সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
পরবাসে

দশদিশির কোনো দিক থেকে অধরা র‌ইলনা নায়াগ্রার রূপ দেখা। এবার দুপুর সূর্য সজাগ হয়ে জানান দিল লাঞ্চের সময় আসন্ন। সংলগ্ন ট্যুরিষ্ট সেন্টারের এক ক্যাফেটেরিয়ায় বার্গার-কোলড্রিংক-ফ্রেঞ্চফ্রাই দিয়ে দুপুরের সাদামাটা আহার সেরে নিয়ে স্যুভেনিয়র শপে। পরবাসে এসে অবধি আমি সংগ্রহ করে চলেছি দেশবিদেশের হরেক রকম পটারি। সেরামিক থেকে গ্লাস, কাঠ থেকে ক্রিস্টাল কোনো কিছু বাদ নেই সেই থলিতে। আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের বানানো হাঁড়ির আকারের এক ছোট্ট অথচ সুন্দর ফুলদানি কিনে তৃপ্ত হল মন।সাদার ওপর নীল জলের ঢেউ আঁকা। সুন্দর প্যাকিং করে দিল দোকানে। নায়াগ্রার স্মৃতিচিহ্ন বলে কথা! ভেঙে গেলে অমিও ভেঙে পড়ব।


এবার পার্কিং লটে ফিরে আসা... আমাদের চারচাকার মধ্যে তিনটি প্রাণীর প্রবেশ। মহাশান্তিতে বাড়ি অর্থাত নিউইয়র্কের সাময়িক ডেরার দিকে যাত্রা। সিডিতে বাজছিল গান। গল্প-আড্ডায় মুখরিত হাইওয়ে রাইড। ছুটে চলেছে ডাটসন নিসান গাড়ি। হাইওয়ের মায়াময়তায় যাত্রাপথ অনাবিল প্রশান্তিতে ভরপুর। আর নায়াগ্রা পরিদর্শনে ফূর্তিতে মন কানায় কানায়। পালা করে করে আধঘন্টা করে গাড়ী চালাচ্ছিল আমার স্বামী ও তার বন্ধু রঘু।


হঠাত বিকট শব্দ। ঘুম ভেঙে দেখি হাইওয়ে থেকে বেরিয়ে এসেছি, গাড়ির মধ্যেই কিন্তু প্রচন্ড লেগেছে হাঁটুতে। ছিটকে পড়েছে নতুন গাড়ি ততক্ষণে লেন থেকে বেরিয়ে পাশের বাদা জঙ্গলের মধ্যে। মাঝখানে সে ধাক্কা খেয়েছে কংক্রীটের দেওয়ালে। তুবড়ে, দুমড়ে, মুচড়ে সেই নতুন গাড়ির এক ভয়ঙ্কর রূপ হয়েছে। আমাদের গাড়ির চালক রঘু ঘুমিয়ে পড়েছিল বলে এই দুর্ঘটনা। পাশে মুখ থুবড়ে পড়েছি আমরাও কিন্তু কারোর কোনো বড়সড় ক্ষতি হয়নি। সে যাত্রায় গাড়ির ওপর দিয়ে যা হবার হয়েছে। সিট বেল্ট বাঁধা ছিল সকলের। কি তার মাহাত্ম্য এদ্দিনে বুঝলাম । আমেরিকার ভাষায় "totalled" অর্থাত গাড়ি সম্পূর্ণ শেষ। তাকে উদ্ধার করা যাবেনা কিন্তু আমরা ঈশ্বরের কৃপায়, সিটবেল্টের কৃপায় বেঁচে আছি ভালো মত‌ই।


ঘোর কাটতেই দেখি চারিদিক থেকে প্যাঁ-পো করে হুটার বাজতে বাজতে লাল, নীল আলো জ্বলতে জ্বলতে চক্রব্যূহ রচিত হয়েছে। পুলিশের গাড়ি এসে ঘিরে ফেলেছে আমাদের । জায়গার নাম রচেষ্টার। বিশাল টো-ট্রাক বা রেকার এসে টেনে নিয়ে যাবে সেই দুর্ঘটনার কবলে ক্ষতিগ্রস্ত নি্সান গাড়িটিকে। আমরা তিনজনে হতভম্বের মত উঠে বসেছি পুলিশের গাড়িতে । হঠাত মনে পড়ে গেল আমার সেই নায়াগ্রায় কেনা ফুলদানীর কথা। গাড়ির ডিকি খুলে পুলিশ এসেই পৌঁছে দিয়ে গেল আমার কেনা স্মৃতিচিহ্নটি। তারপর ইউএস পুলিশ গাড়ি করেই পৌঁছে দিল একটি কফিশপে। তখন সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। আমাদের কি খাতির সেই কফিশপে! বিদেশ বিভুঁইয়ে অচেনা অজানা বিশালাকায় কালো চামড়ার পুলিশ । সে সন্ধ্যেয় সে আমাদের বন্ধু হয়ে উঠল। ফার্স্ট এড থেকে শুরু করে গরম কফি, বিস্কিট সব এসে গেল তার আতিথেয়তায়। তারপর ফিরব কেমন করে? মানে নিউইয়র্কে। তার ব্যবস্থাও করে দিল সেই কোমলহৃদয় বিশাল মানুষটি। তাদের দেশে বেড়াতে আসা তিন ভারতীয়ের দুর্ঘটনা ঘটেছে অতএব সব দায় তাদেরই যেন । অতঃপর গ্রে-হাউন্ডবাসের তিনখানি টিকিট এসে গেল আমাদের হাতে। বিশ্রাম, আহার সব হল। বাবার মত মাথায় হাত রেখে তিন অপরিচিতের প্রতি সমবেদনা, তাও হল। সবকিছুর পর এবার অলবিদা! করুণ চোখে সে রাতের মত পিতৃতুল্য পুলিশ অফিসারকে বিদায় জানিয়ে আমরা চড়ে বসলাম আমেরিকার অন্যতম বাস সার্ভিস গ্রে-হাউন্ডের মস্ত এক বাসে।

ইন্দিরা মুখার্জি নিয়মিত বিভিন্ন কাগুজে পত্রিকা এবং ওয়েবম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখালিখি করেন। কবিতা-গল্প-ভ্রমণকাহিনী লেখা ছাড়াও, রসায়নশাস্ত্রের এই ছাত্রীর পছন্দের তালিকায় রয়েছে ভাল বই পড়া, ভ্রমণ, সঙ্গীতচর্চা এবং রান্না-বান্না। 'প্যাপিরাস' ওয়েব ম্যাগাজিনের সম্পাদক ইন্দিরা মুখার্জির সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বিভিন্ন স্বাদের বই-ও প্রকাশিত হয়েছে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা