সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
 জ্ঞানদানন্দিনী দেবী
জ্ঞানদানন্দিনী দেবী

ভুবনমোহন বাবু'র 'সাথী' পত্রিকার গল্পও তোমাকে শোনাবো, কিন্তু তার আগে আমাদের একবার জোড়াসাঁকোর ঠাকুড়বাড়িতে যেতে হবে। কারণ, যে সময় 'সখা' পত্রিকা বাংলার ছোট ছেলে-মেয়েদের মন জুড়ে ছিল, ঠিক একই সময় ঠাকুরবাড়ির পারিবারিক উদ্যোগে প্রকাশিত হয় আরও একটি শিশু-কিশোরদের জন্য মাসিক পত্রিকা, নাম 'বালক'। সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী জ্ঞানদানন্দিনী দেবী, প্রথম প্রকাশ ১৮৮৫ সালে – বৈশাখ, ১২৯২ বঙ্গাব্দ। ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের থেকেই এই পত্রিকার জন্য অধিকাংশ লেখা আসত। আর পাঁচটা শিশু-কিশোর সাহিত্য পত্রিকার মত এই পত্রিকাতেও থাকত বিজ্ঞান, ইতিহাস, গল্প, কবিতা, ভ্রমণ, ইত্যাদি বিভাগ। এছাড়াও থাকত খবরাখবর, গ্রন্থ সমালোচনা, ব্যায়ামের রীতি এবং বালক বালিকাদের রচনা। তবে অবশ্যই, ঠাকুর পরিবার এবং রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতিতে পরিচালিত পত্রিকা যখন, তখন রবীন্দ্রনাথের অবদানের জন্য এই পত্রিকাকে বিশেষ ভাবে মনে রাখবে বাংলা সাহিত্য। রবীন্দ্রনাথের লেখা হেঁয়ালি নাটকগুলি এই 'বালক' পত্রিকায় প্রকাশিত হ'ত। তৎকালীন অন্য শিশুপাঠ্য সাময়িক পত্রে নাটক প্রকাশিত হতে দেখা যায় নি। রবি ঠকুরের রাজর্ষিও এই পত্রিকায় প্রকাশ হয় (ঠিক শিশুসাহিত্য নয়)। তবে ভাল সাহিত্যরুচির এবং সচিত্র পত্রিকা হলেও, ছাপা অক্ষরগুলো হ'ত একটু ছোটো অক্ষরে। সেই সময়কার অন্য পত্রিকাগুলো এরকম ছোট অক্ষরে ছাপত না। দুঃখের বিষয়, এক বছর বেশ ভাল ভাবে চলার পরেও এই 'বালক' পত্রিকাকে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য পত্রিকা 'ভারতী'-র অন্তর্গত করে দেওয়া হয়।

ভুবনমোহন রায় মহাশয় ১৮৯৩ সালে (বাংলা ১৩০০ সাল, বৈশাখ) 'সাথী' পত্রিকাটি প্রকাশ করা শুরু করেন। ঠিক 'সখা' পত্রিকার মতই বিভিন্ন রকম বিভাগ দিয়ে এই পত্রিকাটিকে সাজানো হয়। সাথীর প্রথম বছরের প্রথম সংখ্যার শুরুতেই যোগীন্দ্রনাথ সরকারের একটি সুন্দর কবিতা এই ভাবে পাঠক-পাঠিকাদের ডাকছে -

কোথা আছ
ভাইটি আমার কোথা আছ বোন,
আয় ছুটে
আয় শোনরে এসে সাথীর আবাহন...

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

পত্রিকাটির ছিল সহজ সাবলীল ভাষা এবং লেখার মাঝে মাঝে স্পষ্ট সুন্দর ছবি। লেখার বিভাগগুলি মোটামুটি এক থাকলেও, সাহিত্যের মান এক আলাদা উৎকর্ষ লাভ করে। সেখানে ছোটদের লেখা তো প্রকাশিত হতই, তার সঙ্গে বিভিন্নরকম প্রতিযোগিতাও হ'ত। ভাল লেখাদের পুরস্কার দেওয়া হ'ত পত্রিকার তরফ থেকে। প্রথম পুরস্কার পকেট ঘড়ি, দ্বিতীয় পুরস্কার টাইম পিস... এইরকম। ভাব, সেই সময় তোমার মত বয়সী যারা সেই পত্রিকায় লেখা পাঠাতো, তারা শুধু লেখা ছাপা হয়েছে দেখেই আনন্দ পেত না... কারও কারো ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া সুন্দর সব পুরস্কার, তার সঙ্গে সম্পাদকের অভিনন্দন! এই পত্রিকাই 'সখা' পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাম হয়ে 'সখা ও সাথী', যার প্রথম প্রকাশ '১৮৯৪ সালে। 'সখা'র মত, 'সখা ও সাথী'র পাশেও এক ভাবে ছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। তাঁর 'কেনারাম বেচারাম' সচিত্র নাটিকা প্রকাশিত হয় পত্রিকার সপ্তম সংখ্যায়। এছাড়াও সেই সময় অন্যান্য গুণীজনেরা এই পত্রিকার জন্য কলম ধরতে থাকেন - ৮ম সংখ্যায় রাজনারায়ণ বসুর উপদেশ দেখা যায়, যোগীন্দ্রনাথ সরকার কবিতা লিখতেন, মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনীলেখক যোগেন্দ্রনাথ বসুও এই পত্রিকায় লেখেন। লিখতে শুরু করেন - জলধর সেন, জগদানন্দ রায়, গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী, ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, প্রমুখ। প্রথম ছোটদের থ্রিলার হরিসাধন মুখোপাধ্যায়ের রোমাঞ্চকাহিনি 'আশ্চর্য হত্যাকাণ্ড' প্রকাশিত হয় 'সখা ও সাথী' পত্রিকাতেই। ঠিক 'সখা' পত্রিকা যেমন ছোট ছোট পাঠক-পাঠিকাদের মন জয় করেছিল, সেইরকম 'সখা'র অবর্তমান 'সখা ও সাথী' ক্রমে সেই জায়গাটি করে নেয় কচিকাঁচাদের মনে। আর পত্রিকার এই জনপ্রিয়তার কারণেই, 'সখা' পত্রিকায় যেমন বিজ্ঞাপনের রেওয়াজ দেখা যায় (তৎকালীন অন্য শিশু-কিশোরদের সাময়িক পত্রিকায় বিরল) তেমন 'সখা ও সাথী' পত্রিকাতেও দেখা যায়। এক কথায় এই পত্রিকার মধ্যে দিয়েই যেন হারিয়ে যাওয়া 'সখা' পত্রিকা নতুন জীবন পেয়েছিল... এবং সেই ভাল লাগার রেশ সকলের মনে থেকে গেছিল বহু দিন ধরে।


শিবনাথ শাস্ত্রী

'সখা ও সাথী'র সমসাময়িক আরও একটি বিশিষ্ট ছোটদের সচিত্র মাসিক পত্রিকা প্রকাশ হ'তে থাকে... তার নাম 'মুকুল'। এর আগে 'সখা' পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কিছুকাল কাজ করা পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী, ১৮৯৫ সালে নিজেই একটি ছোটদের পত্রিকা প্রকাশ করার দায়িত্ব গ্রহণ করেন... শুরু হয় 'মুকুল' পত্রিকার যাত্রা। প্রথম সংখ্যায় পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী ছোট্ট বন্ধুদের উদ্দেশে লিখেছিলেন -

"মুকুল নামটা বেশ। মুকুল বলিলেই অনেক কথা মনে হয়। প্রথম মনে হয়, আশা। যাহা আজ মুকুলে আছে, কালই তাহা ফুটিবে। মুকুল আসিয়াছে, পশ্চাতে ফুল ও ফল আসিতেছে। এই জন্যই মুকুল দেখিলেই সকলের আনন্দ; মুকুল দেখিলেই বোঝা যায়, এ বৎসর ফলটা কেমন হইবে।"

একটা বিশেষ সময় ধরে 'মুকুল' এবং 'সখা ও সাথী', এই দুই পত্রিকার উৎকৃষ্ট মানের কাজ এবং সমান্তরাল পথে এগিয়ে যাওয়া, সেই সময়ের শিশু সাহিত্য এবং শিশুপাঠ্য পত্রিকা দুইয়ের ওপরেই একটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। ঠিক যেমন 'সখা ও সাথী পত্রিকায় আবার বহু গুণীজনের লেখা দেখতে পাই, সেইরকমই দেখতে পাই মুকুল পত্রিকাতেও। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জগদীশচন্দ্র বসু , রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, আচার্য যোগেশচন্দ্র, রামানন্দ চট্টপাধ্যায়, বিপিনচন্দ্র পাল, যোগীন্দ্রনাথ সরকার, নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য, হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ, প্রভৃতি বহু বিশিষ্ট মানুষের লেখা এক একটি সংখ্যায় প্রকাশিত হ'তে থাকে। এর মধ্যে জগদীশচন্দ্রের 'গাছের কথা', হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষের গল্প 'আবু করিমের চটি জুতা' উল্লেখযোগ্য।

পুরোপুরি কলকাতার মানুষ হলেও, জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়ের নিবাস এখন ব্যাঙ্গালোর বা ব্যাঙ্গালুরু। কলকাতারই কলেজ থেকে বি টেক পাশ করে এখন একটি বহুজাতিক সংস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কর্মী। বাংলা সাহিত্যের প্রতি ভালবাসা থেকেই মাঝে মধ্যে একটু লেখা আর সময় সুযোগ হ'লে ব্যাগ গুছিয়ে কাছে-দূরে কোথাও বেরিয়ে পড়া, এই নিয়েই জয়দীপ। সেই সব বেড়াতে যাওয়ার নানা রকম অভিজ্ঞতা ছোটদের কাছে বলার ইচ্ছে বহুদিন। সেই ইচ্ছাপূরণ করতেই ইচ্ছামতীর ছোট্ট বন্ধুদের জন্য কলম ধরা।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা