এবার ফিরে আসি আজকের গল্পে। দক্ষিণ নরওয়ের টেলেমার্ক কাউন্টির এক ছোট্ট শহর র্যুকান (Rjukan)। এই শহর রয়েছে পাহাড়ে মধ্যবর্তী এক উপত্যকায়। ফলে যে সমস্যাটায় এই শহর এতদিন ধরে ভুগছিল, সেটা হল যে শীতকালে শহরে কোথাও এক ফোঁটাও রোদ আসে না। সারাটা শহর পাহাড়ের ছায়ায় ঢাকা। রোদ যদি পোহাতে চাও, তাহলে রোপওয়ে চেপে দিনের কোন এক সময়ে কাছাকাছি পাহাড়ের মাথায় যাও। ভাবো একবার! কোথায় বাড়ির ছাদ, বা বাগান, নিদের পক্ষে সামনের মাঠ বা রাস্তা হবে, তা নয়- একেবারে রোপওয়ে চড়ে শহর থেকে বেড়িয়ে সেই পাহাড়ের মাথায় ওঠা! সবার পক্ষে সেটা প্রতিদিন সম্ভব নয় যে তো বোঝাই যাচ্ছে। অনেকদিন রোদ না পাওয়ার ফলে এঁদের মধ্যে অনেকেই আবার মানসিক বিষণ্ণতায় ভোগেন। তাঁদের চিকিৎসাও এক ব্যায়সাধ্য ব্যাপার। তাই সব মিলিয়ে শীতকালে শহরে রোদ নিয়ে আসাটা খুব জরুরী ছিল। আর সেই কাজটাই গত ২০১৩ এর সেপ্টেম্বরে সফল করেছেন র্যুকানের কর্তৃপক্ষ।
র্যুকানের কাছে পাহাড়ের মাথায় বিশাল আয়নাগুলি
র্যুকানকে ঘিরে আছে যে পাহাড়গুলি, তার একটির মাথায় বসানো হয়েছে তিনটি দ্যৈত্যাকার আয়না। শহরের মাঝের টাউন স্কোয়ার থেকে প্রায় ৪৫০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত এই আয়নাগুলি সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করে আলোকিত করছে স্কোয়ারের খানিকটা অংশ। আর তাতেই বেজায় খুশি র্যুকানের বাসিন্দারা। আগে তাঁরা মাথার ওপর নীল আকাশ দেখলে বুঝতে পারতেন যে সেই দিন সূর্য উঠেছে; এখন, শীতে সূর্যের আলো একটু দেখার জন্য , অল্প উষ্ণতা উপভোগ করার জন্য আর তাঁদের পাহাড়ের মাথায় চড়তে হবে না ।কাজকম্মের ফাঁকে সুযোগ পেলে টাউন স্কোয়ারে এসে দাঁড়ালেই হল।
র্যুকানের টাউনহলের সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে সূর্যের আলো
এই তিনটি বিশাল আয়না কম্পিউটার পরিচালিত। এগুলি হেলিওস্ট্যাট নামেও পরিচিত। পৃথিবীর অনেক দেশেই, যেখানে অফুরন্ত সূর্যের আলো মেলে, এই হেলিওস্ট্যাটগুলি ব্যবহার করে সৌরশক্তি উৎপাদন করা হয়। ১৮৩ স্কোয়ার ফিট আয়তনের এই হেলিওস্ট্যাটগুলিও সৌরশক্তি উৎপাদন করে। সেই শক্তি দিয়ে কি করা হয়ে বলতো? আমি বলছি। সূর্য তো নিজের নিয়ম মাফিক পূবে উঠে পশ্চিমে অস্ত যাবে। আয়নাগুলি যদি সারাদিন ধরে র্যুকানের বুকে সূর্যের আলো ফেলতে চায়, তাহলে তো তাদেরকেও সূর্যের সাথে সাথে নিজেদেরকে ঘোরাতে হবে। তাই এই আয়নাগুলি যে শক্তি উৎপন্ন করে তা দিয়ে তাদের এই দিকবদলের কাজ দিব্যি হয়ে যায়।
এই বিশাল আয়নাগুলি সৌরতাপের সাহায্যে চালিত হয়
এই আয়নাগুলিকে বসাতে খরচা হয়েছে প্রায় ৫২০,০০০ পাউন্ড। র্যুকান ছাড়াও ইতালির এক ছোট শহর ভিয়ানেলাতে এর আগে এইরকম আয়না বসানো হয়েছে।