সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
দুই শতকের রূপকথাঃ পর্ব ১

কলকাতা স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮১৭ সালের ৪ঠা জুলাই। নাম শুনেই বুঝতে পারছ, এদের প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল স্কুলে কি ধরণের বই ছাত্রদের পড়ানো হবে, সেই নিয়ে নানারকম কাজকর্ম। শ্রীরামপুর প্রেস থেকে প্রকাশিত 'দিগদর্শন' পত্রিকা ছাত্রদের মধ্যে নিশ্চয়ই জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু সেই পত্রিকা কোনও রকম ছবি থাকত না। হয়ত ছাত্রদের কাছে, মানে ছোটদের কাছে আরও বেশি করে মাসিক পত্রিকা পড়ার অভ্যেস এবং জানার কৌতূহলকে বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য সোসাইটি ঠিক করে এমন কিছু পত্রিকা প্রকাশ করবে... যাতে নানারকম জ্ঞানের কথাও থাকবে মজার গল্প বা ছড়ার আকারে, সাথে সুন্দর ছবিও থাকবে যাতে ছোটদের মনরঞ্জন হয়। তাই 'দিগদর্শন'-এর পাশাপাশি সোসাইটি নিজেও একটি পত্রিকা প্রকাশ করা শুরু করল – 'পশ্বাবলী' নামের মাসিক পত্রিকা। পশ্বাবলী পত্রিকা প্রকাশিত হয় ১৮২২ সালে, প্রথম দিকে এর সম্পদক ছিলেন লসন্‌ সাহেব বলে এক পাদ্রী। ইংরেজীতে উনিই লিখতেন, তার বাংলা অনুবাদ করতেন ডব্লিউ এইচ পিয়ার্স নামে আর এক সাহেব। লসন্‌ সাহেবের মৃত্যুর পর, ১৮৩৩ সাল থেকে হিন্দু কলেজের শিক্ষক রামচন্দ্র মিত্র এই পত্রিকা পরিচালনার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। পত্রিকার নাম শুনেই বোঝা যায়, এর সঙ্গে 'পশু' শব্দের একটা যোগ আছে, তাই না? ঠিকই ধরেছ; পত্রিকার প্রতিটি সংখ্যায় থাকত একটি প্রাণীর বিবরণ। প্রথম পৃষ্ঠায় থাকত তার ছবি। হয়ত সচিত্র এবং জীবজন্তুদের কথা ছড়া ও গল্পের মাধ্যমে থাকত বলে ছোট পাঠকদের মাঝে এই পত্রিকাও বেশ জনপ্রয় হয়েছিল। পশুদের কথার মধ্যেও সাধারণ জ্ঞান এবং নীতি শিক্ষা দুই-ই সেখানোর প্রয়াস থাকত। এবং পুরোটাই হ'ত এমন ভাবে যাতে ছোটদের যাতে পড়তে ভাল লাগে, আগ্রহ জন্মায়। স্কুল বুক সোসাইটির নিয়ম ছিল প্রথম পুরো বিষয়টা ইংরেজীতে লেখা, তাই পত্রিকাতেও প্রথমে বাঁ দিকের পাতায় ইংরেজীতে লেখা থাকত, এবং বাংলায় তার মূল ভাব অথবা অনুবাদটা লেখা থাকত ডানদিকে। পরবর্তীকালে সোসাইটি থেকে স্কুলের ছাত্রদের উপহার হিসেবে একসাথে সব কটা সংখ্যা সংকলন করে প্রকাশ করা হয়। আর হ্যাঁ ছাত্রদের মধ্যে এই পশ্বাবলী পত্রিকার প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখেছিলেন বলেই মাস্টারমশাই শ্রী রামচন্দ্র বাবু অনেক বছর পর ১৮৪৪ সালে আবার একটি ছোটদের মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করতে উদ্যোগী হন, এবারের টা হ'ল পাখিদের নিয়ে – 'পক্ষির বৃত্তান্ত অর্নিথোলজি নং ১'।

ছোটদের জন্য এই দু'টো মাসিক পত্রিকার প্রকাশ, এবং স্কুল বুক সোসাইটির উদ্যোগে ছোট পাঠকদের মাঝে এই বইগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াস আর তার জনপ্রিয়তা ক্রমে অন্যদেরও ভাবাতে শুরু করল ছোটদের জন্য পত্রিকা প্রকাশ করার বিষয়টিকে। শিশু-সাহিত্য কিংবা কিশোর-সাহিত্যের ঘরানা বাংলা সাহিত্যে সে ভাবে দানা না বাঁধলেও, মানুষের মনে ছোটদের জন্যেও কিছু করা যায়, কিছু করা দরকার- এই ইচ্ছেটা তখনই আসতে শুরু করে। ১৮৩১ সালের ৩১শে ডিসেম্বর শ্রী কৃষ্ণধন মিত্র প্রকাশ করলেন 'জ্ঞানোদয়' নামের একটি মাসিক পত্রিকা। স্কুল বুক সোসাইটি এই পত্রিকারও পঞ্চাশটি কপি কিনে নেয়, প্রকাশনাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য। এই পত্রিকায় মৌলিক রচনা দেখা যেতে লাগল (আগের দুটি পত্রিকার মত অনুবাদ, জোগাড় করা সব গল্প বা তথ্য নয়)। এই পত্রিকার বিষয়বস্তু ছিল মূলতঃ নীতিকথা, ইতিহাস, ভূগোল। প্রাচীন ভারত, মুসলিম শাসনকাল, চীনদেশের কথা প্রভৃতি নিয়ে গদ্য বা ছোট প্রবন্ধ থাকত। লেখার ধরন কিন্তু আগের দুটি পত্রিকার মত অত সরল ছিল না, বরং একটু সংস্কৃত ঘেঁষাই ছিল (যেমন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অথবা বঙ্কিমচন্দ্রের গদ্য)। পত্রিকাটি অনিয়মিত ছিল, এবং বেশিদিন চলেওনি, কুড়ি সংখ্যা অবধি প্রকাশ করেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এই 'জ্ঞানোদয়' পত্রিকার নাম কিছুতেই ভোলা চলবে না। কেন জান? কেন না এই পত্রিকাটিই সম্পূর্ণ ভাবে বাঙালীদের পরিচালিত প্রথম শিশুপাঠ্য মাসিক পত্রিকা। এবং এই পত্রিকাতেই, প্রথম ব্যক্তিগত মৌলিক রচনা, মানে নিজস্ব লেখা বেশি করে দেখতে পাওয়া যায়। এই পত্রিকার পর থেকে ছোটদের পত্রিকা বা বলা উচিৎ ছোটদের জন্য মাসিক পত্রিকা প্রকাশের একটা ট্র্যাডিশন শুরু হয় বাঙালীদের মধ্যে। তা যেমন কলকাতা শহরে হয়, সেরকমই হয় ঢাকা থেকেও। বোঝা যায় এ ছাড়া অন্যান্য ছোট বড় শহর থেকেও পত্রিকা প্রকাশ এবং ছোটদের জন্য কিছু করার উদ্যোগ দেখা গেছিল সেই সময়। তবে সব পত্রিকার নাম, সব মানুষের কথা... সে কি আর এতবছর পর যত্ন করে রাখা আছে? এই নিয়ে বিস্তর পড়াশুনো করা ব্যক্তিরা যে নামগুলো আর তাদের সম্বন্ধে যা কিছু লিখে গেছেন, সেই থেকেই যা জানতে পারি। তোমাকেও এই সময়ের দুটো বিশেষ পত্রিকার নাম বলব যার একটার নাম 'বিদ্যাদর্পন' এবং অন্যটির নাম 'সত্যপ্রদীপ'। ১৮৫৩ সালের ২৬শে এপ্রিল প্রকাশিত হয়েছিল 'বিদ্যাদর্পন' পত্রিকাটি। পত্রিকাটি যে জনপ্রিয় হয়েছিল তার প্রমান সেই সময়ের বিশিষ্ট খবরের কাগজ 'সংবাদ প্রভাকর'-এ ৩রা মে'র একটি প্রতিবেদনে এই পত্রিকার উল্লেখ। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হ'ল, তথ্য থেকে জানা যায় এই পত্রিকাটির পরিচালনার কাজ এবং লেখার কাজেও ছোটরা অংশীদার ছিল!

বিদ্যাদর্পণ
সংবাদ প্রভাকরে প্রকাশিত বিদ্যাদর্পণ পত্রিকা সম্পর্কে প্রতিবেদনের অংশ। [সূত্রঃ 'শতাব্দীর শিশু সাহিত্য' – খগেন্দ্রনাথ মিত্র]

আর 'সত্যপ্রদীপ' পত্রিকাটি প্রকাশ করেছিল ভার্নাকুলার এডুকেশন সোসাইটি, ১৮৬০ সালের জানুয়ারীতে। এটি মাসিক শিশুপাঠ্য পত্রিকা। তবে এটিও বিশেষ জনপ্রিয় হয়েছিল কারণ দীর্ঘ পাঁচ বছর এই বইটি নিয়মিত প্রকাশিত হয়।

পুরোপুরি কলকাতার মানুষ হলেও, জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়ের নিবাস এখন ব্যাঙ্গালোর বা ব্যাঙ্গালুরু। কলকাতারই কলেজ থেকে বি টেক পাশ করে এখন একটি বহুজাতিক সংস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কর্মী। বাংলা সাহিত্যের প্রতি ভালবাসা থেকেই মাঝে মধ্যে একটু লেখা আর সময় সুযোগ হ'লে ব্যাগ গুছিয়ে কাছে-দূরে কোথাও বেরিয়ে পড়া, এই নিয়েই জয়দীপ। সেই সব বেড়াতে যাওয়ার নানা রকম অভিজ্ঞতা ছোটদের কাছে বলার ইচ্ছে বহুদিন। সেই ইচ্ছাপূরণ করতেই ইচ্ছামতীর ছোট্ট বন্ধুদের জন্য কলম ধরা।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা