সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

এরপর সেন্ট্রাল পার্ক গেলাম । নিউইয়র্কের এই পরিছন্ন পার্কটি নাকি রাতের বেলায় নিরাপদ নয় মোটেও ।আমরা অবিশ্যি দিনের আলোতেই দেখলাম । পার্কের বেঞ্চে বসে কিছুক্ষণ জিরেন হল । পরে যখন এনিমেটেড ছোটদের সিনেমা "স্টুয়ার্ট লিটল" দেখেছি তখন শ্যুটিং স্পট রূপে এই সেন্ট্রাল পার্কটিকে চিনতে অসুবিধে হয়নি ।

এবার আমাদের গন্তব্য ইউনাইটেড নেশানস বিল্ডিং ।একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন এই ইউ. এন. ও (UNO) । যেখানে সব দেশের প্রতিনিধিরা মিলিত হন এবং বিশ্বের সমাজ ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য কি করা উচিত সেটি নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে উপদেশ দেন ।


ইউনাইটেড নেশানস বিল্ডিং

সারে সারে উড্ডীয়মান ইউনাইটেড নেশানসের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলির রংবেরংয়ের জাতীয় পতাকা । আমাদের তেরঙাকে খুঁজে পেয়ে যারপরনেই উদ্বেলিত মন । টুক করে তার ঠিক নীচে দাঁড়িয়ে গর্বিত ভারতীয়রূপে নিজেকে প্রতিনিধিত্ব করলাম মনে মনে । তারপর ইউএন প্লাজায় বসে একটু বিশ্রাম ।

আবার পরদিন সকালে মেট্রো চড়ে যাওয়া হল গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশন । সেখান থেকে বিখ্যাত নিউইয়র্ক মেট্রোপলিটান মিউজিয়াম অফ আর্ট দেখতে । স্প্যানিশ চিত্রকর ফ্র্যান্সিসকো গয়ার প্রদর্শনী চলছিল সে সময় । টিকিট কেটে নিয়ে ঢুকে পড়লাম মিউজিয়ামের ভেতরে । একে একে দেখতে লাগলাম ঘুরে ঘুরে । দিকপাল সব চিত্রশিল্পীর শিল্পকর্ম । কোনোটা তৈলচিত্র, কোনোটা জলরং বা প্যাস্টেল । অপূর্ব সংরক্ষণ, নিখুঁত পরিমন্ডল। ফরাসী চিত্রশিল্পী হেনরী মাতিজের ঝকঝকে ম্যুরাল, স্টিললাইফ। রং গুলি যেন মনে হয় নতুনের মত । ফরাসী ইম্প্রেশানিস্ট পেন্টার ক্লড মোনে এবং রেনোঁর অসাধারণ সব ছবি ছিল গ্যালারীতে । আর ছিল দুই পোষ্ট ইম্প্রেশানিষ্ট পেন্টার ফরাসী পল গঁগা ও ডাচ আর্টিস্ট ভিনসেন্ট ভ্যান গগের অনবদ্য কিছু ভালো ছবি । মন যেন ভরে গেল আমাদের ঘুরে ঘুরে দেখে ।


মেট্রোপলিটান মিউজিয়াম অফ আর্ট

এবার থকে গিয়ে রাস্তায় এসে লাঞ্চ খাওয়ার তোড়জোড় । পিত্জা-হাটের সাথে প্রথম হাতেখড়ি হল । মাত্র ৯৯ সেন্টসে পাওয়া গেল চিকেন আর ভেজ টপিং দেওয়া পার্সোনাল প্যান পিত্জা । অসাধারণ লাগল প্রথম স্বাদেই । এখানকার পিত্জাহাটে যাই এখন তবে সেই ওরেগ্যানোর প্রথম গন্ধ আর ব্ল্যাক অলিভ আর মোত্জারেল্লা চিজের সেই স্বাদ যেন পাইনা । চিজ উপছে পড়ছে প্রতিটি পিত্জায় । পেপারনি অর্থাত বিফ আমার নাপসন্দ তার চেয়ে আমি সুইট কর্ণ, ব্ল্যাক-অলিভ, বেলপেপার (ক্যাপসিকাম) অনিয়ন, মাশরুম পিত্জাতেই বেশি খুশি হলাম। ওখানে পিত্জাহাটের টেবিলে সেই বিশাল লাল প্ল্যাসটিক জগে ঠান্ডা কোক আর টেবিলে রাখা চিজের গুঁড়ো বড্ড মিস করি আজকের পিত্জায়। ভারতীয় পিত্জা হাটে একটু কার্পণ্য আছে চিজ আর চিকেনের ব্যাপারে ।

পিত্জা, গার্লিকব্রেড আর কোক খেয়ে প্রস্থান । নিউইয়র্কের পথে পথে ঘুরছি পায়ে হেঁটে । ট্যাক্সিভাড়া করার সামর্থ্য নেই তবে নতুন শহর খুঁটিয়ে দেখার তাগিদে ভালোই লাগছিল পথশ্রম ।পুরোণো কলকাতার অলিগলি । যেন ফ্রিস্কুল স্ট্রীট কিম্বা পার্কস্ট্রীট । অথবা নিউমার্কেট পাড়া কিম্বা এসপ্ল্যানেড । কিন্তু পুরোণো বাড়িগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায় । নিউইয়র্কের রাস্তায় পর্যাপ্ত মানুষও আছে। কিন্তু সাথে আছে পরিকাঠামো ।শপিংমল থেকে বড় বড় হোটেল, অফিস কাছারি সব আছে । ঘিঞ্জি একেবারে । কিন্তু কত সাজানো ।


ওয়াল স্ট্রীটর রাস্তায়

এবার গেলাম হাঁটতে হাঁটতে নিউইয়র্কের ব্যস্ততম রাস্তা ওয়াল স্ট্রীটে । আমাদের মুম্বাইয়ের দালাল স্ট্রীট, কোলকাতার লিয়নস রেঞ্জ আর নিউইয়র্কের ওয়াল স্ট্রীট, নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ অর্থাত যেখানে শেয়ার কেনাবেচা হয় । মিনিট দশেক হাঁটা পথে এবার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে । ১৯৮৯ সালে ছিল গগনচুম্বী সেই টুইন-টাওয়ার যার নীচে দাঁড়িয়ে একসাথে ছবি তুলেছিলাম তা আর নেই আজকে । বোয়িং ৭৬৭ জঙ্গী বিমান হানায় ভস্মীভূত হয়ে গেছিল এই ট্রেড সেন্টার ২০০১ সালে । কত কত নামী দামী অফিসের নথি, নজির কত মানুষ কিছুক্ষণের একটানা অগ্নিকান্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গেছিল এই হিংসাত্মক ঘটনায় । এখন আবার নবনির্মিত সেই টাওয়ার কিন্তু আগেরটি এখন ইতিহাস যা স্বচক্ষে দেখেছিলাম । আমেরিকা তথা সারা বিশ্বের ব্যাবসায়িক প্রাণকেন্দ্র এই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার । এবার যাওয়া হল ফিফথ এভিনিউ এবং ওয়েষ্ট থার্টিফোর স্ট্রীটের ক্রসিংয়ে আমেরিকার উল্লেখযোগ্য স্কাইস্ক্রেপার একশো দুইতলা এম্পায়ার ষ্টেট বিল্ডিং দেখতে । ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের পর আমেরিকার দীর্ঘতম বিল্ডিং হল এটি ।


ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার

সারাদিনের ঘোরাঘুরির পর অনেক রসদ নিয়ে আর ক্যামেরা ভর্তি ছবির নজির নিয়ে মিশে গেলাম নিউইয়র্ক মহানগরের কোলাহল মুক্ত মেট্রোরেলের জনস্রোতে ।

আবার ব্রুকলিন দিয়ে গিয়ে বন্ধুর বাড়িতে রাত্রিবাস । পাঁচ-পাঁচটা দিন যে কোথা দিয়ে কেটে গেল তা ভাবতেই পারিনা এখনো। শুধু স্মৃতির সরণি বেয়ে হেঁটে চলি আজো। অনুভব করি সেই আলোআঁধারি মহানগরের সন্ধ্যে আঁচ আর নরম সরম দুপুরের হালকা রোদ্দুরের ওম। এরপর আমাদের শেডিউলে নিউজার্সি থেকে নায়গ্রা । তা নিয়ে আবারো প্ল্যানিং, উত্তেজনা আর কোডাক ফিল্ম লোড করে নেওয়া রিকো ক্যামেরায় ।

ইন্দিরা মুখার্জি নিয়মিত বিভিন্ন কাগুজে পত্রিকা এবং ওয়েবম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখালিখি করেন। কবিতা-গল্প-ভ্রমণকাহিনী লেখা ছাড়াও, রসায়নশাস্ত্রের এই ছাত্রীর পছন্দের তালিকায় রয়েছে ভাল বই পড়া, ভ্রমণ, সঙ্গীতচর্চা এবং রান্না-বান্না। 'প্যাপিরাস' ওয়েব ম্যাগাজিনের সম্পাদক ইন্দিরা মুখার্জির সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বিভিন্ন স্বাদের বই-ও প্রকাশিত হয়েছে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা