সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
 মেরী হ্যাড এ  লিটল ল্যাম্ব

ল্যাপটপে ইউটিউবের ভিডিওতে অ্যানিমেশন নার্সারি সং দেখতে দেখতে রিয়া একদিন বায়না ধরল তার মার কাছে, 'মেরীর মত আমারও একটা 'লিটল ল্যাম্ব চাই'। রিয়ার মা পড়ল মহা বিপদে। রিয়াকে বোঝাল, লিটল ল্যাম্ব মানে ভেড়ার বাচ্চা। সে চলবে, ফিরবে, ঘুরে বেড়াবে। তাকে চান করাতে হবে, খাওয়াতে হবে। কে করবে এসব? রিয়া সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল,কেন, তুমি?  তুমিই তো আমাকে এসব করাও, ল্যাম্বকেও করাবে। রিয়ার মা তাকে হালকা ধমক দিয়ে বলল, আমার অফিস আছে না? তাছাড়া তুমি তো স্কুলে যাও। কে দেখবে ল্যাম্বকে? রিয়া হেসে বলল , কেন, মেরী যেখানে যেখানে যায়, লিটল ল্যাম্বও তো সেখানে যায়। মেরীর সঙ্গে ইশকুলেও তো যায়। আমার সঙ্গে সঙ্গে ল্যাম্ব  ইশকুলেও যাবে। রিয়ার মা বিরক্ত হয়ে বলল, দেখলে না, মেরীর টিচার ম্যাম লিটল ল্যাম্বকে ক্লাশরুমে ঢুকতে দেয়নি। তোমার টিচার ম্যামও লিটল ল্যাম্বকে ঢুকতে দেবে না। তখন সে বেচারা কী করবে? রিয়ার মুখভার হল। সে গোমড়ামুখে বসে থাকল। তার চোখ ছলছল। তা দেখে রিয়ার মা-র ভীষণ কষ্ট হল। সে বলল, রিয়া সোনা, আমি তোমার জন্য একটা খেলনা ল্যাম্ব নিয়ে আসব। একেবারে মেরীর ল্যাম্বের মত দেখতে। তুমি তাকে নিয়ে খেলো, চান করিও, টাওয়েল দিয়ে গা মুছিয়ে দিও। গাছের পাতা ছিঁড়ে তাকে খেতে দিও। কেমন?'

রিয়ার মুখ এবার হাসিতে ভরে গেল। সে বলল, আজকেই কিনে দিও তাহলে। রিয়ার মা বলল, ঠিক আছে। দেখি একটা লিটল ল্যাম্ব পাই কিনা।

আজকাল তো অনলাইন অর্ডার দিলে ঘরে বসে আলপিন থেকে হাতি - সবই পাওয়া যায়। অতএব রিয়ার জন্য মেরীর মত একটা লিটল ল্যাম্ব পেতে রিয়ার মা-র তেমন বেগ পেতে হল না।

রিয়া দেখল, সত্যি সত্যি বাক্সতে  বন্ধ হয়ে  তার কাছে একটা লিটল ল্যাম্ব চলে এসেছে। এক্কেবারে মেরীর লিটল ল্যাম্বের মত। সে তক্ষুণি লিটল ল্যাম্বকে কোলে তুলে নিল। কী নরম আর ধবধবে সাদা। গা ভর্তি নরম লোম। কান দুটো ঝুলছে। চোখ দুটো গুলির মত। রিয়া তার খেলনা ল্যাম্বকে নিয়ে  খেলায় মেতে রইল।  এখন তার ইশকুল ছুটি। সে প্রতিদিন লিটল ল্যাম্বকে তার বাথটাবে চান করায়, তোয়ালে দিয়ে গা মুছিয়ে দেয়, রোদে ফেলে শুকনো করে তার গা, তাদের ব্যালকনিতে রাখা টবের গাছ থেকে পাতা ছিঁড়ে তাকে খাওয়ায়, তারপর নিজের পাশে  তাকে শুইয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

একদিন যেই না তার চোখ ঘুমে লেগে এসেছে, শুনতে পায়, লিটল ল্যাম্বটা তাকে বলছে, রিয়া, আমাকে বেড়াতে নিয়ে যাবি? রিয়া চোখ কচলে ঘুম থেকে উঠে বসে দেখে, তার খেলনা ল্যাম্ব সত্যিকারের ল্যাম্ব হয়ে গেছে। একলাফে বিছানা থেকে নেমে রিয়ার ফ্রকের কোণা ধরে টানছে। রিয়ারও কি আর বন্দী থাকতে ভাল লাগে? সে বিন্দুমাত্র চিন্তা না করে পায়ে চটি গলিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসেছে তার লিটল ল্যাম্বকে কোলে নিয়ে।

তাদের বাড়ির সামনে একটা ছোট্ট পার্ক আছে। সবুজ ঘাসে ভরা। গাছ আছে অনেক।কোনো কোনো গাছে ফুল ফুটে আছে। আর আছে দোলনা, সী-স', মেরি গো রাউন্ড। সে তার লিটল ল্যাম্বকে নিয়ে সেই পার্কেই ঢুকল। লিটল ল্যাম্ব রিয়ার পেছন পেছন দু-পা ছুঁড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে আসছে। কী আনন্দটাই না হয়েছে তার। রিয়া দোলনায় দুলছে, আর লিটল ল্যাম্ব লনের নরম সবুজ ঘাস খাচ্ছে চিবিয়ে চিবিয়ে। রিয়া সী-স'তে চড়ে বসল, মেরি-গো-রাউন্ডেও ঘুরে নিল, তাকে দেখে লিটল ল্যাম্বও ঘাস খাওয়া ছেড়ে সী-স'তে লাফ দিয়ে চড়ে বসল। ওমা! মেরি-গো-রাউন্ডেও চড়ছে দেখ! তাই না দেখে রিয়ার কী হাসি। সেদিনের মত এই পর্যন্ত। রিয়া লিটল ল্যাম্বকে নিয়ে ঘরে ফিরে এল। লিটল ল্যাম্ব আবার খেলনা ল্যাম্ব হয়ে গেছে। রিয়ার মা অফিস থেকে ফিরে দেখল রিয়া তার লিটল ল্যাম্বকে পাশে নিয়ে ঘুমিয়ে আছে। ঘুম থেকে উঠেও রিয়া কিন্তু তার মাকে জানালো না দুপুরবেলায় ল্যাম্বকে নিয়ে পার্কে যাওয়ার কথা।

 মেরী হ্যাড এ  লিটল ল্যাম্ব

এইভাবে রোজই রিয়া আর তার লিটল ল্যাম্ব বেরিয়ে পড়ে দুপুরবেলায়। সেদিন গেল আরও একটু দূরে। তাদের পাড়ার সীমানা পেরিয়ে তারা বড় রাস্তায় পৌঁছে গেল। কত গাড়ি যাচ্ছে হুস হুস। রিয়া একরত্তি মেয়ে।একটু ভয় পেল রাস্তা পার হতে। তবু সে সাহসে ভর করে তার লিটল ল্যাম্বকে কোলে তুলে নিল। যখন দেখল রাস্তা ফাঁকা, তখন সে এক ছুটে রাস্তা পার হয়ে চলে এল  এদিকের মাঠটায়। লিটল ল্যাম্ব রিয়ার কোল থেকে নেমে লাফাতে লাফাতে মাঠময় ঘুরে বেড়াচ্ছে। কী কচি কচি ঘাস! মনের আনন্দে সে ঘাস চিবোচ্ছে। আর একটা গাছের ছায়ায় রিয়া বসে আছে। এটা কী গাছ, সে জানে না। তবে হাওয়ায় গাছের পাতারা দুলছে। মাথার ওপর সিরসির সিরসির শব্দ হচ্ছে। রিয়া প্রথমে একটু ভয় পেল। ওপরে তাকিয়ে দেখল, না তেমন কিছু না। তার আবার বাঁদরকে খুব ভয়। তাদের বাড়িতে দরজা খোলা পেলে মাঝেমাঝেই একটা দুটো বাঁদর ঢুকে পড়ে। একদিন তো ঢুকে তাদের খাবার টেবিলের ওপর রাখা কলাগুলো নিয়ে পালাল। তারপর থেকে কাজের মাসিকে রিয়ার মা বলেছে, একদম দরজা খোলা না রাখতে। সে যখন দেখল, বাঁদর নয়, তখন নিশ্চিন্ত হয়ে বসল আবার। একটা বড় পোকা মাটির একটা ঢেলা নিয়ে তার দিকে গুটিগুটি পায়ে এগোচ্ছে। পোকামাকড়কেও সে ভয় পায়। তার মা অবশ্য বলেছে, তুমি যদি তাকে বিরক্ত না করো, তাহলে ওরা কিছু করবে না। রিয়া ঠিক বুঝতে পারল না, পোকাটা কি মাটির ঢেলাটাকে খাবার ভেবে নিয়ে যাচ্ছে, না ওটা দিয়ে খেলবে? সে যাই হোক, রিয়া পোকাটাকে বিরক্ত করেনি মোটেও, সে আপনমনে হেলতে দুলতে চলে গেছে। গাছটার তলায় রিয়ার ছোট্ট  রঙিন ছাতাটার মত ছোট ছোট ছাতা। এগুলো কি ব্যাঙের ছাতা? মা বলেছিল ব্যাঙের ছাতার কথা। কিন্তু একটা ব্যাঙও ধারেকাছে নেই।গাছের  ডালে কয়েকটা পাখি কিচকিচ করছে। রিয়া দেখল, তার লিটল ল্যাম্ব ঘাস খেতে খেতে অনেকটা দূরে চলে গেছে। সে এবার ভয় পেল। বাড়ি ফিরতে হবে তো। সে জোরে জোরে ডাকল, লিটল ল্যাম্ব, লিটল ল্যাম্ব ফিরে আয়, এবার বাড়ি যাব। রিয়ার লিটল ল্যাম্ব দূরে চলে গেলেও সে ঠিক শুনতে পেল, রিয়া তাকে ডাকছে। ঘাস খেতে খেতে সে প্রথমে থমকে দাঁড়াল। পেছন ফিরে লাফাতে লাফাতে একেবারে রিয়ার কাছে। রিয়া তাকে কোলে তুলে নিল।

 রিয়ার ইশকুলের ছুটি শেষ হয়ে গেছে। পিঠে ব্যাগ ঝুলিয়ে, কাঁধে ওয়াটার বটল নিয়ে ইশকুলের ভ্যানগাড়ি করে আজ সে ইশকুলে যাবে। লিটল ল্যাম্বের কথা ভেবে তার চোখ ছলছল। লিটল ল্যাম্বও তার দিকে করুণ চোখে চেয়ে আছে। রিয়ার মা দরজা খুলতে গেছে, সেই ফাঁকে টুক করে  রিয়া লিটল ল্যাম্বকে  তার ব্যাগে ভরে নিল।
 
 রিয়া যেই ইশকুলে পৌঁছেছে, লিটল ল্যাম্ব রিয়াকে ব্যাগের ভেতর থেকে বলল, ব্যাগটা খুলে দে রিয়া, এবার আমি বাইরে বেরোব। রিয়া ব্যাগ খুলে দিল। লিটল ল্যাম্ব তার ব্যাগ থেকে বেরিয়ে রিয়ার সঙ্গে সঙ্গে রিয়ার ক্লাসরুমে ঢুকল। রিয়ার বন্ধুরা চেঁচিয়ে উঠল, ওমা রিয়া, তোর সঙ্গে সঙ্গে একটা লিটল ল্যাম্ব ঢুকে গেছে। রিয়া হেসে বলল, ও আমার পেট ল্যাম্ব তো।  ঠিক মেরীর লিটল ল্যাম্বটার মতন না? ক্লাসের সবাই আনন্দের চোটে যে যার নিজের সিট থেকে উঠে পড়ল। হাততালি দিয়ে বলছে, ঠিক, ঠিক। একেবারে মেরীর ল্যাম্বটার মতন। কোথায় পেলি ওকে? রিয়া হেসে বলল, মা এনে দিয়েছে। সে তাদের বলল না লিটল ল্যাম্বটা আসলে একটা খেলনা। বাচ্চারা রিয়ার লিটল ল্যাম্বের সঙ্গে  খেলতে শুরু করল। সারা ক্লাস গমগম করে উঠল আনন্দে।

 মেরী হ্যাড এ  লিটল ল্যাম্ব

বাচ্চাদের হৈ-চৈ শুনে টিচার ম্যাম এসে ঢুকলেন ওদের ক্লাসে।  ক্লাসরুমে ঢুকে দেখে্ন কী সুন্দর ফুটফুটে সাদা একটা ভেড়ার বাচ্চা। অবাক হয়ে  তিনি তাকিয়ে থাকলেন ভেড়াটার দিকে। কী তুলতুলে! ওকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে ইচ্ছে করছে। তারপরই ভাবলেন, এ কী অনাসৃষ্টি! কীভাবে এল এই বাচ্চাটা! কিন্তু ভেড়ার বাচ্চাটাকে আদর করলে আর খেলা শুরু করলে ক্লাস নেয়াটাই মাটি হয়ে যাবে। পড়াশোনা কিছুই হবে না। সঙ্গে সঙ্গে  তাঁর মেরীর লিটল ল্যাম্বের কথা মনে পড়ে গেল। তিনি বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে ছদ্মরাগে চোখ পাকিয়ে বললেন, এই লিটল ল্যাম্বটা কে এনেছে? বাচ্চারা ভয় পেয়ে লিটল ল্যাম্বকে ছেড়ে যে যার নিজের সিটে বসে পড়ল। শুধু রিয়া তার লিটল ল্যাম্বকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। টিচার ম্যাম বললেন, ও! রিয়া, এটা তাহলে তোমার লিটল ল্যাম্ব?কেন ইশকুলে নিয়ে এসেছ? ইশকুলে কোনো পেট ( pet)কে আনতে নেই। তোমাদের সেই রাইমটার কথা মনে নেই?

টিচার ম্যাম গেয়ে উঠলেন

মেরী হ্যাড এ লিটল ল্যাম্ব
লিটল ল্যাম্ব লিটল ল্যাম্ব
ইটস ফ্লীস ওয়াজ  হোয়াইট অ্যাজ স্নো।
এভরিহোয়ার দ্যাট মেরী ওয়েন্ট
মেরী ওয়েন্ট মেরী ওয়েন্ট
দ্য ল্যাম্ব ওয়াজ শিওর টু গো
ইট ফলোড হার টু স্কুল ওয়ান ডে
স্কুল ওয়ান ডে স্কুল ওয়ান ডে
হুইচ ওয়াজ এগেইন্সট দ্য রুলস
ইট মেকস দ্য চিলড্রেন লাফ অ্যান্ড প্লে
লাফ অ্যান্ড প্লে
লাফ অ্যান্ড প্লে
টু সী দ্য ল্যাম্ব অ্যাট স্কুল
অ্যান্ড সো দ্য টিচার টার্ন্ড ইট আউট
টার্ন্ড ইট আউট
বাট স্টিল ইট লিঙ্গারড নিয়ার
হোয়াই  ডাজ দ্য ল্যাম্ব লাভ মেরী সো
লাভ মেরী সো
দ্য ইগার চিল্ড্রেন ক্রাই
হোয়াই মেরী লাভস দ্য ল্যাম্ব ইউ নো
হোয়াই মেরী লাভস দ্য ল্যাম্ব  ইউ নো
দ্য টিচার ডিড রিপ্লাই"

টিচার ম্যামের সঙ্গে গলা মিলিয়ে সব বাচ্চারা গেয়ে উঠল
মেরী হ্যাড এ লিটল ল্যাম্ব...

রিয়া একবারও বলল না ভিডিওতে এই রাইম সংটা দেখেই সে বায়না করেছিল তার মা-র কাছে লিটল ল্যাম্বের জন্য।
সে মুখভার করে বলল, ওকে ম্যাম। আমি আমার লিটল ল্যাম্বকে ব্যাগে ভরে নিচ্ছি।
টিচার ম্যাম ও বাচ্চারা অবাক হয়ে দেখল সেই  ফুটফুটে লিটল ল্যাম্বটা একটা খেলনা ল্যাম্ব হয়ে গেল আর রিয়া তার ব্যাগের চেন খুলে টুক করে ভরে নিল তাকে ব্যাগের ভেতর।

 

ছবিঃ বৃষ্টি প্রামাণিক

রুচিস্মিতা ঘোষ। রসায়নশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। বহুদিন ধরেই ছোটদের এবং বড়দের জন্য লেখালিখি করছেন। প্রকাশিত হয়েছে অনেকগুলি বই। এই মুহুর্তে একটি লিট্‌ল্‌ ম্যাগাজিন সম্পাদনার সাথে যুক্ত আছেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা