চেয়ে দেখি চালাঘরের ওপাশে কমলা রঙের শাড়ি পরা একটি মেয়ে হাতে বেগনি শাড়ি শুকোতে দিচ্ছে দড়িতে। মেঘপরী আমাকে বলল, ওর নাম কমলাফুলি।সেই যে-
কমলাফুলি কমলাফুলি কমলালেবুর ফুল
কমলাফুলির বিয়ে হবে কানের মোতির দুল,
-সেই কমলাফুলি?? আমি অবাক হয়ে যাই !
কমলাফুলির বাড়ির একটু দূরে মাঠের পাশে বিশাল কালো জলের দিঘী। দিঘীতে পদ্ম কুঁড়ি মাথা উঁচু করে চেয়ে আছে আকাশের দিকে। এদিকে আধভাঙ্গা শানবাঁধানো দিঘীর ঘাটে আর একটা মেয়ে হাঁটু পর্যন্ত ডুরে শাড়ি পরে কলসিতে জল ভরছে। তাইনা দেখে কুঁড়ে ঘরের পাশের শাড়ি পরা মেয়েটা সুর করে করে বলে ---
"আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে, সূয্যি গেল পাটে
খুকু গেছে জল আনতে পদ্মদিঘীর ঘাটে
পদ্মদিঘীর কালো জলে হরেক রকম ফুল,
হাঁটুর নিচে দুলছে খুকুর গোছাভরা চুল।
বিষ্টি এলে ভিজবে সোনা, চুল শুকনো ভার
জল আনতে খুকুমনি যায়না যেন আর।।"
অমনি ওরা হেসে কুটোপাটি, ভালো করে চেয়ে দেখি সত্যি সত্যি ওই পদ্ম দিঘীর ওপরে দূরে সেই দুষ্টু ছাই ছাই রঙের মেঘগুলো আবার দল পাকাচ্ছে।
আমার খুব ইচ্ছে করছে খুকু আর কমলাফুলির সঙ্গে ভাব জমাতে। হাত পা ঝেড়ে ওদের দিকে দৌড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। তার আগেই ঝপাং করে আছড়ে পড়লাম একটা ঝোপের উপর। অমনি ঝোপের
মধ্য থেকে একটা বড় সড় চেহারার খরগোশ তেড়ে এল। কোমরে হাত রেখে, ভ্রু কুঁচকে,দাঁত খিঁচিয়ে ঝেঁঝেঁ বলে -
নগর দেশের মেয়ে বুঝি তুই!
কি আক্কেল তোর - দেখিস নে
দুষ্টু শেয়াল ওৎ পেতে ওই
মটকাবে ঘাড়, সুযোগ পেলে!
খুব হাসি পায়। ঠোঁট টিপে হাসি চেপে দেখি দূরে একটা ধূর্ত শেয়াল চতুর চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ছড়ার মাঠের আকাশে তখন দুটো হাঁস একটা কাঠিতে করে এক কচ্ছপকে বয়ে নিয়ে চলেছে।
কচ্ছপটা কাঠির মাঝখানে কামড়ে দিব্যি ঝুলে রয়েছে। তক্ষুনি শেয়ালটা তাদের দিকে মুখ করে চালাকি করে জোরে জোরে বলে---
আকাশপানে চেয়ে দেখি - একি!
কাছিমভাইয়া উড়ে বেড়ায় -সত্যি!
সাধ হয়েছে পাখির মতো
উড়তে, দেখবো আর কতো!
মুখ ফস্কে সটান্ পড় -
আমার যে আর সয়না তর!
আজ ভোজটা হবে জব্বর
খাব খাসা মাংস তোর-
উল্ফ, জিভে আসে জল
দিনটা যেন যায়না বিফল।
অমনি কচ্ছপটা রেগে বিরক্ত হয়ে চেঁচিয়ে বলে -
ধূর্ত শেয়াল, তোর চালাকি বুঝেছি-
বাকিটা বলার আগেই সে কাঠি থেকে মুখ খুলে পড়তে থাকল মাঠের মাটির দিকে। এদিকে শেয়ালটা আনন্দে লাফাতে থাকে। হাঁস দুটো উড়ে এসে কচ্ছপটাকে বাঁচনোর চেষ্টা করছে। কচ্ছপকে তারা আক্ষেপ করে বলে -
বন্ধু কি বোকামো করলে
ওর ফাঁদে পা দিলে!
কচ্ছপটা তখন হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে। সামনে দেখছি খুব বিপদ। ওটাকে বাঁচাতে হবে। তেড়ে গেলাম শেয়ালটার দিকে। তাড়া খেয়ে শেয়ালটা দাঁত খিঁচিয়ে বিরক্ত হয়ে মাঠের শেষে নদীর দিকটায় দৌড়ে পালায়। তারপর একলাফে কচ্ছপটাকে লুফে নিলাম। কচ্ছপটা নিশ্চিন্ত আশ্রয় পেয়ে স্বস্তি বোধ করে। ওর খোলস থেকে মুখ বের করে বলে -
ধন্যবাদ ভাই
কৃতজ্ঞ হই
তুমিই প্রথম
অন্য রকম
গপ্প রচলে
ভিন্ন একালে
এবার ওকে সবুজ ঘাসের উপর ছেড়ে দিলাম। ও মহানন্দে হেলতে দুলতে থপ্ থপ্ করে এগিয়ে চলে ঘন ঝোপের দিকে। এদিকে আমি সেই দুটো মেয়েকে খুঁজছি। দেখি ওরা তখন দিঘীর ঘাটে গপ্পে মশগুল।