সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

ও! এই ঝলমলে দিনে
নাচো গাও, ঘুরে ফিরে
( সব্বাই এসো )

আজ শুধু খেলা খেলা
আর মেলে ধরো ইচ্ছেডানা
( চলো চলো )

গাছে গাছে, ফুলে ফুলে
রাঙিয়ে গেল রঙে রঙে
( এসো এসো )

নীল আকাশে মেঘেরাও চেয়ে –
জমেছে জলসা, জব্বর, ঝিল-পাড়ে!
( এসো এসো )

চারদিকে আজ উৎসবের আয়োজন
কার্টুন দেশে সবার আমন্ত্রণ
( সব্বাই এসো )

ফিসার নামের ব্যাঙটা গলা ছেড়ে গান ধরলো। পরনে সবুজ প্যান্ট, ডোরাকাটা সবুজ জ্যাকেট, সবুজ টাই। এক্কেবারে সাহেবসুবো। স্বচ্ছ কালো নিথর ঝিলের জলে সার সার ভেসে থাকা জলো সবুজ পাতার মধ্যে বড়সড় একটা পাতার উপর বসেছে গানের আসর। ম্যান্ডোলিন, বাঁশি, ড্রাম পর পর সার দিয়ে মঞ্চে সাজানো। এবার মিস্টার ফিসার ম্যান্ডোলিনটা গলায় ঝুলিয়ে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে গলা ছেড়ে গাইতে শুরু করে। গানের মাঝে দৌড়ে এসে ড্রামগুলোতে তালে তালে বাজাতে থাকে। এবার হাত পা ছুঁড়ে বিভিন্ন কসরত করে বেশ কিছুক্ষণ নেচে নেচে গাইতে থাকলো। তারপর গানে বিভোর হয়ে কখন জানি হঠাৎ আমার দিকে লম্বা হাতটা বাড়িয়ে দিল। আমিও অজান্তে হাতটা বাড়িয়ে দিই!    
তারপর একলাফে মিস্টার ফিসারের গানের আসরে! আমি অবাক বনে যাই। দেখি আমি চেহারায় ফিসারের মতোই হয়ে গেছি। দিব্যি পাতাটার উপর হেঁটে চলে বেড়াচ্ছি – কী অদ্ভুত! হকচকিয়ে বোকার মতো চারদিকটা দেখছি,  অমনি ঝিলের পাড়ে বসা শ্রোতা র‍্যাবিট ফ্যামিলি – পিটার র‍্যাবিট, ওর মা মিসেস র‍্যাবিট, ফ্লপ্সি র‍্যাবিট, ফ্লপ্সি বানি, বেঞ্জামিন, কটন টেইল, রাজহাঁস ও তার বাচ্চারা আর ধোপা সজারু সবাই হাততালি দিয়ে আমাকে স্বাগত জানাল। এবার মিস্টার ফিসার সবার সঙ্গে পরিচয়  করিয়ে দিল,
"হাই এভরিবডি, দিস ইজ আওয়ার নিউ ফ্রেন্ড – পপাই।"
তখন ঝিলের পাড়ের দর্শকরা সবাই একসঙ্গে চ্যাঁচালো,
"হাই পপাই, ওয়েলকাম টু আওয়ার ওয়ার্ল্ড।"

কী মজার দেশ! চারদিকে কেমন ঝলমলে রঙিন! গাছগাছালি, আকাশ–মেঘ, জল–স্থল সব জায়গায় রঙের ছড়াছড়ি। ঝিলের কালো স্বচ্ছ জলের ওপারে কালচে সবুজ ঘন জঙ্গলের দ্বীপ। আর এপারে সবুজ পাড়ে কাঠের চেয়ার, টুল, বেঞ্চে ওরা সবাই দর্শক। ওদের পেছনে ঘন সবুজ জঙ্গল। মাথার উপর নীল আকাশ। মাঝে মধ্যে দু’একটা ছেঁড়া মেঘের আনাগোনা। ভীষণ ভালো লাগছে। আমাদের চার দেওয়ালের আবদ্ধ ফ্ল্যাট থেকে এখানে এখন আমি মুক্ত!

ডাঙায় বসে থাকা দর্শকের মধ্যে থেকে পিটার র‍্যাবিট হাত তুলে সবার উদ্দেশ্যে বলল,
"শোনো সবাই, পপাই ভালো কবিতা আবৃত্তি করতে পারে। আমরা কি এখন ওর আবৃত্তি শুনবো?"  সবাই একসঙ্গে উচ্ছসিত হয়ে বলল,
"শুনবো – শুনবো।" আমিতো অবাক! পিটার কী করে জানলো আমি আবৃত্তি করতে পারি? আমি ওদের দিকে বোকার মতো চেয়ে থাকি। মিস্টার ফিসার এগিয়ে এসে আমার কাঁধে হাত রেখে বলে,"কার্টুনের দুনিয়ায় থেকে আমরা সব খবর রাখি, আমরা জানি তুমি আবৃত্তি শেখো আর ভালো আবৃত্তি করতে পারো।"
আমি আমতা আমতা করে বলি – "কিন্তু মা যে বলে – লেখাপড়া তো দূরঅস্ত, একটা কবিতাও নাকি ভালো করে বলতে পারি না, আমার দ্বারা কিচ্ছু হবে না ..."
ফিসার হেসে আমাকে আশ্বস্ত করে,
"ডোন্ট ওরি, এখানে কেউ কাউকে বকা দেয় না, সবাই সবাইকে উৎসাহ দেয়, একবার কবিতাটা বলেই দেখো না! তুমি ভালো বলবে – শুরু করো, শুরু করো।"  

কী বলবো ভেবে পাচ্ছি না। ফিসার আবার ভরসা দেয়,
"তোমার এখনি মনে পড়ছে এমন কোন কবিতা দিয়ে শুরু কর..."  

হঠাৎ আমার ‘শরৎ’ কবিতাটা মনে পড়ে গেল। তাই বলতে শুরু করি -

" এসেছে শরৎ, হিমের পরশ
লেগেছে হাওয়ার ‘পরে,
সকাল বেলায় ঘাসের আগায়
শিশিরের রেখা ধরে।

আমলকী-বন কাঁপে, যেন তার
বুক করে দুরু দুরু –
পেয়েছে খবর পাতা খসানোর
সময় হয়েছে শুরু।

শিউলির ডালে কুঁড়ি ভরে এল,
টগর ফুটিল মেলা,
মালতীলতায় খোঁজ নিয়ে যায়
মৌমাছি দুই বেলা ।

গগনে গগনে বরষন-শেষে
মেঘেরা পেয়েছে ছাড়া –
বাতাসে বাতাসে ফেরে ভেসে ভেসে,
নাই কোনো কাজে তাড়া।

দিঘি-ভরা জল করে ঢল্ ঢল্‌
নানা ফুল ধারে ধারে,
কচি ধানগাছে খেত ভ’রে আছে –
হাওয়া দোলা দেয় তারে।

যে দিকে তাকাই সোনার আলোয়
দেখি যে ছুটির ছবি –
পূজার ফুলের বনে ওঠে ওই
পূজার দিনের রবি।"

সঙ্গে মিস্টার ফিসার বাঁশি বাজিয়ে কবিতায় সঙ্গত করতে ছাড়লো না। কবিতা শেষ হতেই সবাই উচ্ছ্বসিত হয়ে জোরে জোরে হাততালি দিল। পাড় থেকে পিটার র‍্যাবিট দুহাত তুলে চেঁচিয়ে আমাকে উৎসাহিত করলো,
"ব্র্যাভো, পপাই ব্র্যভো!" ফিসার আমার পিঠে চাপড় মেরে বলল,
"কী বললাম – তুমি ভালো বলবে – বললে তো?"
আমিও অবাক, কী করে যেন আস্ত কবিতাটা সুন্দর করে আবৃত্তি করলাম! অথচ স্কুলে বলতে গিয়ে কতবার আটকে গেছি, লাইন ভুলে গেছি, লয় মেলাতে পারিনি।
তক্ষুণি ঝর্ণামাসির বাজখাঁই গলা,
"পপাই – পপাই! কোথায় তুমি?"
গলার স্বরটা যেন বহু দূর কোথা থেকে যেন প্রতিধ্বনি হতে হতে  ভেসে এলো!
হি হি, কি অদ্ভুত! ঝর্ণামাসিকে এখান থেকে কিরকম একটা বেঁটে খাটো সাদা কালো কার্টুন কার্টুন লাগছে! যেন সেই র‍্যাবিট রুবি ও ম্যাক্সের গ্র্যাণ্ডমাদার হয়ে গেছে! আমাদের ঘরটা কেমন ফ্যাকাসে পুরানো দিনের ছবির মতো লাগছে।  পড়ার টেবিল, আলমারি, সেল্ফ, সোফা সব কেমন যেন গাদাগাদি হয়ে টালমাটাল অবস্থা – এই বুঝি সব হুড়মুড়িয়ে পড়ল মেঝেতে! সব থেকে মজার ব্যাপার হল ঝর্ণামাসির ওই কার্টুন চেহারায় থপ থপ করে হাঁটা চলা – হাসি চেপে রাখা দায়।
হঠাৎ করে উনি এগিয়ে এসে টিভির দিকে ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়েছেন কি -অমনি আমি এক লাফে ডাঙ্গায়। তারপর নিমেষে দৌড়ে পিটার র‍্যাবিটের পেছনে লুকিয়ে পড়ি। ঝর্ণামাসি বড় বড় চোখ করে দেখলো বটে কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলো না। আবার ডাকলো,
"পপাই – পপাই!"  
ঘরের চারদিকে ভালো করে চোখ চালিয়ে আমার দেখা না পেয়ে হতাশ হয়ে টেবিলের উপর ধোঁয়া ওঠা নুডলসের বাটিটা ঢাকা দিয়ে রেখে, রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে যাচ্ছে,
"কোথায় লুকোচুরি খেলছে কে জানে! আমার এতো সময় নেই বাপু। টেবিলে খাবার রইল, খেয়ে নিও।"
কথাগুলো বারে বারে প্রতিধ্বনিত হতে থাকলো।

স্বস্তি পেয়ে আমি পিটার র‍্যাবিটের পেছন থেকে বেরিয়ে এসে ওর পাশে বসলাম। ওদিকে মঞ্চে মিস্টার ফিসার চোখ বন্ধ করে অঙ্গভঙ্গি করে গেয়ে চলেছে। হঠাৎ পেছনে ঝোপের মধ্যে আলোড়ন! সন্দেহের চোখে চেয়ে থাকি। দেখা যায় সেই ধেড়ে ইঁদুর -- মিস্টার ভিসকাস হাওয়ায় গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে এগিয়ে আসছে আর তার পেছনে মিস্টার টর্ক নামের খ্যাঁকশেয়ালটা লাঠি হাতে এদিক ওদিক লোলুপ দৃষ্টি হেনে, বাঁকা হাসি হেসে এগিয়ে আসছে খাবার টেবিলের দিকে। আমি পিটারকে ফিসফিসিয়ে যেই না বললাম পিটার সজাগ হয়ে গেল। তারপর দ্রুত ওর মায়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই মিসেস র‍্যাবিট চোখ বড় বড় করে ইশারায় চুপ থাকতে বলল। বাধ্য হয়ে পিটার বসে পড়ল বটে কিন্তু চোখ আমদের ওই শেয়াল ও ইঁদুরটার দিকে।

শেয়াল ও ইঁদুরটা তখন খাবারের টেবিলের সামনে এসে পড়েছে। লোভ সামলাতে না পেরে ইঁদুরটা হঠাৎ লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল টেবিলে। অমনি খাবারগুলো এলোমেলো ছড়িয়েছিটিয়ে পড়ল। থালা বাসনগুলো ঠোকাঠুকি খেয়ে ঝন্ ঝন্ শব্দ করে মাটিতে গড়াগড়ি খেতে থাকলো। গানের তাল গেল ভেঙে।

পিছন ফিরে সবাই তাকিয়েছি কি – দেখি খ্যাঁকশেয়ালটা আঁচড়ে কামড়ে আক্রমণের ভঙ্গিতে দৌড়ে আসছে! প্রাণ বাঁচাতে সবাই তখন যে যেদিকে পারলো দৌড়াতে শুরু করলো। আমিও বোকার মতো র‍্যবিটদের সঙ্গে দৌড়োচ্ছি, এদিকে ভিতু বেঞ্জামিন দৌড়াচ্ছে আর বিড়বিড় করে বকে চলেছে – "র‍্যাবিট কখনো ভয় পায় না, র‍্যাবিট কখনো ভয় পায় না..." সজারু ধোপা দৌড়োতে গিয়ে দুবার ডিগবাজি খেয়ে খ্যাঁকশেয়ালটাকে ‘পাজি, বদমাস, অসভ্য’ বলে চ্যাঁচাতে চ্যাঁচাতে, পড়িমরি করে দৌড়াচ্ছে। সবার পেছনে রাজহাঁস ও তার বাচ্চারা প্যাঁক প্যাঁক শব্দ করে ডানা ঝাপটে, লাফিয়ে প্রায় উড়ে উড়ে দৌড়াচ্ছে। এবার শেয়ালটা রাজহাঁসটাকে নিশানা করে দিল একটা লম্বা ঝাঁপ। রাজহাঁসটা ‘কোঁয়াক – কোঁয়াক’ করে বিকট চেঁচিয়ে আরো দ্রুত উড়ে পালানোর চেষ্টা করছে। পিটার তার সঙ্গীরা মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়ায়। আমিও দাঁড়িয়ে পড়ি। তারপর মাথা খাটিয়ে বুদ্ধি বের করলো, নিমেষে পিটার পায়ের কাছের কাঠের টুলটা তুলে সজোরে ছুঁড়ে মারল শেয়ালটার দিকে। টুলটা দুটো ডিগবাজি খেয়ে শেয়ালটার মাথায় মোক্ষম চাঁটি মেরে ছিটকে পড়ল। আর শেয়ালটা মাথায় চক্কর খেয়ে আছড়ে পড়ল মাটিতে। ততক্ষণে হাঁস তার বাচ্চারা প্যাঁক প্যাঁক শব্দ করে দৌড়ে পালাতে সক্ষম হল।

ততক্ষণে শেয়ালটা আবার উঠে দাঁড়িয়েছে। গা ঝাড়া দিয়ে ক্রুদ্ধ চোখে পিটার ও তার সঙ্গীদের দিকে তেড়ে এলো। দাঁতে দাঁত ঘষতে ঘষতে ভ্রূ কুঁচকে চ্যাঁচাচ্ছে,
"ঠিক আছে, রাজহাঁস না হোক, র‍্যাবিটের সুপ দিয়েই না হয় ডিনারটা সারা যাবে – ওঃ কি মজা!" অমনি পিটার র‍্যাবিট আর তার সঙ্গী লিলি আর বেঞ্জামিন দৌড়ে লাফিয়ে গানের মঞ্চে চলে এলো। এদিকে মিস্টার ফিসার গান বন্ধ করে বোকার মতো ভ্যাবাচাকা খেয়ে মঞ্চের এক কোণে দাঁড়িয়ে। তক্ষুনি লিলি লাফ দিয়ে মিস্টার ফিসারের বাঁশিটা ছিনিয়ে নিল।

ডাঙার এক্কেবারে কিনারায় দানবের মতো দাঁড়াল শেয়ালটা। হাতের লাঠিটা দুহাতে কচলাতে কচলাতে ক্রূর হাসি হেসে বলল,
"দারুণ হবে একসঙ্গে র‍্যাবিট ও ফ্রগের  প্রিপারেশন – আজ দিনটা খুব ভালো।"
নিমেষে লিলি বাঁশিটা জলে চুবিয়ে মুখে জল টেনে মুখ ভর্তি করে শেয়ালটার চোখ নিশানা করে পিচকারির মতো জল ছুঁড়তে লাগলো। শেয়ালটা এই আচমকা আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল না, হতভম্ব হয়ে গেল। চোখে কিচ্ছু দেখতে না পেয়ে হাতড়ে হাতড়ে লিলির দিকে এগোতে যাবে কি তার আগেই ঝিলের পাড়ের পাথরে পা পিছলে গিয়ে পড়ল ঝিলের ঠান্ডা জলে। তারপর হাবুডুবু খেতে থাকলো। বিকট চিৎকার চেঁচামেচি জুড়ে দিল। কোনপ্রকারে লাফিয়ে দাপিয়ে সাঁতরে ডাঙায় উঠে এলো, গা ঝাড়া দিয়ে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে, রাগে গজগজ করতে করতে দৌড়ে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে গেল।

আবার সবাই আনন্দে লাফিয়ে হৈ হৈ করে গানের আসরে ফিরে এলো। মিস্টার ফিসার স্বস্তিতে ম্যান্ডোলিনে টুংটাং করে বাজাতে শুরু করেছে। এদিকে পাথরের উপর কাত হয়ে পড়ে থাকা কাঠের গুঁড়ির একদিকে বসে মহানন্দে আরামে চোখ বন্ধ করে কেক খেয়ে চলেছে  ভিসকাস -- সেই ইঁদুরটা। হঠাৎ পিটারের মা দৌড়ে এসে গুঁড়িটার উল্টোদিকে ঝাঁপালো, অমনি ইঁদুরটা শূন্যে কয়েকটা ডিগবাজি খেয়ে ছিটকে পড়ল গভীর জঙ্গলে। সবাই আনন্দে হাততালি দিয়ে মিসেস র‍্যাবিটকে উৎসাহিত করল।

মঞ্চে মিস্টার ফিসার ম্যান্ডোলিনে সুর তুলতেই আমার কী মনে হল, আনন্দে দৌড়ে লাফিয়ে ফিসারের সামনে গিয়ে আমি নিজেই গলা ছেড়ে গাইতে শুরু করি –

"কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা  
মনে মনে
মেলে দিলেম গানের সুরে এই ডানা   
মনে মনে
তেপান্তরের পাথার পেরোই রূপকথার,
পথ ভুলে যাই দূর পারে সেই চুপকথার –
পারুলবনের চম্পারে মোর হয় জানা  
মনে মনে
সূর্য যখন অস্তে পড়ে ঢুলি  মেঘে মেঘে আকাশকুসুম তুলি।
সাত সাগরের ফেনায় ফেনায় মিশে
আমি    যাই ভেসে দূর দেশে—
পরীর দেশের বন্ধ দুয়ার দিই হানা   
মনে মনে"

সবাই আনন্দে হাততালি আমাকে আবার বাহবা জানালো।
    
এই হৈহুল্লোড়ে ঝিলের উল্টোদিকে জঙ্গলে গাছের কোটরে প্যাঁচাটার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটল। ঘুম ভেঙে গেল। রাগে গজগজ করতে করতে ডানা মেলে উড়ে এলো র‍্যাবিটদের গানের জলসার দিকে। আমি দেখতে পাচ্ছি প্যাঁচাটা উড়ে এসে আমাদের মাথার উপর চক্কর দিচ্ছে। তারপর সোজা ছোঁ মেরে আমাকে তুলে নিয়ে গেল প্যাঁচাটা! আমি নিরুপায় হয়ে কাঁদোকাঁদো হয়ে র‍্যাবিটদের বলি,
"বাঁচাও – আমায় বাঁচাও পিটার।"
প্যাঁচাটা আমাকে ধমকে চুপ করতে বলল। তারপর আপন মনে বকবক করে যাচ্ছে,
"আজ একটা নতুন স্বাদের খাবার হবে। এই লিলিপুটের লেগপিস রোস্ট বানাবো। উম্‌ - যা স্বাদ হবে না! ভেবেই জিভে জল এসে যাচ্ছে।"
ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে। আবার চেঁচিয়ে ওদেরকে বলি,
"বাঁচাও – আমায় বাঁচাও।"
প্যাঁচাটা খেঁকিয়ে ধমক দিল,
"চুপ, একেবারে চুপ, নয়তো পাড়ের পাথরে আছাড়ে দেবো।"
    
তক্ষুনি লিলি তার পকেট থেকে ছোট্ট আয়নাটা বের করে সূর্যের আলোর উল্টোদিকে ধরলো আর পিটার খুব তীক্ষ্ণ স্বরে মুখে শিস দিল। প্যাঁচাটার কান সে আওয়াজে ঝালাপালা হয়ে গেল। সে পেছন ফিরে বিরক্ত হয়ে নিচে র‍্যাবিটদের দিকে যেই তাকিয়েছে অমনি লিলি তার আয়নাটা প্যাঁচাটার দিকে তাক করলো। আয়নায় সূর্যের তীব্র ঝলসানো আলোয় প্যাঁচাটার চোখ ঝলসে গেল। ভ্যাবাচাকা খেয়ে সে আমাকে ছেড়ে দিল। আর আমি তখন শূন্যে তিনটে ডিগবাজি খেয়ে তীরবেগে পড়ে যাচ্ছি ঝিলের জলে। নিজেকে কেমন হাল্কা লাগছে। এ যে আর এক বিপত্তি! ভয়ে হাত পা পেটে সেঁধিয়ে যাচ্ছে। চোখে অন্ধকার দেখছি, চোখ বন্ধ করে প্রহর গুনছি।
    
ধপাস করে আওয়াজে আছড়ে পড়লাম মেঝেতে। ঝর্ণামাসি দরজা খুলে আমাকে দেখে অবাক! "কোথায় লুকোচুরি খেলছো? আর খেলা নয়, হাতে মুখে জল দিয়ে নাও। টেবিলে টিফিন রাখা আছে, খেয়ে নাও, এক্ষুনি টিউশনি স্যার এসে পড়বে..."  বলেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।  
টিভিতে তখনও মিস্টার ফিসার ম্যান্ডোলিন বাজিয়ে গান গেয়ে চলেছে। সে চোখ টিপে, দুষ্টু হাসি হেসে আমার দিকে তার হাতটা বাড়িয়ে দিলো।

 

ছবিঃ মহাশ্বেতা রায়

কাগজে-কলমে গ্রাফিক ডিজাইনার। কিন্তু সে কাজ ছাড়াও ইনি নানা কাজ করেন - মাঝেমধ্যে ইচ্ছামতীর জন্য ছবি আঁকেন, মাঝেমধ্যে ভাল ভাল গল্প লেখেন, আর প্রয়োজন হলেই চাঁদের বুড়িকে নানারকমের সাদাকালো-একঘেয়ে-বিরক্তিকর কাজকর্ম (যেগুলি একটা ব-অ-ড় ওয়েবসাইট চালাতে গেলে করতেই হয়)-সেইসব করতে সাহায্য করেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা