সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
মহাবিপদে ভুতুই

চার.

ভুতুই আর তরুণ বাবুই মেঘ আনতে যাচ্ছে শুনে আর সব পশু-পাখিদের ভেতরেও গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়।

চাতক বলল, ‘শূন্য আকাশে চেয়ে থাকতে থাকতে চোখে নীল জমেছে, শরীরে আর একটুও শক্তি নেই। এমনটি কোনো বার হয় না। তোমরা তাড়াতাড়ি যাও ভাই।’

লম্বা গলা আর লালচে-হলুদ ঠোঁটের বক ধ্যানীর মতো দাঁড়িয়ে ছিল। বলল, ‘খাল-বিল সব শুকনো, মাছ নেই। যাও ভাই মেঘ নিয়ে এসো, আমি অনেক মাছ উপহার দেব।’

ডোবার ঘোলা তপ্ত জলে ঘুরঘুর করছিল পানকৌড়ি-কাদাখোঁচা আর হট্টিটিও। ওরা বলল, ‘আমাদের বাঁচাও ভুতুই।’

শিমুল-পলাশগাছে দোয়েল আর কোয়েলের দল চুপচাপ সব শুনছিল। বলল, ‘জলচেষ্টায় আমাদের গলার সব সুর শুকিয়ে গেছে। গান গাইতে পারি না। মেঘ আনো ভাই। তোমাদের খুব সুন্দর গান শোনাবো।’

চড়ুই এসে বলল, ‘মেঘ না আনতে পারলে খেতে শস্য হবে না, সব মানুষ না-খেয়ে মরে যাবে। আমরাও শস্যদানা পাবো না।’

এ সময় হঠাৎ তরুণ বাবুইয়ের হবু বউ কাছে এসে ফিসফিস করে বলল, ‘তোমার কোনো ভয় নেই। যাও, মেঘ নিয়ে এসো, আমি তোমারই থাকব।’

এভাবে সবার ভালোবাসা নিয়ে যখন ভুতুই আর তরুণ বাবুই বঙ্গোপসাগরের অনেক গভীরে মেঘেদের কাছে পৌঁছলো তখন সেখানে মেঘ নিয়ে রীতিমতো কাড়াকাড়ি পড়ে গেছে। বাবুইরা আকারে অনেক ছোট, তাই বড় বড় পাখিদের সঙ্গে কিছুতেই পেরে উঠলো না। তরুণ বাবুই ভেবে পেল না, কী করে এত বড়বড় পাখির ভীড় ঠেলে মেঘ পাওয়া যাবে। তরুণ বাবুইয়ের মনে হলো, যতটুকু মেঘ রয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি রয়েছে পাখিদের বিশাল বিশাল ঝাঁক।

তারপরও ভুতুই যতভাবে সম্ভব চেষ্টা করল এক টুকরো মেঘ জোগাড় করতে। কিছুই পেল না। হতাশ আর ক্লান্ত হয়ে ওরা একটুখানি জিরিয়ে নিলো। ভুতুই তখন অনেক ভেবেচিন্তে একটা উপায় বের করল। বলল, ‘একটা বুদ্ধি পেয়েছি। যার কাছে দুটো মেঘ আছে তার কাছ থেকে কাকুতি মিনতি করে একটা চেয়ে নিতে হবে।’

তরুণ বাবুইয়ের খুউব মন খারাপ হয়ে গেল। সে ভেবেছিল, এমন কোনো কাজ নেই যা ভুতুই পারে না। এখন দেখা যাচ্ছে, ভুতুই অনেক কিছুই পারে না। ভুতুইও অনেক ক্ষেত্রে তাদের মতোই খুব সাধারণ আর অসহায়। নিজেরা অসহায় হলে ভয় লাগে না, কিন্তু গুরুজনেরা অসহায় হলে দুঃখ-কষ্টের শেষ থাকে না।

কিন্তু বিপদ আরো বাড়লো। ভুতুইয়ের বুদ্ধিটা একটুও কাজে লাগলো না। কাকুতি মিনতি দূরের কথা, ভুতুই আর বাবুইকে কেউ পাত্তাই দিলো না। শত চেষ্টা করেও তারা মেঘেদের কাছে ঘেঁষতে পারলো না। এটা আরো কষ্টের। ভুতুই বাবুইদের দেবতা হলে কি হবে, অন্যদের কাছে তো কেউ না। ফলে তারা কেউ গুরুত্বই দিলো না।

সব আশা ফুরিয়ে গেলে একে-একে। ক্লান্ত বিধ্বস্ত তরুণ বাবুই দুর্বল শরীরে ঝুপ করে সাগরের জলে পড়ে গেল। অতি বেদনায় চোখ ভিজে গেল ভুতুইয়ের। আহা, বেচারা! তাঁর সঙ্গে এসে আজ মরতে বসেছে। ভুতুই বুঝতে পারছে, তাঁর ক্ষমতা সামান্যই। বাবুইরা তাঁকে খুব ভালোবাসে বলে মনে করে তাঁর অসাধ্যি কিছু নেই। সে এবার বাবুই সমাজে মুখ দেখাবে কী করে? নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগলো তাঁর।

সমুদ্রের জলে দোল খাচ্ছে তরুণ বাবুইয়ের দেহ। মরেই গেল কী? মুখের কাছে গিয়ে ভুতুই ভালো করে নিঃশ্বাস করে পরীক্ষা করে দেখে এখনো অল্প-অল্প শ্বাস পড়ছে।
হঠাৎ একটি নবীন মেঘ এগিয়ে আসে ভুতুইয়ের কাছে। বলে, ‘ও কি মরে গেছে?’
মেঘের চোখেও জল। ভুতুই বলল, ‘এখনই হয়তো মরে যাবে।’
মেঘ বলল, ‘আমার পিঠে ওকে চড়িয়ে দাও। কোথায় যেতে হবে বলো?’
ভুতুইয়ের চোখ এবার আনন্দে ভিজে গেল। বলল, ‘আমি পথ দেখাচ্ছি, আমার পিছে পিছে এসো।’

সারা পথে তার বুক ধুকধুক করতে লাগলো, তরুণ বাবুই বাঁচবে তো!

অদ্বয় দত্ত পেশায় সাংবাদিক, ঢাকার ইত্তেফাক পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা