সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
দুই শতকের রূপকথাঃ পর্ব ১

বাংলা সাহিত্যে শিশু ও কিশোর সাহিত্যের যে ২০০ বছরের দীর্ঘ ইতিহাস, সেখানে ছোটদের ভালবাসেন এবং আন্তরিক ভাবে ছোটদের জন্য কিছু করতে চান, এমন বহু মানুষের প্রয়াসে একের পর এক পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে... সময়ের সাথে হারিয়েও গেছে। এই নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেছেন, পড়াশুনো করে সব খোঁজ করে বইতে লিখে রেখে দিয়েছেন।তাঁরা যেসব বইয়ের কথা আলোচনা করেছেন, সেগুলোই আমরা জানতে পারি। এবং যতটুকু জানতে পারি, সেইটুকু পড়েই তৃপ্তি হয়, ভাল লাগে এটা ভেবে যে ধীরে ধীরে একটা স্তর থেকে এত জনের এত পরিশ্রমের পর আজ বাংলা শিশু ও কিশোর সাহিত্য এত সুন্দর হয়ে উঠেছে। তোমাকেও আজ, সেই গোড়ার দিকের কথাগুলো বলব, আমার যেমন ভাল লেগেছিল, তোমারও ঠিক ভাল লাগবে... ফেলে আসা সেই দিনগুলোর কথা নতুন করে জানতে।

দুই শতকের রূপকথাঃ পর্ব ১
উইলিয়াম কেরি

উইলিয়াম কেরির (১৭৬১-১৮৩৪) নাম শুনেছ? উনি ছিলেন একজন ব্রিটিশ খ্রীষ্টান মিশনারী এবং সেই সময় বাংলার সাহেব সুবোদের মাঝে একজন বেশ সম্মানিত মানুষ, যাকে ইতিহাসে অনেক জায়গায় কেরি সাহেব বলেই ডাকা হয়। রাজা রামমোহন রায়েরই সমসাময়িক এই মানুষটি কেবল খ্রীষ্টধর্মের প্রচার এবং বাংলায় ব্যাপ্টিস্ট মিশনের প্রতিষ্ঠা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন নি। ওনার ইচ্ছা ছিল এই দেশের শিক্ষা এবং সমাজব্যবস্থার উন্নতি। ব্রিটিশ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী এই মিশনারীদের কাজকর্ম বোধহয় খুব একটা ভাল চোখে দেখত না, তাদের দুশ্চিন্তা ছিল পাছে এদের জন্যে বাংলার নেটিভরা বেশি শিখে ফেলে, বুঝে ফেলে, আর তারপরে কোম্পানীর গোরাদের ভয় না পায়? তাই কেরি সাহেবের মত মিশনারীরা হুগলীর শ্রীরামপুর অঞ্চলে চলে গেলেন, যা সেই সময় ছিল ড্যানিশ কলোনী, অর্থাৎ ডেনমার্কের শাসনে চলা উপনিবেশ (ঠিক যেমন চন্দননগর ছিল ফরাসীদের দখলে)। ডেনমার্কের দখলে বলে এই শ্রীরামপুরে (সাহেবরা বলত Serampore) কোম্পানীর সাহেবরা বেশি কিছু বলতে পারল না। সেইখানেই ব্রিটিশ ব্যাপটিস্ট মিশনারীরা তাঁদের ব্যাপটিস্ট মিশন স্থাপনা করলেন এবং তাঁদের কাজ শুরু করলেন।

এন বি হ্যালহেড
হ্যালহেড প্রণীত 'আ গ্রামার অফ বেঙ্গলি ল্যাঙ্গোয়েজ'; ই্ন্‌সেটে এন বি হ্যালহেড

শ্রীরামপুরে এই উইলিয়াম কেরির উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠিত এলো শ্রীরামপুর মিশন প্রেস, একদম ইয়ুরোপীয় প্রযুক্তির ছাপাখানা ব্যবহার করে। এরা আগে যদিও হুগলীতেও ছাপাখানা থাকার কথা শোনা যায়, যেখান থেকে ১৭৭৮ সালে ন্যাথানিয়েল ব্রাসে হ্যালহেড ( N. B. Halhed ) নামের এক সাহেব 'আ গ্রামার অফ বেঙ্গলি ল্যাঙ্গোয়েজ' (A Grammar Of the Bengal Language) নামে একটি বই প্রকাশ করেন। তবে এই শ্রীরামপুর মিশনারী প্রেস ছিল বেশ করিৎকর্মা প্রতিষ্ঠান। কেরি সাহেব এবং অন্যান্য গণ্যমান্য মিশনারীদের তত্ত্বাবধানে এই প্রেস শ্রীরামপুর মিশনেরই একটি কার্যকরী অঙ্গ হিসেবে কাজ করত, এবং ১৮০০ থেকে ১৮৩২, এই তিন দশকে দু লক্ষেরও বেশি বই এই প্রেস থেকে ছাপা হয়! তবে দু লক্ষ বই বলতে আলাদা আলাদা করে দু লক্ষ ধরণের বই বলে মনে হয় না। বরং বেশ কিছু বই ছাপা হয়, যার সব কটি কপি মিলিয়ে হয়ত দু'লক্ষ পার করে যাবে। তবে সেই দু'শ বছর আগে, ছাপা বই বা পত্রিকার আদিম যুগে সেই কাজও কি কম বাহাদুরির ব্যাপার?

দিগ্‌দর্শন
দিগ্‌দর্শন পত্রিকা

এই শ্রীরামপুর প্রেস থেকেই ব্যাপটিস্ট মিশনের উদ্যোগে ১৮১৮ সালে প্রকাশিত হয় একটি মাসিক পত্রিকা, নাম 'দিগদর্শন'। জন ক্লার্ক মার্শম্যান নামের মিশনেরই একজনের সম্পাদনায় প্রকাশিত এই বইটির প্রথম পাতাতেই লেখা 'যুবলোকের কারণে সংগৃহীত নানা উপদেশ'। যুবক মানে ঠিক কত বয়সের ছেলে-মেয়েদের কথা বলা হয়েছে, বোঝা মুশকিল। সেই যুগে অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিয়ে সংসারী বানিয়ে দেওয়া হ'ত। তাই সেই সমাজের চোখে যৌবনও আসত অল্পবয়সেই। তবে বইগুলিতে যে ধরণের লেখা এবং উপদেশ থাকত, দেখে বোঝা যায় ছোটদের জন্যই লেখা- যাদের সদোপদেশ দেওয়া প্রয়োজন এবং একই সঙ্গে নানারকম জ্ঞানের তথ্য পেলে যাদের উপকার হবে, মনের বিকাশ হবে। সেই সময় বাংলা লেখ্য ভাষা যেমন কঠিন ছিল, তার তুলনায় এই বইয়ের রচনাগুলো ছিল অনেক সহজ ভাষায় লেখা। উপদেশ ছাড়াও এই পত্রিকায় যে নানারকমের রচনা থাকত তার বিষয় ছিল ভূগোল, কৃষিকথা, ইতিহাস, পদার্থবিদ্যা, প্রাণীতত্ত্ব, ইত্যাদি। ভারত আর বাংলার কথাও থাকত বিভিন্ন রচনায়। বইয়র শেষে শব্দার্থ-অভিধান থাকত, যাতে কোনও রচনায় ব্যবহৃত বিশেষ শব্দগুলির মানে বুঝতে পাঠকের অসুবিধে না হয়। বোঝা যায়, আদি যুগের পত্রিকা হিসেবে খুবই সংগঠিত এবং সুপরিবেশিত কাজ। হয়ত ইংরেজী লেখা থেকে অনুবাদ কিংবা ব্রিটিশ মিশনারীদের (যাঁরা বাংলা শিখে নিয়েছিলেন) তত্ত্বাবধানে পত্রিকার কাজ চলত বলেই, এই পত্রিকায় প্রকাশিত গদ্যরচনাগুলিতে যতি চিহ্নের প্রয়োগ খুব সুগঠিত ভাবে হ'ত। সেই সময়ের বাংলা ভাষা সাহিত্যে তেমন সুচিন্তিত যতিচিহ্নের ব্যবহার (মানে ঠিকঠাক বুঝে । , ; - এই সবের ব্যবহার) খুব একটা দেখা যেত না। একটা লম্বা বাক্যের শেষে একটা দাঁড়ি পড়ত। এই পত্রিকায় যে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধগুলি প্রকাশিত হ'ত, তার বেশিরভাগই রাজা রামমোহন রায় লিখতেন বলে অনেকের ধারণা (যদিও ওনার নাম পাওয়া যায় নি কোথাও)। তবে পরবর্তীকালে দেখা যায় 'বেলুন, 'প্রতিধ্বনি', 'মকর মৎস্যের বিবরণ', প্রভৃতি বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ যা দিগদর্শনে প্রকাশিত হয়েছিল, সেগুলোই আবার একটু পরিবর্তিত রূপে রামমোহন রায়ের 'সংবাদ কৌমুদী'-তে প্রকাশিত হয়, এবং সেগুলি রামমোহন রায়ের রচনা বলেই স্বীকৃত। এর থেকে অনেকেই মনে করেন, যে রামমোহন রায় ছোটদের কথা মনে রেখেই কলম ধরেছিলেন, বাংলা আদি ছোটদের পত্রিকা 'দিগ্‌দর্শন'-এ। এই পত্রিকাটিকে কলকাতা স্কুল-বুক সোসাইটির খুবই পছন্দ হয়, এবং ছাত্রদের মধ্যে বিতরণ করার ব্যবস্থা করে এই মাসিক পত্রিকার বেশ কিছু কপি তারা প্রতি মাসেই প্রেসের থেকে কিনে নিতো। গবেষকরা সব দিক বিবেচনা করে, শ্রীরামপুর মিশনের উদ্যোগে প্রকাশিত এই 'দিগদর্শন' পত্রিকাকেই প্রথম কিশোরপাঠ্য পত্রিকা বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

পুরোপুরি কলকাতার মানুষ হলেও, জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়ের নিবাস এখন ব্যাঙ্গালোর বা ব্যাঙ্গালুরু। কলকাতারই কলেজ থেকে বি টেক পাশ করে এখন একটি বহুজাতিক সংস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কর্মী। বাংলা সাহিত্যের প্রতি ভালবাসা থেকেই মাঝে মধ্যে একটু লেখা আর সময় সুযোগ হ'লে ব্যাগ গুছিয়ে কাছে-দূরে কোথাও বেরিয়ে পড়া, এই নিয়েই জয়দীপ। সেই সব বেড়াতে যাওয়ার নানা রকম অভিজ্ঞতা ছোটদের কাছে বলার ইচ্ছে বহুদিন। সেই ইচ্ছাপূরণ করতেই ইচ্ছামতীর ছোট্ট বন্ধুদের জন্য কলম ধরা।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা