সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

এত্তবড় একটা কান্ড, আর তার একটা ইতিহাস নেই, সে তো হতে পারেনা। সেই ইতিহাসের গল্প বলি এবার। র‍্যুকান শহরকে এইভাবে উষ্ণতার দেওয়ার ভাবনাটা প্রথম মাথায় আসে নরওয়ের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী স্যাম আইডের মাথায়- প্রায় ১০০ বছর আগে। এই শহরের কাছাকাছি র‍্যুকান জলপ্রপাতের কাছে তিনি ভেমর্ক জলবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করেন। এই কেন্দ্রের কর্মীদের থাকার জন্যেই গড়ে ওঠে র‍্যুকান শহরটি। স্যাম নিজের জীবদ্দশায় তাঁর এই ভাবনাকে রূপায়িত করতে পারেন নি।

নর্স্ক হাইড্রো নামের এই প্রতিষ্ঠানে অন্যান্য অনেক কিছুর সাথে উৎপাদিত হত "ভারি জল"। আর এই ভারি জল উৎপাদন হত র‍্যুকানের এই কারখানায়। সেই সময়ে গোটা ইউরোপে একমাত্র এই কারখানায় ভারি জল তৈরি হত। ভারি জলের রসায়নে এই মূহুর্তে যাচ্ছি না। তবে এই ভারি জলের অনেক প্রয়োগের মধ্যে একটা হল পারমানবিক বোমা তৈরি করতে সাহায্য করা। আর সেই কারণে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে মিত্রশক্তির ভয় হয়েছিল যে অক্ষশক্তির দেশ জার্মানি এই ভারি জল ব্যবহার করে পারমানবিক বোমা বানিয়ে ফেলতে পারে। জার্মানি ততদিনে এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র অধিকার করে নিয়েছিল। তাই মিত্রশক্তির পক্ষ থেকে বারে বারে চেষ্টা করা হয় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে ধ্বংস করে ফেলার।কিন্তু সেটা সহজ কাজ ছিল না। দুর্ঘটনা ঘটে, বেশ কিছু সৈনিক মারা যান, আরো অনেকে গেস্টাপোদের হাতে নির্যাতিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।প্রথম দুবার তাঁরা সফল হন নি। তৃতীয়বারে ছয়জন নরওয়েবাসীকে প্রশিক্ষিত করা হয়। সেই কারখানার ধাঁচে মডেল বানানো হয় ইংল্যান্ডের হার্টফোর্ডশায়ারের এক লুকানো জায়গায়, যেখানে তাঁদের প্রশিক্ষন দেওয়া হত - ঠিক কিভাবে আঘাত হানতে হবে।


ভেমর্ক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, যেখানে তৈরি হত ভারী জল

তাঁরা পুরোপুরি প্রস্তুত হলে তাঁদের পরার জন্য দেওয়া হয় গরম সাদা পোষাক, যা তাঁদের বরফের পটভূমিতে মিশে যেতে সাহায্য করবে। ১৯৪৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৭ তারিখে শুরু হয়ে "অপারেশন গানারসাইড"। প্যারাশ্যুটে করে এসে তাঁরা ছ'জন নামতে পারলেন কারখানার কাছাকাছি- যদিও যেখানে নামার কথা ছিল, বাজে আবহাওয়ার জন্য তার থেকে অনেকটাই দূরে। প্রচন্ড ঠাণ্ডা, তুষারপাত ও তুষারঝড়কে উপেক্ষা করে , জার্মান সৈন্যদের চোখ এড়িয়ে, প্রবল পরিশ্রম করে, দশ দিন পরে তাঁরা কারখানার বেসমেন্টে পৌঁছাতে সক্ষম হলেন। এবং মাত্র কিছুক্ষণের মধ্যেই কারখানাটির নিচে প্রচুর বোমা স্থাপন করে সেটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হলেন। এই অন্তর্ঘাতের ফলে সেখানে সঞ্চিত সমস্ত ভারি জল নষ্ট হয়ে যায়। পারমানবিক বোমা তৈরি করে সারা পৃথিবীর ওপরে আধিপত্য করার যে স্বপ্ন হিটলারের ছিল, তাও শেষ হয়ে যায় সেই সাথে। এই অন্তর্ঘাতকে বলা হয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সবথেকে সফল অন্তর্ঘাত। আর যে ছয়জন এই কাজটি সফল করেছিলেন, তাঁদের সবার বয়স তখনো ত্রিশের কাছে বা নিচে। আরো যেটা রোমাঞ্চকর, এই দলটি জার্মান সৈনিকদের হাত এড়িয়ে, প্রবল তুষারঝড়ের মধ্যে দিয়ে কাঠের স্কি-তে চড়ে ২৫০ মাইল ক্রস-কান্ট্রী স্কি করে বরফে ঢাকা পাহাড়-উপত্যকা পেরিয়ে যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকা দেশ সুইডেনে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেন। এঁদের দুঃসাহসী অভিজ্ঞতার কাহিনী নিয়ে পরে ১৯৬৫ সালে হলিউডে তৈরি হয় ছবি- দ্য হিরোজ অফ টেলেমার্ক।

নর্স্ক হাইড্রো কোম্পানির সেই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে পরে নতুন করে তৈরি করে আবার কাজকর্ম শুরু হয়। আজকে যে এই তিনটি আয়না র‍্যুকানের বুকে আলো ফেলছে, তাদের খরচের বেশিরভাগটাই দিয়েছে এই সংস্থা। আর আরো আশ্চর্যের , এবং বলা চলে, আনন্দের ব্যাপার হল, এই আয়নাগুলিকে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করছেন জার্মান প্রযুক্তিবিদেরা!

বিজ্ঞান মানুষকে যেমন ধ্বংসলীলার আঁধারে টেনে নিয়ে যেতে পারে, ঠিক তেমনি জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে আশার আলোও জ্বালাতে পারে। আমরা আলো বেছে নেব, নাকি অন্ধকার , সে তো আমাদেরই ঠিক করতে হবে, তাই না?

তথ্যসূত্রঃ
উইকিপিডিয়া
দ্য গার্জেন
ডেইলিমেইল
কফিহাউজের আড্ডা

ছবিঃ
দ্য গার্জেন
উইকিপিডিয়া

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা