খেলাঘরখেলাঘর

FacebookMySpaceTwitterDiggDeliciousStumbleuponGoogle BookmarksRedditNewsvineTechnoratiLinkedin

নিঝুম দুপুর। ঝাঁ ঝাঁ করছে রোদ্দুর। দোতলার জানালার গরাদের ফাঁকে মুখ ঠেকিয়ে বাগানের দিকে তাকিয়ে বসে আছি। বাগানের আম-কাঁঠালের ছায়ায় খেলে বেড়াচ্ছে কাঠবেড়ালী। কুব-কুব করে ডেকে চলেছে কুব পাখি । ফলসা গাছের সবুজ- বেগুনি ফলের ফাঁকে ফাঁকে কিচমিচ করছে দুটো শালিখ। জামরুল গাছ ভরে গেছে সাদা সাদা জামরুলে। আম গাছ ভরে আছে কাঁচা পাকা আমে। চোখটা ঘুমে জড়িয়ে আসছে ...ভাবছি একটু পরেই মিষ্টি আম আর ঠাণ্ডা জামরুল খেতে দেবেন মা...এমন সময়ে ধপাস ধপাস আওয়াজ শুনে চোখ ফাঁক করে দেখিকি দুটো ছেলে পাঁচিল ডিঙিয়ে বাগানে ঢুকেছে আর সোজা জামরুল গাছে উঠে পড়েছে। উঠেই ওরা টপাটপ জামরুল তুলে ফেলছে!দেখেই তো আমি দৌড়ে গিয়ে ঠাম্মাকে ডেকে এনে হইচই কান্ড বাঁধিয়ে ফেললাম। কি দুঃসাহস ভাব একবার - আমাদের গাছ থেকে কিনা কাউকে না বলে জামরুল পেড়ে নিয়ে যাবে!- ভাগ্যিস আমি ঘুমিয়ে পড়িনি!

তোমার সঙ্গে এরকম হয়েছে নাকি? আমার ছোটবেলায় কিন্তু এরকম প্রায় এক রুটিন ছিল গরমের ছুটিতে। আমাদের বাগানের গাছগুলি ভরে উঠত নানারকমের ফলে। আর পাড়ার ছেলেরা দলবেঁধে এসে  পেড়ে নিয়ে যেত কত ফল। মাঝেমধ্যে অবশ্য আমাদেরকেও কিছু ভাগ দিয়ে যেত।

গরমকাল বা গ্রীষ্মকাল বললেই কি কি মনে পড়ে বলত? প্রথমেই মনে পড়ে স্কুলের লম্বা-আ-আ-আ ছুটি, তাই না? আর গ্রীষ্মের ছুটি বা সামার ভ্যাকেশন মানেই হল ঘুরতে যাওয়া পাহাড়ে বা সমুদ্রে। অথবা মামার বাড়ি বা পিসির বাড়ি...তাই না?বাইরে বেড়াতে গেলে তো কথাই নেই, খালি ঘুরে বেড়ানো আর ভালমন্দ খাওয়া -যত খুশি খাওয়া আইসক্রিম আর কোল্ড-ড্রিঙ্ক, তোমার সাথে সাথে  বাবা-মাও কেমন যেন ছোট হয়ে যান ওই কটা দিন... মা-ও আর বকাবকি করেন না বেশি।

অবশ্য গরমের ছুটি মানে খালি আনন্দই নয়। হাতের লেখা মকশো করা, নামতা মুখস্ত করা আর অঙ্ক করার মত কঠিন ব্যাপারও আছে। কিন্তু এসব তো করতেই হবে। এইতো সেদিন নতুন ক্লাসে উঠলে, নতুন বই খাতা এল, এখন তো একটু লেখাপড়া করতেই হবে। আবার স্কুল খুললে পরীক্ষাও আছে! আমি বলি কি, এইসব হাতের লেখা, অঙ্ক কষা আর বেড়াতে যাওয়ার ফাঁকে ফাঁকেই পড়ে ফেল 'ইচ্ছামতী'র নতুন সংখ্যা - গ্রীষ্ম সংখ্যা ২০০৯।


নববর্ষ, রবি ঠাকুরের আর সত্যজিত রায়ের জন্মদিন, সবই এই সময়ের খুব কাছাকাছি কয়েকটি উতসব বা স্মরনীয় দিন। তাই এই সংখ্যায় একটু করে থাকছেন রবি ঠাকুর আর সত্যজিত। থাকছে নববর্ষের গল্প ও। দেশে-বিদেশে এবার আমরা বিশ্ব-ভ্রমনে যাচ্ছি সাইমন আর ফার্গালের সঙ্গে। দেখতে যাচ্ছি মাটির নীচের এক অদ্ভূত রাজপ্রাসাদ। অন্যান্য নিয়মিত বিভাগের সঙ্গে থাকছে ছোট্ট বন্ধু সোহিনীর লেখা বেড়ানোর গল্প।

'ইচ্ছামতী'র যারা দেখতে-বড়-আসলে-ছোট পাঠক-পাঠিকা, তাঁরা অনেকেই আমাকে চিঠি লিখে জানান যে ইচ্ছামতী তাঁদের ভাল লাগছে পড়তে। কিন্তু ইচ্ছামতীর কমবয়সী পাঠকদের থেকে চিঠিপত্র যে খুব একটা আসছে না! তাহলে কি ইচ্ছামতী তাদের মনের মত বন্ধু নয়? যাঁরা আমাকে লিখছেন যে 'ইচ্ছামতী' তাঁদের ভাল লাগছে, তাঁদেরকে অনুরোধ করব, পরিবারের ছোটদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন 'ইচ্ছামতী'র, তারা যদি বাংলা পড়তে না পারে, তাহলে তাদেরকে নাহয় পড়েই শোনান। ছোটদের কেমন লাগছে তারা যদি নিজেরা লিখে পাঠায়, তাহলে আমি খুব খুশি হব।

এইখানে দুটো খবর আছে। জনপ্রিয় ই-পত্রিকা 'গুরুচন্ডা৯' এর টইপত্তর বিভাগে 'ইচ্ছামতী'র কিছু পাঠক তাঁদের ভাললাগার কথা বলেছেন। আরেকটা খুব ভাল খবর হল যে 'ওয়াশিংটন বাংলা রেডিও'  তাদের ওয়েবসাইটে 'ইচ্ছামতী'কে নিয়ে খুব সুন্দর একটি প্রতিবেদন লিখেছেন। তাদেরকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

তাহলে আর কি? মা কি আমের আচার তৈরি করে ফেলেছেন? তাহলে খানিকটা নিয়ে এস। আচারটা চেখে দেখতে দেখতে পড়ে ফেল নতুন 'ইচ্ছামতী'। আমি বরং আমার সেই হারিয়ে যাওয়া ছোট্টবেলার আম-কাঁঠাল-জামরুল গাছভরা বাগানটার কথা ভাবি...

ভাল থেকো।
চাঁদের বুড়ি।