সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
আব্রাহাম লিঙ্কনঃ জীবনের কিছু টুকরো

নাটকটা মানুষের মনে সারা ফেলেছিল। থিয়েটার হল রোজই প্রায় ভর্তি থাকে। সেদিন ভিড়টা যেন একটু বেশিই ছিল। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এসেছেন নাটক দেখতে। সঙ্গে সিকিউরিটি গার্ড। হল কর্তৃপক্ষও নিরাপত্তার ব্যাপারে খুবই সজাগ। তা সত্ত্বেও নাটক শেষ হওয়ার মুখেই গুলির আওয়াজ। রক্তাক্ত শরীরে লুটিয়ে পড়লেন প্রেসিডেন্ট। ভয়ে দর্শকরা ছুটোছুটি করছে। ছুটে এল নিরাপত্তা রক্ষী। দ্রুত নিয়ে যাওয়া হল হাসপাতালে। চিকিৎসকদের সমস্ত চেষ্টা ব্যার্থ হল। ১৮৬৫ সালের ১৫ এপ্রিল সকালের মারা গেলেন মানুষটি। এতক্ষণে তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ, আমি কার কথা বলছি। আমেরিকার ১৬-তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন। সাত দিন পরে মিলিটারির হাতে ধরা পরে আততায়ী। বিচারে তাকেও গুলি করে মারা হয়।

আব্রাহাম লিঙ্কনের জন্ম ১৮০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। তাঁর বাবা থমাস লিঙ্কন ছিলেন খুব গরীব। লেখাপড়া জানতেন না। এমনকী নিজের নামটাও সই করতে পারতেন না। কেনটাকির প্রত্যন্ত অঞ্চল হারডিন কাউন্টিতে তিনি চাষবাস এবং ছুতোর মিস্ত্রির কাজ করতেন। সেখানে অত্যন্ত অস্বাস্থকর পরিবেশে এক কামরার একটি কেবিনে বসবাস করতেন। মা ন্যানসি হাঙ্কস লিঙ্কন ঘরকন্নার কাজেই ব্যস্ত থাকতেন। দু’বছরের বড় আব্রাহামের এক দিদি ছিলেন। তাঁর নাম ছিল সারা। আব্রাহাম ও তাঁর দিদি এমন এক পরিবেশে বড় হচ্ছিলেন যেখানে পড়াশোনার তেমন কোনো সুযোগ ছিল না।

আব্রাহামের যখন সাত বছর বয়স তখন থমাস লিঙ্কন পরিবার নিয়ে ফ্রন্টিয়ার ইন্ডিয়ানায় চলে যান। সে সময় আমেরিকার প্রায় সর্বত্র দাসপ্রথা চালু থাকলেও এই অঞ্চলে ছিল না। এর দু’ বছর পরে আব্রাহামের মা ন্যান্সি হাঙ্কস্‌ মারা যান। কিছুদিন পরেই থমাস লিঙ্কন সারা বুশ জনসন নামে এক মহিলাকে বিবাহ করেন। নতুন মা আব্রাহামকে খুবই স্নেহ করতেন। তাঁরই ইচ্ছায় এবং প্রচেষ্টায় আব্রাহাম পড়াশোনা করার সুযোগ পান।

এখনকার আমেরিকার সঙ্গে ১৮০০ শতকের আমেরিকার কোনো তুলনাই হয় না। সে সময় গ্রাম্য জীবনে দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট লক্ষ্য করা যেত। ফার্মহাউস থেকে পণ্য মিসিসিপি নদী বেয়ে নিউ অর্লেনস-এ পৌঁছে দেওয়ার জন্য সতেরো বছর বয়সে আব্রাহাম যৌথ উদ্যোগে একটি পণ্য পরিবাহী নৌকা বানিয়ে রোজগার শুরু করেন। দিনের বেলা হাড়ভাঙা খাটুনির পর রাতে ফায়ার্‌প্লেস্‌-এর আগুনের আলোয় তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকেন। লিঙ্কন দৈহিক পরিশ্রমের চেয়ে পড়াশোনা করতে বেশি ভালো বাসতেন। নতুন কিছু শেখার প্রতি তাঁর অসম্ভব ঝোঁক ছিল। নিজের আগ্রহেই তিনি অনেককিছু শিখে নিতে পারতেন। এরজন্য কারও সাহায্যের দরকার হত না। বছর দুই এই কাজ করার পর নৌকা বিক্রি করে দিয়ে তিনি তাঁর সমস্ত উপার্জন বাবার হাতে তুলে দেন।

আব্রাহামের যখন একুশ বছর বয়স তখন তাঁর বাবা পরিবার নিয়ে ডেকাটুরের (Decatur) পশ্চিমে ইলিনয় (Illinois) শহরে চলে আসেন। এখানে তাঁরা একটি ছোট কাঠের বাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু করেন। এখানে এসে আব্রাহাম নিজের একক মালিকানায় আবার একটি পণ্যবাহী নৌকা তৈরি করে আগের ব্যবসায় নেমে পড়েন।

আব্রাহাম লিঙ্কনঃ জীবনের কিছু টুকরো
তরুণ আব্রাহাম লিঙ্কনের মূর্তি

ছয় ফুট চার ইঞ্চি লম্বা রোগা-পাতলা চেহারার আব্রাহাম ১৮৩১ সালে ইলিনয় রাজ্যের সালেম শহরে একটি জেনারেল স্টোরে কাজ নেন এবং সেখানে বসবাস শুরু করেন। এই এলাকার অধিকাংশ মানুষই স্বল্প শিক্ষিত ছিল। আব্রাহাম তাদের নানাভাবে সাহায্য করে তাদের মন জয় করে নেন। এই সময় থেকেই তিনি ধীরে ধীরে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন।

১৮৪২ সালের ৪ নভেম্বর আব্রাহাম লিঙ্কন মেরি টোড-এর সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। প্রথম জীবনে লিঙ্কন নিউ সালেমে পোস্ট মাস্টারের পদে এবং পরে কাউন্টি সারভেয়র হিসেবে চাকরি করেন। পরবর্তীকালে তিনি আইন পাশ করে আইনজীবী হন।

আব্রাহাম লিঙ্কনঃ জীবনের কিছু টুকরো

১৮৪৬ সালে আব্রাহাম লিঙ্কন ইউ এস হাউস অফ রিপ্রেজেন্টিটিভ হন। যাত্রা শুরু হল রাজনীতির আঙিনায়। ১৮৮০ সালের ৬ নভেম্বর তিনি উইং রিপাবলিকান দলের হয়ে আমেরিকার ১৬-তম প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন (১৮৬১ – ১৮৬৫)। তিনি চেয়েছিলেন আমেরিকায় ক্রীতদাস প্রথা বন্ধ করতে।

তাঁর জীবনে সপ্তাহের সাত দিনে সাতটি ঘটনা ঘটেছিল যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরলঃ

১) আব্রাহাম লিঙ্কনের জন্ম - রবিবার
২) দপ্তরে যোগদান-সোমবার
৩) রাষ্ট্রপতির পদে নির্বাচিত হন-মঙ্গলবার
৪) আইনসভায় নাম নথিভুক্ত করেন-বুধবার
৫) বিখ্যাত গেটিস্‌বার্গ বক্তৃতা দেন-বৃহস্পতিবার
৬) আততায়ীর দ্বারা গুলিবিদ্ধ হন-শুক্রবার
৭) মৃত্যু হয়-শনিবার


ছবিঃউইকিপিডিয়া

বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের সহ সভাপতি কমলবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় ছোটদের এবং বড় দের জন্য বিজ্ঞান বিষয়ক বহু বই লিখেছেন। বিভিন্ন জনপ্রিয় পত্রপত্রিকা এবং ওয়েব ম্যাগাজিনে তিনি নিয়মিত লেখালিখি করেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা