচ্ছি, অন্য কাউকে বসিয়ে দেবে। তুমি এস, তোমার সঙ্গে কথা আছে।"

"কী খাবে – চা, কফি, না ঠাণ্ডা?" মৃদু হেসে বললেন মালিক।
"কিছু না, স্যার। আপনি কী বলবেন বলছিলেন?" বলাই খুব অস্বস্তির সঙ্গে বলল।
"তুমি আমার চোখ খুলে দিয়েছ। আমি এই বিপদটার সম্বন্ধে সচেতন ছিলাম না। সত্যিই, আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ নানা ধরনের পারফিউম। আর তা কাঁচের বোতলে করে পাচার হলে মেটাল ডিটেক্টর কী করবে! না না, এমন দু-একটা চোর-ছ্যাঁচড় দু-চার বোতল মাল নিয়ে গেলে আমার গায়ে লাগবে না। কিন্তু আমি ভাবছি আমাদের ল্যাবরেটরির নিরাপত্তার কথা। সেখানে যেসব প্রডাক্ট নিয়ে কাজ হচ্ছে, আমাদের প্রতিযোগীরা লাগাতার চেষ্টা করে যাচ্ছে তার নমুনা হাতিয়ে বিশ্লেষণ করে আগেই বাজারে ছেড়ে আমাদের টেক্কা দেওয়ার। ছোট্ট কাঁচের শিশিতে করে স্যাম্পল পাচার করলে না পড়বে মেটাল ডিটেক্টরে ধরা, না শরীর হাতড়ে। সবাইকে তো আর গেটে উলঙ্গ করে সার্চ করা যায় না। তাহলে উপায়?"
"যদি বলেন তো আমি আর আমার কুকুর মিলে চেষ্টা করে দেখতে পারি। ও হাবভাব দেখে চোর সন্দেহ করতে পারে। আর ট্রেনিং দিলে গন্ধ শুঁকেও কারও শরীরে সেন্টের শিশি থাকলে ধরে ফেলতে পারবে।"
"গুড, আমিও সেটা ভেবে তোমাকে ডেকে এনেছি। ক'দিনের মধ্যে তোমাকে আমাদের হাই-সিকিউরিটি ল্যাবের গার্ড হিসেবে পোস্টিং দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে তুমি তোমার কুত্তাটাকে ট্রেনিং দিয়ে রাখো, যাতে ও ফ্যাক্টরির পরিবেশে সড়গড় হয়ে ওঠে। তবে তোমাকে তো আগে দেখেছি বলে মনে হয় না। নতুন রিক্রুট?"
"হ্যাঁ স্যার, এই মাস কয়েক হল ঢুকেছি।"
"ব্যাজ নম্বর বলো।" নম্বরটা নিয়ে তিনি কম্পিউটারে কী যেন দেখে অবাক হয়ে বললেন, "ওঃ, মিঃ ভরদ্বাজ তোমাকে রেকমেন্ড করেছেন! তাহলে আর কী! তবে উনি তো চট করে কারও জন্য বলেন না?"
"আজ্ঞে, আগে আমি একটা গেস্ট হাউসে কাজ করতাম। উনি কলকাতা এসে সেখানে উঠতেন, তার থেকেই জানাশোনা! একবার ওনার হারিয়ে যাওয়া একটা হীরার আংটি খুঁজে দিয়েছিলাম, তাই উনি খুশি হয়ে বলেছিলেন যে চাকরির দরকার হলে যেন ওঁর অফিসে যোগাযোগ করি।"
"তা অমন ভালো গেস্ট হাউসের চাকরি ছাড়লে কেন?"
"ছাড়লাম কি আর, স্যার – ছাড়িয়ে দিল। কী করবে, আজকাল ওদেরও বিজনেসে মন্দা।" বলাই ডঃ চন্দ্রের শেখানো মিথ্যেগুলি পরপর গড়গড় করে বলে গেল।
"বেশ। কিন্তু তুমি তো রাতদিন ডিউটি দিতে পারবে না, আর একজন বিশ্বাসী লোক খুঁজতে হবে।"
"যদি কিছু মনে না করেন স্যার – আমার এক বন্ধু সুবল, সে-ও আমার সঙ্গে ভরদ্বাজ স্যারের চিঠিতেই ঢুকেছে। ওর সঙ্গে যদি ডিউটি পাল্টাপাল্টি করে নিই?"
"তাহলে তো সমস্যা মিটেই গেল! বেশ, আমি দেখছি। তোমাকে শিগগিরই আবার ডাকব।"

"এ যে মেঘ না চাইতেই জল! ওদের ঐ ল্যাবরেটরিতেই তো যত রহস্যের চাবিকাঠি।" বলছিলেন ডঃ চন্দ্র। তাঁর সঙ্গে অবশ্য দেখা করা বারণ। উনি ওদের দুটো মোবাইল দিয়েছেন, তার মাধ্যমেই কথা হয়। এই মোবাইলে নাকি কী বিশেষ 'কোডিং' আছে, যাতে কেউ আড়ি পাতলেও কথা বুঝতে পারবে না।
"কিন্তু স্যার – ল্যাবরেটরিতে আবার কীসের রহস্য?"
"তুমি কি ভাবছ সেন্টের ফর্মুলা রক্ষা করার জন্য দেবকুমারের এত চিন্তা? দুর – ওর ব্র্যান্ডের পারফিউম তো স্রেফ এখান থেকে ঝাড়া, ওখান থেকে টোকা মাল। ও যখন ল্যাব নিয়ে এত দুশ্চিন্তায়, তাহলে নিশ্চয়ই ওখানে এমন কিছু তৈরি হয় যা বাইরের লোক জানলে ওর ঘোর বিপদ। সেটাই আমাদের বের করতে হবে, এই পড়ে পাওয়া সুযোগ ছাড়লে চলবে না।"
"কিন্তু আমরা কী করব, স্যার?"
"এখন শুধু আমাকে নিয়মিত রিপোর্ট করে যাবে। তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা।"

(৫) হাই-সিকিউরিটি ল্যাব

কারখানার এক প্রান্তে ল্যাবরেটরি বা ল্যাব। জায়গাটার কথা সুবল বা বলাই আগে জানতই না। বাইরে থেকে দেখে মনে হয়, একটা ছোট্ট বাড়ি। কিন্তু ভেতরে গেলে বোঝা যায় বিভিন্ন তলায় আর মাটির নিচেও এর অজস্র শাখা-প্রশাখা। এখানকার সিকিউরিটি খুব কড়া। ভেতরে যেতে হলে বিশেষ কার্ড 'সোয়াইপ' করে ঢুকতে হয়, নইলে ইলেকট্রনিক দরজা খোলে না। ভেতরে স্বচ্ছ কাঁচের দরজা দিয়ে যতটা নজর পড়ে একটা খোপে সারি সারি অ্যাপ্রন, দস্তানা আর হেলমেটের মতো কী যেন রাখা। কেউ ভেতরে গেলে ওসব পরে ঢোকে, আবার বেরোবার সময় ওগুলো ছেড়ে রেখে যায়। সুবল-বলাই ভেতরে ঢুকতে পারে না। তাই সেখানে কী হচ্ছে, ওদের জানার উপায় নেই। বলাই বলেছিল, ট্রেনিং দিলে ওর কুত্তা গন্ধ শুঁকেই সেন্টচোর ধরতে পারবে। মালিক এখন অবধি দু-একটা সেন্টের নমুনা ওদের দিয়েছে, ওরা ভেলীকে তা দিয়ে তালিমও দিয়েছে। তবে ওদের সন্দেহ, এসব ফালতু। ঐ সেন্টগুলি মালিকের কারখানার মাল, ল্যাবরেটরিতে ওসব নিয়ে কোনও পরীক্ষা হয় না। মালিক আরও বলে দিয়েছে, কারও সন্দেহজনক গতিবিধিও যেন ওদের কুত্তা লক্ষ করে। শুধু তেমন কিছু দেখলে কুত্তা যেন ঝাঁপিয়ে না পড়ে, শুধু ওরা যেন একটা নম্বরে ফোন করে দেয়। অবশ্য এমনিতে অজস্র কঠিন, তরল পদার্থ ল্যাবে ঢোকে আর বেরোয়। তবে সেগুলোর উপযুক্ত গেট পাস আছে কিনা দেখেই ওরা ছাড়ে।

গেটের বাইরে একটু দূরে একজন লোক খাটিয়ায় বসে সুর করে 'হনুমান চালিশা' পড়ে যায়। ওর নাম সন্তোষ। ওর কাজ ঠিক কী, কেউ জানে না। কারণ, ওকে কোনও কাজই করতে দেখা যায় না। কিন্তু মালিক যখনই আসে, ওর দিকে আড়চোখে চেয়ে মুচকি হাসে। লোকটাও পাল্টা হেসেই জবাব দেয়। লোকটাকে দেখলে মনে হয় খুব শান্ত। কিন্তু হঠাৎ ওর চোখে চোখ পড়লে কেন যেন বুক হিম হয়ে যায়।

একদিন সুবল রাত ডিউটিতে। গেটের পর একটা পুরু কাঁচের দেয়াল, যার ওপাশের দৃশ্য শুধু অস্পষ্ট দেখা যায়। তার ওপর তখন রাত দশটা বেজে গেছে দেখে সেখানকার আলোগুলি নেভানো, শুধু আবছা নাইট ল্যাম্প জ্বলছে। হঠাৎ সুবল নড়েচড়ে উঠল। ঐ অল্প আলোতেও তার শক্তিশালী চোখে ধরা পড়েছে, একটা টেবিলে সারি সারি ছোটো ফ্লাস্ক। একজন লোক তার একটা নিয়ে জামার তলার পুরল। ভেলী বাইরে বসে ঝিমোচ্ছে। লোকটা বেরোতেই সুবলের ইশারায় ভেলী তার পথ আটকে দাঁড়াল।

"এই, তোমার কুত্তা সামলাও", বিব্রত লোকটা সুবলকে বলল। "দাঁড়ান, আপনাকে সার্চ করতে হবে", বলে সুবল তার পথ আটকে কোম্পানির মোবাইল থেকে মালিকের দেওয়া নম্বরটা ডায়াল করতে লাগল। হঠাৎ দ্যাখে সন্তোষ উঠে দাঁড়িয়েছে। সে সুবলের কাঁধে হাতের চাপ দিয়ে বলল, "ওকে ছেড়ে দাও।"
সুবল টের পেল, লোকটার হাতে অসম্ভব জোর। সে আমতা-আমতা করে বলল, "আগে মালিককে জানিয়ে রাখি। ওর কাছে চোরাই মাল আছে।"
এক কুৎসিত হাসি হেসে সন্তোষ তার মোবাইল বের করে বলল, "ওটা আমারই নম্বর। সেলটা সাইলেন্ট ছিল, এই দ্যাখো তোমার নম্বর থেকে মিসড কল। ভয় নেই, ও আমাদের লোক। তোমাকে আর তোমার কুত্তাকে পরীক্ষা করা হচ্ছিল। মালিককে বলে দেব তোমরা পাস!"
অগত্যা ভ্যাবাচাকা সুবল লোকটাকে ছেড়ে দিল।


"ভেতরে এমন কিছু পদার্থ আছে, যার নমুনা দেবকুমার কিছুতেই তোমাদের কুকুরকে শোঁকাতে দেবে না। হয়তো ওগুলো শুঁকলে বিপদ।" চিন্তিত ডঃ চন্দ্র বলছিলেন, "কিন্তু কিছু নমুনা যে আমাদের চাই।"
সুবল একটু ভেবে বলল, "আমার বিশ্বাস, ঐ ছোটো ফ্লাস্কগুলিতে কিছু নমুনা পাওয়া যাবে। ওগুলো গেটের ওপাশের হলে একটা টেবিলের ওপর থাকে। আমাদের ঝুঁকি নিয়ে কিছু একটা করতে হবে, যাতে তিনজনের ক্ষমতা এককাট্টা করে সিকিউরিটির দেওয়াল ভেঙে ওখানে পৌঁছোতে পারি।"
"কিন্তু সেটা কী করে সম্ভব? তোমাদের দু'জনের তো পাল্টাপাল্টি ডিউটি।"
"একমাত্র সুযোগ ডিউটি বদলের সময় অর্থাৎ বেলা দশটায় ও রাত দশটায়। আমরা রাতটাই বাছব। দেখেছি, ঐ সময় সন্তোষও বাইরে ধাবায় খেতে যায়।"

(৫) রাত তখন দশটা

দশটা বাজতে কয়েক মিনিট বাকি। বলাই অস্থিরভাবে ঘড়ি দেখছে – সুবল ঠিক সময় এসে পৌঁছবে তো? নইলে সন্তোষ ফিরে এলে বিপদ। লোকটা নিশ্চয়ই মালিকের খাস স্পাই কাম 'বাহুবলী'!
"এই, তোমাদের কুত্তা জেনারেটর রুমের পাশে কী করছে?" একজন গার্ড হেঁকে বলল।
"ভেলী, আয়!" বলাই চেঁচিয়ে আর বাঁশি বাজিয়ে ওকে ডাকল। ও জানে, ভেলীর ওখানকার কাজ সারা। এবার ওকে এদিকে দরকার।
ঐ তো, সুবল দ্রুতপায়ে আসছে। তাড়াতাড়ি এসে বলাইকে বলল, "চল, চেঞ্জ রুমে গিয়ে পোশাক বদলে নিই।" ওরা চেঞ্জরুমের দিকে এগোল, আর ভেলী অরক্ষিত গেট দিয়ে ল্যাবের মূল দরজার কাছে গিয়ে দরজার তালার কতগুলো অংশ চাটতে লাগল। ওটা বলাই তাকে আগেই শিখিয়ে রেখেছে।

ঠিক দশটায় আলো নিভে গেল। এমনটাই হবার কথা। মোটামুটি এই সময় কিছুক্ষণের জন্য কারেন্ট যায়। কিন্তু ডঃ চন্দ্র কথা দিয়েছিলেন, তিনি বলেকয়ে সেটা ঠিক দশটাতেই করাবেন। এতে ফ্যাক্টরির তেমন অসুবিধা নেই। এখন বড়ো কোনও কাজ হয় না। যা যা হয় তার জন্য জেনারেটর আছে, সেটা চালু করতে দু-তিন মিনিট লাগে। ল্যাবের বেসমেন্টে কিছু কাজ অবশ্য চব্বিশ ঘণ্টা চলে। তার জন্য রয়েছে ইনভার্টার।

কিন্তু দু-তিন মিনিট গেল, জেনারেটর চালু হল না। ওদিক থেকে জেনারেটর অপারেটরের অস্পষ্ট গালিগালাজ শোনা যাচ্ছে। অন্ধকারে সুবলের মুখে হাসি ফুটে উঠল। ও জানে জেনারেটরের আলো চট করে জ্বলবে না, ভেলী গিয়ে তার কেটে দিয়ে এসেছে।

এবার ল্যাবের দরজা। অন্ধকারে শোনা যাচ্ছে ভেলীর কুঁই-কুঁই খুশির আওয়াজ, যার থেকে বোঝা যায় ও এখানেও দরজার তালা ভাঙার কাজটা সেরে রেখেছে। নষ্ট করার মতো সময় নেই। দড়াম করে দুজনে মিলে ধাক্কা দিতেই দরজা গেল খুলে। মেনি থ্যাঙ্কস, ভেলী!

"আমার হাত ধর।" ফিসফিসিয়ে বলল সুবল। অন্ধকারে তার দৃষ্টি শ্বাপদের মতো জ্বলছে। বলাইকে সে অজস্র জিনিসপত্রের মধ্য দিয়ে হাত ধরে নিয়ে চলল। তারপর এক জায়গায় এসে বলল, "ঐ তো সেই টেবিল। ফ্লাস্কগুলো এখানেই সার বেঁধে রাখা আছে। নে, এবার তোর কাজ।"

চাপবাঁধা অন্ধকারে সুবল একটার পর একটা ফ্লাস্ক বলাই-এর হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে, আর বলাই তার বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে সেগুলো পরীক্ষা করে যাচ্ছে। "এটা খালি, এটাও খালি" – সে ক্রমেই হতাশ হয়ে পড়ছিল। এখানে কি তবে শুধু খালি ফ্লাস্কই রাখা থাকে? তাহলে তো সবই পণ্ডশ্রম! আজকের পর তাদের নিশ্চয়ই এলাকা ছেড়ে চম্পট দিতে হবে। সুতরাং সব চেষ্টার এখানেই শেষ!

না, ভাগ্য অত নিষ্ঠুর নয়! হঠাৎ শোনা গেল বলাইয়ের অস্ফুট উল্লাসধ্বনি, "পেয়েছি!" সে নিশ্চিত, একটা ফ্লাস্কে কোনও তরল আছে। ডঃ চন্দ্র বারবার বলে দিয়েছেন ফ্লাস্ক না খুলতে, তাহলে বিপদ হতে পারে। তাই সে সামান্য নেড়ে নিশ্চিত হয়ে নিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই পেয়ে গেল অমন আরও একটা ফ্লাস্ক।

"ব্যস, এই যথেষ্ট।" দু'জন ছোটো ফ্লাস্ক দুটো কোঁচড়ে গুঁজে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এল। ল্যাবের বেসমেন্টে ইনভার্টারের জন্য কিছু আলো জ্বলছে। সেখান থেকে মৃদু শোরগোল শোনা যাচ্ছে। জেনারেটর কেন জ্বলেনি, খোঁজ করতে কেউ এল বলে। ঊর্ধ্বশ্বাসে দুজন গেটের দিকে ছুটল, তাদের পেছন পেছন ভেলী। গেটে অন্ধকার। সিকিউরিটি অফিসার টর্চে মুখ দেখে ওদের আটকাল।

"কী আশ্চর্য, তোমরা দুজন একসাথে ল্যাবের গেট ছেড়ে চলে এলে?"
বলাই হাঁফাতে হাঁফাতে বলল, "ওখানে বহুত গড়বড়, স্যার! জেনারেটর জ্বলছে না, ল্যাবের দরজাও কীভাবে যেন ভেঙে গেছে। স্যারকে সেলে ধরেছিলাম, বললেন এক্ষুণি সন্তোষকে ডেকে আনতে।"

অফিসারকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ওরা গেটের দিকে ছুটল। প্লাস্টিকের ফ্লাস্ক মেটাল ডিটেক্টরে ধরা না পড়ার মতো করেই তৈরি। নির্বিঘ্নে গেট পেরিয়ে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে ওদের মুখে হাসি ফুটল। ফ্লাস্ক দুটো কোঁচড় থেকে বের করে সগর্বে এ-ওর মুখের দিকে তাকাতে লাগল।

"কাম ফতে! এবার শুধু এগুলো স্যারের হাতে পৌঁছে দেওয়া। শিওর, এর মধ্যে কিছু মাল পাওয়া যাবে! তবে আজ রাতেই আমাদের তিনজনকে কেটে পড়তে হবে, নইলে বিপদ আছে।" বলল সুবল।

বিষাক্ত গ্যাস রহস্য

বলাই জবাব দেবার আগেই হঠাৎ অন্ধকার থেকে একটা ছায়ামূর্তি বেরিয়ে এসে শক্ত হাতে ওর ঘাড় চেপে ধরে বলল, "সে সুযোগ আর হচ্ছে না, চাঁদ!" সভয়ে তাকিয়ে দেখে, সন্তোষ!

"স্যারকে খবর এনে দিয়েছিলাম যে ফ্যাক্টরিতে পুলিশের লোক ঢুকেছে। তা, উনি খোঁচড় ধরতে দুটো খোঁচড়কেই লাগিয়ে দিলেন ল্যাব পাহারায়! এরা নাকি ওঁর কোন মান্যিগণ্যি মুরুব্বির চেনা!" নিজের মনে বিড়বিড় করতে করতে সন্তোষ বলল, "ইস, খেতে আর ক'মিনিট দেরি হলেই বিচ্ছুগুলি হাতে হেরিকেন ধরিয়ে দিচ্ছিল আর কী!" তারপর বলাইয়ের ঘাড়ে চাপ বাড়াতে বাড়াতে বলল, "দিয়ে দে ও দুটো।"

বলাই ফ্লাস্কটা ধরে রাখার চেষ্টায় আপ্রাণ যুঝতে লাগল। কিন্তু লোকটার শরীরে অসুরের শক্তি। তখন বলাই চেঁচিয়ে বলল, "সুবল, তুই পালা – অন্তত একটা ফ্লাস্ক ঠিক জায়গায় পৌঁছে যাক!"
"পালাস না। তবে তোর এই সাঙাতকে আমি এখনই টুঁটি টিপে মেরে ফেলব।"

সুবল দৌড়ে কিছুদূর গিয়েছিল, সন্তোষের কথা শুনে থমকে দাঁড়াল। অসহায়ের মতো দেখল, সন্তোষ বলাইয়ের হাত থেকে ফ্লাস্কটা কেড়ে নিয়ে এবার পায়ে পায়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে।

হঠাৎ অন্ধকারের মধ্য থেকে একটা পেশল, হলুদ শরীর বিদ্যুৎবেগে সন্তোষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।

"ভেলী!" সুবল উল্লাসে চেঁচিয়ে উঠল।

আচমকা আক্রমণে বিচলিত না হয়ে সন্তোষ সাথে সাথে বলাইকে ছেড়ে এই নতুন আপদের দিকে মন দিল। ভেলী পেছনের পায়ে ভর দিয়ে সন্তোষের মুখের কাছ বরাবর উঠে দাঁড়িয়েছে। সন্তোষ এবার দানবিক শক্তিতে তার গলা টিপে ধরার চেষ্টা করল।

কিন্তু তার আগেই ভেলীর জিভ পৌঁছে গেছে তার মুখের কাছে। হঠাৎ সন্তোষের গলা দিয়ে বেরিয়ে এল এক জান্তব গোঙানি, "চোখ – আমার চোখ!" তারপর দুহাতে চোখ চেপে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। সুবল আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠল। ভেলীর জিভের অ্যাসিড দানবটার চোখের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে!

কিন্তু সে আনন্দ মাত্র কয়েক মুহূর্তের! সন্তোষ পড়ে যাওয়ার সাথে সাথে তার হাতে ধরা ফ্লাস্ক মাটিতে ছিটকে পড়ে তীব্র আঘাতে ঢাকনাটা খুলে গেল। অন্ধের মতো সন্তোষ সেটাকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করতে করতেই তার মধ্য থেকে বেরোতে লাগল এক প্রায় অদৃশ্য গ্যাস। কী তীব্র তার ঝাঁঝ আর কী তার তেজ! ভেলী কাতর আর্তনাদ করে পাগলের মতো দৌড় দিল। তার পেছন পেছন ছুটবার চেষ্টায় বলাই একটু দূরে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। সুবল অন্ধকারে দিশাহীনের মতো ছুটতে ছুটতে হঠাৎ দেখতে পেল, রাস্তায় একটা হেডলাইটের আলো। "বাঁচাও, বাঁচাও" চিৎকার করতে করতে সে হাত দেখিয়ে গাড়িটা থামাল।

অবাক হয়ে দেখল, সেখান থেকে পুলিশি পোশাক পরা কয়েকজন নামছেন, তাঁদের সাথে ডঃ চন্দ্র। চট করে ফ্লাস্কটা তাঁর হাতে দিয়ে সে বলল, "খুব সাবধান, এটার ঢাকনা যেন না খোলে। আর বলাই গ্যাস খেয়ে অজ্ঞান হয়ে ঐদিকে পড়ে আছে, শিগিগিরি ওকে বাঁচান।" বলতে বলতেই সে জ্ঞান হারাল।

ডঃ চন্দ্রের হাতে পায়ে যেন বিদ্যুৎ খেলছে। পুলিশদের বললেন, "নাকে ভিজে রুমাল চাপা দিয়ে ঐদিকে এগোন, আমি এক্ষুণি আসছি।" ব্যাগ থেকে ঝট করে সিরিঞ্জ আর অ্যাম্পুল বের করে তিনি সাথে সাথে সুবলকে একটা ইঞ্জেকশন দিলেন। তারপর মোবাইলে দ্রুত ফোন করে কাকে যেন বলতে লাগলেন, "তিনটে ইমার্জেন্সি গ্যাস কেস আসছে। আমার কাছে অ্যাট্রোপিন আছে। আপনারা প্র্যালিডক্সাইম আয়োডাইড – হ্যাঁ, প্যাম – জলদি জোগাড় করুন। যেখান থেকে পারেন, দামের জন্য ভাববেন না।"

একটু পরই দেখতে পেলেন, পুলিশরা দুটি অচৈতন্য দেহ বয়ে আনছে। একজন বলাই, আর একজন এক গাট্টাগোট্টা জোয়ান। দেহ দুটি গাড়িতে তুলে তিনি হাঁকলেন, "জলদি – ডিস্ট্রিক্ট হসপিটাল!"

(৬) ভয়ঙ্কর স্যারিন

বলাই চোখ মেলে দেখে, সে এক হাসপাতালের বিছানায় আর একটি আকূল মুখ তার মুখের ওপর। তাকে চোখ খুলতে দেখে সেখানে স্বস্তির হাসি ফুটল। বলাই এবার চিনতে পারল – ডঃ চন্দ্র।

"আমি কোথায়?"
"ডিস্ট্রিক্ট হসপিটালে। ভয় পেয়ো না, তুমি ঠিকই আছ। শিগগিরই ছাড়া পাবে।"
"সুবল?" তার পরের প্রশ্ন।
"ভালো আছে। ঐ যে, ঘুমোচ্ছে।" পাশের বেডটা দেখিয়ে বললেন ডঃ চন্দ্র, "তুমি কাছে ছিলে, তাই তোমাকে নিয়েই বেশি চিন্তা ছিল। ভাগ্যিস সেদিন জোর হাওয়া ছিল, তাই গ্যাস চট করে সরে গেছে।"
"আর – ভেলী?"
মুখ নিচু করে বললেন ডঃ চন্দ্র, "ভালো খবর দিতে পারছি না। আসলে, ঘটনার আঘাতে ঘাবড়ে গিয়ে ও সম্ভবতঃ পাগলের মতো দৌড়ে পাশের জঙ্গলে গিয়ে ঢুকেছে। আর ফিরবে কিনা সন্দেহ।"
"কী সর্বনাশ – পোষা কুকুর, জঙ্গলে গিয়ে বাঁচবে কী করে!"
"ভেলী অনেক পোড় খাওয়া, নতুন পরিবেশে ঠিক লড়াই করে মানিয়ে নেবে। আসলে ও হয়তো মানুষের সঙ্গ ছেড়ে অন্য কোথাও, অন্য পরিবেশে একটু বিশুদ্ধ হাওয়ার খোঁজ করছে।"
বিষণ্ণমুখ বলাই উঠে বসল। বলল, "এই অ্যাকশনের শেষ হীরো তো ভেলী আর ও-ই হারিয়ে গেল! কিন্তু আঙ্কল, শেষ অবধি কী হল? আমি জ্ঞান হারালাম, তারপর তো আর কিছু জানি না।"
"সব ঠিকঠাক উৎরে গেছে। দেবকুমার হাতেনাতে ধরা পড়েছে। ধরা পড়েছে ওর আরও কিছু সাঙাত।"
"আর ঐ সন্তোষ – যে আমার গলা টিপে ধরেছিল? ও কি বেঁচে আছে?"
"হ্যাঁ। লোকটার জান খুব কড়া, তাই টিঁকে গেছে। তবে ভেলী বোধহয় ওর চোখদুটো শেষ করে দিয়েছে। ও ছিল একজন কম্যান্ডো, কিন্তু নানা অপকর্ম করে চাকরি খোওয়ায়। এমন লোককে পেয়ে দেবকুমার লুফে নিয়েছিল। সন্তোষ নজর রাখত, নানা সূত্র থেকে খবর এনে দিত আর দরকারে খালি হাতে খুনজখম করার জন্যও তৈরি ছিল। ওকে ওর 'সোর্স' জানিয়েছিল যে পুলিশ থেকে দুজন গোয়েন্দা লুকিয়ে ফ্যাক্টরিতে ঢুকছে। কিন্তু সেটা কে তা জানাতে পারেনি। আর মজা দ্যাখো, সেই 'গোয়েন্দা'রা যাতে স্যাম্পল পাচার না করতে পারে তার জন্য দেবকুমার বেছে বেছে তোমাদেরই ল্যাবে মোতায়েন করল!"
"কিন্তু এত কিছুর পরও কি শেষ অবধি দেবকুমারকে সাজা দেওয়া যাবে?"
"নিশ্চয়ই! ও যে কাজে জড়িত ছিল, সেটা জানার পর ওর মুরুব্বিরাও কেউ এখন ওর পেছনে দাঁড়াবে না। তাই ও কঠিন সাজাই পাবে।"
"কিন্তু ও কী বানাত? ওই মারাত্মক পদার্থ, গ্যাস –"
"সব বলছি। তবে সুবল উঠলে পর বললে হতো না? নইলে তো ওকে গপ্পোটা আবার বলতে হবে।"
পাশের বেড থেকে সুবল এবার যেন ঘুমজড়ানো গলায় বলে উঠল, "বলে যান। আমি শুনতে পাচ্ছি না, শুনতে চাইও না।"
"নটি বয়!" ওর মাথায় মৃদু থাপ্পড় মেরে ডঃ চন্দ্র শুরু করলেন –

"সংক্ষেপে বললে, দেবকুমার বহু বছর ধরে ওর ল্যাবে স্যারিন নামে এক নিষিদ্ধ, প্রাণঘাতী পদার্থ তৈরি করার চেষ্টা করছিল। স্যারিন কার্বন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, ফসফরাস ও ফ্লোরিনের এক জৈব রাসায়নিক পদার্থ। এটা নার্ভ গ্যাস, অর্থাৎ মানুষের স্নায়ুকে আক্রমণ করে তাকে মেরে ফেলে বা পঙ্গু করে দেয়। এটা তাই রাসায়নিক যুদ্ধ বা কেমিক্যাল ওয়ারফেয়ারের অস্ত্র হিসেবে পরিচিত। বদ্ধ পাত্রে একটু চাপে স্যারিনকে তরল অবস্থায় রাখা যায়। কিন্তু খুললেই এটা সাথে সাথে গ্যাসে পরিণত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে।"
"সর্বনাশ! ওসব মারাত্মক জিনিস কি মিলিটারি ছাড়া কেউ সামলাতে পারে?"
"দ্যাখো, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার তো আন্তর্জাতিক প্রথা অনুযায়ী নিষিদ্ধ। তবু শোনা যায়, মুষ্ঠিমেয় কিছু সরকার গোপনে তাদের কারখানায় স্যারিন বানিয়ে মিলিটারির হাতে তুলে দিয়েছে যুদ্ধে বা গৃহযুদ্ধে গণহত্যার উদ্দেশ্যে। স্যারিন অবশ্য পুরনো আমলের জিনিস, এর চেয়ে অনেক মারাত্মক পদার্থ এখন বেরিয়েছে। কিন্তু এটা আবার অপেক্ষাকৃত সহজে বানানো যায় বলে অনেকের বিশ্বাস। তাই আজও কিছু সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের কাছে এর খুব কদর। ১৯৯৫ সালে 'আলেফ' বলে এক ধর্মোন্মাদ জাপানি গোষ্ঠীর কিছু লোক টোকিওর ভূতল রেলপথে স্যারিন গ্যাস ছড়িয়ে দেয়। ফলে বারোজন মানুষ মারা যায়।"

"অপরাধীরা ধরা পড়েনি?"
"পড়েছে, তাদের সাজাও হয়েছে। কিন্তু ঘটনা এই যে স্যারিন গ্যাস কোনও বেসরকারি গোষ্ঠী, বা 'নন-স্টেট অ্যাক্টর' সহজে না হলেও ঝুঁকি নিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারে। দেবকুমারও তেমন চেষ্টাই করছিল। বছর পাঁচেক আগে বোধহয় আনাড়িপনার জন্য ওর ফ্যাক্টরিতে বিস্ফোরণ হয়। তখন অন্যান্য গ্যাসের সঙ্গে কিছু স্যারিনও বেরিয়ে পড়ে। এই নার্ভ গ্যাস যাদের বেশি লেগেছে তারা হয় মারা গেছে অথবা পঙ্গু হয়ে গেছে। কিন্তু তোমাদের নার্ভে স্যারিনের প্রভাব ছিল বিচিত্র, অর্থাৎ তোমার কান আর সুবলের চোখ আরও প্রখর হয়ে ওঠে। আর জেনেটিক পরিবর্তনের ফলে কালীর সন্তান ভেলীর লালার সঙ্গে বেরোতে থাকে বেশি অ্যাসিড। দুর্ঘটনার পর দেবকুমার সাবধান হয়ে অনেক সতর্কতা নিয়ে মাটির নিচে ল্যাব তৈরি করে স্যারিন বানানোর কাজ আবার চালু করল। এই গ্যাস তৈরির প্রক্রিয়ায় পদে পদে বিপদ। এই কাজে লাগে নানা বিপজ্জনক তরল ও গ্যাস, সামান্য ভুল হলেই যার থেকে প্রস্তুতকারীদের মৃত্যু হতে পারে। এগুলোকে সামলে চলা ভয়ানক কঠিন ব্যাপার। তাই বিশেষত ঐ দুর্ঘটনার পর দেবকুমারকে খুব সাবধানে এগোতে হচ্ছিল। নিশ্চয়ই ও কোনও অভিজ্ঞ কেমিক্যাল ইঞ্জিনীয়ারকে এই কাজে লাগিয়েছিল।"
"কিন্তু এই গ্যাস ও কী উদ্দেশ্যে বানাচ্ছিল? নিজে ব্যবহারের জন্য, না কাউকে বিক্রি করার জন্য?"
"যদ্দুর খবর, ও বিক্রির জন্যই এই গ্যাস তৈরি করছিল। নিজের উদ্যোগে এটা তৈরি করে বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করে দরদাম করছিল। তার প্রাথমিক স্তরে সে ঐ ফ্লাস্কগুলোতে নমুনা পাঠাত। ঐ ফ্লাস্কে থাকত চাপে তরলীভূত স্যারিন। ফ্লাস্কে জোরে আঘাত করলে ঢাকনা খুলে ভেতরের চাপে তরল বেরিয়ে এসে সাথে সাথে গ্যাসে পরিণত হতে শুরু করত।"
"কিন্তু এগুলোকে কি এখনই কোনও নির্দিষ্ট সন্ত্রাসবাদী কাজে ব্যবহার করা সম্ভব ছিল?"
"সত্যি বলতে, এগুলোকে মারণাস্ত্র হিসেবে কাজে লাগাবার জন্য আরও কিছু আনুষঙ্গিক কাজকর্ম করতে হতো। তার পরও যারা ব্যবহার করছে তাদের সব সময় প্রাণের ঝুঁকি থেকে যেত। তাই শুধু বেপরোয়া আত্মঘাতী ছাড়া কারও তেমন দুর্বুদ্ধি হতো বলে মনে হয় না। এইসব নিয়ে হয়তো দেবকুমারের সঙ্গে বিভিন্ন সংগঠনের দরাদরি, হ্যাঁচড়া-হেঁচড়ি চলছিল। নইলে অ্যাদ্দিনে জিনিসগুলো বাজারে ছড়িয়ে পড়ত।"
"ভাগ্যিস পড়েনি!" সুবল বলে উঠল।
"তার কৃতিত্ব মূলতঃ তোমাদের তিনজনের।" ডঃ চন্দ্র সুবলের পিঠ চাপড়ে বললেন, "তোমাদের কাছ থেকে ব্যাপারটার হদিস পেয়ে আমি আমার চেনাজানা সূত্র কাজে লাগিয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগকে সতর্ক করি। তারা প্রাথমিকভাবে যে খবর পায়, সেটা তাদের রীতিমতো কাঁপিয়ে দেয়। তবু ওরা স্রেফ অনুমানের ওপর ভর করে দেবকুমারের ল্যাবে রেইড করতে সাহস পাচ্ছিল না। লোকটার অনেক খুঁটির জোর। কিছু না পেলে মিডিয়ায় খবর বেরিয়ে বিশাল স্ক্যান্ডাল, তদন্তকারী অফিসারদের চাকরি নিয়ে টানাটানি। শেষ অবধি তোমাদের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ প্রমাণ পেয়ে ওদের আর দ্বিধা রইল না।"

"একটা কথা জিজ্ঞেস করব, স্যার?"
বলাইয়ের কথা শুনে ডঃ চন্দ্র বললেন, "শিওর। তবে অনেক তো হল, এবার স্যার থাক – আমাকে বরং 'কাকু' বোলো। কেমন, চলবে?"
ওরা দুজন মুখ নিচু করে ঘাড় নাড়ল। তারপর বলাই বলল, "আচ্ছা, আপনি বলছিলেন দেবকুমারের সঙ্গে আপনার একটা পুরনো হিসেব মেটাবার আছে। যদি কিছু না মনে করেন –"
ডঃ চন্দ্র একটু উদাস হয়ে গেলেন। তারপর বললেন, "বেশ, বলছি। তবে সে এমন কাহিনি, যা আমার বলতে বা তোমাদের শুনতে ভালো লাগবে কিনা জানি না। ডাক্তারি পাশ করে কিছুদিন এখানে-সেখানে প্র্যাকটিস করার পর আমি এক সরকারি চাকরি নিয়েছিলাম। আমার কাজ সংক্ষেপে বললে ছিল মেডিকাল সারভেইলেন্স, অর্থাৎ ওষুধবিষুধ ও চিকিৎসায় কোনও বেআইনি কাজ হচ্ছে কিনা নজর রাখা। হঠাৎ আমার টিম আবিস্কার করল যে বিশেষ ব্র্যান্ডের একটি জীবনদায়ী ওষুধ অনেক ক্ষেত্রেই রোগীর ওপর কাজ করছে না। ডাক্তাররা অবশ্য এটাকে বরাত অথবা রোগী এমনিই মারা গেছে বলে উড়িয়ে দিচ্ছিলেন। কিন্তু আমার তৎপর টিম তদন্ত করে শেষ অবধি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছলো যে ঐ ওষুধটির একটা উপাদান কাজ করে না আর সেটা সম্ভবতঃ ভেজাল। ঐ পদার্থটি তৈরি করে ডি কে ফার্মা, যার মালিক দেবকুমার সিন্‌হা।
এরপর আমি অনেক বাধা ও চাপ অগ্রাহ্য করে ঐ উপাদানটিকে বেআইনি ঘোষণা করে ডি কে ফার্মার গেটে তালা ঝোলাবার ব্যবস্থা করলাম। আগেও আমার ওপর অনেক হুমকি এসেছিল। কোম্পানিটা বন্ধ হবার পরদিন ফোনে এক ঠাণ্ডা গলায় শুনলাম, 'এর ফল তুমি পাবে।'
এর কিছুদিন পর আমি একদিন ড্রাইভ করে সপরিবারে যাচ্ছি, একটা ট্রাক হঠাৎ পেছন থেকে এসে আমার গাড়িতে ধাক্কা মারল। সামনের সিটে বসা আমি ও তোমাদের কাকিমা জখমের ওপর দিয়ে রেহাই পেয়ে যাই। কিন্তু পেছনের সিটে আমাদের ছেলে ধীমান চোখ বড় বড় করে দৃশ্য দেখছিল। সে আর –"
ডঃ চন্দ্র কিছুক্ষণ স্তব্ধ। একটু পর সুবল জিজ্ঞেস করল, "আপনি পুলিশকে ব্যাপারটা বলেননি?"
"বলেছি। আমি একজন ভিজিলেন্স অফিসার দেখে তারা আমার অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনাও করেছিল। কিন্তু ঐ পর্যন্তই। শিগগিরই বুঝলাম, দেবকুমারের অনেক খুঁটির জোর। তাই পুলিশ অফিসাররা বলতে লাগলেন, 'সবই বুঝলাম। কিন্তু আপনি কি কোনও প্রমাণ দিতে পারবেন? প্রমাণ ছাড়া অমন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে টলানো যায় না। উল্টে মানহানির মামলায় ফেঁসে যাবেন।'

হতাশ হয়ে আমি হাল ছেড়ে দিলাম। তোমার কাকিমাও আমার ও আমাদের মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে ভয় পাচ্ছিলেন। এই সময় লন্ডনে একটা ভালো ডাক্তারি-গবেষণার অফার পেলাম, সেটা নিতে তাই দ্বিধা করলাম না। লন্ডনে ক'বছর কেটে গেল। তদ্দিনে নানা গবেষণা করে আমিও বেশ নাম করে ফেলেছি। তারপর একদিন মনে হল – আমার ছেলের হত্যাকারীকে সাজা দেওয়া এখনও বাকি। তাই আবার ফিরে এলাম। এসে নিজে নার্সিং হোম খোলার সাথে সাথে আমার পুরনো যোগাযোগগুলির সাহায্যে পাশাপাশি একটা ব্যাপারেও যুক্ত হলাম – তা হচ্ছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাবিভাগকে মেডিকাল ফোরেন্সিকের কাজে সাহায্য করা। এইভাবে যোগাযোগ তৈরি করে দেবকুমারের সম্বন্ধে তথ্য বের করে ওকে একদিন আইনি পদ্ধতিতে সাজা দিতে পারব বলে আমার বিশ্বাস ছিল। তারপর তোমাদের কাছে ওর 'ফ্যান্সি কসমেটিকস'-এর দুর্ঘটনার বিবরণ শুনে মনে হল – শুধু ব্যক্তিগত প্রতিশোধ নেবার জন্য নয়, দেশবাসীর মঙ্গলের জন্যও এমন দানবকে এবার থামানো দরকার। তোমাদের ধন্যবাদ, সেই ইচ্ছেকে তোমরা সফল করেছ।"

"ওভাবে বলবেন না, কাকু।" বলাই বাধা দিল, "প্রতিশোধের ইচ্ছেয় তো আমাদের বুকও জ্বলছিল। আপনাকে না পেলে আমরা কিছুই করতে পারতাম না।"
"বেশ তো, আমরা 'মেড ফর ইচ আদার'। ধরে নাও, নিয়তিই আমাদের মিলিয়ে দিয়েছে।" ডঃ চন্দ্র হেসে বললেন, "এবার শুধু একটা কাজই বাকি – তোমাদের 'আশ্চর্য ক্ষমতা'র ব্যাপারটা নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করা। যেমন ধরো, এটা দীর্ঘমেয়াদীভাবে তোমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর কিনা খতিয়ে দেখা।"
সুবল উঠে বসে বলল, "একবার স্যারিনের প্রভাবে আমাদের ঐ ক্ষমতা দেখা দেয়। এবার –"
"তার প্রভাবে সেটা বেড়ে গিয়েছে কিনা? এক্ষুণি পরীক্ষা করে দেখছি।" বলে ডঃ চন্দ্র একটা বাঁশি পকেট থেকে বের করে ফুঁ দিলেন। কিন্তু বলাই অবাক হয়ে বলল, "এটা নিশ্চয়ই ডগ হুইসলটা নয় – আমি তো কিছুই শুনতে পাচ্ছি না।"
বাইরে দুটো কুকুর ঔ-ঔ করে ডাকছে। ডঃ চন্দ্র হেসে বললেন, "এটাই ডগ হুইসল। তুমি শুনতে না পেলেও কুকুর ঠিক পেয়েছে। এরপর একটু ভেবে তিনি সুবলের চোখে একটা রুমাল বেঁধে দিয়ে বললেন, "কী দেখছ?"
"উঃ, কী দেখব – বড্ড শক্ত করে বেঁধেছেন, কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।"
মৃদু হেসে ডঃ চন্দ্র বললেন, "আর এক তাজ্জব ব্যাপার। মনে হচ্ছে, এবার তোমাদের 'আশ্চর্য ক্ষমতা' তোমাদের ছেড়ে পালিয়েছে!"
"দ্বিতীয়বার গ্যাস লেগে? এ যে সিনেমায় প্রথম দুর্ঘটনায় স্মৃতি হারানো, দ্বিতীয় দুর্ঘটনায় স্মৃতি ফিরে পাওয়ার মতো গুলগল্প হল!"
"ঠিক তা নয়। এবারের ব্যাপারটা গ্যাসের নয়, চিকিৎসার ফল। হাই ডোজে অ্যাট্রোপিন আর 'প্যাম' দিয়ে তোমাদের স্যারিন পয়েজনিংয়ের চিকিৎসা করা হয়েছে। তারই ফলে নিশ্চয়ই তোমাদের আগের বারের স্যারিন পয়েজনিংয়ের জন্য তৈরি 'অস্বাভাবিকতা'ও ঠিক হয়ে গেছে।"

(৭) নটে গাছটি মুড়োল

"তোমরা কি আশ্চর্য ক্ষমতা হারিয়ে দুঃখিত?"
ডঃ চন্দ্রের প্রশ্ন শুনে সুবল, বলাই একসাথে বলল, "না, কাকু!"
"এখন তাহলে কী করবে?"
ডঃ চন্দ্রের পা ছুঁয়ে বলাই বলল, "অন্ততঃ চুরি করব না। মিশন সাকসেসফুল, এবার আমাদের নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে।"
"চাকরিটা তো গেল। ধরে নাও, 'ফ্যান্সি কসমেটিকস' আর শিগগিরও খুলবে না। খুললেও –"
"আমাদের চাকরি নট। কিন্তু আশ্চর্য ক্ষমতা না থাক, হাত-পা-মাথা তো ঠিক আছে। এখন আত্মবিশ্বাসও পেয়ে গেলাম। নিশ্চয়ই সৎপথে কিছু করে নিজেদের আর নিজেদের পরিবারের দেখভাল করতে পারব।"
একটু থেমে ডঃ চন্দ্র বললেন, "তোমাদের কাকিমারও – মানে, তোমাদের ওপর বেশ টান পড়ে গেছে। আসলে ধীমান বেঁচে থাকলে তোমাদের মতোই হতো কিনা। তাই আমি বলছিলাম – তোমাদের তো বুদ্ধির অভাব নেই, ছেড়ে দেওয়া লেখাপড়াটা এবার পুরো করো। আমি তোমাদের মদত দেব।"
সুবল মাথা নিচু করে বলল, "সে আপনি বললে আমরা করব। কিন্তু সে তো অনেক দিনের ব্যাপার। আর আমাদের পরিবারের অবস্থা তো জানেন – দিন আনি দিন খাই।"
ওর পিঠ চাপড়ে ডঃ চন্দ্র বললেন, "যদি এই কাকুটার কাছ থেকে হাত পেতে নিতে তোমাদের লজ্জা হয়, তবুও তার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তোমরা এই ক'দিন বিছানায় ছিলে দেখে জানো না ব্যাপারটা নিয়ে মিডিয়ায় কেমন তোলপাড় চলছে। তোমরা হীরো হয়ে গেছ। সরকার তোমাদের মদত দিতে রাজি। সাংবাদিকরাও ইন্টারভিউ করতে এল বলে – তোমরা অসুস্থ বলে অ্যাদ্দিন কোনওমতে ঠেকিয়ে রেখেছি। তারা টাকা দেবে। আর একজনের সাথে আমার কথা হয়েছে – সে তোমাদের ওপর বই লিখবে। তার জন্যও অ্যাডভান্স টাকা দেবে। কী, তাহলে তো আর পড়াশোনায় আপত্তি নেই?"
ডঃ চন্দ্রের পা ছুঁয়ে ওরা বলল, "না কাকু, আমরা নিশ্চয়ই পড়ব! আর কথা দিচ্ছি, এ লড়াইয়েও আমরা জিতব।"


ছবিঃ শিলাদিত্য বসু

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনীয়ার ও মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী অনিরুদ্ধ সেন কলকাতা-মুম্বইয়ের বিভিন্ন সাময়িকপত্র ও ওয়েব ম্যাগাজিনের নিয়মিত লেখক। তাঁর লেখা ও অনুবাদ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, এবং সংকলিত বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা