সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
 কৃষ্ণসখা সুদাম

শ্রীকৃষ্ণের ছেলেবেলার বন্ধু সুদাম। কানাইয়ের চেয়ে সে বয়সে বড়। কিন্তু কানাইয়ের সঙ্গ ছাড়া তার মন টেঁকে না। তাই কৃষ্ণ-বলরাম যখন সন্দীপন ঋষির গুরুকুলে পড়তে গেল, সেও চলল সঙ্গে। একদিনের ঘটনা। গুরুপত্নী যজ্ঞের কাঠ আনতে ছেলেদের আশ্রম থেকে খানিকটা দূরের বনে পাঠালেন। যদি তাদের ফিরতে দেরী হয়, পাছে খিদে পায় ছেলেদের, তাই সুদামকে ডেকে বললেন, "বাছা, তুমি ওদের সকলের মধ্যে বড় বলে তোমার হাতে এই পুঁটলিতে ছোলা-মটর ভাজা দিয়ে দিলাম। ফেরার পথে যদি বৃষ্টি নামে, সকলকে নিয়ে কোন বড় গাছে ছায়ায় আশ্রয় নেবে, আর খিদে পেলে এই ছোলা-মটর ভাজা সবাইকে ভাগ করে দিও। সবার সঙ্গে মিলে খাবে, কেমন? তুমি বড় বলে তোমার উপরেই দায়িত্ব দিলাম।" সুদাম মাথা নেড়ে সায় দিল। কাঠ সংগ্রহ করে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। এমন সময় চারদিক আঁধার করে এল, কড়কড় করে বাজ পড়ল, শনশন করে ঝোড়ো হাওয়া বইতে লাগল, শুরু হল মুষলধারে বৃষ্টি। সবাই ছুটে গেল এক বিরাট গাছের নীচে। সুদাম গিয়ে একটা উঁচু ডালের উপর বসল। আর ছোটরা রইল নীচে। সবাই খুব ক্লান্ত। সকলের খিদে পেয়েছে। সুদাম ভুলে গিয়েছিল ঐ পুঁটুলির কথা যেটা তার কোমরে গোঁজা আছে। এখন খিদের সময় তার মনে পড়ল। সে চুপি চুপি পুঁটুলি খুলে ছোলা-মটর ভাজা খেতে শুরু করল। কুটুর কুটুর শব্দ শুনে বুদ্ধিমান কানাই বুঝল, সুদাম-সখা একলা একলা গুরুমায়ের দেওয়া খাবার খেয়ে ফেলছে। সে বলল, "সখা সুদাম, গুরুমা যে আমাদের জন্য খাবার দিয়েছিলেন, সেটা বের করো না ভাই! বড় খিদে পেয়েছে!" সুদাম বলল, "সেই পুঁটুলি আমার কোমর থেকে কখন খুলে পড়ে গেছে, আমি টের পাইনি।" কৃষ্ণ ছাড়ার পাত্র নয়, সে বলল, "তবে যে কুটুর কুটুর শব্দ শুনছি?" সুদাম বলল, "হাওয়া চলছে তো, তাই আমার শীত করছে আর শীতে কাঁপতে কাঁপতে আমার দাঁত ঠকঠক করছে।" এইভাবে মিথ্যে কথা বলে সুদাম একলাই সব ছোলামটর ভাজা খেয়ে শেষ করল। কৃষ্ণ সব বুঝল, কিন্তু সখাকে আর কিছু বলল না। কিন্তু সখার স্বার্থপরতা দেখে মনে কষ্ট পেল।

সুদাম স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে মিথ্যে বলে কাউকে ভাগ না দিয়ে একলা খাবার খেয়েছিল বলে তার দারিদ্র্য ছিল তার নিত্য সঙ্গী। এর অনেকদিন পরে স্ত্রীর পরামর্শে সুদাম পুরনো বন্ধু শ্রীকৃষ্ণের জন্য চিঁড়েভাজা নিয়ে মথুরায় যায় দেখা করতে। তখন কৃষ্ণ মথুরার রাজা হয়েছে। ছেলেবেলার বন্ধুর আনা চিঁড়েভাজা খেয়ে ভক্তবৎসল ভগবান আপ্লুত হয়ে পড়েন। তাঁর আশীর্বাদে সুদামের সাংসারিক অভাব ঘুচে যায়।

 কৃষ্ণসখা সুদাম

 

ছবিঃ পার্থ মুখার্জি

প্রাণীবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা; শিক্ষিকা হিসেবে কাজ বিভিন্ন স্কুলে। বর্তমানে একমাত্র নেশা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা। 'উদ্বোধন' (রামকৃষ্ণ মিশনের একমাত্র সাংস্কৃতিক বাংলা মাসিক পত্রিকা) পত্রিকার 'চিরন্তনী' বিভাগের পুরাণ-কাহিনীর নিয়মিত লেখিকা । এছাড়াও রামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠের অন্যান্য পত্রিকায় নিয়মিত লেখালিখি করেন এবং বই অনুবাদের সঙ্গে যুক্ত।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা