সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

বিকেলের সোনালি আলো উঁচু উঁচু আকাশছোঁয়া বাক্স বাড়িগুলিকে ঝকঝকে করে তুলেছে। 'বাক্স বাড়ি' কথাটা আমি নতুন শিখেছি। একটা গান শুনে - "সারি সারি বাক্স বাড়ি..."। আকাশটা কি নীল। তাতে কত্ত সাদা মেঘ। জানান দিচ্ছে দুর্গাপুজো আর মাত্র কয়েকদিন পরেই। এই আটতলার ফ্ল্যাটের জানলার ফোকর থেকে নীল আকাশে হারিয়ে যাওয়া যায় খুব সহজে। আর পেঁজা তুলোর মতো ভেসে বেড়ানো মেঘগুলোকে যেন চাইলেই ছোঁয়া যায়। এইসব ভাবছি আর বাংলা মিসের দেওয়া প্রোজেক্ট-এর জন্য শরৎকালের ছবি আঁকছি। নীল আকাশ এঁকেছি। তার ওপরে সাদা সাদা মেঘ। একটা নদী। নদীর পারে কাশফুল। কাশফুলগুলোকে ঠিক আঁকতে পারছি না। আসলে আমি সত্যি কাশফুল কোনদিন দেখিনি তো। শরৎকাল বোঝাতে আর কি কি আঁকব তাই ভাবছি। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখি একটা সাদা মেঘ, একেবারে আমার জানালায়। আমি তো অবাক। আর বলা নেই কওয়া নেই,হুড়মুড়িয়ে মেঘটা ঢুকে এল আমার ঘরে! আমি আমার চশমাটা নাকের উপর চেপে ধরে হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম। আমার ঘরটা মেঘে ভরে গেছে-চারদিকে শুধু মেঘ- তুলোর মত, আইসক্রিমের মত, সুগার ক্যান্ডির মত ! এইরে, আমার প্রোজেক্ট এর খাতা না ভিজে যায়... হঠাৎ সেই মেঘরাশির মধ্য থেকে দুটো সুরেলা মিষ্টি কন্ঠস্বর ভেসে এল ---

      এই মেয়েটা - একলা একলা
      ভাবিস কি'সব সারাবেলা!
      সারাটাদিন পড়াশোনা
      অঙ্ক- আঁকা- নাচা -গানা
      সময় নেই তো জিরোবার
      ভাল লাগে কি আর!
      এসব ফেলে উধাও হবি?
      বাড়িয়ে দে-না হাতটা দেখি!

এত এত মেঘের মধ্যে কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। কারা আমায় হাত বাড়াতে বলছে কিছুই বুঝে ঊঠতে পারছি না। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইলাম সেই মেঘ কুয়াশার দিকে। অমনি ছন্দ মিলিয়ে আবার ওরা বলতে থাকে -

      কি হলরে - এই মেয়েটা,
      হাতটা তবে বাড়িয়ে দেনা?
      কি দেখছিস অমন করে?
      যাবিনা তুই 'মেঘের দেশে!'

যেতে তো খুব ইচ্ছে করছে। এই একঘেয়েমি পড়া-পড়া, গানের ক্লাস, আবৃত্তির ক্লাস, সাঁতার ছেড়ে পালিয়ে যেন নিস্তার পাই কিন্তু কারা যে আমাকে মেঘের ভেতর থেকে ডাকছে দেখতে পাচ্ছি না তো! আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বলি - "কিন্তু আমি তো তোমাদের দেখতে পাচ্ছি না। কেমন করে যাব?" ওরা দুজনে হাসতে হাসতে উত্তর দেয় -
      কেমন করে দেখবি বল!
      নাকের 'পরে চশমাটা খোল্
      মোটা কাঁচের চশমা থাকলে
      মেঘের দেশের দেখা মেলে?

তক্ষুনি আমি নাকের ডগা থেকে চশমাটা খুলে ফেলি। অদ্ভূত! ধীরে ধীরে আমার চোখের সামনে সেই জমাট মেঘ হাল্কা হতে থাকল। তার মধ্যে দেখি, দুটো দুধ সাদা মেঘপরী ডানা ঝাপটে উড়তে উড়তে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে আমায় ডাকছে। কি অপরূপ সুন্দর পরী দুটো। দেখে চোখ ফেরানো দায়। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে রয়েছি আর অজান্তে কখন হাত দুটো ওদের দিক বাড়িয়ে দিয়েছি।

তারপরে দেখি মেঘপরী দুটোর সঙ্গে আমিও ভেসে বেড়াছি -আরেব্বাস, কি মজা! ওরা দুজনে দুদিকে আমার হাত দুটো ধরে উড়ে বেড়াতে থাকল। হারিয়ে যেতে থাকলাম নীল আকাশে, পেছনে পড়ে রইল আমার স্কুলের ব্যাগ, প্রোজেক্টের ফাইল, আমার মোটা কাঁচের চশমা। ওপর থেকে দেখতে পাচ্ছি পৃথিবীটাকে, কি দারুণ লাগছে দেখতে... মেঘ-আকাশ, ঝোপ-ঝাড়, গাছ-গাছালি, পশু-পাখি, মানুষ-জন।

নিচে সবুজ প্রান্তর আর তার মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে একটা আঁকাবাঁকা নদী। নদীর দুপারে ঘন সাদা কাশ ফুলের মেলা। কি সুন্দর হাওয়ায় অল্প অল্প মাথা দোলাচ্ছে। মেঘের দেশের এ দৃশ্য দেখে মন ভরে গেল। নদীর বুকে সাদা পাল তোলা ডিঙ্গায় মাঝি ভাটিয়ালী গান ধরেছে। সে গানের রেশ ছড়িয়ে পড়ছে মেঘের দেশের প্রতিটি প্রান্তরে। মনে লাগছে দোলা। মাথার উপর উড়ে বেড়ানো মেঘগুলোতে সে গানের সুর পৌঁছে যাচ্ছে। ওরাও হেলতে দুলতে এগোতে থাকে, খুশীতে ডগমগ ভাব সূর্য্যটার দিকে। তারপর ধীরে ধীরে ওরা সূর্য্যটাকে ঢেকে ফেলল। সেই মেঘরাশির মধ্যে থেকে ঝরতে থাকল বৃষ্টিদানা। মেঘের দেশে,মেঘেদের মধ্যে ভাসতে ভাসতেই বৃষ্টি পড়ার সেই অপরূপ দৃশ্য অপলকে দেখতে লাগলাম। অমনি পরীগুলো আমাকে টেনে নিয়ে উড়িয়ে নিয়ে গেল দূরে আরো দূরে, মেঘদুনিয়ার বাইরে।

ততক্ষনে হাসিমাখা সূর্যটা উঁকি দিচ্ছে ওই দুষ্টু মেঘগুলোর মধ্য থেকে। তাইনা দেখে পরীগুলো আহ্বলাদে আটখানা।

আমাকে ঘিরে উড়ে বেড়াতে থাকল, তারপর আমাকে শুন্যে ছুঁড়ে লোফালুফি করে। আমার কিন্তু একটুও ভয় করছিল না। তারা সঙ্গে সঙ্গে তালে তালে গান গাইতে থাকে ---
"মেঘের কোলে রোদ হেসেছে, বাদল গেছে টুটি। আহা, হাহা, হা। ..."

যখন অনেকটা আকাশ পাড়ি দিয়েছে, গান থামিয়ে একে অপরকে বলা বলি করে ---
আমার ডান দিকের পরী বলে - সই, একটা কথা কই?
বাঁদিকের পরী বলে- কি কথা বল্‌ না ভাই।

- নগর দেশের এই মেয়েটা,
ঘুরে আসুক ছড়ার মাঠটা?

- বলেছিস তুই ঠিক কথাই
ঘুরে ফিরে দেখুক সবই।

যেই না বলা অমনি দুজনে আমার হাত ছেড়ে দিল। আমি তখন জলের মধ্যে হেলে দুলে পালকের মতো উড়ে ধীরে ধীরে মেঘের দেশের মাটি ছুঁতে যাচ্ছি। নিচে দেখি এক বিশাল সবুজ মাঠ। মাঠের পাশে কয়েকটা ছোট কুঁড়ে ঘর। নিকানো উঠান। খড়ের চালা উঠোন পর্যন্ত নেমে এসেছে। বাঁশের খুঁটি,দরজা, বাঁশ বাখারির জানালায় কি সুন্দর সাদা রঙ্গের আল্পনা আঁকা । একটু দূরে চালাঘরের চালে কতগুলো শালিক পাখি ক্যাচর ম্যাচর করে ঝগড়া করেছে। আর উড়ন্ত পরী দুটো বলতে থাকে ---
      "সেদিন ভোরে দেখি উঠে
      বৃষ্টি বাদল গেছে ছুটে,
      রোদ উঠেছে ঝিল‍্‌মিলিয়ে
             বাঁশের ডালে ডালে,
      ছুটির দিনে কেমন সুরে
      পূজোর সানাই বাজায় দূরে,
      তিনটে শালিখ ঝগড়া করে
              রান্নাঘরের চালে।
      শীতের বেলায় দুই পহরে
       দূরে কাদের ছাদের ‘পরে
      ছোট্ট মেয়ে রোদ্‌দুরে দেয়
             বেগনি রঙের শাড়ি,"

কাগজে-কলমে গ্রাফিক ডিজাইনার। কিন্তু সে কাজ ছাড়াও ইনি নানা কাজ করেন - মাঝেমধ্যে ইচ্ছামতীর জন্য ছবি আঁকেন, মাঝেমধ্যে ভাল ভাল গল্প লেখেন, আর প্রয়োজন হলেই চাঁদের বুড়িকে নানারকমের সাদাকালো-একঘেয়ে-বিরক্তিকর কাজকর্ম (যেগুলি একটা ব-অ-ড় ওয়েবসাইট চালাতে গেলে করতেই হয়)-সেইসব করতে সাহায্য করেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা