সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

হঠাৎ কি যেন মনে পড়ে যেতেই ডুরে শাড়ি পরা মেয়েটা হলুদ শাড়ি পরা মেয়েটাকে বলে-
কি লো সই, যাবি না তুই?
শিউলি তলায় উৎসবে আজ যাচ্ছে সবাই।

ওরা দুজন তখন হাঁটা দিয়েছে উৎসবের মাঠে। আমার খুব ইচ্ছে ওদের সঙ্গে যেতে। ওদের পিছু নিতে হবে। কিছুটা এগিয়েছি এমন সময় দেখি দুষ্টু খরগোশটা দৌড়ে এসে কচ্ছপটাকে ভেংচি কাটে। কচ্ছপটা ধীর পায়ে কিছুটা এগিয়েছে অমনি খরগোশটা দৌড়ে ওকে টপকে গিয়ে তিড়ং বিড়িং নাচ নাচতে থাকে, জিভ ভ্যাঙ্গায় বারে বারে। আবার কচ্ছপটা এগিয়ে যায়, খরগোশটা দৌড়ে ওকে টপকে যায়।

আমি তখন প্রায় দৌড়ে মেয়ে দুটোর পিছু পিছু এগোচ্ছি। ঘাট পেরিয়ে সবুজ ঘাসের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে সবুজ ঝোপের বাঁকে মেয়ে দুটো হারিয়ে যাচ্ছে। তাই চিৎকার করে ওদেরকে ডেকে বলি - "শোনো, আমাকে নেবে তোমাদের সঙ্গে?"

হঠাৎ এই রকম ডাকে ওরা থমকে যায়। আমাকে দেখে একটু অবাক হয়। তারপরে বলে-

      তুমি বুঝি ভীনদেশি ?
      আমাদের সাথে যাবে?
      আমরা যাচ্ছি শিউলিতলায়
      যোগ দিতে উৎসবে।

বলে ওরা হাত নেড়ে আমাকে ডেকে এগিয়ে চলে। আমিও দৌড়ে ওই ঝোপটার কাছে যেই না গেছি, দেখি কচ্ছপটা হেলতে-দুলতেঝোপের মধ্যে ঢুকে গেল। তক্ষুনি খরগোশটা দৌড়ে এসে থমকে যায়। বিমর্ষ মুখে ঝোপের দিকে চেয়ে থাকে। কচ্ছপটা এবার ঝোপের মধ্য থেকে মুখ বের করে খরগোশটাকে বলে -

      "ধীর হও কিন্তু স্থির হয়ো না"
       নিতিবাক্যে তাই বলে - ঠিক কি না?
       সবই জানিস তবুও কেন মুখ ভারি!
       শুধুশুধুই করিস তড়িঘড়ি।

বলেই ঝোপের পাশে দিঘীর জলে ঝপাং করে ঝাঁপ দেয়। তারপর ডুব সাঁতার। খরগোশটা এতক্ষন বোকার মতো স্থির হয়ে কচ্ছপটার চলে যাওয়া দেখছিল। হঠাত কি যেন দেখে তড়িৎ গতিতে মুখ ফিরিয়ে দৌড়। চেয়ে দেখি সেই শেয়ালটা দিঘীর পাড়ে গাছের নিচে লেজ গুটিয়ে লোলুপ দৃষ্টিতে গর্তের দিকে ওৎ পেতে রয়েছে। অপেক্ষায় গর্তের কাঁকড়ার ঘাড় মটকাবে। এদিকে সেই মেয়ে দুটো চলে গেছে অনেক দূরে। আমিও দেই দৌড়।

গিয়ে দেখি শিউলি তলায় নিকানো উঁচু বেদী। সেখানে আমার বয়সী কত ছেলে, কত মেয়ে। বেদীর চারদিকে শিউলি ফুল কুড়িয়ে এনে সাজানোয় কেউ কেউ ব্যাস্ত। চারদিকে তখন শিউলি, ছাতিম, আরো কত ফুলের গন্ধে ম - ম করছে। কেউ কেউ আবার পদ্ম পাতায় ফুলের ডালি নিয়ে হাজির। খুকু আর কমলাফুলি আর ওদের বন্ধুরা দেখি মাথায়, হাতে লাল শালুকের মালা জড়িয়ে, হাত ধরা ধরি করে নাচতে নাচতে গান ধরে -

"আমরা সবাই রাজা
আমাদেরই রাজার রাজত্বে ..."

আমার খুব আনন্দ হয়। আরে, এই গানটা তো আমিও জানি। ওদের দেখে আমারো খুব নাচতে ইচ্ছা করছে। তালে তালে হাত তালি দিতে শুরু করি। তাই না দেখে ওরা আমাকে সেই বেদীর উপর ওদের সঙ্গে নাচার জন্য হাত নেড়ে ডাকতে থাকে। কিন্তু আমার খুব অস্বস্তি হয়। আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি। আমি তো কোনদিন নাচ করিনা স্কুলে। সবসময়ে গানের কোরাসে থাকি। এখন যদি ওরা আমাকে দেখে হাসে? আমার খুব লজ্জা হবে তাহলে। কিন্তু খুকু আর কমলাফুলি ছুটে এসে আমাকে টেনে নিল ওদের সাথে। আমিও সব লজ্জা-টজ্জা ভুলে হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাচতে থাকলাম সবার সাথে।

ঘুরে ঘুরে, হাততালি দিয়ে, আমরা নাচতেই থাকছিলাম। হঠাৎ গানের সুরের সাথে সাথে কি যেন একটা বেসুরো বাজছে। বাকিদের কারোর দেখি সেদিকে হুঁশ নেই। এদিকে সেই আওয়াজটা ক্রমশঃ জোর হচ্ছে যে- আমার নাচের তাল কেটে যাচ্ছে যে...হঠাত চোখ খুলে দেখলাম প্রোজেক্টের খাতাটা আমার মুখের সামনে। আর বিচ্ছিরি জোরে বাজছে ডোর বেল। এইরে! পাঁচটা বেজে গেছে যে! আবার গোমড়া মুখো ম্যাথ্‌স্‌ আন্টি এসেছেন। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল।। আজকে আবার আন্টি ডেসিম্যালের টেস্ট নেবেন বলেছেন। হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে থাকি। চোখ চলে যায় মেঘটার দিকে। মেঘটা তখন আমায় কত কি-ই না বলার চেষ্টা করছে আর হাতছানি দিয়ে ডাকছে।


ছবিঃত্রিপর্ণা মাইতি

কাগজে-কলমে গ্রাফিক ডিজাইনার। কিন্তু সে কাজ ছাড়াও ইনি নানা কাজ করেন - মাঝেমধ্যে ইচ্ছামতীর জন্য ছবি আঁকেন, মাঝেমধ্যে ভাল ভাল গল্প লেখেন, আর প্রয়োজন হলেই চাঁদের বুড়িকে নানারকমের সাদাকালো-একঘেয়ে-বিরক্তিকর কাজকর্ম (যেগুলি একটা ব-অ-ড় ওয়েবসাইট চালাতে গেলে করতেই হয়)-সেইসব করতে সাহায্য করেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা