সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
ঝপাং

ঝপাং যেদিন প্রথম আমাদের বাড়ি এল, তার হাবভাব দেখে আমার পিত্তি জ্বলে গেল। চারদিক খোলা মস্ত জিপগাড়িতে সোজা হয়ে ভারি আনমনা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তারপর আমাদের বাড়ি আসতেই ঝপাং করে নেমে গেরামভারি মুখ করে পরিত্যক্ত গ্যারেজটায় গিয়ে গ্যাঁট হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। অবশ্য গ্যারেজ এখন আর পরিত্যক্ত নেই। ওখানে ঝপাং-এর থাকার বেশ বিলিতি কায়দায় ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওর গাড়ি থেকে নামার ধরণ দেখেই টপ করে নামকরণ করে ফেললেন আমার ছোটমামা। আমার মনে ভয়ানক রাগ জমে আছে মামার উপর। নেহাত মা শিখিয়েছেন বড়দের সঙ্গে ঝগড়া-টগড়া করতে নেই, তাই চুপ করে আছি। তাই বলে এরকম শত্রুতা করবে আমার সঙ্গে? নিজের ভাগ্নের সঙ্গে?

আমার জন্মদিনের দুদিন আগে ফোন করে মামা জানতে চাইলেন আমার কী চাই? আমি আর কী বলব, বেশি ভালমানুষি দেখিয়ে বললাম, "তোমার যা পছন্দ তাই দিও।" উফ কেন যে সেদিন বলতে গেলাম এই কথাটা! মামা আমার কথা শুনে বেজায় খুশি হয়ে বলেছিলেন, "সাব্বাশ! দেখবি তোকে এমন একটা উপহার দেব, সারাজীবন আমার কথা মনে রাখবি!" আর সেদিনের সেই কথার ফলস্বরূপ ঝপাং এল আমাদের বাড়িতে। আমার জন্মদিনের উপহার! একটা বিচ্ছিরি, বদরাগী, মারকুট্টে ঘোড়া! ছোটমামা ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, "কীরে কেমন হয়েছে?" ভয়ানক রাগে আমি তখন বাকরুদ্ধ। দুমদুম করে পা ফেলে চলে গেলাম। কেউ পাত্তাই দিল না আমায়। উলটে বাবা-মা ভয়ানক আদিখ্যেতা শুরু করল ঝপাংকে নিয়ে। "ওমা কী সুন্দর ধবধবে সাদা, চোখগুলো ঠিক পুঁতির মত, কেমন পিটপিট করে চাইছে...কেমন ঠুকঠুক করে পা ঠুকছে!" মনে হচ্ছে ওই সব, আর আমি যেন ফেলনা! ঋজুর মামা ওকে জন্মদিনে দারুন একটা সাইকেল কিনে দিয়েছে আর মৈনাকের তো আরও মজা। ওর মামা জাপানে থাকে। সেখান থেকে একটা রোবোট এনেছে। আহা কী সুন্দর রোবোটটা। ওর নাম রোবি। একদম মানুষের মত। মৈনাকের সঙ্গে কথা বলে, খেলা করে। ধুত! আর আমার কপালে জুটল এক বিতিকিচ্ছিরি ঘোড়া! ছোটমামা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ না কী যেন একটা খটমট বিভাগে চাকরি করে। সে করুক, যত খুশি বন্যপ্রাণী বাঁচাক। আরে বাপু জন্তু জানোয়ার দেওয়ার হলে একটা সুন্দর কাকাতুয়া দিত, নিদেনপক্ষে একটা কুকুর বা খরগোশ। তা নয় একটা ঘোড়া! বাবাও চাকরি করেন বনবিভাগে। ঘোড়া পেয়ে আহ্লাদ আর ধরে না। বললেন, "এইরকম পাণ্ডববর্জিত জঙ্গলের মধ্যে বাংলো, এখানে ঘোড়ার খুব দরকার। কোনওদিন গাড়ি খারাপ হলে ওটায় চেপে দিব্যি আসা যাওয়া করা যাবে। আর হলও তাই। বাবার সঙ্গে ঝপাং-এর খুব ভাব হয়ে গেল। বাবা ওর উপর চেপে মাঝে-মাঝেই বিকেলে বেড়াতে যেত। মাও দেখলাম ওকে খাবার টাবার দিয়ে হাত করে নিয়েছে। শুধু আমার সঙ্গেই তেমন জমলনা। অবশ্য আমি নিজেই ধনুক ভাঙা পণ করে আছি, আমি কিছুতেই ঝপাংএর সঙ্গে বন্ধুত্ত্ব করব না!

দেখতে-দেখতে বর্ষা এসে গেল। ঝপাং তাই বেশিরভাগ সময়ে গ্যারাজেই থাকে। ঠিক হয়েছে। সারা বাড়িতে তিড়িং-বিড়িং করে নেচে বেড়ানো বন্ধ হয়েছে! বাবা অফিস থেকে ফিরলেই ও দৌড়ে চলে আসে। তখন কী ন্যাকা-ন্যাকা মুখ করে থাকে। আর আমি যেই ওর সামনে যাই অমনি দৌড়ে গ্যারাজে চলে যায়! আমি মাঝে-মাঝে ওর ওপর গোয়েন্দাগিরি করি। দেখলাম কখনও-কখনও গ্যারাজ থেকে একা-একা বেরিয়ে এসে আকাশের দিকে উদাস মুখ করে তাকিয়ে থাকে। তারপর ধুপধাপ লাফিয়ে তিন চক্কর খেয়ে চলে যায়।কী ব্যাপার কে জানে।বেশিদিন অবশ্য এই গোয়েন্দাগিরি টিকল না।কারণ বৃষ্টিতে ভিজে আমার খুব জ্বর হল।দুদিন কোনও জ্ঞান ছিল না। তিনদিনের মাথায় জ্বর একটু নামল। সেদিন দুপুরে চুপচাপ শুয়ে ছিলাম। মা এতক্ষণ মাথার কাছে ছিল, আমাকে ঘুমোতে দেখে খাওয়া-দাওয়া করতে গিয়েছে মনে হয়।হঠাত্‍ এক পাখির ডাকে চোখ খুললাম। আর চোখ খুলেই হৃদপিন্ড ধড়াস্‌ করে উঠল। আমার পড়ার টেবিলের সামনের চেয়ারটায় ঠ্যাংএর উপর ঠ্যাং তুলে বসে আছে ঝপাং!জ্বরের ঘোরে ভুল দেখছি না তো? কিন্তু জ্বর তো নেই এখন। তাহলে কী স্বপ্ন? না ঝপাংকে নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখতে পারিনা। এটা দুঃস্বপ্ন! নিজের গায়ে নিজেই একটা চিমটি কেটে উঃ করে উঠলাম। মানে আমি জেগে আছি।

ঝপাং

ঝপাং গম্ভীর মুখ করে বলল, "এবারে বিশ্বাস হল?"

কথা বলছে? একটা ঘোড়া মানুষের মত কথা বলছে। আঙুল দিয়ে কানটা ঝাঁকালাম। ঝপাং আবার বলল, "তুমি আমায় পছন্দ করো না তো ভারি বয়েই গেল আমার! আমিও তোমাকে মোটে পছন্দ করিনা!"

"ত-ত-তুমি কথা বলছ কী করে?"
"কী করে আবার? যেমন করে তুমি বলো তেমনি করে। এই তুমি কী তোতলা?" আমি রেগে গিয়ে বললাম, "কক্ষনও আমি তোতলা নই। তুমি ঘোড়া হয়ে মানুষের মত কথা বলছ তাই..."

চিহিহিহি করে গুটিকতক দাঁত বের করে হাসল ঝপাং। "সব ঘোড়ারা পারেনা, আমাদের মত ঘোড়ারা পারে!"
"তোমাদের মত মানে?"
"মানে যারা পক্ষীরাজ হয় তারা পারে!"
এই কথা শুনে আমার রীতিমত ভিরমি খাওয়ার যোগাড় হল। "পক্ষীরাজ? তুমি পক্ষীরাজ?"

ঝপাং উঠে দাঁড়াল তারপর গির্জার পাদ্রীর মত গম্ভীর গলায় বলল, "ডু ইউ নো অ্যাবাউট পক্ষীরাজ?"

বাবা, এযে আবার ইংরিজি বলে! আমার মুখ দেখে ঝপাং বোধহয় কিছু আন্দাজ করল। "আর বোলো না, একবার উড়তে-উড়তে পথ ভুলে সোজা বিলেত চলে গেছিলুম। উফ বাপরে বাপ, আমাকে দেখে সাহেব-মেমদের কী আহ্লাদিপনা! বলে আমি নাকি তাদেরই দেশের লোক। যত বলি ওরে বাপু না, সে কথা তারা শুনলে তো। কদিন রাজার হালে রেখেছিল বুঝলে। তখনই একটু আধটু সাহেবি ভাষা শিখেছিলুম। যাকগে, তুমি পক্ষীরাজ সম্পর্কে কী জানো?"

আমি মুখ ভেংচে বললাম, "জানার কিছু নেই। রূপকথায় ডানাওয়ালা ঘোড়াদের পক্ষীরাজ বলে। এসব গল্প অনেক পড়েছি। এগুলো সব তৈরি করা ঘটনা। আসলে হয়না।"

আমার কথা শুনে ঝপাং খুব দুঃখ পেল। আকাশের দিকে মুখ করে মড়াকান্না জুড়ল! "ও ছোটপিসি, ও ফুলজেঠু, ও নতুনমামা, এ ছেলেটা কী বলছে গো...এ বলছে পক্ষীরাজ হয়না গো..."

আমি ভয় পেয়ে বললাম, "ওকি অমন করে কেঁদে ফেলার কী হল?"

ঝপাং চোখের জলটল মুছে বলল, "না কেঁদে উপায় আছে। বড় কষ্ট পেলাম তোমার কথায়। চোখের সামনে জলজ্যান্ত একটা পক্ষীরাজ দাঁড়িয়ে আছে আর তুমি বলছ এরকম কিছু হয়না?"

আমি থতমত খেয়ে বললাম, "তুমি পক্ষীরাজ তো তোমার ডানা কোথায়?"

ঝপাং আবার অসভ্যর মত হাসল। "ওটা কী গয়না নাকি? সব সময় সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে হবে? বিলেত থেকে ফেরার পর ডানাজোড়া বেজায় নোংরা হয়ে গিয়েছিল তাই ডানা কাচতে ধোপার বাড়ি দিয়েছিলুম! সেটাই আনতে যাচ্ছিলাম। ব্যাস কোত্থেকে তোমার ছোটমামা উদয় হলেন। ভাবলেন আমি বুঝি পথ হারিয়ে ফেলেছি। অমনি আমায় ধরে বেঁধে এখানে নিয়ে এল।কী যে বিপদে পড়েছি...ডানাও নেই উড়তেও পারছিনা। আজ তো আবার পুন্নিমে আর আজই লক্ষীরাজের জন্মদিন। সে বলেছে আমি না এলে সে কেক কাটবে না...কী যে করি!" ঝপাং চিন্তিত মুখে পায়চারি করতে লাগল।

আমি বললাম, "এই লক্ষিরাজ আবার কে?"
ঝপাং খুব কেতা দেখিয়ে বলল, "কেন? তার কথা তোমাদের ওই রূপকথা না কিসে যেন লেখেনি বুঝি?"
আমি গোমড়া মুখে বললাম, "না লেখেনি। কে সে?"
"লক্ষীরাজ আমার ছোট ভাই। ছোটবেলায় খুব শান্ত ছিল তো তাই মা ওর নাম দিয়েছিলেন লক্ষীরাজ। আহারে বেচারার জন্মদিন, কী করে যে তার কাছে যাই!"
"তা তোমার এই লক্ষীরাজ থাকে কোথায়?"
"কোথায় আবার থাকবে? আমাদের বাড়িতে থাকে। মা-বাবা, ছোটপিসি, রাঙা কাকা, রাঙা কাকি, ফুলজেঠু, ফুলজেঠি, সানাই, রঙিন আর টুকলির সঙ্গে!"
আমার মুখটা হাঁ হয়ে গেল। "এরা কারা?"
"আমার পরিবারের লোকজন। আমাদের একান্নবর্তী পরিবার বুঝলে। তোমাদের এখানে তো শুনেছি ওসবের পাট চুকে গিয়েছে! আমাদের এখনও টিকে আছে।"

ঝপাংএর কথা শুনে মনটা একটু বিষণ্ণ হয়ে গেল। আমার জেঠু, কাকারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কর্মসূত্রে ছড়িয়ে আছেন। ভাইবোনগুলোর সঙ্গে কতদিন দেখা হয় না!

"কি ভাবছ?"
"কিছু না। ভাবছি তোমার ডানাদুটো পাবে কি করে? তোমার সেই ধোপা কোথায় থাকে আর তোমার বাড়িই বা কোথায়?"
"বাবারে বাবা! প্রশ্নের পর প্রশ্ন! ধোপা থাকে ধোপাপট্টিতে। আর আমার বাড়ি হল মেঘমুলুকে!"

এমন করে মেঘমুলুকের নাম বলল যেন সেটা ফ্রান্স কিংবা আমেরিকা শুনলেই বোঝা যাবে!তারপরেই আমার মাথায় বিদ্যুত্‍ খেলে গেল। মেঘমুলুক! মানে মেঘের দেশ! মেঘ থাকে আকাশে। তাই কি ঝপাং মাঝে-মাঝে উদাস মুখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতো? নিশ্চয়ই বাড়ির লোকজনকে দেখার চেষ্টা করতো।

ঝপাং এবার খুব অনুনয়ের সুরে বলল, "এই আমার ডানাদুটো ফেরত পেতে আমায় একটু হেল্প করোনা প্লিজ!"
"আমি কি করে সাহায্য করব? আমি তো ধোপাপট্টি চিনিই না।"
"ধুত্তর। ওখানে কে যেতে বলেছে? সে কি আর আমি নিজে যেতে পারিনা। ও আমি পরে গিয়ে নিয়ে নেবখন।"
"তাহলে কি করব?"
"আমাকে একজোড়া ডানা তৈরি করে দাও। ইশকুলে কীসব হাতের কাজ শেখায় না তোমাদের?"
"হাতের কাজ মানে ক্রাফ্ট?"
"হ্যাঁ ওইটাই।"
"কিন্তু ডানা তৈরি করতে শেখায় না আমাদের। তাছাড়া ডানা তৈরি করবই বা কী দিয়ে?"
"এটা কোনও ব্যাপারই নয়। ডানা তৈরি করতে লাগে পাঁচটা জটায়ুর পালক, বারোটা হাঁসের পালক, কুড়িটা বকের পালক, আঠেরোটা সারসের পালক শিরীষের আঠা আর হিমালয়ের বরফ!"
"বটে? তা ওগুলো পাব কোথায় শুনি?"
ঝপাং ফিসফিস করে বলল, "আমার কাছে সব আছে। শুধু বরফটা নেই। ওটা গলে গিয়েছে।"
এবার আর না করি কী করে। বললাম, "ঠিক আছে নিয়ে এসো। তবে বরফ আনতে হিমালয় যেতে পারব না!"
"আরে নানা, ওখানে যাওয়ার দরকার নেই। তোমাদের ফ্রিজের বরফ দিয়েই কাজ চালিয়ে নেওয়া যাবে অপাপতত।"

ঝপাং গটগট করে গিয়ে গ্যারাজ থেকে জিনিসপত্র নিয়ে এল। কোত্থেকে যে এসব বিদঘুটে জিনিস যোগাড় করেছিল কে জানে।মেঝেতে থেবড়ে বসে ডানা তৈরির কাজে মন দিলাম।

ঝপাং

ঝপাং ঘুরছে আশেপাশে আর খালি মাতব্বরি করছে। "হচ্ছে না, হচ্ছে না। উফ কী আহাম্মক ছেলে, ক্লাসে নাকি ফার্স্ট হয়, এদিকে ডানা তৈরি করতে পারে না।"
আমি রেগে গিয়ে বললাম, "এরকম করলে কিন্তু আমি চলে যাব।"
"আচ্ছা-আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি মন দিয়ে কর দেখিনি।"

অনেক কষ্টে ঘণ্টা তিনেকের চেষ্টায় ডানা তৈরি হল। তারপর চুপিচুপি মা'র নজর এড়িয়ে ফ্রিজ থেকে বরফ এনে ডানায় প্রলেপ দিতেই দিব্যি সুন্দর হয়ে গেল ডানাটা। ঝপাংএর সেকি আনন্দ। ধেইধেই করে নাচতে লাগল।

"ইস তুমি আমার এত উপকার করলে, লক্ষীরাজের জন্মদিনের কেক খাওয়াতে পারব না তোমায়!ডানা না থাকলে তুমি মেঘমুলুক থেকে ফিরবে কেমন করে?"
"তার আর দরকার নেই। তুমি তোমার ভাইয়ের জন্মদিনে খুব মজা করো। আমার তরফ থেকেও তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দিও।"
"সেতো দেবই। তবে তোমাদের সঙ্গে আর দেখা হবে না ভেবে মনটা খারাপ লাগছে!"
"সেকি ঝপাং, তুমি আর ফিরবে না?"
"কী করে ফিরি বলোতো? পক্ষীরাজ ঘোড়ারা যে এখানে থাকলে বেশিদিন বাঁচে না। তাছাড়া বাড়িতে একগাদা লোক, একবার গেলে আর কী আসতে দেবে?"

সত্যি বলতে কী এতদিন ঝপাংকে একটুও পছন্দ না করলেও ও পাকাপাকি ভাবে চলে যাবে শুনে আমারও মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমি শিরীষের আঠা দিয়ে ডানাদুটো ঝপাংএর কাঁধের সঙ্গে জুড়ে দিলাম। হঠাত্‍ আমার মাথার কাছটা ভিজে-ভিজে লাগছে। ঝপাং কাঁদছে নাকি? মাথায় হাত দিয়ে দেখলাম সেখানে একটা ভিজে কাপড়! শুনতে পেলাম মা বলছেন, "এইতো দেখে গেলাম জ্বর নেই, আবার কী করে এত জ্বর এলো?" বাবা চিন্তিত মুখে ডাক্তারকাকুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি ঘোর লাগা চোখে দেখলাম ঝপাং নেই।

মৃদু কন্ঠে বললাম, "ঝপাং কোথায়?" লক্ষ্য করলাম ঝপাংএর কথা বলা মাত্র বাবা-মার মুখটা কেমন কালো হয়ে গেল। ডাক্তারকাকু জ্বর কমাবার একটা ইনজেকশন দিলেন, আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরদিন সকালে ঘুম ভাঙল তখন আর জ্বর নেই। শরীরটাও অনেক ঝরঝরে লাগছে। তবে বাবা-মা মুখ বিষণ্ণ করে ঘুরছে। ঠিক আন্দাজ করেছি। দৌড়ে গ্যারাজে গিয়ে দেখলাম গ্যারাজ খালি ঝপাং নেই! বাবা বললেন কাল যখন আমায় নিয়ে সকলে ব্যস্ত ছিল ঝপাং কোথায় যেন চলে গিয়েছে! আমি কিন্তু মন খারাপ করলাম না। আমি জানি ও কোথায় গিয়েছে। গ্যারাজের ওখান থেকে ঘরে আসার সময় শুনতে পেলাম, মালিকাকা আর আমাদের ড্রাইভার কাকা বলাবলি করছে কাল ওদের গ্রামে অনেকেই চাঁদের আলোয় কী যেন একটা উড়ে যেতে দেখেছে! আমার হাসি পেল। বারান্দা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে মেঘমুলুকের দিকে চেয়ে বললাম, "গুডবাই ঝপাং!"


ছবিঃ পারিজাত ভট্টাচার্য্য

দোয়েল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রত্নতত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। পড়াশোনার সূত্রে নানা জায়গায় ভ্রমণ ও করেছেন। সহকারী গবেষকরূপে এবং সাংবাদিকতায় কিছুদিন অভিজ্ঞতা অর্জনের পরে এখন শিশুসাহিত্যে মনোনিবেশ করেছেন। সাথে থমসন্‌ রয়টারের হয়ে কাজকর্মও করেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা