খেলাঘরখেলাঘর

FacebookMySpaceTwitterDiggDeliciousStumbleuponGoogle BookmarksRedditNewsvineTechnoratiLinkedin

দোলা

কৈলাশে তোড়জোড় চলছে পুরোদমে। দুর্গা মায়ের বাপের বাড়ি আসার সময় হয়ে গেছে। আশ্বিন মাসের পিতৃপক্ষের শেষে দেবীপক্ষে মা নেমে আসবেন মর্ত্যে। এবারে মায়ের দোলায় আগমন। কথায় বলে, মা দুর্গা দোলায় এলে নাকি মড়ক লাগে। মড়ক লাগে কিনা জানিনা, তবে এই বছরে শুধু বঙ্গভূমিতেই নয়, সর্বত্রই নানান প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়েছে এবং হয়ে চলেছে। অনেক অনেকদিন পরে এবছর বাংলার আকাশে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ভাল করে মেঘ দেখা যায়নি। এবছর যে বৃষ্টি হচ্ছেনা, সে কথা তো আমরা ইচ্ছামতী বর্ষা সংখ্যাতেই বলেছিলাম, তাই না? শেষ অবধি, পশ্চিমবঙ্গে অনেক জেলায় খরা ঘোষণা করা হয়েছে। আর ওদিকে অন্য অনেক রাজ্যে নদীর জল বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে, বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে, বানে ভেসে যাচ্ছে ঘরদোর, মানুষ-পশু। কেন এমন হচ্ছে বলতো? সেকি শুধুমাত্র মা দুর্গা দোলায় চেপে বাপের বাড়ি আসছেন বলে? আমাদের কি কোনই দোষ নেই? আমরা ঘর বাড়ি বানানোর জন্য বন-জঙ্গল কেটে ফেলব, ক্ষেত-খামার নষ্ট করব, নদীর জলে এত ময়লা ফেলব যে নদীর জলধারন করার ক্ষমতা কমে যাবে...আর সব দোষ মা দুর্গাকে দিয়ে দেব, তা কি করে হয়?

কি ভাবছ? চাঁদের বুড়ি এত গম্ভীর কথা বলছে কেন? পুজো এসে গেছে,অথচ নতুন জামা- জুতোর গল্প না করে কিনা খরা আর বন্যার কথা? কি করি বল, চারিদিকের হাল হকিকত দেখে চাঁদের বুড়ি আর ইচ্ছামতী, দুজনেরই মন খুব খারাপ। পুজোর আনন্দের কথা ভাবতে গিয়ে ইচ্ছামতী জিজ্ঞেস করে তার বন্ধু লতাবুনী গ্রামের লকা, পাখিরালা গ্রামের আনন্দী, আন্দু বস্তীর সুরেশ, ক্যানিং এর রফিকুল, কাঁঠালগুড়ির মালতী, হাতিপোতার রিঙ্কু, নয়াগ্রামের অমর আর অমৃতা, বালির সিরাজুল - এরাও কি পুজোয় তার মত বা তোমার মত করেই আনন্দ করবে? বাবা-মায়ের হাত ধরে ঠাকুর দেখবে মন্ডপে মন্ডপে, আলোয় সাজানো পথ ধরে ঘুরে বেড়াবে সন্ধ্যাবেলায় নতুন জামা পরে, ইচ্ছা হলেই খাবে চকোলেট বা চিপ্‌স্‌?

প্রথম পাতা

আমি কিন্তু ইচ্ছামতীকে সত্যি কথাটাই বললাম। না, ওরা সবাই নতুন জামা পাবে না। ওদের কারোর গ্রামের পাশের নদীতে বান এসে ভাসিয়ে নিয়েছে ঘর, কারোর বাবা খরার কারণে করতে পারেননি চাষ, পুরো পরিবার নিয়ে চলে এসেছেন শহরে, চলে গেছেন অন্য রাজ্যে,  কাজের সন্ধানে। তাই হয়ত এবারে ইদে সিরাজুল আর রফিকুল পায়নি নতুন জামা, পুজোয় আনন্দী আর রিঙ্কু ঘুরবে খালি পায়ে। আমার কাছে এইসব শুনে ইচ্ছামতীর মন ভারি খারাপ হল। তখন আমি অনেক ভেবে আঁকলাম এক অন্যরকম ছবি - সেই ছবিতে দুর্গা মা নিজেই ইচ্ছামতীর সব বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছেন। লকা,মালতী, সুরেশ,অমৃতা, রফিকুলের সাথে পথ হাঁটছে লক্ষ্মী, সরস্বতী,গনেশ, কার্তিক ও। শুধু তাই নয়, সেখানে আছে ইচ্ছামতীর সব নতুন-পুরানো বন্ধু, এমনকি, তুমি নিজেও আছ!!

দুর্গা

সেই ছবি দেখে মুখে হাসি ফুটল ইচ্ছামতীর। বলল, আমিও যাব ওদের সঙ্গে আনন্দ করতে। আমি বললাম, যাবে যে, একটু সেজে-গুজে নেবে না? নতুন গল্প, নতুন ছড়া, নতুন তথ্য সঙ্গে করে না নিয়ে গেলে, তোমার বন্ধুরা তোমাকে বলবে কি?
এই কথা শুনে ইচ্ছামতী নতুন ভাবে সেজে ওঠার জন্য তক্ষুনি রাজি হয়ে গেল। আর তোমার জন্য সেজে উঠল নতুন শরত সংখ্যা নিয়ে।
নানাধরনের পাঁচটা গল্প, নতুন ছড়া, বিদেশী রূপকথা, দেশে বিদেশে, এসব তো আছে, এছাড়া শুরু হচ্ছে তিনটি নতুন ধারাবাহিক - ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে 'স্বাধীনতার কাহিনী', দেশবিদেশের পুরানকথা নিয়ে 'পুরাণঝুলি', এবং 'শিল্পের ইউরোপ', যেখানে আমরা জানতে পারব ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সংগ্রহে রাখা দুর্লভ সব শিল্পকর্মের কথা। এছাড়া পুজোর উপহার  থাকছে শব্দছক, ধাঁধা,  ছবির অ্যাল্‌বম, বন্ধুদের আঁকা ছবি। অবশ্য করেই পড় বেড়ানো নিয়ে এক মন্‌কাড়া মজাদার লেখা- 'পায়ের তলায় সর্ষে'।


ইচ্ছামতী এই পুজোয় দুই বছরে পা দিল। আরেকটু বড় হল। তাই ইচ্ছামতী এবার আরেকটু অন্য রকম ভাবে সেজে উঠল। এখন থেকে ইচ্ছামতীর প্রথম পাতা বা হোম্‌পেইজ্‌ সেজে উঠল  অন্যভাবে- হয়ে গেল ইচ্ছামতীর 'খেলাঘর' যেখানে থাকবে নানা ধরনের খবরাখবর , লিঙ্কস্‌, অন্যান্য তথ্য এবং গেম্‌স্‌। কেন বলতো? যাতে নতুন আনন্দের সন্ধানে ইচ্ছামতীর কাছে তুমি মাঝে মাঝেই, পারলে রোজই একবার করে আস, যাতে ইচ্ছামতীর  সাথে তোমার রোজ দেখা হয়...কেমন, বেশ ভাল হল না?
পুজোর কটা দিন তোমার সাথে সাথে থাকবে ইচ্ছামতী। আর তুমি থাকবে কার সাথে? - তুমি বলবে, আমি তো বাবা-মায়ের সাথে থাকব; কিন্তু আমি বলব, তুমি থাক রিঙ্কু, আনন্দী, সিরাজুল, অমর, লকা...সবার সংগে; ভাগ করে নাও আনন্দ আর খুশী। মা দুর্গাকে প্রার্থনা জানাও, যেন সবার মুখে সারা বছর থাকে হাসি, পেটে থাকে খাবার, পরণে কাপড়, হাতে কাজ। তবেই না সবাই মিলে দুর্গার বাপের বাড়ি আসার আনন্দে শামিল হতে পারবে।
মা এবারে ফিরে যাবেন হাতির পিঠে চেপে। যেতে যেতে দুহাত তুলে আশীর্বাদ করবেন সবাইকে। তাঁর আশীর্বাদে ভরে উঠবে ধরনীমায়ের আঁচল। পৃথিবী হবে শস্যপূর্ণা। আমরা তো চাই আমদের এই ইচ্ছা পূর্ন হোক। কিন্তু মায়ের এই বর সত্যিভাবে পেতে গেলে, আমাদেরও করতে হবে অনেক কাজ - বন্ধ করতে হবে অপচয়, বাড়াতে হবে গাছপালা, পরিষ্কার রাখতে হবে আমাদের আশ-পাশ -ভালোবাসতে হবে প্রকৃতিকে, পৃথিবীকে। ইচ্ছামতীর হাত ধরে তুমিও ভালবাসবে তো সবাইকে? আমাকে চিঠি লিখে জানিও কিন্তু।

পদ্ম

এই উতসবের মরসুমে, আনন্দ কর প্রাণ ভরে।

চাঁদের বুড়ি

২০শে আশ্বিন ১৪১৭
৭ই অক্টোবর, ২০১০
বৃহস্পতিবার
মহালয়া