খেলাঘরখেলাঘর

IAYP- ইন্টারন্যাশ্‌নাল অ্যাওয়ার্ড ফর ইয়াং পিপল অথবা ডিউক অফ এডিনবার্গ অ্যাওয়ার্ড - এই কথাটির সাথে অনেকেই পরিচিত নন । আমিও পরিচিত ছিলাম না। কিন্তু হঠাৎ করেই আমি আমার স্কুল থেকে এই পুরষ্কারের জন্য নির্বাচিত হই।খবরটা শুনে খুব আনন্দ হল। এই পুরষ্কার পাওয়ার জন্য আমাদের অনেকগুলি ক্লাস করতে হয় যেমন- রান্নার ক্লাস, টেবল টেনিসের ক্লাস, ফটোগ্রাফি ক্লাস ও ফার্স্ট-এডের ক্লাস। ফার্স্ট -এড ক্লাসে পড়ারে আসেন ডাক্তারবাবুরা। ফার্স্ট-এডে আমাদের প্র্যাক্টিক্যাল ও থিওরি ক্লাস করতে হয়। ফার্স্ট-এডের সব ক্লাস হয়ে যাওয়ার পর আমাদের পরীক্ষা দিতে হয়। পরীক্ষায় পাশ করলে আমরা St. John's Ambulance Association বা রেড ক্রস সোসাইটি থেকে সার্টিফিকেট পাই। পড়াশোনার সাথে এইসব করতে বেশ মজা হয়। এছাড়াও আমাদের এক্সপেডিশন বা অভিযানে যেতে হয়।

ছবি
হোটেলের সামনেই পাহাড় আর জঙ্গল

এবারে আমি প্রথম বার মার্চ মাসে পঞ্চলিঙ্গেশ্বরে ট্রেকিং করতে গেছিলাম। ওখানে গিয়ে আমরা প্রচন্ড মজা করেছিলাম। আমাদের ট্রেন দুয়ালি এক্সপ্রেস ভোর ছটায়, ২৩শে মার্চ, হাওড়া স্টেশন থেকে ছিল। আমরা সবাই ভোর পাঁচটায় এক সঙ্গে হাওড়া স্টেশনে জড়ো হলাম। ট্রেনে গিয়ে বসলাম। চার ঘন্টার মধ্যে আমরা বালেশ্বর পৌঁছে গেলাম।ওখান থেকে গাড়ি করে আমরা পঞ্চলিঙ্গেশ্বর পৌঁছে গেলাম।গাড়ি করে যেতে যেতে নীলগিরি পাহাড়ের অপূর্ব সৌন্দর্য দেখলাম।সেই জায়গার নিঃস্তব্ধতা আর পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখে আমার মন ভরে গেল। নীলগিরি পাহাড়টি পুরোটাই পাথরে তৈরি। আমরা পান্থনিবাস হোটেলে ছিলাম। সেখানে পৌঁছে যে যার নিজের ঘরে চলে গেলাম।

ছবি
ট্রেকিং শুরু হল

দুপুরবেলা খাওয়া হয়ে যাওয়ার পরে চারটের সময়ে আমাদের এই ট্রেকিং এর রুল্‌স্‌ অ্যান্ড রেগুলেশন্‌স্‌ ক্লাস হয়।তারপর আমরা নীলগিরি পাহাড়ে ট্রেকিং এর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যাই। আমরা ২৫০০ ফিট ওপর অবধি উঠি, তারপরে সন্ধে ছটায় আবার হোটেলে ফিরে আসি। তারপরে আমাদের মাউন্টেনিয়ারিং এর জন্য নট ক্লাস হয়।এই নট ক্লাসে (knot class) আমরা বিভিন্ন রকমের নট বা গিঁট বাঁধা শিখি।তারপরে সন্ধে সাতটার সময়ে স্ন্যাক্‌স্‌ খাওয়ার পরে আমরা সবাই এক সাথে অনেক রকমের খেলা খেলি রাত নয়টায় খাবার খেয়ে আমরা যে যার ঘরে শুতে চলে যাই। পরের দিন আমাদের চায়ের টাইম ছিল সকাল ৬ঃ১৫। আমরা তার জন্য ভোর চারটে থেকে উঠে বসে ছিলাম। সাতটার সময়ে জলখাবার খেয়ে আমরা নয়টার সময়ে জঙ্গলে ট্রেকিং এর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যাই।

ছবি
জঙ্গলের পথে

আমাদের হোটেল থেকে জঙ্গলের দূরত্ব ছিল মাত্র দশ মিনিট। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে অনেক ধরনের গাছপালা পশুপাখি দেখলাম।চোখে পড়ল একটা বড় পিঁপডের ঢিপি (anthill).

ছবি
বিরাট পিঁপড়ের ঢিপি

আবার একটা জংলি মোষও দেখেছি।জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে আমরা পৌঁছে গেলাম শিখর মিনার-এ। সেখানে চারিদিকে জল, শুধু মাঝখানে একটি ভাঙা মিনার।

ছবি
শিখর মিনার

শুনলাম যেখানে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, তার ঠিক পিছনেই সিমলিপাল রিজার্ভ ফরেস্ট। সুন্দরবন আর করবেট ন্যাশ্‌নাল পার্কের পরে সেখানে সবথেকে বেশি বাঘ আছে।

ছবি
দূরে সিমলিপাল অভয়ারণ্য

হোটেলে ফিরলাম বেলা ১টায়। দুপুরে খেয়ে আমরা ৪টের সময়ে রক ক্লাইম্বিং এর জন্য বেরিয়ে যাই। বেশ একটা নতুন অভিজ্ঞতা হল।

ছবি
রক ক্লাইম্বিং করতে করতে

ফিরে এসে বিকেলের জলখাবার খেয়ে আমরা কুকিং ক্লাসের জন্য প্রস্তুতি নিই। আমরা বানালাম আলুর দম।খেতে বেশ ভালই হয়েছিল।তারপর রাতের খাবার খেয়ে আমরা যে যার ঘরে চলে যাই। টিচাররা আমাদের সবার ঘরে এসে বলে যেতেন রাত ১০টা বেজে গেলে ঘুমিয়ে পড়তে। আমরা ঘরের লাইট বন্ধ করে, সবাই যে যার ঘরের বারান্দায়বেরিয়ে এসে টর্চ নিয়ে খেলতাম- এর ওর গায়ে আলো ফেলতাম। সে কি মজাটাই না হত!

তৃতীয় দিন আমাদের ট্রেকিং এর শেষ দিন ছিল। আমরা ভোর ৬ঃ১৫ তে র‍্যাপেলিং (rapelling)ঙ্গের জন্য বেরিয়ে গেলাম।র‍্যাপেলিং এ আমাদের একটি পাহাড় থেকে নামতে হবে। সেই দড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে নামতে নামতে কি অপূর্ব দৃশ্যই না দেখেছিলাম। চারিদিকে পাহাড় আর আমি এক পাহাড়ের চূড়ার (২,৫০০ মি) ওপরে দাঁড়িয়ে আছি।তারপরে র‍্যাপেলিং করে এসে আমরা সকালের জলখাবার খেয়ে যে যার ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নিই। সকাল নয়টায় আমরা সবাই মিলে এক সাথে ট্রেজার হান্ট খেলি।খেলার পরে আমাদের ক্যাম্প ক্রাফট ক্লাস হয়।সেখানে আমরা কয় ধরনের টেন্ট হয় জানলাম।টেন্ট কি করে পুঁততে হয় শিখলাম।তারপরে দুপুরের খাওয়া খেয়ে যে যার নিজের ঘরে চলে গেলাম।বিকেল চারটের সময়ে আমরা পঞ্চলিঙ্গেশ্বর মন্দিরের দিকে রওনা দিই। সেখানে পাঁচটা পাথর রাখা ছিল। এর পরে আমরা আরো একটা জঙ্গলে গেলাম। সেটা আর একটু গভীর জঙ্গল। সেখানে গিয়ে দেখলাম হাতিরা যেখানে চান করে সেই পুকুর।

ছবি
হাতিরা স্নান করে এই পুকুরে

গায়ের ওপর পুরো গাছপালা চলে আসছিল।সরিয়ে সরিয়ে যেতে হচ্ছিল। পুরো রাস্তাটা গাছের পাতায় ঢেকে গেছে। কিছুই দেখা যাচ্ছেনা।

ছবি
ঘন জঙ্গলের মধ্যে

হোটেলে ফিরলাম তখন বাজে সন্ধে ছটা। সাতটা থেকে আমাদের ক্যাম্পফায়ার হয়। সেখানে আমরা মজা করি।তারপর রাত্রে খেয়ে আমরা যে যার ঘরে শুতে চলে যাই।রাত দুটো অবধি আমরা জেগে থাকি। খুব সুন্দর চাঁদ দেখেছিলাম।

পরের দিন আমরা সবাই ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। সেদিন আমাদের ফেরার দিন। সকালে জলখাবার খেয়ে আমরা বালেশ্বরের উদ্দেশ্যে রওনা হই। বালেশ্বর থেকে ট্রেন ধরে আমরা হাওড়া স্টেশনে ফিরে আসি।তার পরে বাড়ি ফিরে আসি।

এটা ছিল আমার ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড এর জন্য। আশা করি এইভাবে আমি আমার সিল্ভার আর গোল্ড অ্যাওয়ার্ডের দিকেও এগিয়ে যেতে পারব।

লেখা ও ছবিঃ
ছবি
মধুরিমা গোস্বামী
নবম শ্রেণী
ভবানীপুর গুজরাতি এডুকেশন সোসাইটি স্কুল, কলকাতা

More articles from this author